আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উদয়ন স্কুলের ৮৩ লাখ টাকা লুটপাট, ৩৮ শিক্ষক অবৈধভাবে নিয়োগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত উদয়ন স্কুল ও কলেজের ৮৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৩৪ টাকা লুটপাট ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) ৯ দিন তদন্ত করে অর্থ লুটপাট, অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগসহ নানা অনিয়মের প্রমাণ পায়। অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক রামদুলাল রায়, উপ-পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান ও সাবেক অডিট অফিসার মো. আবদুল গফুর সমপ্রতি ওই তদন্ত করেন। কাগজপত্রে দেখা গেছে, বেশির ভাগ অর্থই আত্মসাৎ করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ খালেদা হাবিব। তিনি ২০০৫ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং ২০০৬ সাল থেকে স্থায়ী অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন ( দুদক) একটি মামলাও করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। কলেজের অধ্যক্ষ দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলেছেন, এসব তার আমলে হয়নি। তবে কাগজপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, অধ্যক্ষ খালেদা হাবিবের আমলে সবচেয়ে বেশি লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। তিনি অত্যন্ত কৌশলে এসব টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

কলেজটিতে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৩৮ জন শিক্ষক। প্রতিষ্ঠানটির কেনাকাটা, টেন্ডার ছাড়াও তিনি নিয়োগের ক্ষেত্র লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যা অডিটেও ধরা পড়েনি। তিনি কলেজটিতে অনিয়মের পাহাড় গড়েছেন। ঘন ঘন কেনাকাটা করেছেন।

আদায় করা হয়নি সরকারি ভ্যাট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কেনাকাটার মজুত না পাওয়া এবং ভ্যাট আদায় না হওয়া থেকে কেনাকাটার বাস্তবতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। কেনাকাটাগুলো ছিল ভুয়া। এর মাধ্যমে মূলত অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ অবস্থায় ডিআইএ সমুদয় অর্থ আদায়ের সুপারিশ করেছে।

পরিদর্শনকালে দেখা যায়, ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১০ সালের ৩রা জানুয়ারি পর্যন্ত সমাপনী পরীক্ষা বাবদ ৭ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ২৯৭ টাকা জমা হওয়ার কথা। কিন্তু জমা হয়েছে ৭ কোটি ৪৩ লাখ ৩৫ হাজার ১৯৭ টাকা। বাকি ২১ লাখ ৮৪ হাজার ১০০ টাকা লুটপাট হয়েছে। অধ্যক্ষ খালেদা হাবিব শুধু প্রতিষ্ঠানটির অর্থই আত্মসাৎ করেননি, বেতন বাবদ এমপিও’র অর্থও আত্মসাৎ করেছেন। ১৯৯৯ সালের ১৫ই আগস্ট তিনি প্রভাষক হন।

এরপর থেকে তার পূর্ব পদের (সহকারী শিক্ষিকা) অর্থ গ্রহণ করার কথা নয়। অথচ ২০০৭ সালের ৩১শে মার্চ পর্যন্ত ৪ লাখ ২৯ হাজার ৪৪১ টাকা সরকারি তহবিল থেকে অতিরিক্ত নিয়েছেন। এছাড়া প্রতিদিন হাতে হাজার হাজার টাকা নগদ থাকে। এছাড়া অধ্যক্ষ বরাবর স্থায়ী অগ্রিম বাবদ যে বরাদ্দ দেয়া হয়, সেজন্য ইমপ্রেস্ট পদ্ধতিতে ক্যাশবই সংরক্ষণ করা হয় না। দেখা গেছে, প্রতিদিন ব্যাংক উত্তোলন ও দিনের ব্যয় মিলিয়ে অনেক টাকা উত্তোলিত অর্থের সমপরিমাণ ব্যয় পাওয়া যায়নি।

