Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience ঘর পালানো সেই ছেলেটি
ছেলেবেলা থেকেই শিল্পকলার প্রতি ছিল তার গভীর আগ্রহ। আর তাই তো মাত্র ষোল বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে সেই দূরের শহর কলকাতায় গিয়েছিলেন কলকাতা গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখার জন্য। সেখান থেকে ঘুরে আসার পর সাধারণ পড়াশোনায় মন বসাতে পারছিলেন না কোনোভাবেই। তাই ১৯৩৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই স্কুলের পড়ালেখার পাট চুকিয়ে কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস-এ ভর্তি হন। তার মা ছেলের আগ্রহ দেখে নিজের গলার হার বিক্রি করে ছেলেকে কলকাতার আর্ট স্কুলে ভর্তি করান।
আর ছেলে জয়নুল আবেদিনও মায়ের এই ঋণ শোধ করেছেন দেশের স্বনামধন্য শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে। জীবদ্দশায় খেতাব পেয়েছেন শিল্পাচার্য হিসেবে। জয়নুল ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলের ছাত্র ছিলেন। ১৯৩৮ সালে কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। জয়নুল আবেদিনের জন্ম ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ জেলার কেন্দুয়ায়।
বাবা তমিজউদ্দিন আহমেদ, মা জয়নাবুন্নেছা। তমিজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন দারোগা। নয় ভাইবোনের মধ্যে জয়নুল ছিলেন সবার বড়। পড়াশোনার হাতেখড়ি পরিবারের কাছ থেকেই। খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকা পছন্দ করতেন।
পাখির বাসা, পাখি, মাছ, গরু-ছাগল, ফুল-ফলসহ আরও কত কি এঁকে মা-বাবাকে দেখাতেন। জয়নুল আবেদিন যেমন ছিলেন একজন শিল্পী তেমনি ছিলেন এদেশের আধুনিক শিল্পকলা আন্দোলনের পথিকৃৎ। মানুষের জন্য শিল্প, শিল্পের জন্য শিল্প নয়। শিল্পকে মানুষের জীবন থেকে আলাদা করা যায় না।
শিল্প যে প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি, প্রতিরোধের অস্ত্র, অধিকার-সাম্য-স্বাধীনতার ভাষা হতে পারে তা আমরা শিল্পাচার্য ও চিত্রশিল্প আন্দোলনের পুরোধা জয়নুল আবেদিনের কাছ থেকে শিখি।
যিনি ১৯৪২-৪৩ সালে দুর্ভিক্ষের নিদারুণ ছবি এঁকে দেখিয়েছেন। যে ছবির মাধ্যমে আজো আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি সেই দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ বাস্তবতা। শুধু দুর্ভিক্ষের ছবি নয়, তার আঁকা প্রতিটি ছবিই একেকটি সময় ও বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। তার আঁকা জলচিত্রগুলোও অসাধারণ। গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্য ও মা-মাটি এবং মানুষের জীবনের নানা বাস্তবতার কথা এই ছবিগুলো।
তার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে শিল্প আন্দোলনের জয়যাত্রা শুরু হয়। চিত্রশিল্পের ক্ষেত্রে তিনি হলেন এ দেশের শিল্পীদের আচার্য। ১৯৩৮ সালে শেষবর্ষের ছাত্র থাকাকালীন কলকাতা গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন।
এরপর ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে দুটো স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হলে জয়নুল পূর্ব বাংলার রাজধানী ঢাকায় চলে আসেন। তিনি কলকাতা আর্ট স্কুলে তার চাকরিটি ছেড়ে ঢাকার আরমানিটোলায় অবস্থিত নর্মাল স্কুলে আর্ট শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
তার শিল্পীখ্যাতি, অসাধারণ সাংগঠনিক মেধা, তৎকালীন শিল্পী সহকর্মী ও বন্ধুদের সহযোগিতা এবং কতিপয় বাঙালি সরকারি কর্মকর্তার সাহায্য ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়েই সম্ভব হয়েছিল ১৯৪৮ সালে এদেশের প্রথম আর্ট স্কুলের প্রতিষ্ঠা। তখন এর নাম ছিল 'গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্টস'। প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে ইনস্টিটিউটকে গড়ে তোলার গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। মাত্র দুই কক্ষের সেই প্রতিষ্ঠানটিকে ১৯৫৬ সালের মধ্যেই তিনি আধুনিক প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করেন। পরবর্তীকালে এটি পূর্ব পাকিস্তান চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়।
আরও পরে মহাবিদ্যালয়টি সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তান্তরিত হয় এবং এর বর্তমান পরিচয় চারুকলা অনুষদ নামে। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলা একাডেমীর সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এই পদে বহাল থাকেন।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর অন্যতম উপদেষ্টা মনোনীত হন। একই বছর জয়নুল বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং আমৃত্যু এই পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। মাত্র ৬২ বছর বয়সেই ১৯৭৬ সালের এই দিনে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুদিবসে আমরা এই মহান শিল্পীকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি।
মে ২৮, ২০১১ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।