সাপ-লুডু খেলছি বিধাতার সঙ্গে
ঠিক ঈদের আগের দিন ঘটে যাওয়া দুটো ঘটনায় আমরা বিমুঢ়, বিস্মিত এবং বাকহীন। এটা কি হলো? দু'টো নিউজ দেখে আমরা ভাষাহীন। আমরা কি এখনো সভ্য হতে পারিনি? পুরুষ আমরা, এ লজ্জা আমার কোথায় রাখবো??
ঈদের আগের দিন আমাদের মতই এক পুরুষের হাতে প্রান দিতে হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগোযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্ট্রার্সের শিক্ষার্থী সুতপাকে। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন তার স্ত্রী সালমার দেহে। এরা দুজনই আমাদের মত পুরুষ।
সুতপাকে আমি ব্যাক্তিগতভাবে চিনি না। সে আমার বিভাগের জুনিয়র ছোট বোন। খুব সাধারণ একটা মেয়ে ছিল সে। তার মাস্ট্রার্স ফাইনাল পরীক্ষা চলছিলো। তার হয়তো অনেক স্বপ্ন ছিল, স্বপ্নের একজন পুরুষ ছিল।
যে পুরুষটা তার স্বামী। যার বুকে মাথা ডুবিয়ে সে আশ্রয় খুজতো, নিরাপত্তার উষ্নতা খুজতো, সেই স্বপ্নের পুরুষটাই দুঃস্বপ্নের ভিতর আততায়ী হয়ে ধরা দিয়েছে তার কাছে। সুতপার বিয়ে হয়েছে গতবছর। বাবা-মা চুয়াডাঙ্গায়। তাদের ছেড়ে ঈদ করতে তার হয়তো কষ্ট হতো।
সেই কষ্ট তাকে সইতে হয়নি। সকল কষ্টের উর্ধ্বে সে এখন। বিভাগের প্রিয় বন্ধুদের, শিক্ষকদের- সকলকে বেদনার এক অতল সাগরে ডুবিয়ে সে হারীয়ে গেল। যৌতুকের দাবিতে ঘাতক স্বামী তার প্রান কেড়ে নিল ।
একই ভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনের এক সহকারী পরিচালক তার স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।
সালমাকে কোনদিন দেখিনি। কিন্তু দ্বগ্ধ সালমার কষ্ট আমরা অনুভব করতে পারি। ঈদের দিন বিকেলে হাসপাতালে তার মৃত্যু ঘটে। সে আমাদের বোন। তাদের মৃত্যু আমাদের মাথা নত করে দিয়েছে।
প্রথম নিউজ:
ঢাবি ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু, স্বামী গ্রেপ্তার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকোত্তর বর্ষের ছাত্রী মাফরুদা হক সুতপার রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।
রাজধানীর মীরপুর পানির ট্যাংকি এলাকায় শনিবার রাত সাড়ে নয়টায় সুতপার শ্বশুরবাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
সুতপার পরিবার দাবি করেছে, স্বামী ইমরুল সাদাত আবীর তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
শনিবার রাতেই আবীরকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হত্যার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় মামলা দায়ের করেন সুতপার ভাই শাহ আলম।
২০০৮ সালের ১৭ জুন পারিবারিকভাবে ইমরুলের সঙ্গে সুতপার বিয়ে হয়।
ইমরুল আল- আরাফাহ ব্যাংকের দিলকুশা শাখায় কর্মরত।
সুতপার ভাগ্নি মৌমিতা সিদ্দিকা অভিযোগ করেন, নিহতের স্বামী ইমরুল সুতপাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
তবে ইমরুল পুলিশের কাছে দাবি করেছে, দাম্পত্য কলহের জের ধরে শনিবার রাতে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। এরই একপর্যায়ে সুতপা গ্রিলে ঝুলে আত্মহত্যা করে।
মৌমিতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুতপার শরীরে অসংখ্য জখমের চিহ্ন ছিল। গলায় কাটা দাগও ছিল। ”
তিনি জানান, ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে লাশ পরীক্ষার পর সুতপার শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, ওর শ্বশুরবাড়ি থেকে আমাদের কেউ কোন খবর জানায় নি। আমরা ওই বাড়ির প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে রাত পৌনে ১১টায় সেখানে যাই।
মিরপুর থানার উপ-পরিদর্শক পারভিন আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, হত্যার অভিযোগে ইমরুল সাদাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সুতাপার লাশ তার গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গায় দাফন করা হবে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
দ্বিতীয় নিউজ:
মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন শান্তিবাগে অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূ
রাজধানীর শান্তিবাগে অগ্নিদগ্ধ এক গৃহবধূ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
কেরোসিনের আগুনে দগ্ধ সালমা আক্তারের (৩৫) স্বামী দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক খন্দকার মেজবা উদ্দিন।
সালমার সারা শরীর পুড়ে গেছে।
সালমার বড় বোন বিলকিস হোসেন অভিযোগ করেন, রোববার দুপুর ১২টার দিকে সালমার স্বামী মেজবা তার বোনের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিয়ের পর থেকে মেজবা তাকে প্রায়ই শারীরিক নির্যাতন করতো। ”
মেজবা ও সালমা ১৯১/১ শান্তিবাগের বাসায় থাকতেন। সালমার পরিবারের সঙ্গে তাদের কোন যোগাযোগ ছিলো না বলে তার মামা আলাউদ্দিন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ইমার্জেন্সী মেডিক্যাল অফিসার লিমন কুমার ধর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, অগ্নিদগ্ধ সালমার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। তার সারা শরীর পুড়ে গেছে।
মেডিক্যাল অফিসার বলেন, “আমরা তাকে বাঁচিয়ে রাখার সব রকমের চেষ্টা করছি। ”
তিনি জানান, সালমার শরীরে কেরোসিনের গন্ধ পাওয়া গেছে।
মতিঝিল থানার সহকারী পরিদর্শক (এসআই) শফিউল¬াহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এ ব্যাপারে তারা কোন অভিযোগ পাননি।
দুটি নিউজ সূত্র: বিডিনিউজ২৪.কম
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।