মন্ত্রণালয়ের নাম বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের। মন্ত্রী হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রধান। অথচ বিমানে কী হচ্ছে না হচ্ছে, তার কিছুই জানেন না মন্ত্রী। বিমানে নিয়োগ, পদোন্নতি এমনকি টেন্ডারের কিছুই জানানো হয় না তাকে।
কোনো তথ্য জানতে চাইলে তাও তাকে সহজে দেয়া হয় না। বিমানের এমডি হিসেবে এয়ার কমডোর (অব.) জাকীউল ইসলামকে নিয়োগ দেয়ার সংবাদ মন্ত্রী জানেন টেলিভিশন সংবাদ দেখে। এতে অসন্তুষ্ট হলেও চেয়ে চেয়ে দেখা আর দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া তার করার কিছুই ছিল না। বিমান পরপর দু’দফায় লাভ করার পর এবার হঠাত্ ৮০ কোটি টাকা লোকসান দেখায়। এর কারণ জানতে চেয়ে মন্ত্রী বিমানকে দু’দফা চিঠি দিয়েছেন অথচ একটিরও জবাব দেয়নি বিমান কর্তৃপক্ষ।
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ও কয়েকদিন আগে ৮০ কোটি টাকা লোকসানের কারণ জানতে চেয়ে বিমান কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। হাজী পরিবহনের জন্য মন্ত্রীকে না জানিয়ে গত বছর ২৬ বছরের পুরনো বিমান ভাড়া করে বিমান। এতে বাধা দেন মন্ত্রী। এ নিয়ে তুমুল গণ্ডগোল দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত তা মেটাতে হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে।
ক্ষোভে-দুঃখে কিছুদিন আগে মন্ত্রী একবার পদত্যাগপত্রও জমা দিয়েছিলেন। পরে বড়ভাই এরশাদের অনুরোধে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। জানা যায়, এরশাদকে বড় ধরনের বিপদের ভয় দেখিয়ে তার ছোটভাই জাতীয় পার্টির একমাত্র মন্ত্রী জিএম কাদেরের পদত্যাগ ঠেকানো হয়। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে জিএম কাদেরকে একাধিকবার টেলিফোনে হুমকিও দেয়া হয়।
বিমান মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বিমান কর্তৃপক্ষ মন্ত্রীকে কিছুই জানায় না, সংসদীয় কমিটি মন্ত্রীর কাজে হস্তক্ষেপ করছে আর সচিব সফিক আলম মেহেদী (সদ্য বদলি হওয়া) মন্ত্রী যা বলতেন তার উল্টোটা করতেন।
মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, জিএম কাদের এখন অফিসে সময় কাটান ডিও লেটার লেখে, পত্রিকার ফাইল ক্লিপিং দেখে এবং এলাকার লোকজন ও দলীয় কর্মীদের সাক্ষাত্কার দিয়ে। অবশ্য সিভিল এভিয়েশন এবং পর্যটনের মাঝে মাঝে ফাইল এলে তিনি সেগুলো দেখেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রীর সঙ্গে বিমান ও সংসদীয় কমিটির মতবিরোধ দেখা দেয় কাবো চুক্তি ও ইপকো চুক্তি নিয়ে। এ মতবিরোধ একপর্যায়ে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে রূপ নেয়। এছাড়া গত বছরের হজ ফ্লাইটের দরপত্রে উদ্ধৃত দর নিয়েও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য এসেছিল।
জানা যায়, বিরোধ প্রকাশ পায় গত বছরের হজ মৌসুমে। এ সময় বিমান কর্তৃপক্ষ নাইজেরিয়ার কাবো এয়ারের ২৬ বছরের পুরনো বিতর্কিত উড়োজাহাজ ভাড়া নেয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করে। এতে বাদ সাধেন বিমানমন্ত্রী। জিএম কাদের নাইজেরিয়ার কাবো এয়ারের ২৬ বছরের পুরনো বিতর্কিত উড়োজাহাজ ভাড়া নেয়ার ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, প্রয়োজনে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবো; তারপরও পুরনো বিমানে হাজীদের আনা-নেয়ার নামে জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না। মন্ত্রীর মতামতকে উপেক্ষা করে বিমান কর্তৃপক্ষ ও সংসদীয় কমিটি কাবো এয়ারের উড়োজাহাজ ভাড়া করতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
একপর্যায়ে বিমানমন্ত্রীর বিরোধিতা করে বলাকা ভবনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিমানের চেয়ারম্যান নাইজেরিয়ার কাবো এয়ারের ২৬ বছরের পুরনো বিতর্কিত উড়োজাহাজ ভাড়া নেয়ার পক্ষে যুক্তি দেখান। তিনি বলেন, হজযাত্রী বহনের জন্য গত দু’বছর কাবোর উড়োজাহাজকে অনুমতি দেয়া হলে, এবার বাধা কোথায়? বোয়িং-৭৪৭ মডেলের কাবোর উড়োজাহাজকে বাংলাদেশে নিবন্ধন না দেয়ায় নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিএএবি) সমালোচনা করেন বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমদ।
