আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রমোশন এবং এক জোড়া স্থির চোখ

আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা । বিনোদন পাতার সেকশনে ক্যাটরিনার ফিগার মেইনটেইনের বর্ণনায় নিজের ভেতর উদ্দামতা টের পাওয়া , দামী কোন পোশাক পরলে সামনের ঈদের ফজিলত হাসিল হবে ভাবতে ভাবতে পত্রিকার পাতা উল্টেপাল্টে দেখছিলো নেলি । বয়স হবে তার বত্রিশের ঘরে । বিবাহিতা হয়েও এই বয়সে টানটান ফিগার ধরে রেখেছে বলে সহকর্মীদের সপ্রশংস দৃষ্টির আনন্দ প্রতিদিন মেখে নিতে পারে । পত্রিকার আগপাশতলা দেখে নিলে বাড়ি ফিরে প্রতিবেশীর ম্যারিজ এনিভার্সারীতে কি পরবে ভাবতে ভাবতে তার টেবিলের সামনে একজন বসে পড়লো ।

আনইম্প্রেসিভ চেহারার এক মেয়ে । বয়স খুব বেশী হলেও পঁচিশ-ছাব্বিশ । না বলে কয়ে চেয়ারে বসে পড়ায় বিরক্ত হলেও চার বছরের চাকরীতে আত্মস্থ করে নেওয়া পেশাদারিত্বের কারণে বিরক্তিকে চেহারায় আনতে দিলোনা । এমন অজস্র মানুষ প্রতিদিন তার টেবিলে আসবে এটা জেনেই চাকরীতে ঢুকেছিলো সে । মেয়েটির কাছে তার কাছে আসবার কারণ জিজ্ঞাসা করবার পর ঘটনা শুনে বুঝতে পারলো যে তার কোন রিস্ক নেওয়া আদৌ উচিত হবেনা ।

মানবাধিকার সংস্থা মানেই যে গরীব-গুর্বো , হাভাতে যে কারোর মানবাধিকার সংরক্ষণের নিশ্চয়তা প্রদান করা এমন অবশ্যই হতে পারেনা । কিন্তু আবাল পাবলিককে বোঝাবে কে ? নাহলে সামনের পাড়া থেকে স্বামীকে মাইক্রোবাসে করে তুলে নেওয়ার ঘটনায় কেউ এখানে আসে ? নেলির সামনে আসন্ন প্রমোশনের অপার সম্ভাবনা । কোনভাবেই এই সুযোগকে বিপন্ন করতে সে ইচ্ছুক নয় । মেয়েটিকে কিভাবে ট্যাকল করা যায় ভাবতে ভাবতে তার রুমের টেলিফোন বেজে উঠলো । অপর প্রান্তের কন্ঠস্বর এবং কথাবলার বিষয়বস্তু তার টেবিলের সামনে থাকা মেয়েটির বিষয়ে নেলির সিদ্ধান্ত নেওয়াকে সহজতর করলো ।

মেয়েটিকে আরেকদিন আসতে বললো । বিড়ম্বনার সূত্রপাতটা এখানেই । তারপর থেকে মেয়েটি প্রায়ই নেলির কাছে আসতো । নিঁখোজ স্বামীকে খুঁজে দেবার জন্য দ্বারস্থ হতো নেলির । সরাসরি কোন রূড় কথা কিংবা স্পষ্ট সত্য বলবার কোন অবকাশ নেলির প্রতিষ্ঠান তাকে দেয়নি ।

উপরুন্তু সামনের সম্ভাব্য প্রমোশন আরো বেশী করে তার উপর সেলফ - সেন্সরশীপের দেয়াল তৈরী করে দিয়ে বসে আছে । এমতবস্থায় মেয়েটিকে সস্তা গোছের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে যাওয়া ছাড়া নেলির করণীয় কিছু রইলোনা । বিষয়টি প্রায় রুটিনমাফিকই হয়ে গেলো তার জন্য । এভাবে আরো ৩ -৪ বার ঘটে যাবার পর মেয়েটি আর না আসলে হাঁফ ছেড়ে বেঁচে গিয়েছে বলে নেলির মনে হলো । সামনের প্রমোশনের জন্য আরো দুইটি নিরাপদ ঘরানার স্টোরী করে ব্যাপক জনপ্রিয় হলো সে ।

আরবান মিডলক্লাস এভাবেই এগোয় । মস্তিষ্ক খাটিয়ে এভাবেই উঠে গেলো নেলি । বিষয়টা এভাবেই শেষ হতে পারতো । এমন ঘটনা অহরহই ঘটে । কোথাকার কোন মেয়ের স্বামীকে তুলে নিয়েছে এই নিয়ে প্যাতপ্যাতে সেন্টিমেন্টে ভোগার কোন কারণ নেলির থাকতে পারেনা ।

কিন্তু বিপত্তিটা ঘটলো যখন নিজের বড় বোনের ছেলেকেও এভাবেই মাইক্রোবাসে করে তুলে নেওয়া হলো । নেলির মত আত্মীয় থাকতেও তার কোন সুরাহা করা গেলোনা । উপর থেকে নির্দেশ আসলো তার বড় বোনের ছেলের উপর থানায় মোটা মোটা ফাইল বছর দেড়েক যাবত জমাই ছিলো । তার সম্পর্কে কনফার্মড হবার পরই তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে । অফিস থেকে প্রমোশনের সংবাদের আনন্দ অন্যদিকে পৃথিবী থেকে বড় বোনের ছেলের নিশ্চিত এক্সিটের খবর বোনকে জানাবার প্রচন্ড মানসিকচাপের দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত নেলি অফিস থেকে বেরিয়ে বহুদিন পর রাস্তায় মেয়েটিকে দেখতে পেলো ।

মেয়েটি তার দিকেই স্থির চোখেই তাকিয়ে আছে নির্ণিমেষ । কোন অবস্থাতেই এই মেয়েটির সামনে নেলির অপ্রতিভবোধ করবার কিছু ছিলোনা । কিন্তু আজকে পরিস্থিতি সম্পুর্ণই ভিন্ন । না চেনার ভান করে চোখ নামিয়ে অপরদিকে তাকাতেই দেখলো এক নেড়ি কুকুর মুতে ভাসিয়ে দিচ্ছে । নিজের প্রমোশনের সাথে দৃশ্যটির প্রতিকী সামঞ্জস্য অনুভব করে আরেকদফা নেলির অপমানবোধ ।

মাথা উঁচিয়ে তাকালে দেখতে পেতো মেয়েটি তখনও তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।