আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার প্রথম বিসিএস দেবার অভিজ্ঞতা! নকল করিয়া ধরা খাইলাম!

নিজেকে আজ চিনতে বড় কষ্ট হয় সকাল ৭ টায় ঘুম ভাঙ্গার পরেই মনে হল। মরার এই বিসিএস দিতে যাওয়ার কোন মানে হয়না। বিসিএস এর জন্য বই কিনেছিলাম সর্ব সাকুল্যে মাত্র একটা, ২০ টাকা দিয়ে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের স্পেশাল বিসিএস এডিশন টা। তাও গতকাল রাতে আমার বর আমাকে একটা পেজ বার করে দিয়ে বলেছিল, ‘এই আধ পাতা পড়, ওয়ার্ল্ড কাপ সেকশন, এখান থেকে অবশ্যই একটা না একটা কমন পাবে’। আমিও চোখ বুলিয়ে নিয়েছিলাম।

তাও কমন আসেনি । খেলাধুলা থেকে কোন প্রশ্নই আসেনি! যাইহোক, এই অবস্থা নিয়ে কোন পরীক্ষা দিতে যাওয়ার কোন মানে হয় ? সবচেয়ে চিন্তার বিষয়, আমার পাশের জন যদি আমার কাছে সহজ কোন প্রশ্নের উত্তর জানতে চায়, তখন আমার প্রেস্টিজের কি ফালুদা টাই না হবে !!! এই চিন্তা মাথায় নিয়ে আবার ঘুম দিব ভাবলাম, কিন্তু আমার সুখ দুনিয়ার মানুষের সহ্য হল না। শুরু হল ঝামেলা, আমি না গেলে এ জাবেনা, এ না গেলে ও যাবে না। চেইন অব রিয়াকশন যাকে বলে আর কি। কি আর করা!! অগত্যা বাধ্য হয়ে শখের ঘুম মাটি করে বেলা সাড়ে আট টায় রওনা হলাম।

সিট কি আর যে সে যায়গায় পরেছে? সদরঘাট কলেজিয়েট স্কুল। সাড়ে ৯টায় পৌছে দেখি, যত টা সিট, পরীক্ষার্থী তার চেয়ে অনেক বেশি। ভাগ্য ভাল আমরা সিট পেলাম, অনেকে সিট না পেয়ে ফাকে ফাকে বসে গেল। সামনে বসল বান্ধবি কামরুন, ওর বায়ে সামারা। আমিতো ধরেই নিয়েছি এইবার ওদের জালায় মেরে আমি ঠিকি সব আনসার করব।

কিছু না পড়ে ভালোই করেছি। এর মাঝে আমার পাশের হলুদ জামা পরা আপুকে জিজ্ঞেস করতেই আপু বলল, গত বার দিয়ে তার হয়নি, এবার ভাল ভাবে পড়েছেন। বাংলা, আন্তর্জাতিক বিশ্ব আর সাধা্রন জ্ঞ্যানে একটু ভালো প্রিপারেশন। অন্য গুলো মোটামুটি। ।

এরপর প্রশ্ন পেলাম। সৌভাগ্যবশত আমার আর পাশের আপুর একই সেট পরলো, সেট ২। আমি শুরু করলাম যোগ বিয়োগের কিছু বোরিং অংক দিয়ে। আপুর দিকে তাকিয়ে দেখি, উনি প্রথমেই পাতা উলটে বাংলা ভাগ বের করলেন এবং একটানে বাংলার ২০ টা প্রশ্ন দাগিয়ে ঘর পু্রণ করে ফেললেন। তার দাগানোর স্টাইল আর কনফিডেন্স দেখে আমি বুঝে গেলাম, উনি এমন ভাবে বাংলা পড়েছেন, সব কমন!! এদিক ওদিক তাকালেন না, একটুও ভাবলেন না।

এক নিঃশ্বাসে তার বাংলার সেকশন পুরণ করা শেষ। এরপর আমি দুটো অংক করতে করতে দেখলাম, উনি ২০টা সাধারন জ্ঞ্যনের প্রশ্নও দাগিয়ে ফেললেন। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপু প্রশ্ন কেমন হয়েছে? কমন পরেছে?’ খুব ব্যস্ত ভঙ্গিতে আপু উত্তর দিলেন, ‘হা মোটামুটি ভাল’ । এরপর আমি নিজের প্রশ্নের দিকে নজর দিলাম। বাংলা আর সাধারন জ্ঞ্যনের অংশ দেখে আমার গলা শুকিয়ে গেল।

