ক্ষমতাহীন হতে মরিয়া নির্বাচন কমিশন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধন করে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা হারাচ্ছে স্বাধীন এই প্রতিষ্ঠানটি। প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাসংবলিত আরপিওর ৯১-ই ধারাটি বাদ দেওয়ার বিষয়ে গতকাল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ ধারাটি বাতিল করতেই মূলত গতকাল বৈঠক করে ইসি। প্রার্থিতা বাতিলের ধারাকে বিতর্কিত আইন বলেও নতুন করে ব্যাখ্যা দিয়েছে ইসি।
আর নির্বাচনে ব্যাপক পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও র্যাব মোতায়েনকে যুদ্ধভাব বলেও মনে করছে ইসি। ৯১-ই ধারা বাতিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় সুশীল সমাজ ও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনাররা। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার দু-এক দিনের মধ্যে গণমাধ্যমের কাছে তাদের নেওয়া সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন বলে কমিশন জানিয়েছে।
এদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোকে সুবিধা দিতেই নির্বাচন কমিশন প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা নিজেদের হাতে রাখছে না বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। সাবেক একাধিক নির্বাচন কমিশনার মন্তব্য করেছেন, প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা না থাকলে ইসি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়বে।
যদিও বর্তমান নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে আর্থিক ও কারাদণ্ডের বিধানই কমিশন শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট। তবে ইসির একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, নিজের পায়ে কুড়াল মেরে অন্যকে সুবিধা দিতে এমন আত্দঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এর ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা কঠিন হবে। নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়ে যাবে। ইসির এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা ইসির কাছে না থাকলে ইসি দুর্বল হয়ে যাবে।
আর এ ধরনের সিদ্ধান্তে আগে দলের সঙ্গে সংলাপ করা উচিত ছিল।
উল্লেখ্য, আরপিওর ৯১-ই ধারায় বলা আছে, কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার বা থাকার অযোগ্য হতে পারেন। তবে তার আগে কমিশন অভিযুক্ত প্রার্থীকে শুনানির যুক্তিসঙ্গত সুযোগ দিয়ে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেবে। তদন্তে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে কমিশন সেই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বাকি প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তবে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের পর যদি একজন প্রার্থী অবশিষ্ট থাকেন, তাহলে সেই আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পুনরায় তফসিল ঘোষণা করা হবে।
কমিশন কর্মকর্তারা জানান, ৯১-ই ধারাটি বাতিল হলে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর কোনো প্রার্থী গুরুতর অপরাধ করলেও তার প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগ থাকবে না। তবে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় যৌক্তিক কারণে রিটার্নিং অফিসার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করতে পারবেন। নবম সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিএনপি চেয়ারপারসন ধারাটি অন্তত স্থগিত করারও দাবি জানিয়েছিলেন। তখনকার কমিশন আশ্বস্ত করে- এ ধারাটির অপপ্রয়োগ করা হবে না।
এবারও বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে ৯১-ই ধারা নিয়ে আপত্তি জানানো হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।