আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছন্নছাড়ার ডায়েরী থেকে (পর্ব-২)

সময় দুপুর ১২টা (তারিখ,বার-----অজানায় থাক) টিউশনি থেকে ফিরলাম। অসহ্য গরমে রিতিমত ঘেঁমে নেয়ে একাকার। সাইকেলটা অতি কষ্টে তুলে রাখি বারান্দায়। “ধুর! এই টিউশনিটা বোধ হয় ছেড়েই দিতে হবে। এই অসময়ে এত কষ্ট করে টিউশনি করানো যায় না।

আমি ও তো মানুষ” এই সব ভাবতে ভাবতেই রূমে ঢুকলাম। রুমে থমথমে নিরবতা, মুখটা কালো হাড়ি করে খাটের একপাঁশে বসে আছে রাশেদ। পাঁশের দেওয়ালে জুতার একটা কাঁচা ছাপ স্পষ্ট, ওর মোবাইলটা ৪ টুকরা হয়ে ছড়িয়ে আছে মেঝেতে। ঘটনাটা বোঝার চেষ্টা করলাম, কিছুটা ধরতেও পারলাম। তবে জিজ্ঞাসা করার সাহস পেলাম না।

কারন, এই ভরদুপুরে গালা-গালি সহ্য করার মত যথেষ্ট মুড নাই। আর জানিইতো কিছুক্ষন পর মেজাজ-মঁর্জি ভালো হলে ও নিজে থেকেই আমাকে সব বলবে। আমার বন্ধু রাশেদ। একই ব্যাচের হলেও ওর সাব্জেক্ট ভিন্ন। আমার ২ রূমমেট এর একজন।

আমার অন্য রুমমেটকে কালে-ভদ্রে দুই-একদিন দেখা যাওয়ায় রাশেদের সাথেই আমার সখ্যতা একটু বেশী। তবুও কেন জানি মাঝে মাঝে বুঝতে পারি না ওর মতিগতি । এই নিয়ে গত তিন মাসে দ্বিতীয় বারের মত একই ঘটনা দেখলাম, যার পরিণতি ২টা সেটের অপমৃত্যু আর মোবাইল কোম্পানিগুলোর কিছু বাড়তি আয়ের সুযোগ। ও প্রেম করে স্থানীয় ক্লাস নাইনে পড়া এক মেয়ের সাথে। যার সাথে তার ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা।

কিন্তু মাঝে মাঝেই ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে বেঁধে যায়। আজ হয়তো একটু বেশীই হয়ে গেছে। ওদের প্রেম কাহিনীর স্টারটিংটা কিন্তু বেশ ইন্টারেস্টিং। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ছেলেদের বাড়তি বিনোদনের উৎস হিসাবে সন্ধায় ব্রীজের উপর বসে সিগারেট টানা আর রাস্তার পাঁশ দিয়ে যাওয়া মেয়েদের টিজ করা হয়তো ঠিকমতো অপরাধের পর্যায়েও পড়ে না। Atleast আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে তো নয়ই!! তাই একসময় এইটা আমাদের রূটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়।

প্রতিদিন কত মেয়েকেই টিজ করা হয় তার ঠিক নায়, তাদের কয়জনকেই বা আমাদের মনে থাকে? আর তাদের ও আমাদের কথা মনে থাকার কথা না। তবুও পৃথিবীটা গোল আর মানুষগুলা পাগল। তাইতো মাঝে মাঝেই এমন অনেক কিছুই হয় যা থাকে আমাদের কল্পনার বাইরে। ঠিক যেমন, রাশেদ কখনো ভাবেনি তার শুরু করতে যাওয়া নতুন টিউশনিতেই তার জন্য অপেক্ষা করছে তার জীবনের সবথেকে বড় coincidence । হ্যা coincidence ইতো।

কারন তার নতুন ছাত্রী আর কেউ নয় যাকে সে আগের দিন সন্ধায় টিজ করেছিল সেই মেয়েটি!! রাশেদ লজ্জায় ভালোভাবে চোখ মেলে তাকাতেও পারেনি মেয়েটির দিকে। এমনই হয়, সন্ধার আবছা আলোয় যাকে টিজ করা সহজ, দিনের আলোতে তার সামনে বসে থাকাও অনেক বেশি অস্বস্তিকর । সেটা সে ভালোভাবেই টের পেয়েছিল আর আমরাও কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলাম যখন সে চোখ-মুখ লাল করে ফিরেছিল মেসে। “মেয়েটির বাসা মেস থেকে পাশেই, নাম হৃদি” এর বেশী কিছু আর সে বলতে পারিনি। আমাদের মেস ক্রিকেট টিমের অভিজ্ঞ উইকেটকিপার রাশেদ, ছেলে হিসাবেও আমাদের মধ্যে সবথেকে ভদ্র।

সেই কিনা এইভাবে কট-বিহাইন্ড হবে!! আমরা কখনই ভাবিনি। ও ২-৩দিন টিউশনিতে গিয়েছিলও কিন্তু নিজের লজ্জা বোধ থেকেই টিউশনিতে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তার কিছুদিন পরেই একটা Unknown নাম্বার থেকে ফোনকল। কথা বলার পর রাশেদ নির্বাক। জানি না হৃদি তাকে কি বলেছিল, তবে রাশেদ আবার টিউশনিতে যাওয়া শুরু করে।

তারপর জানি কি থেকে কি হয়ে গেল। প্রথমে ২-১টা ফোনকল, কিছু মেসেজের আদান প্রদান এভাবেই চলছিল। তারপর হঠাৎ একদিন আমাকে এসে বলল “আই লাভ হৃদি”। আমার আসলেই জানা ছিল না তাকে কি বলব। তাই কিছু বলিনি, কিছু জানতেও চায়নি।

তাই জানতেও পারিনি কে আগে প্রপোজ করেছিল কিংবা আদতে কেউ প্রপোজ করেছিল কি না? তবে অদের সম্পর্ক অনেক ভালো। তারপরও কেন যে মাঝে মাঝে এই অদ্ভুত রাগারাগি আমি ঠিক বুঝি না। পৃথিবীতে আরো অনেক কিছুই আছে যা আমি বুঝি না, হয়তো বোঝার চেষ্টা ও করি না। মোবাইলে একটা ফোনকল, সামনে মেলে ধরলাম “Ruma is calling”। নাহ, এখন মোবাইলে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না, তাই কেটে দিলাম।

কিন্তু আমি জানি রুমা নাছোড়বান্দা, সহজে ছাড়বে না। তাই সেট্টা বন্ধ করে তুলে রাখলাম লকারে। নাহ, গরমটা আজ একটু বেশীই মনে হচ্ছে, গোসলটা সেরে নেওয়া জরুরি। তা না হলে আর একটু পরে বাথরুমে লাইন দিতে হবে। আর রাশেদ?? ও যেমন আছে তেমনই থাক, কারন আমি জানি ও এরকমই থাকে, এইরকমই ভালো থাকবে।

যে যেমনভাবে ভালো থাকে তাকে বোধ হয় তেমনই থাকতে দেওয়া উচিৎ। যারা প্রথম পর্ব পড়েননি তাদের জন্য এক গ্রীষ্মের দুপুরে (ছন্নছাড়ার ডায়েরি থেকে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।