প্রশ্ন উঠেছে, এ টাকা প্রতিদিন কোথায় যায় ? ১৯৯৫ সালের ২৭শে জুলাই আরেকবার এ প্রতিষ্ঠানটিতে পরিদর্শন হয়। তখনও কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। রিপোর্টে তখন প্রায় ৪ লাখ টাকার সরকারি কোষাগারে ফেরতের সুপারিশ ছিল। আজ পর্যন্ত সরকার এ টাকা ফেরত পায়নি। অর্থ আত্মসাৎ করার বেলাতেও দারুণ কৌশলী তিনি।

উন্মুক্ত দরপত্র এড়ানোর লক্ষ্যে একদিনের ব্যবধানে প্রায় ৩ লাখ টাকার কেনাকাটার রেকর্ড পাওয়া যায়। ২০০৯ সালের ১২ই মে ১ লাখ ২৮ হাজার ৯০০ ও ১৪ই মে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৪২৫ টাকার কম্পিউটার সিস্টেম ক্রয় করেন। এক্ষেত্রে ক্রয় নীতিমালা ২০০৬ ও ২০০৮ মানা হয়নি। ২০০৯ সালের ২৭শে জুলাই ৪ লাখ টাকার বেঞ্চ ক্রয় করা হয়েছে। এক্ষেত্রেও সরকারের আর্থিক নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, ক্রয়কৃত ওইসব বেঞ্চের মজুত হিসাব পর্যন্ত নেই। শুধু কেনাকাটার ক্ষেত্রেই নয়, প্রতিষ্ঠানটির অর্থ সরকারি ব্যাংকে জমা থাকার নিয়ম থাকলেও এক্ষেত্রে রহস্যজনক কারণে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে ভেঙে ভেঙে টাকা জমা রাখা হয়েছে। এরকম মোট তিনটি ব্যাংকে মোট ২ কোটি ২৬ লাখ টাকা জমা রাখা হয়। অথচ এক্ষেত্রে সাধারণ সোনালী ব্যাংককে বেছে নেয়ার অগ্রাধিকার থাকে। সূত্র জানায়, আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে কলামনার ক্যাশবই সংরক্ষণ করা হয়নি।

ডবল কলাম ক্যাশ বই রাখা হয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে অধ্যক্ষ এই কাণ্ড ঘটিয়ে আসছেন। বিদ্যালয়ের অর্থ লুটপাটের আরেকটি খাত হচ্ছে পরীক্ষা সম্মানী। ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দু’টি অর্থবছরে এখাতে ব্যয় ২৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮২৯ টাকা। কিন্তু কোন পরীক্ষায় কত টাকা আদায়, ব্যয় বা অবশিষ্ট রয়েছে তার কোন হিসাব নেই।

এক্ষেত্রে ১৫ ভাগ ভ্যাট হিসেবে জমা বা বাকি টাকা সম্মানী হিসেবে বণ্টন করা হয়নি। এ বিষয়টিকে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম বলেছে তদন্ত টিম। ২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ৩ অর্থবছরে ১১ জন শিক্ষককে গ্র্যাচুইটি বাবদ ৪৫ লাখ ৫৫ হাজার ৪৭ টাকা বিদ্যালয় তহবিল থেকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয়ে গ্র্যাচুইটির সুস্পষ্ট কোন নীতিমালা নেই। আবার দেখা যায়, এসব শিক্ষক সরকারি পেনশন/গ্র্যাচুইটি সুবিধাও নিয়েছেন।

কিন্তু আর্থিক বিধিমালা অনুযায়ী একই ব্যক্তি দু’জায়গা থেকে একই ধরনের সুবিধা নিতে পারেন না। তাই এক্ষেত্রে সরকারি সুবিধা ফেরত নেয়ার সুপারিশ রয়েছে রিপোর্টে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও অধ্যক্ষ খালেদা হাবিব লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কোন প্রকার নীতিমালা না মেনেই শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। ডিআইএ’র তদন্তে মোট ৩৮ জন শিক্ষকের অবৈধ, ত্রুটিপূর্ণ, বেআইনি ও তুগলকি নিয়োগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এদের কারও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নেই। কোন নিয়োগ বোর্ড বসানো হয়নি। আবার বোর্ড বসলেও মেধা তালিকায় নিচে অবস্থানকারীরা নিয়োগ পেয়েছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, নিয়োগের জিবিকে তোয়াক্কা করা হয়েছে। বেশির ভাগ নিয়োগই দেয়া হয়েছে কেয়ারটেকার আমলে।

