আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।
ধারালো ছুরি , রাতের আলো-আঁধারের খেলায় উজ্জ্বল দেখানো পিস্তল । ভিকটিমের ভয়ার্ত মুখ , কাতর ধ্বনি । হারামীর বাচ্চাদের বেঁচে থাকবার আকুতি , ভয়ে শুয়োরের জাতগুলার পেচ্ছাব করে দেওয়া । তাদের পেচ্ছাবের গন্ধ , নিজের হাতে মিশে যাওয়া বাঞ্চোতদের রক্ত ।
সেই রকম ফিলিংস । এই পিনিকের সীমা নেই ।
নিজের ডেরায় চুপচাপ বসে যখনই এভাবে ভাবনা আসে জলিলের পাগল পাগল লাগে । জলিল তীব্র আনন্দে ভোগে । জলিলের পরিবার নেই ।
বউ - বাচ্চার ঝুট-ঝামেলা নেই । পেছন থেকে টেনে ধরে এমন কোন এলিমেন্ট নেই । জলিল বাঁচতে চায় নিজের জন্য , জলিল বাঁচে নিজের জন্য । বিছানা ভিজিয়ে দেওয়ার বয়স থেকেই দেখে এসেছে বইপত্রে ভালো ভালো কথাবার্তা লিখনেওয়ালা , বলনেওয়ালা প্রত্যেকটা শালাই আস্ত হারামখোর । যেদিন প্রথম জেনেছিলো টাকা-পয়সার সাহায্যের জন্য বিধবা মাকে হাইস্কুলের হেডমাস্টারের বিছানায় টানা ৫ বছর যেতে হয়েছে জলিলকে আর কনামাত্র বেঁধে রাখা যায়নি ।
মিথ্যা জমির মামলায় বাবার ফেঁসে যাওয়া , ফের মৃত্যু যদি জলিলকে রাগের অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করে তবে সেই হারামী হেডমাস্টার জলিলের মনে বারুদ জ্বালিয়ে দিয়েছে । সব কয়টা নিরীহ ভালো মানুষের উপরেই তখন থেকে প্রচন্ড রাগ পুষে এসেছে জলিল । এই জলিল কুল কাস্টমার কিন্তু ব্রুটাল । এই জলিল কাছের মানুষদের জন্য জান লড়িয়ে দিতে পারে কিন্তু শত্রুদের এক ইঞ্চিও ছাড় দেয়না । এই জলিল দয়ামায়াহীন , এই জলিল অতীত মনে করে নীরবে কাঁদে ।
উঠে পড়তে যাবে এমন সময়ে পিছন থেকে কানে কথা ভেসে আসে ,
" ওস্তাদ , শিহাব তো ডিস্টার্ব করতেছে বহুত । তিন মাস হইলো সলিমের কাইড়া নেওয়া জমি ছাইড়া দিতে বলতেছি । খালি ঘুরায় । দিচ্ছি , দিমু কইরা কাটাইয়া দিতেছে । কেমনে কি ? "
ভাবের জগত থেকে বাস্তবে ফেরে জলিল ।
স্বভাবজাত ঠান্ডা স্বরে জিজ্ঞেস করে , " নতুন আসছে ওসি ওই শালায় কাহিনী জানে ? "
" হ , কিন্তু সাড়াশব্দ নাই হারামজাদার । মনে হয় পেটে এর মধ্যেই মাল দিয়া দিছে শিহাব । ইদানিং নানা জায়গায় বহুত খরচাপাতি করতেছে শুনি । "
নিজের কবজ়ি নাচালো জলিল দুইবার । তার মুদ্রাদোষ , কাজটা করতে বেশ ভালো লাগে তার ।
সাধারণত ফাইনাল কিছু ভেবে নেওয়ার আগে অথবা কোন গুরুত্বপুর্ণ তথ্য জানবার আগে কাজটা করে থাকে সে । এবারে প্রশ্ন করে , " শিহাবের ঘর - পরিবারের কি অবস্থা ? বিয়ে - শাদী করছে ? বাচ্চা কয়টা ? "
" বিয়া করছে তো সেই বছর দেড়েক হইবো । বাচ্চা এখনো হয়নাই । বউটা বাঁজা কিনা কে জানে । বুড়া মায় সারাদিন বউটারে গাইল্লায় ।
আর আছে একটা ছোট বোন । বয়স হইবো আঠারোর মতো । সেইরাম জোশ । "
বলতে বলতে জলিলের সাগরেদ একরামের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে । জলিল গরম হয়ে উঠে ।
জলিল আনফরগিভিং , ক্রুয়েল কিন্তু স্পেসিফিক কিছু নর্মস মেইনটেইন করে চলে বরাবর । তার উপস্থিতিতে মেয়েমানুষ নিয়ে কোন বেলেল্লাপনা , নষ্টামী বেঁচে থাকতে চলবেনা । আজ পর্যন্ত যত খুন করেছে মেয়েমানুষ নিয়ে কাউকে কোন ফষ্টিনষ্টি করতে দেয়নি । শীতল চোখে একরামের দিকে তাকাতেই একরাম সেই ভাষা পড়তে পারলো স্পষ্ট । বুঝতে পেরে মিইয়ে গেলো ।
