বাংলায় কথা বলি,বাংলায় লিখন লিখি, বাংলায় চিন্তা করি, বাংলায় স্বপ্ন দেখি। আমার অস্তিত্ব জুড়ে বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ।
বেশ কিছু দিন আগে আমি ইত্তেফাকে প্রকাশিত একটি লেখা আমার এই ব্লগে কপি-পোস্ট করেছিলাম। সেখানে জনৈক রবিউল সাহেব তার দু:খের কথা বলেছেন। তিনি একটি সরকারী কলেজে প্রভাষক পদে যোগ দিয়েছিলেন।
কিন্তু কোন প্রমোশনের সম্ভবনা ছিল না। সম্ভবত তিনি ডিভি লটারি জিতে আমেরিকায় সেটেলড হয়েছেন। কিন্তু সবার কপালে তো আর ডিভি লটারি জুটবে না। তাই যাদের কপালে কখনোই কোন প্রমোশনের সম্ভাবনা নেই তারা কি সারা জীবনই হতাশায় কাটাবেন? যে কারো কাছ থেকে ভাল সার্ভিস পেতে চাইলে তার মনে উৎসাহ জাগিয়ে রাখতে হয়। প্রমোশনের হাতছানি হল সেই উৎসাহ।
যেখানে কোন প্রমোশনই নেই সেখানে মানুষের কাজের উৎসাহ আসবে কোন খান থেকে???
তবু তো সরকারী কলেজে প্রমোশন হয়। বেসরকারী কলেজে তো মৃত্যুর আগেও প্রমোশন হবার সম্ভাবনা নেই। মারা গেলে তার প্রমোশন হয় সাবেক প্রভাষক! হায় রে নিয়তি। এই তো আমার দেশ। ২৬/২৭ বছর বয়সে যে লোকটা প্রভাষক পদে চাকরি শুরু করল ৫৭ বছর বয়সে সে যখন চাকরি শেষ করবে তখনো তার পদবী থাকবে প্রভাষক।
আমি আমার কর্ম জীবনের শুরুতে একটি বেসরকারী কলেজে আড়াই বছর কাজ করেছি । সেখানে জনাব হরিদাস মন্ডল নামে এক জন প্রভাষক ছিলেন। তিনি ৫৭ বছর বয়স পার হয়ে যাওয়ায় আবেদন করে অতিরিক্ত সময় চাকরি করছিলেন। কিন্তু তার পদবী ছিল প্রভাষকই। আর আমি সদ্য পাস করে বের হয়ে প্রভাষক হয়েছিলাম।
এক বার কেউ কি ভেবে দেখবেন এটা কতটা অমানবিক। এ কোন দেশে বসবাস করছি আমরা!
তবে সরকারী কলেজগুলোর তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অতি দ্রুত প্রমোশন হয়। আমার সহপাঠী যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছিল তারা অনেক আগেই সহকারী অধ্যাপকের গন্ডি পেড়িয়ে গেছে। কখন যে তারা প্রফেসর হয়ে যাবে তারা তা জানতেও পারবে না।
এই তো গেল কলেজ আর বিশ্ববিদ্যায়লের কথা ।
এবার আসুন দেখি অন্যান্য সরকারী চাকরির কি অবস্থা। সরকারী প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে সব চেয়ে খারাপ আছে মনে হয় কৃষি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তাদের প্রমোশন সহজে হয় না বলেই জানি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের জেলা কৃষি কর্মকর্তা হবার ভাগ্য খুব কম লোকেরই হয়। তাই কৃষির চাকরি মহত হলেও প্রমোশনের কোন মজা এতে নেই।
কৃষি ক্যাডারের কোন কর্মকর্তা কেউ থাকলে আওয়াজ দিয়েন!
তবে খুব দ্রুত প্রমোশন হয় পররাষ্ট্র ক্যাডারে যারা চাকরি করে তাদের। যেখানে সচিবালযে ডেপুটি সেক্রেটারির হতে গেলে দম বের হয়ে যায় সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে কখন যে মানুষ যুগ্ম সচিব হয়ে যায় টেরও পাওয়া যায় না।
তারপরও বলা যায় যে, প্রথম শ্রেণীর সরকারী চাকরিতে প্রমোশন হয়। কিন্তু বাংলাদেশে দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে কোন প্রমোশন নেই! এই সব চাকরি যারা করে তারা আসলেই এক ধরনের অভাগা। তারা একটি প্রমোশনের আশা করেন।
কিন্তু কোন এক অদৃশ্য কারণে তাদের বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ের কারোই নজরে আসেনা। বাংলাদেশের সরকারী চাকরিতে বেশী দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা আছেন মনে হয় প্রাথমিক শিক্ষায়। উপজেলা/থানা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাগণ হলেন বিরাট সংখ্যক । অথচ তাদের প্রমোশন পেতে হলে ভয়ানক বেগ পেতে হয়। বেশীর ভাগেরই জীবনে কোন প্রমোশন জুটে না।
যদি কারো জুটে তিনি মহাভাগ্যবান। তাকে স্যালুট!
