এই প্রথম ব্লগে কোনো লেখা পোস্ট করছি এবং এটা জীবনের প্রথম লেখা। ২০০৯ সালে যখন ক্লাস এইটে পড়তাম।
কুসুমের মনে আজ খুব উত্তেজনা। তাদের বাড়িতে নাকি মুক্তিযোদ্ধারা আসবে। আবার রাতে যুদ্ধ করে চলে যাবে।
বাবা একটু আগে বলে গেলেন এই কথা| আরও বলে গেলেন এটা যেন কেউ জানতে না পারে, কাউকে বলা যাবেনা।
কুসুমের বয়স তেরো বছর। দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। তাই মা ঘরের বাহিরে যেতে নিষেধ করেছেন। সারাদিনই খুব ভয়ে থাকতে হয়।
এদিকে পনের দিন হল পাকিস্থানি মিলিটারীরা বাজারে তাদের ঘাটি খুলেছে। এই মিলিটারী ঘাটিকে উড়িয়ে দেওয়ার জন্যই মুক্তিযোদ্ধারা আসছে। কুসুমদের বাড়িতে রাতে মাঝরাতে যুদ্ধ করতে যাবে। কুসুম অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। মা ও আজকে খুব ব্যস্ত।
অনেক মানুষের জন্য রান্না করতে হবে
ঠিক বিকাল ৪ টায় প্রায় ১০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা কুসুমদের বাসায় উপস্থিত হলো। কুসুম অবাক হয়ে দেখলো যে একজনের পায়ে সাদা ব্যান্ডেজ বাধা। সে একা একা হাঁটতে পারছেনা তাকে সবাই মিলে কুসুমদের ঘিরে রেখে ওরা বাড়ির পিছনে বাবাকে নিয়ে গিয়ে কি যেনো করছিলো হঠাৎ করে বসে থাকা মুক্তিযোদ্ধা কুসুমকে কাছে ডাকলো। ডেকে বলল, আচ্ছা তুমি কি সেলাই করতে পারো? তোমাদের বাসায় সুই সুতা আছে?
কুসুম বলল, হ্যা আছে। সুই সুতা দিয়ে কি হবে?
মুক্তিযোদ্ধা বলল, একটা কাজ করবো।
তুমি নিয়ে আসো। আচ্ছা তোমার নাম কি?
আমার নাম কুসুম। আপনার নাম?
আমার নাম সাবের। যাও তাড়তাড়ি সুই সুতা নিয়ে আসো।
কুসুম সুই সুতা নিয়ে এসে দেখে সাবের ভাই তিন টুকরো কাপড় নিয়ে বসে আছেন।
একটা লাল, একটা সবুজ আর একটা হলুদ। সবুজ রঙের টা চারকোণা, লালটা গোল আর হলুদটা পাখির মতো যেনো উড়তে চাইছে
কুসুম বলল, এগুলো কি সাবের ভাই?
সাবের ভাই বললেন, দেখো সবুজটার উপরে লাল তার উপরে হলুদ। এটা আমাদের নিজেদের পতাকা। আমরা দেশটা স্বাধীন করে নিই, তারপর দেখবে সবাই এই পতাকা উড়াবে।
পতাকা! কি সুন্দর!
হ্যা খুব সুন্দর।
এখন তুমি এইটা আমাকে সেলাই করে দাও।
সেলাই করতে করতে কুসুম বলল, আচ্ছা আপনারা যুদ্ধ করছেন কেনো? এই যুদ্ধ করতে কি লাগে?
সাবের ভাই হেসে বললেন, কিছুই লাগেনা। শুধু তোমার মধ্যে যদি সাহস থাকে তাহলে তুমি যুদ্ধ করতে পারবে। কি আছে তোমার মধ্যে সাহস? যুদ্ধ করতে পারবে?
হ্যা আমার মনে অনেক সাহস।
খুবই ভাল কথা।
আচ্ছা সাবের ভাই আপনার পাশে ওই গোল গোল জিনিস গুলো কি?
এই দেখো এই গুলোকে বলে গ্রেনেড। একধরনের বোমা। এই চাবিটা মুখ দিয়ে টেনে খুব তাড়াতাড়ি ছুড়ে ফেলে দিতে হয়।
সাবের ভাই, আমি একটা নিয়ে যাই? আপনারা যাওয়ার আগেই আমি দিয়ে দিব। আচ্ছা ঠিক আছে তবে সাবধানে রেখো।
রাতের বেলা সব মুক্তিযোদ্ধারা মিলে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া সেরে নিলেন। সবার জন্য ডাল আর ভাত রান্না করেছিলেন মা। খাওয়ার সময় কুসুম জানতে পারলো যে ওরা যুদ্ধ করতে যাবে আর তিন ঘন্টা পরে। এই সময় টুকু বিশ্রাম নেবে।
খাওয়াদাওয়া শেষে সবাই যে যার ঘরে চলে গেল।
কুসুম তার মায়ের সাথে থাকে। সে তার মায়ের পাশে শুয়ে পড়ল। তার ঘুম ধরেছে এই সময় সে একটা শব্দ শুনতে পেলো। ঠাস ঠাস কেমন জানি আওয়াজ। তার মা তাকে জড়িয়ে ধরল।
হঠাৎ সে জানালার ফাক দিয়ে দেখতে পেলো কারা যেনো ছুটে আসছে। তাদের বাড়ি থেকে গুলি ছড়ার শব্দ শুনতে পেলো কুসুম। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা যেনো পেরে উঠছেনা। হঠাৎ কুসুমের চোখ পড়ল সাবের ভাই এর কাছ থেকে আনা গ্রেনেডটার দিকে। সে তো গ্রেনেড চালানো শিখেছে।
সে তার মায়ের দিকে তাকালো। মা পশ্চিম দিকে ঘুরে কুরআন শরীফ নিয়ে বসেছে। কুসুম আর দেরী করল না। সে পিছনের জানালা আস্তে করে খুলে বের হয়ে তাদের বাড়ি আর গোয়াল ঘরের মাঝখানে দাড়ালো। মুখ দিয়ে গ্রেনেডের পিনটা খোলার পর গ্রেনেড টা ছুড়ে দেওয়ার সাথে সাথে কি যেনো তার পেটে এসে বিধলো।
সে দেখতে পেল তার সামনে অনেক আগুন জ্বলছে। হঠাৎ সে বুঝতে পারল সবাই তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। তার সামনে বসে আছে সাবের ভাই। সে অনেক কষ্টে সাবের ভাইকে বলল, ওই লাল সবুজ কাপড়টা আমার হাতে দেন। সাবের ভাই কাপড় টা হাতে দিলে কুসুম মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, মা তুমি এই রঙের একটা শাড়ি…………………………।
।
কুসুম তার কথা শেষ করেত পারলোনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।