এর মধ্যে কেউ স্থায়ী আবার কেউ অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত। সূত্র জানায়, কম্পিউটার বিভাগের প্রভাষক পদে লিখিত পরীক্ষায় ১২ জন প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। তাতে একজনও পাস করেননি। নাসির উদ্দিন নামের একজন লিখিত ৫০ নম্বরের মধ্যে ১৫ নম্বর পান। অথচ তাকেও নিয়োগ দেয়া হয়।

নাঈম ইয়ার খান ও নার্গিস সুলতানা নামে দুই শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে অবৈধভাবে। জিবির অনুমোদন পর্যন্ত নেই। এখানেই শেষ নয়, অডিট ফার্ম নিয়োগের ক্ষেত্রেও করা হয়েছে অনিয়ম। বিজ্ঞপ্তির নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। আবার ২০০৪ সালের ১৪ই মার্চ ওই নিরীক্ষা বাবদ একটি কোম্পানিকে ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়।

এক্ষেত্রেও ভ্যাট কাটা হয়নি। প্রতিষ্ঠান থেকে সোয়া লাখ টাকা ইন্টারনেট বিল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ভ্যাটসহ। অথচ এ ভ্যাট নেয়ার মালিক সরকার। তবে ভ্যাট দেয়া হয়েছে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে। উৎসস্থলে আয়কর ও ভ্যাট কাটার কোন নিয়ম নেই।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ৩৪ জন শিক্ষক কর্মচারীর গোষ্ঠী জীবনবীমা প্রিমিয়াম দেয়া হচ্ছে বিদ্যালয়ের টাকা থেকে। এক্ষেত্রে জিবির সিদ্ধান্ত নেই। শিক্ষক প্রতি ৫০ হাজার এবং কর্মচারী প্রতি ৩০ হাজার টাকা বীমাকৃত ধরে প্রিমিয়াম দেয়া হচ্ছে। গোষ্ঠী জীবনবীমা বাবদ দেয়া হয় প্রতিষ্ঠান তহবিল থেকে ১ লাখ ৮৬ হাজার ১০৪ টাকা। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোবাইল কোম্পানি থেকে পাওয়া ১৯ লাখ ৮১ হাজার টাকার কোন হদিস নেই।

ভর্তি ফরম কতটি ছাপানো আর কতটি বিক্রি করা হয় তার কোন পরিসংখ্যান রাখা হয় না। এ অনিয়মের ফলে জনগণ থেকে কত টাকা আদায় হলো তা থেকে সরকার কত টাকা রাজস্ব পাবে তা বোঝার উপায় নেই। আবার বেশি দামে ভর্তি ফরম বিক্রিও করা হয়। ৪০ টাকা ফরমের দাম হলেও বিক্রি করা হয়েছে ১৪০ টাকা। এখাতে প্রায় ৪৩ হাজার টাকা লোপাট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উদয়নের জমিটি নিজস্ব নয়। ১৯৮৫ সালের ১১ই নভেম্বর যদিও সিন্ডিকেট উদয়নকে জমিটি বরাদ্দ দেয়, কিন্তু তারা আজ পর্যন্ত জমিটি প্রতিষ্ঠানের নামে দলিল করেনি। এমপিও গ্রহণ নীতিমালায় নিজস্ব জমিতে প্রতিষ্ঠান নির্মিত না হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এমপিও পেতে পারে না। অর্থাৎ এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি সরকার থেকে বছরে যে সাড়ে ২৩ লাখ টাকা গ্রহণ করছে, তা অবৈধ। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত মোট ৫০টি শাখা চালু রয়েছে।

বিভিন্ন শ্রেণীতে ৩টিরও অধিক শাখা রয়েছে। কিন্তু এগুলো খোলার ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নাই। নির্ধারিত জনবলের অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মোট ৫৬ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। অথচ বিদ্যমান শাখার হিসাবে স্কুল শাখায় ৪৮ জনের বেশি শিক্ষক নিয়োগ পেতে পারেন না।

