নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই রঙিন পানির ফোয়ারা, ক্যাণ্ডেল ঝাড় বাতি, দোতলায় ওঠে যাওয়া খোলা সিঁড়ি এব সবই হতো তার জন্য । ইটালির এলটেকো-স্পার টাইলসে বাড়ির মেঝে। সমান করে ছেঁটে দেয়া স্পেনিশ রাই ঘাসের লনে খরগোস খেলে বেড়ায়। একপাশে গাছের নিচে হরিণকে খেতে দেয় বুড়ো মালী। অঢেল বিত্তের সেই সুখ যে ভোগ করতে পারত সে নেই।
কৃপণের মতো শুয়ে আছে একটা আঁটসাট বাক্সে। বাড়ির বেসমেন্টে আমার যে নিজস্ব একটা ঘর আছে । তার ভেতর নীল আলোর নিচে সেই বাক্সটা।
আমাকে গম্ভীর চশমার ড আশরাফ বলে জানে শহরের মানুষ। সেরা চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতিও কম নয়।
অতীতের নানান সাফল্যের জন্য ধন্যবাদ দিতে আসে লোকে, আর সাধারণ মানুষেরা সাদা রাজহংসের মতো বাড়িটাতে দেখে হিংসে করে। যদিও কেউ শুনেছে সেই ইতিহাস । গল্প করে পৌরাণিক উপন্যাসের মতো। তারা জানে না দিন শেষে শরীরটা ক্লান্ত হয়। বন্ধ ঘরে হেলিয়ে দিয়।
তারপর ছবি দেখে। ডায়েরী খুলে নোনা ধরা পাতায় অশ্রু ফেলে।
তখন আমার বয়স ২৪। মেডিসিন ছাত্র হিসেবে ভাল ছিলাম। শুরুর দিকে থেকেছি সব ক্লাসে।
বাবার অহংকার করতেন এক মাত্র সন্তানের মেধা নিয়ে । মা গৃহিনী হলেও আশির্বাদ করতেন। বাবার কড়া শাসনে বাড়ি তটস্থ থাকলে মার কাছেই ভাল মন্দ বলতে যেতাম।
অবশ্য আমি মেধাবে ওভাবে না বলে বলা উচিত পরীক্ষাতে খারাপ করার উপায় ছিল না। বাবা নিজে ভয়ানক জেদী, ক্ষণে ক্ষণে মত পাল্টাতেন কিন্তু আমার পড়াশোনার বিষয়ে ছিলেন ধ্রুব তারার মতো সুস্থির।
ওকালতি ছেড়ে কিছুদিন ফলের বাগানে সময় দিলেন। রাজশাহীর বিস্তীর্ণ এলাকায় বোশেখে মৌ মৌ করতো চিনিসিঁদুর আম। তারপর হঠাৎ করেই কনট্রাক্টরীর নেশায় পায় তাকে। একদিন ফিরতি পথে ভাঙা ব্রিজে পড়ে গেলে, তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজেই এসব ঠিক করবেন। পৃথিবীর এরকম শত শত ব্রীজ আছে ভাঙা।
উনি পেশা বদল করলেও অধিকাংশ ভাঙাই থাকবেন। এর দু বছর পর ব্রীজের কাঁচামালে ভেজাল দেখে নিজেই সিমেন্টের ব্যবসা ধরলেন। এসবে টাকা পয়সা ও শক্তি নাশ করে আমরা বড় হয়ে দেখলাম একতলা দালানটাই অবশিষ্ট।
তারপর যখন আমার ইন্টার্নশিপ শুরু শক্ত সামর্থ মানুষটি স্ট্রোকে আক্রান্ত হলেন। মানুষের শরীরটা মানুষের হাতে থাকে না।
প্রকৃতি তাকে বাঁচায় বলে সে বাঁচে। মেরে ফেলতে মনস্থ করলে সামান্য জীবানুরাই বিশাল দেহকে ধরাশায়ী করে ফেলে। এই সীমাবদ্ধতা ডাক্তারী পড়ার পর আরও ভাল করে জেনেছি। আমাদের যা ছিল তা দিয়ে বাইরে চিকিৎসা করানো যেত। কিন্তু বাবা বললেন এখানেই থাকবেন।
ঢাকাতেও যাবেন না। তার নিজের ছেলেটি তো দেশী ডাক্তারই।
একটা হুইল চেয়ারে বসিয়ে আমি শহরে ফিরে এলাম। ঠিক পরের মাসের ১১ তারিখ শনিবার মায়ের টেলিগ্রাম পেলাম। বাবা জলদি যেতে বলেছেন।
সদ্য প্রয়াত এক বন্ধুর কন্যার সঙ্গে আমার সঙ্গে বিবাহ মনস্থির করেছেন। মেয়েটি রাজশাহীতে থাকলেও রক্ষণশীল মধ্যবিত্ত ঘরের। আমি দু চারবার দেখেছি। মিষ্টি শ্যামলা চেহারা। বাবার সঙ্গে গেলে দরজা খুলে চোখ নামিয়ে ভেতরে আসতে বলত।
কখনো চা এগিয়ে দিয়ে ভেতরে চলে যেত।
বাবার শরীর আশঙ্কামুক্ত কিন্তু তিনি সপ্তাহের বেশী অপেক্ষা করলেন না। কয়েকবার দেখলেও একটি অপরিচিত মেয়ে হুট করে বউ হয়ে চলে আসবে এমন মাথায় ছিল না কয়েক বছর পর বিয়ে করলে গুছিয়ে নেয়া যেত কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাবার আদেশ উপেক্ষা করার শক্তি আমাদের ছিল না।
(চলবে)
---
ড্রাফট ০.১ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।