বাংলা একটাও কমন না। সাধারন জ্ঞ্যনের ২/৩ টা পারলাম। সাথে সাথে মাথায় দুস্টবুদ্ধি উকি দিল!! পাশেই আপু সব আনসার করেছে। একি সেট, সব ক্লিয়ার দেখা যাচ্ছে, এত ভাবা ভাবির কি আছে, মেরে দেই!! যেমন ভাবা তেমন কাজ, বাংলা পুরোটাই উনার দেখাদেখি হুবহু মেরে দিলাম । সাধারন জ্ঞ্যানের প্রশ্ন ৬১ থেকে ৮০ ও উনার দেখে পুরণ করতে যাচ্ছি, কয়েকটা করেও ফেলেছি।

এর মাঝে খেয়াল করলাম, ৬৩ নম্বর এর উত্তর আমি আগেই ‘খ’ পুরন করেছি, আপু দিয়েছেন ‘গ’। কি বেপার!!! আমি তো আন্দাজে কিছু দাগাইনি। ভুল করলাম নাকি!! প্রশ্ন খুলে চেক করে দেখি, ‘এল ও সি’ রিলেটেড প্রশ্ন, যা শুধু ‘ইন্ডিয়া আর পাকিস্তান’ ই হবে। মানে আপু ভুল দিয়েছেন। উনাকে বললাম আপু ৬৩ এর উত্তর খ হবে।

উনি পাত্তাই দিল না। এরপর বসে উনার বাকি উত্তর গুলো দেখছি, ইংলিশের যেগুলো পারিনি সেগুলো উনি যদি পেরে থাকেন এই আশায়। মাঝে আবার আটকায় গেলাম। ৫১, ৫২, ৫৩ এর আনসার উনি ভুল দিয়েছেন। ভলান্টারি, আক্সিলারেট ও সুনামির স্পেলিং!! সুনামি স্পেলিং এ ‘টি’ দিয়ে শুরু হয় এমন উত্তর দেওয়া আছে মাত্র একটা, বাকি গুলো ‘এস’ দিয়ে শুরু, সুতরাং কনফিউশনের কোন কারন দেখিনা।

এইবার মনে করে ভয় পেলাম, আমাদের সেট আলাদা না তো!! আবার চেক করলাম। না দুজনেরি সেট ২!! বুঝলাম উনি ইংলিশে মনে হয় দুর্বল। সো ইংলিশে আর উনার উত্তর কপি করলাম না। দেখলাম, বাকি যে গুলো আমি পেরেছি, সবই উনি ভুল দাগিয়েছেন। আরেকবার ডাকলাম, ভাবলাম উনি যদি মুছে/কেটে ঠিক করতে পারেন।

এম্নিতেই ভুলের জন্য উনার নেগেটিভ মার্ক আসবে, কাটাকাটি হলে আর কি বা হবে। হয়ত উনার জন্য বিসিএস টা আসলেই দরকার!! আমাদের মত আহ্লাদ করে হয়ত দিচ্ছেন নাহ! এবারো উনি পাত্তা দিলেন না। তাকালেন ও না! অগত্যা আমি উনার কাছে ম্যাথ এর বাকি প্রস্নগুলো, যেগুলো আমি পারিনা, উনার দেখে দাগানোর সাহস পেলাম না! সামনে পেছনে গুতা দিয়ে ২/১ টা শুনে নিলাম! দাগানো শেষে বসে বসে উনার আনসার সিটের দিকে আমার চোখ বারবার যেতে লাগলো। উনি বাকি গুলো কি দাগিয়েছেন তা দেখার জন্য মন প্রাণ আকু পাকু করছিল । শেষের দিকে বসে বসে উনার উত্তর এর খাতা দেখে নিজের সাথে মিলাতে লাগলাম।

যা দেখলাম তা হল, এক্কেবারে সোজা যে অংক গুলো ছিল, যোগ বিয়োগ করলেই যেগুলো মিলে যায়, বা খুবি সোজা কিছু সাইন্সের প্রশ্ন, যেমন ইন্টারনেট কি, কোন নিস্ক্রিয় গ্যাসে ৮টি ইলেকট্রন নেই, এগুলোও উনি ভুল করেছেন!! এরপর আর কি!! মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকলাম আর একটি কথাই চিন্তা করতে লাগলামঃ আমি যে উনার দেখে বাংলার ২০ টা আর সাধারন জ্ঞানের প্রায় ১৫ টার মত দাগায় ফেললাম, সেগুলোর একটাও তো ঠিক হবে না!! নিজে সব মিলে যে ৪০/৪৫ টার মত ঠিক উত্তর দাগিয়েছিলাম, সেই ৩৫ টার নেগেটিভ মার্কস পেয়ে কাটাকাটি করে শেষমেশ পাব একখান ওল কচু!! এজন্যেই বড়রা বলে, নকল করতে নেই!! বড় দের কথা বাসি হলে ফলে!! (( সরি টু দা আপু, উনার দেখে দাগানোর জন্য ও আপুকে এত ভুল করার জন্যে মনেমনে বকার জন্য। )) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.