অর্থাৎ বাকি ৮ জন শিক্ষক সরকারি বিধি তোয়াক্কা না করে নিয়োজিত। স্কুল শাখায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক ২৩ জন। নিয়োগ দুর্নীতি: শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। দেখা গেছে, কম্পিউটার বিভাগের সহকারী শিক্ষক মুকুল চন্দ্র সরকার, ইংরেজির প্রভাষক রেজিয়া বেগম, একেএম মতিন, খাইরুল বাসারের নিয়োগ গভর্নিং বডির (জিবি) দ্বারা অনুমোদিত নয়। গণিতের প্রভাষক আবদুস সালামের নিয়োগে বোর্ড গঠন করা হয়নি।

পত্রিকার মূল বিজ্ঞপ্তিও অপ্রদর্শিত। এছাড়া প্রাথমিক শাখার বাংলার সহকারী শিক্ষক নাজমুন নাহার, প্রাইমারি শাখার সহকারী শিক্ষক খালিকা মাহবুব, ইংরেজির সহকারী শিক্ষক খন্দকার নাসরিন রহমান, গার্হস্থ্যের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা খাতুন, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক আলেয়া পারভীন, মাহমুদা বেগম, গণিতের সহকারী শিক্ষক জাউশেদ আলম ও ইংরেজির সহকারী শিক্ষক সালমা পারভীনের নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়নি। পত্রিকায় কোন বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়নি। এমনকি তাদের সাক্ষাৎকারও নেয়া হয়নি। ডিজি’র প্রতিনিধি ছিলেন না।

তাদের শিক্ষক নিবন্ধন নেই। অথচ এসব নিয়োগ ২০০৮ সালের ৩রা এপ্রিল থেকে ২০০৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান অধ্যক্ষ খালেদা হাবিবের সময়ে হয়েছে। যাদের সরকারি বেতনভাতা হবে না: প্রাণিবিদ্যার প্রভাষক শামীমা আকতার, বাংলার প্রভাষক আবুল মনসুর, গণিতের সহকারী শিক্ষক রতন কান্তি মণ্ডল, সমাজ বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক শুক্লা রানী কর্মকার, ইসলাম ধর্মের সহকারী শিক্ষক সাইদুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক পাঁচুগোপাল মালো, নাজনীন বিনতে ছাইদ, আলাউদ্দিন মণ্ডল, জাকির হোসেন, মাহবুব আলম, নিলুফা ইয়াছমিন, নাছির উদ্দিন, মেহনাজ আক্তার সরকারি ও বেসরকারি বেতনভাতা পাওয়ার যোগ্য নন। ২০০৮ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি তারা নিয়োগ পান। এদের কারও শিক্ষক নিবন্ধন নেই।

এছাড়া গার্হস্থ্য অর্থনীতির সহকারী শিক্ষক নিলুফা ইয়াছমিন, বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলামেরও শিক্ষক নিবন্ধন নেই। প্রশাসনিক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন বিজ্ঞাপন দেয়া হয়নি। সহকারী গ্রন্থাগারিক তাসলিমা নাজনীন, হিসাব রক্ষক শহীদুল ইসলামের নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এছাড়া সহকারী গ্রন্থাগারিক শহীদুল ইসলামের নিয়োগে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়নি। তার সাক্ষাৎকারও নেয়া হয়নি।

ছিলেন না ডিজির প্রতিনিধি। এদের সবার নিয়োগ হয়েছে বর্তমান অধ্যক্ষ খালেদা হাবিবের সময়ে। বিজ্ঞপ্তি ছাড়া নিয়োগ: সহকারী শিক্ষক করিম শাহীন, ফারহানা হামিদ, মোসুমী রহমান মৌ, নাজমা আহমেদ, ফারহানা ফেরদৌস হক, রোমেনা বেগম ও তাবিয়া তাবাসসুমকে অস্থায়ী নিয়োগ দেয়া হয় ২০০৮ সালের ১লা মার্চ থেকে ২০০৯ সালের ২৩শে জুন পর্যন্ত। অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, এসব শিক্ষক নিয়োগে কোন বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি। সাক্ষাৎকার বোর্ড গঠন হয়নি।