জিএম কাদেরকে উদ্দেশ করে বিমানের চেয়ারম্যান বলেন, নাইজেরিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে ক্যাটাগরি ‘এক’-এর সনদ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (আইসিএও)। কিন্তু সিএএবির অবস্থান ক্যাটাগরি ‘দুই’-এ। তাহলে নাইজেরিয়ার অনুমোদন দেয়া উড়োজাহাজকে বাংলাদেশ কীভাবে চ্যালেঞ্জ করে, তা উনিই (জিএম কাদের) বলতে পারবেন।
সূত্র জানায়, বেসামরিক বিমানকে পুনর্গঠন, সব ধরনের দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ ও লোকসান কমিয়ে সরকারের একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য শুরু থেকেই কাজ করছেন জিএম কাদের। বরাবরই তিনি নাইজেরিয়াভিত্তিক কোম্পানি কাবোর উড়োজাহাজের চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোর পক্ষে। এক্ষেত্রে জিএম কাদেরের যুক্তি ছিল, কাবো বিপুল অংকের ঘুষ দিয়ে ২৬ বছরের পুরনো এ জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেয়ার চেষ্টা করছে। লোকসান দিয়ে কাবোর এই পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ রাখার কোনো যুক্তি নেই। এছাড়া সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানি ‘ইপকো’র সঙ্গে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন ১৩০ একর সরকারি জমির লিজ সংক্রান্ত চুক্তি নিয়েও বিরোধ দেখা দেয় সংসদীয় কমিটি ও বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।
সূত্র জানায়, দায়িত্ব গ্রহণের পর এই চুক্তি বাতিলের জন্য উদ্যোগ নেন মন্ত্রী জিএম কাদের। ইপকোর সঙ্গে চুক্তি রক্ষা করতে গেলে এই জমি হাতছাড়া হয়ে যাবে সরকারের। এর ফলে ভবিষ্যতে বিমানবন্দরের সম্প্রসারণও অসম্ভব হয়ে উঠবে। এদিকে চুক্তি রক্ষার পক্ষে অবস্থান নেয় সংসদীয় কমিটি। আর চুক্তি বাতিল করে সরকারি জমি রক্ষার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এ নিয়ে সংসদীয় কমিটির বিগত কয়েকটি বৈঠকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ ও বাদলের সঙ্গে বিমানমন্ত্রীর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়।
বিমান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে গত বছরের ২৩ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদেরকে দোষারোপ করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈনউদ্দিন খান বাদল। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি না করার আকস্মিক সিদ্ধান্ত দিয়ে বিমান মন্ত্রণালয় অহেতুক সরকারকে বিপাকে ফেলেছে। সংসদীয় কমিটির বিভিন্ন বৈঠকেও মন্ত্রীকে তুলাধুনা করা হয়।
গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদীয় কমিটির প্রধান মোশাররফ হোসেনের কাছে এক চিঠিতে বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী অভিযোগ করেন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় তার অনুপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ও উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলা হয়।
এছাড়া সংসদীয় কমিটির বেশকিছু সুপারিশে স্বৈরাচারী মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে বলেও মনে করেন তিনি।
সংসদীয় কমিটির কার্যক্ষমতা শুধু সুপারিশ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার জন্য কমিটিপ্রধানের সহায়তা চাওয়া হয় ওই চিঠিতে। তিনি বলেন, কমিটিতে আলোচনা এবং এতে ব্যবহৃত বেশকিছু শব্দ সংসদীয় আচরণবিধিতে অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, ১৯তম সভায় (১২ আগস্ট অনুষ্ঠিত) কয়েকজন সদস্য তার অনুপস্থিতিতে কিছু ‘অসত্য ও অসংযত’ মন্তব্য করেছেন। সভার কার্যবিবরণী থেকে তিনি এগুলো সম্পর্কে জানতে পারেন।
কমিটির সদস্য জাসদ নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদলের বিরুদ্ধেই মূলত অভিযোগ করেন তিনি। বেশ কয়েকবার জনসমক্ষে মন্ত্রীর কাজের সমালোচনা করেছেন বাদল।
