আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

::শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন::

আমি তোমাদেরই একজন, খুবই সাধারণ !!! শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন(১৯১৪-১৯৭৬): শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলা আন্দোলনের পথিকৃৎ। শিল্পকলায় অবদানের জন্য তাঁর জীবদ্দশায় তিনি পেয়েছেন শিল্পাচার্য খেতাব। চিত্রশিল্পও যে কোন প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি বা প্রতিরোধের হাতিয়ার অথবা অধিকার-সাম্য-স্বাধীনতার ভাষা হতে পারে তা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন আমাদের দেখিয়েছেন। এই শিল্পী ১৯৪২-৪৩ সালে দুর্ভিক্ষের করুণ ছবি এঁকে আমাদের অন্তর আত্নাকে নাড়া দিয়েছেন। যে ছবি গুলোর মাধ্যমে আজো আমরা সেই দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা ও বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করতে পারি ।

শুধু দুর্ভিক্ষের ছবি নয়, তার আঁকা প্রতিটি ছবিই একেকটি সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে এবং বাস্তব অবস্থাকে আমাদের চোখের সামন্যে তুলে ধরে। আজ এই মহান শিল্পীর ৩৫তম মৃত্যু বার্ষিকী। শিল্পীর শৈশব জীবন: শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা তমিজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন পুলিশের দারোগা। মা জয়নাবুন্নেছা গৃহিনী।

নয় ভাইবোনের মধ্যে জয়নুল আবেদিন ছিলেন সবার বড়। পড়াশোনার হাতেখড়ি পরিবারের কাছ থেকেই। খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকা পছন্দ করতেন। পাখির বাসা, পাখি, মাছ, গরু-ছাগল, ফুল-ফলসহ আরও কত কি এঁকে মা-বাবাকে দেখাতেন। ছেলেবেলা থেকেই শিল্পকলার প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল।

মাত্র ষোল বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে তিনি বন্ধুদের সাথে কলকাতায় গিয়েছিলেন শুধু মাত্র কলকাতা গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখার জন্য। আর্টস স্কুলে ভর্তি: কলকাতা গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখে আসার পর সাধারণ পড়াশোনায় জয়নুল আবেদিনের মন বসছিল না। তাই ১৯৩৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই স্কুলের পড়ালেখার বাদ দিয়ে কলকাতায় চলে যান এবং মায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস-এ ভর্তি হন। তাঁর মা জয়নুল আবেদিন আগ্রহ দেখে নিজের গলার হার বিক্রি করে ছেলেকে কলকাতার তখন আর্ট স্কুলে ভর্তি করান। পরবর্তীতে ছেলে জয়নুল আবেদিনও মায়ের সেই ভালবাসার ঋণ শোধ করেছেন দেশের স্বনামধন্য শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে।

জয়নুল আবেদিন ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলে পড়েন। ১৯৩৮ সালে কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর কর্ম ও জীবন: শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ছিলেন এদেশের চিত্রশিল্প আন্দোলনের পুরোধা। যিনি শুধু দুর্ভিক্ষের ছবি নয় গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্য ও মা-মাটি এবং মানুষের জীবনের নানা বাস্তবতার কথা তুলে ধরেছেন তাঁর ছবির মাধ্যমে। তার আঁকা জলচিত্রগুলোও পেয়েছে এক অসাধারণ ভিন্নমাত্রা।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে শিল্প আন্দোলনের জয়যাত্রা শুরু হয়। চিত্রশিল্পের ক্ষেত্রে তিনি হলেন এ দেশের শিল্পীদের আচার্য বা শিক্ষক। তিনি ১৯৩৮ সালে শেষবর্ষের ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায় কলকাতা গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে দুটো স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হলেতিনি পূর্ব বাংলার রাজধানী ঢাকায় চলে আসেন। কলকাতা আর্ট স্কুলে তাঁর চাকরিটি ছেড়ে ঢাকার আরমানিটোলায় অবস্থিত একটি স্কুলে আর্ট শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

তার শিল্পীখ্যাতি, অসাধারণ সাংগঠনিক মেধা, তৎকালীন শিল্পী সহকর্মী ও বন্ধুদের সহযোগিতা এবং কতিপয় বাঙালি সরকারি কর্মকর্তার সহযোগীতা সবকিছু মিলিয়ে তিনি ১৯৪৮ সালে এদেশের প্রথম আর্ট স্কুল "গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্টস" প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে ইনস্টিটিউটকে সুন্দর ভাবে গড়ে তোলার গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেন । মাত্র দুই কক্ষের সেই প্রতিষ্ঠানটিকে ১৯৫৬ সালে ৮ বৎসরের মাথায় তিনি একটি আধুনিক শিল্পকলা প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত করেন। পরবর্তীতে এটি পূর্ব পাকিস্তান "চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়" হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ "চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে" রূপান্তরিত হয়। তারপর মহাবিদ্যালয়টি সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তান্তরিত হয় এবং বর্তমানে এটি "চারুকলা অনুষদ" নামে পরিচয় লাভ করে ।

১৯৭২ সালে তিনি বাংলা একাডেমীর সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি এখানে কাজ করেন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর অন্যতম উপদেষ্টা মনোনীত হন। একই বছর জয়নুল বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। মাত্র ৬২ বছর বয়সেই ১৯৭৬ সালের ২৮শে মে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মৃত্যুবরণ করেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আঁকা কিছু বিখ্যাত ছবি: ছবি: গ্রামীন নারী।

ছবি: সাঁওতাল নারী মূলছবি। ছবি: সাঁওতাল নারী ছবিটির আধুনিক রুপ। ছবি: দুই নারী। ছবি: গাভীর রাগ। ছবি: তাঁর বিখ্যাত ছবি "দ্যা স্ট্রাগল" ছবি: বৃদ্ধ।

তাঁর আঁকা দুর্ভিক্ষের ছবি: ছবি: দুর্ভিক্ষ-১৯৪৩। ছবি: দুর্ভিক্ষ-১৯৭১ ছবি: দুর্ভিক্ষ-১৯৭১ ছবি: দুর্ভিক্ষ-১৯৭১ আরো ছবি দেখতে ক্লিক করুন-> শিল্পাচার্যের ছবি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন তাঁর প্রতিষ্ঠিত চারুকলা অনুষদের পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গণে চির শায়িত আছেন। তথ্যসূত্র ও ছবি :- ইন্টারনেট, বিভিন্ন দৈনিক ও উইকিপিডিয়া-> শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.