ডিজির প্রতিনিধি রাখা হয়নি। তাদের শিক্ষক নিবন্ধন নেই। এসব নিয়োগে গভর্নিং বডির অনুমোদন নেয়া হয়নি। নিয়োগ সংক্রান্ত সার্বিক অনিয়ম বিদ্যমান থাকায় তারা সরকারি ও বেসরকারি কোন বেতনবিধি মোতাবেক প্রাপ্য নয়। কোচিং বাণিজ্য: স্কুলে চলছে কোচিং বাণিজ্য।

পঞ্চম-অষ্টম শ্রেণীর বৃত্তি এবং এসএসসি ও এইচএসসি স্তরেও কোচিং করানো হয়। আর কোচিংয়ের জন্য আদায় করা হয় গলাকাটা অর্থ। ওই অর্থ আবার স্কুল কোষাগারে জমা হয় না। ফলে পুরো অর্থই লুটপাট করা হয়। এব্যাপারে ডিআইএ’র জবাবে অধ্যক্ষ বলেছেন যে, খরচ বাদে কোচিংয়ের গৃহীত সব অর্থই শিক্ষকরা ভাগ-বাটোয়ারা করে থাকেন।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত জবাব গ্রহণযোগ্য নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। টেন্ডার ছাড়া কেনাকাটা: উদয়ন স্কুলের সবচেয়ে বড় ঘটনা টেন্ডার ছাড়া কেনাকাটা এবং ভ্যাট ফাঁকি। এমন ঘটনাও ঘটেছে, উন্মুক্ত টেন্ডার এড়াতে দু’দিনের আগে-পরে লাখ লাখ টাকার কেনাকাটা করেছে। অথচ একসঙ্গে কিনলে সরকারি আর্থিক বিধিমালা অনুযায়ী টেন্ডার করতে হতো।

আবার দু’একটি ক্ষেত্রে টেন্ডার ডাকা হলেও সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেয়া হয়নি। ফলে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ ও আসবাবপত্র কেনার কথা বললেও ওইসব জিনিসপত্রের হদিস পায়নি তদন্ত দল। মজুত হিসাব না থাকায় ক্রয় নিয়ে উঠেছে ঘোরতর অভিযোগ। কম্পিউটার যন্ত্রাংশের মতো কেনাকাটা ঘন ঘন দেখা যায়।

অফিস সরঞ্জাম কেনার কথা বলা হলেও তা রেজিস্ট্রারে উল্লেখ করা নাই। ডিআইএ জানিয়েছে, বিগত দেড় দশক যাবত কোন ধরনের কেনাকাটায় তারা ভ্যাট আদায় করেনি। ফলে কেবল ডিআইএ’র হিসাবে সরকার সব মিলিয়ে কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও স্কুলটির গভর্নিং বডির সদস্য অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক বিষয়ে স্বচ্ছ থাকা প্রয়োজন। অডিটে যেসব বিষয়ে অস্বচ্ছ দেখা গেছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

ভিসি বলেন, অডিটের জবাব দিতে না পারার অর্থ অন্য কিছু বহন করে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। আমি আগেও অডিটের কবাব দিতে বলেছি। এখনও বলছি জবাব দিতে। কলেজের অধ্যক্ষ খালেদা হাবিব বলেন, আমার আমলে কোন দুর্নীতি হয়নি।

আগের প্রশাসনের আমলে এসব দুর্র্নীতি হয়েছে। আমি নিজে উদ্যোগী হয়েই তদন্ত করার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। প্রভাষক পদে যোগদানের পর সরকারি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা কি করে সম্ভব? একজন শিক্ষক কি করে দু’জায়গা থেকে বেতন-ভাতা নিতে পারেন? বরং আমি আরও কম টাকা নিয়েছি। দুদকের মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, হ্যাঁ আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। ওইসময় আমি সবকিছুর উত্তর যথাযথভাবে দিতে পারিনি, তাই দুদক মামলা করেছে।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।