জিএম কাদেরের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, আলোচনার কোনো কোনো বক্তব্য উস্কানিমূলক, বিদ্বেষাত্মক ও অসংযত। যেমন বেশি করে উড়োজাহাজ সংগ্রহ করে হজ অপারেশনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়নি কেন, তা তিনি জানতে চান।
চিঠিতে মন্ত্রী আরও বলেন, এ সভায় হজ সংক্রান্ত বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করার বিষয়ে মন্ত্রীর এখতিয়ার নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তা মন্ত্রীর নির্বাহী কার্যক্রমে গুরুতর হস্তক্ষেপ বলে প্রতীয়মান হয়।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে সভাপতির বক্তব্য ও গৃহীত সিদ্ধান্ত অনভিপ্রেত। হজ সংক্রান্ত বিষয়ে আলাদাভাবে মাননীয় মন্ত্রী বৈঠক না করে স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা করলে বেশি ফলপ্রসূ হতো—এ বক্তব্যের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের ও মন্ত্রীর কাজ এবং স্থায়ী কমিটির কাজ গুলিয়ে ফেলা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
চিঠিতে মন্ত্রী বলেন, সভার কোনো কোনো নির্দেশনা অতিমাত্রায় নির্দেশনামূলক। যেমন সংশ্লিষ্ট ইপকো (আইপিসিও) কোম্পানির সঙ্গে কোনো মামলায় না গিয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে ২৫ একর জমি ছেড়ে দিয়ে ১০৫ একর জমি উদ্ধার ও হোটেল দুটির নির্মাণ কাজ বর্তমান সরকারের আমলে সম্পন্ন করার জন্য সাব-কমিটির সুপারিশ ছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় এগুলো কিছুই আমলে নেয়নি।
এ বিষয়ে নিজের অবস্থান জানিয়ে চিঠিতে জিএম কাদের বলেন, ইপকো কর্তৃপক্ষ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে। তাই ইপকোর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিটি বাতিলযোগ্য।
সংসদীয় কমিটির ২ আগস্টের সভায় বিমানবন্দর সংলগ্ন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের জমিতে হোটেল ও গলফ কোর্ট নির্মাণের জন্য সাতদিনের মধ্যে ইপকোর সঙ্গে চুক্তি করার জন্য মন্ত্রণালয়কে বলা হয়। এছাড়া সাতদিনের মধ্যে নতুন মাস্টার প্ল্যান অনুমোদন করতেও বলা হয়।
এর জবাবে মন্ত্রী চিঠিতে বলেন, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে মন্ত্রণালয়কে সময়সীমা বেঁধে দেয়া মানে মন্ত্রণালয়কে সরাসরি নির্দেশনা দেয়া।
সংসদের নিয়ম অনুযায়ী সংসদীয় কমিটি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করতে পারে, নির্দেশ দিতে পারে না।
বিমান মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বিমানমন্ত্রী মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির হওয়ায় কেউ তাকে গুরুত্ব দিতে চাইছে না। অপরদিকে সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানসহ অন্য সদস্যরা আওয়ামী লীগের, বিমানের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামালউদ্দিন আহমেদ মিগ-২৯ দুর্নীতি মামলায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আসামি হওয়ায় একচেটিয়া প্রভাব খাটান তারা। এর ফলে বিমান মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ সংস্থাগুলোতে শৃঙ্খলা চরমভাবে ভেঙে পড়েছে। কেউ কাউকে মানছে না।
ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা। বিমানমন্ত্রীর নির্দেশের উল্টো কাজ করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। আবার বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি যা চায়, বিমান মন্ত্রণালয় তা নাকচ করে দেয়।
সূত্র জানায়, মন্ত্রীকে এমন কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে যে অধীনস্থ সংস্থার চেয়ারম্যান পর্যন্ত তাকে মানতে চান না। বিমানের চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলন করে স্বয়ং মন্ত্রী ও সচিবের বিভিন্ন বক্তব্যকে অসত্য বলে দাবি করার মতো ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মন্ত্রী চেয়ারম্যানকে শোকজ করেন। কিন্তু চেয়ারম্যান এটা আমলেই নেননি।