বাংলাদেশে আরেক বিরাট দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা হলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা গণ। এই শ্রেণীর কর্মকর্তাগণ চাকরিতে ঢুকেন দ্বিতীয় শ্রেণীতে। মরার আগ পর্যন্ত কোন প্রমোশন তারা পাননা। এটা যে কত কষ্টের তা যারা এই সব চাকরি করেন তারাই বুঝেন ভাল।
প্রথম জীবনে পরিচয় দিতে পারলেও শেষ জীবনে কোন পরিচয় দেয়া যায় না। কারণ কেউ যদি জিজ্ঞেস করে বসে ২০ বছর আগেও শুনেছিলাম আপনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এখনো তাই তাই আছেন! রহস্যটা কি বলেন তো রহমান সাহেব??
এমন একটা সময় ছিল যখন দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কম ছিল। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকুরীতে এখন অনেক যোগ্য প্রার্থীরা আসছেন।
এদের বেশীর ভাগই এক বা একাধিকবার বিসিএস এর ভাইভা ফেস করে এসেছেন। কিন্ত হয়তো বা কপাল মন্দ হবার কারণে অথবা পদ কম থাকার কারণে নির্বাচিত হতে পারেননি। তাই যোগ্যতার দিক দিয়ে তারা প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্মাদের চেয়ে কোন অংশেই কম নন।
প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তারা কাজে জয়েন করার পর তাদের অনেক অনেক ট্রেনিং দেয়া হয়। কিন্তু যারা দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে জয়েন করে তাদের কোন ট্রেনিং হয় না।
তারা নিজে নিজেই কাজ শিখে। এমন একটা সময় আসে যখন তারা প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের চেয়ে অনেক বেশী কাজ জানে। অথচ তার পরও তাদের কোন প্রমোশন হয় না। তাদের প্রমোশন দেয়া হলে সরকারী দফতর গুলোতে কাজের গতি বাড়বে। নইলে কাজে স্থবিরতা আসলে খামোখা তাদেরকে দোষারোপ করা চলে না।
তারা তো ভাবতেই পারে- কাজ করলেও আমি রহম আলী, কাজ না করলেও আমি রহম আলী। তাই খামোখা কেন কাজ করতে যাবে??
বাংলাদশ সচিবালয়ে এবং অন্যান্য সরকারী দফতরে কর্মরত দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাগণই মূল চালিকা শক্তি। যে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তায়নের ক্ষেত্রে মূল কাজগুলো তারাই করেন। বাংলাদেশ সরকারের দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাগণ বহুদিন ধরে নানাবিধ সমস্যার মধ্য দিয়ে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সূচারুভাবে পালন করছেন। সরকারী সকল প্রকার নথিপত্রে দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাগণ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত হলেও বাস্তবে তাদেরকে বিবেচনা করা হয় নিু শ্রেণীর কোন স্টাফ বলে যা সংশ্লিষ্টদের মাঝে নিদারুণ মর্মবেদনা ও ক্ষোভের উদ্রেক করে।
তাদের মাঝে নানাবিধ সমস্যা থাকলেও আজ পর্যন্ত তাদের সমস্যার ব্যাপারে কেউ নজর দেননি। ফলে তাদের বঞ্চনার বাণী নিরবেই গুমড়ে মরছে।
পিএসসি-ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রতিযোগিতামুলক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতা প্রমাণ করে নিয়োজিত হলেও তারা যাদের যোগ্যতা অনুসারে কোন মূল্যায়ন পাচ্ছেন না। ফলে তাদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা, বাড়ছে হাহাকার। দ্বিতীয় কর্মকর্তাদের কোন প্রমোশন নেই।
একই পদে যোগদান করে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সেই পদ ধারণ করেই কবরে যেতে হয়।
যে কোন চাকরিতেই প্রমোশন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কাজে গতিশীলতা আনতে এবং মেধাকে কাজে লাগাতে প্রমোশন একটি পুরস্কার হিসাবে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে। একটি নির্দিষ্ট সময় পর তাদের প্রমোশনের ব্যবস্থা থাকা উচিত। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এটি বিষয় যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের প্রমোশনের ব্যবস্থা আছে, যাতে করে তারা তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের সেবা করতে পারে। বাংলাদেশেও এটা এখনই করা দরকার। দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাগণকে একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমোশনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ফলে প্রতিযোগিতা বাড়বে। কাজে আগ্রহ বাড়বে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।