আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাহস

ক্যাচালমুক্ত ব্লগ চাই কদিন ধরেই নিত্যনাথ মজুমদারের মনটা ভাল যাচ্ছিল না। গত পরশুদিন ছোট মেয়ে ধরে বেধে তাকে "আমার বন্ধু রাশেদ" ছবিটা দেখার পর থেকেই তার মনে সামান্য চাপা ব্যাথা। তিনি কি তার কাজ ঠিকভাবে করতে পারবেন? ওঃ, প্রথমে নিত্যনাথবাবুর পরিচয় দিয়ে নিই। ৭১'এর বীর মুক্তিযোদ্ধা নিত্যনাথবাবু। ধামরাই অঞ্চলে তিনি তার সাহসের জন্য বিখ্যাত।

এক সম্মুখযুদ্ধে তিনি একাই নয়জন পাকসেনাকে হত্যা করেছিলেন। বর্তমানে একটি এনজিওর হয়ে সামান্য কাজ করেন। নিন্ম মধ্যবিত্ত জীবন কোনভাবে পার করছেন। একাত্তরের সেই বল-বু্দ্ধি কিছুই অবশিষ্ট নেই। আছে শুধু বুকভরা সাহস।

এবার মূল গল্পে আসি। কদিন আগে ধামরাই অঞ্চলে যুদ্ধাপরাধী বিচার ট্রাইবুনালের লোক এসেছিল। যুদ্ধাপরাধীদের চিহ্নিত করতে কয়েকজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। নিত্যবাবু তাদের মধ্যে একজন। ধামরাইএ যুদ্ধাপরাধীরা খুবই শক্তিশালী।

তাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী আরজ মাতব্বর। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে থেকে তাদের শক্তি-অবস্থান পাকাপোক্ত করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে কেউ সাহস পায় না। কদিন আগে একজন যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যদানকারী আজম আলি খুন হল। কেউ বলতে পারে নি কিভাবে।

কিন্তু সবাই জানে এটা আরজ মাতব্বরের কাজ। নিত্যবাবুরও পরিবার আছে। তাই চিন্তা হয়। তার কি এ কাজ করা উচিত? রাতে হঠাত ঘুম ভে্ঙগে গেল নিত্যবাবুর। টিভিতে কি আওয়াজ শুনলেন? ভুল শুনেছেন হয়তো।

আরে না। সত্যিইতো আওয়াজ হচ্ছে। নিত্যবাবু চশমা হাতে নিয়ে গেলেন বৈঠকখানায়। আরে, একটা ছোট ছেলে টিভির সামনে বসে আছে। টিভিতে ওই দিনের সেই ছবিটাইতো হচ্ছে।

আরে, ছেলেটাকেও তো চেনাচেনা মনে হচ্ছে। এটা কে? রাশেদ না? সেই চোখ, সেই নাক। আমার বন্ধু রাশেদের রাশেদ। ও এখানে এল কোথা থেকে? আশ্চর্য। নাহ, কোথাও ভুল হচ্ছে।

আশ্চর্যন্বিত মন নিয়েই তিনি তার মলিন সোফায় বসলেন। রাশেদ তার সামনে টিভির দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসা। ছবির তখন প্রায় শেষদিক। রাশেদের মৃত্যুক্ষন। তাকে গুলি করা হচ্ছে।

গল্পের রাশেদের চোখে পানি। ******* রাশেদ তার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল--- ওরা আমাকে মেরে ফেলল। তুমি ওদের ক্ষমা করোনা। ওদের শাস্তি দিও। ও কি রাশেদ।

নাকি ৭১ এ তার খুন হওয়া ছোটভাই বাবলু? ট্রিং ট্রিং। বিছানার পাশের মোবাইলটা বেজে উঠল। ধরফরিয়ে উঠলেন নিত্যবাবু। কালকের ঘটনা তাহলে স্বপ্ন ছিল। বুক পিঠ সব ঘামে ভিজে একাকার।

মোবাইলটা বেজেই চলেছে। নিত্যবাবু মোবাইল ধরলেন। তার ভ্রু কুন্চিত হল। গতকালের ফোনটা। পরিবার রক্ষা করতে হলে সাক্ষ্য দিতে না যেতে হুমকী।

ফোন কেটে যাওয়ার পর মনে আশ্চর্য একটা শান্তি লাগছে। কিছু দিন পর আজ যুদ্ধাপরাধী বিচার ট্রাইবুনালে সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার দিন। আরজ মাতব্বরকে আজ সবার সামনে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে তুলে ধরবে নিত্যনাথ মজুমদার। তার ভাই হত্যার প্রতিশোধ নেবে। সকাল থেকেই তার মন উৎফুল্ল।

একটি ফোন আসল। বাবার বাড়িতে থাকা স্ত্রীর ফোন। ফোনের বিষয়বস্তু আমরা পরে পর্যবেক্ষন করবো। নিত্যবাবু প্রচন্ড আপসেট। কিন্তু তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

আজ তিনি কাউকে ভয় পাবেন না। তিনি যুদ্ধাপরাধী বিচার ট্রাইবুনালের সামনে হাজির হলেন। তার কর্তব্য সম্পাদন করলেন। সাক্ষ্য দিলেন। মনে দুশ্চিন্তা আর ভয়।

প্রচন্ড ভয়। রাশেদ জানত না নিত্যবাবুর আদরের ছোটমেয়েকে সেদিন থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু নিত্যনাথ মজুমদার জানতেন। **** ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।