নতুন ওসি আরশাদ হৃষ্টচিত্তে চেয়ারে বসে আছে মিনিট দশেক যাবত । এক ফকিন্নীর পুতের জমি নিয়ে এক ক্যাচাল বেঁধেছে তার এখানে আসবার সাথে সাথেই । কালপ্রিট শুরুতেই মোটা অংকের ক্যাশ একেবারে হাতে গছিয়ে দিয়েছে । তাও বাড়িতে আমন্ত্রণ করে । এই অজাত-কুজাতদের এলাকায় এমন সূচনা কল্পনাই করতেই পারেনি ।
তার উপর একটা বিশেষ এনকাউন্টারের কেইসে এপোয়েন্টেড হয়েছে । মালটাকে ফিনিশ করতে পারলে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে আরো ভালো জায়গায় পোস্টিং নিশ্চিত । পুলিশের বড় কর্তার সুনজরে না থাকলে এমনটা হতোই না । আরশাদ এক কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে কিছু খুচরা ফাইলে চোখ বুলায় ।
টেবিলে ঠক করে পিস্তল রাখবার শব্দে হকচকিয়ে যায় আচমকা ।
মুখ খারাপ করতে যাবে এমন সময়ে সামনের বসা মালটাকে দেখে গালিটা গিলে নিলো । এই সময়ে একেবারেই রোয়াব দেখানো যাবেনা । সব গুবলেট হয়ে যাবে ।
" তা আরশাদ সাহেব , দিনকাল যায় কেমন ? নতুন আসলেন কথাও তো হইলোনা ভালোমতো । " হাসতে হাসতে জলিল বলে ।
" এই তো ভাই । আমিই আপনার সাথে সাক্ষাত করতাম । আপনি খামাখা কষ্ট করলেন । " তেলতেলে হাসি দিয়ে ওসি আরশাদ সহজ হবার চেষ্টা করে ।
তাতে কাজ হয়না ।
স্পষ্ট কন্ঠে অপর প্রান্ত থেকে শোনে " শিহাবের জমির কেসে যা নিছেন সেটা ধরবোনা । তবে কেসটায় নিজের সাইড চেঞ্জ করেন । টাকা - পয়সার থেকেও তো ইম্পরট্যান্ট জিনিস আছে কি বলেন ? বেঁচে থাকলে ওরকম কত কেস আসবে - যাবে । টেনশন কিস বাত কে লিয়ে ? " সদ্য দেখা হিন্দী মুভির ডায়লগ ঝেড়ে বিমলানন্দ পায় জলিল ।
মেসেজ বুঝে আরশাদ নিজেকে ঠান্ডা রাখবার প্রাণপন চেষ্টা করে ।
আশ্বাস দিয়ে জলিলকে বিদায় করবার পরেই কোথাও ফোন করবার চেষ্টা করে । পেয়েছিলো কি পায়নি জানা যায়না ।
ভরপেট দুটা খেয়ে অবশেষে সলিমকে সাথে নিয়ে একশনে যেতে ধরেছে জলিল । শিহাব হারামজাদাকে নিজে গিয়ে বলে এসেছিলো জমিটা ছেড়ে দিতে শোনেনি । প্রিয় রিভলবারটাকে ঘষা-মাজার কারণে এই রাতের বেলাতেও উজ্জ্বলতা স্পষ্ট বুঝতে পারছে ।
একটা স্ট্রিটল্যাম্পের আলোয় যখন জিনিসটাকে পরিষ্কার , চকচকে দেখতে পেলো বড্ড ভালো লাগলো জলিলের । ভাবছে আজকের একশনটার পর কিছুদিন যশোর বেড়িয়ে আসবে । একটা ঠিকাদারীর কেস ধরবে প্লাস এক পুরনো বন্ধুর বাড়ি ঘুরে আসবে । সেই ব্যাটা অর্থকষ্টে আছে বলে শুনেছে । গিয়ে তার একটা রফা করে আসবে ।
পুনরায় একরামের আওয়াজ শুনে ক্ষিপ্ত হয় । শালা আবারো শিহাবের বোনটাকে নিয়ে শুরু করেছে । সেদিনের চোখ রাঙ্গানী মনে হয় ভুলে বসে আছে । গন্তব্যের কাছাকাছি যেতেই জলিল ঠিক করে সম্ভাব্য ভিকটিম বদলাবার । কোমর থেকে জিনিসটা নামাতে নামাতেই গাড়ির হেডলাইটের তীব্র আলোতে চোখ ধাঁধিয়ে উঠলো ।
সলিমকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করেছে একরাম আর জলিলের বাকী দুই সাগরেদ । শুয়োরের বাচ্চা বলে একরামের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে যাবে জলিল পেছন থেকে মাথায় রডের বাড়িতে তার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যায় । পরপর তিনটা গুলিতে জলিলের পাঁজর দফারফা হয়ে যেতে যেতে পরিষ্কার হয় পুলিশের ইনফরমার হিসাবে একরামকে টোপ গেলানোর আইডিয়াটা একটা মাস্টারপ্ল্যান ছিলো । একরাম সমেত আরশাদ দাঁড়িয়ে বিগলিত ভঙ্গীতে হাসতে থাকে । এইবার প্রমোশন তার পাক্কা ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।