জানা যায়, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসামরিক পরিবহন ব্যবস্থা ও পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বিমানমন্ত্রী জিএম কাদের বিমানের নানা অনিয়ম তুলে ধরে কর্তৃপক্ষের কড়া সমালোচনা করে বক্তব্য দেয়ায় বিমানের এমডি চিঠি পাঠান মন্ত্রী জিএম কাদেরকে। শুধু তা-ই নয়, চিঠিতে মন্ত্রী বিমান নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন কি-না, সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। চিঠিতে তিনি বিমানের পরিচালক ও পরিচালনা পরিষদের পারফরম্যান্স সম্পর্কে মন্ত্রীকে আন্তরিকতাপূর্ণ বক্তব্য রাখার পরামর্শ দেন।
সূত্র জানায়, গত ১৮ জুলাই ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত সেমিনারে বিমানমন্ত্রী জিএম কাদের বলেন, দুর্নীতিবাজদের শক্ত একটি চক্র বিমান ও সিভিল এভিয়েশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে গুরুতর অনিয়ম করছে। যার কারণে বিমান কোম্পানি হওয়ার পরও সুফল মিলছে না। পরিচালকদের বিনিয়োগ থাকলে তারা মুনাফার কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতেন।
মন্ত্রীর এ বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মুহম্মদ জাকীউল ইসলাম পরদিনই চিঠি পাঠান জিএম কাদেরকে। চিঠিতে মন্ত্রী বিমান নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য দিতে পারেন কি-না, সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন।
চিঠিতে তিনি বিমানের পরিচালক ও পরিচালনা পরিষদের পারফরম্যান্স সম্পর্কে মন্ত্রীকে আন্তরিকতাপূর্ণ বক্তব্য রাখার পরামর্শ দেন। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, এ চিঠি পাওয়ার পর মন্ত্রী তাজ্জব বনে যান। কারণ অধীনস্থ কোনো সংস্থা থেকে মন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে চিঠি দেয়ার নজির নেই।
এ ঘটনার ঠিক এক মাস পর ১৮ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স বোর্ডের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামালউদ্দিন আহমেদ বিমান মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে আপত্তি জানান। তিনি দাবি করেন, বিমান পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি।
কাজেই বিমানের ব্যাপারে মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ করার কোনো এখতিয়ার নেই। বিমানের চেয়ারম্যানের এ ধরনের ধৃষ্টতা দেখে মন্ত্রী জিএম কাদের ক্ষুব্ধ হন। এর ফলে শৃঙ্খলা বিধিমালা ভঙ্গের অভিযোগে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স বোর্ডের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামালউদ্দিনকে শোকজ করা হয়।
শোকজে বলা হয়েছে, ‘১৮ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে এবং এর আগে বিভিন্ন সময়ে আপনি মন্ত্রণালয় সম্পর্কে নানা মন্তব্য করেছেন, যা ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। এতে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা শৃঙ্খলা পরিপন্থী।
’ এ ব্যাপারে বিমানের চেয়ারম্যানের ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। কিন্তু এ শোকজের জবাব না দিয়ে তিনি আবারও মন্ত্রীর এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
সূত্র জানায়, মন্ত্রীর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ঔদ্ধ্যত্বপূর্ণ আচরণ করেছেন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সফিক আলম মেহেদী (সদ্য বিদায়ী)। তিনি মন্ত্রীকে কোনো গুরুত্বই দিতেন না। কথায় কথায় প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দিতেন।
সংসদীয় কমিটি এবং বিমানের চেয়ারম্যানের সঙ্গে জোট পাকিয়ে মন্ত্রীকে অবজ্ঞা করতেন তিনি। মন্ত্রীকে না জানিয়ে অনেক স্পর্শকাতর বিষয়েও তিনি ঘোষণা দিয়ে দিতেন। অথচ পরে ওই বিষয়ে মন্ত্রীকে জবাবদিহি করতে হয়। আর এজন্য সতর্ক করে তাকে বার বার চিঠি দিতে হয়েছে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।