আমিই সেই জন, যাকে খুঁজিয়াছ অকারন... অস্বাভাবিক কিছু না। মাঝে মাঝে এমন ঘটে। কেউ কেউ আসেন যাদের জন্মদিন থাকে; মৃত্যুদিন থাকে না। তারা কখনো মারা যান না। কোন এক শুভলগ্নে এঁরা ঘুমিয়ে পড়েন।
আজকে তেমনি একজনের জন্মদিন। এই একজন হুমায়ূন আহমেদ; চরম নন্দিত-নিন্দিত কথাসাহিত্যিক। জন্ম ১৩ নভেম্বর,১৯৪৮। তবে সার্টিফিকেট অনুসারে তাঁর জন্মদিন ভিন্ন। এই ভুল অনিচ্ছাকৃত।
তাঁর পিতা-মাতা-ভ্রাতা-ভগ্নীর পরিচয় এই লেখায় দেওয়াটা প্রয়োজন মনে করছি না।
হুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিগত সব তথ্য সম্বন্ধেই কমবেশি সবাই জ্ঞাত। তাই সেদিকেও যাব না। হুমায়ূন স্যার হলেন এমন একজন যার সম্পর্কে কিছু বলার নেই। তবু কিছু কথা বলা যাক।
তিনি বাংলাদেশের সায়েন্স-ফিকশনের জনক। তাঁর লেখা "তোমাদের জন্য ভালোবাসা" বাংলাদেশের প্রথম সায়েন্স-ফিকশন। এদেশের টিভি নাটকে বিপ্লব ঘটে তাঁরই হাত ধরে। মুখের ভাষাকেই তিনি সংলাপে রূপ দেন। তাঁর নাটক ছাড়া বাঙ্গালীর ঈদ ছিল অসম্পূর্ন।
তাঁর বানানো সিনেমার কথা বলে কাউকে বিরক্ত করতে চাই না। তিনি ওপারের দাদাদের মতো বর্ননার ভারে পাঠককে ক্লান্তিত্ব দেন না। তাঁর বর্ননা পরিমিত কিন্তু সবল। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র 'হিমু' তাঁর সৃষ্টি। ছোটগল্পে তিনি যে সাবলীলতা দেখিয়েছেন তা অচিন্ত্যনীয়।
এরকম তালিকা বানাতে চাইলে বানানোই যায়। তবে থামাটাই বুদ্ধিমানে কাজ।
একটা দুঃখের কথা আমি বলতেই পারি। হুমায়ূন আহমেদের সায়েন্স-ফিকশনগুলোতে খুব সুন্দর কিছু প্লট ছিল। তিনি যদিও এই ধরনের লেখা পরে আর লিখেন নি।
লিখেছেন তাঁর ছোট ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল। জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন মানেই বুদ্ধিমাপার নিনীষ স্কেল; কাহি,ত্রাতুল,কিশি, রুহান,রু- এদের কাহিনী। হয় এরা সভ্যতাকে রক্ষা করে নয়তবা দূরের কোন গ্রহে গিয়ে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসবে। হেন-তেনের কাহিনী। আমি এখন পর্যন্ত এমন কাউকে পাই নাই যে কিনা দুইজনেরই সায়েন্স-ফিকশন পড়েছে আর বলেছে জাফর ইকবালের বইটা বেশি ভাল।
তাইতো দুঃখ লাগে যখন ফেসবুকের কোশ্চেনে "কে বেশি ভাল লেখে?" এর জবাবে জাফর ইকবাল বেশি ভোট পায়। জাফর ইকবাল আমার বেশ প্রিয় একজন লেখক। তবে তা শুধুই কিশোর উপন্যাসের ক্ষেত্রে। সবমিলিয়ে কিভাবে জাফর স্যার হুমায়ূন আহমেদের চেয়ে ভাল লিখেন তা আমার বোধগম্য না।
রবীন্দ্রনাথের কথায় আসা যাক।
রবীন্দ্রনাথও একসময় অনুরোধে ঢেঁকি গিলে সুলেখা নামক কালির বিজ্ঞাপন লিখেছিলেন। তাই বলে কি আমরা তাকে ভুলে গেছি?? আরে বাবা, তুমি একুশের বইমেলায় গিয়াই অন্যপ্রকাশের সামনে উঁকি দাও হুমায়ূনের নতুন কি আসছে দেখার জন্য। প্রকাশকরা তাই বুঝে নিয়েছে যে হুমায়ূন স্যার হটকেক। তাই তাকে অনুরোধ গিলিয়ে নিম্নমানের লেখা আদায় করা হচ্ছে। এটা কি শুধুই তার দায়?? খামখেয়ালী হুমায়ূনও দেখতে চাচ্ছে তাঁর নামই কি বই চালানোর জন্য যথেষ্ঠ কিনা! মানলাম সে গত কয়েক বছরে বস্তাপচা লেখা লিখেছে।
কিন্তু স্যার কি এর মাঝেই 'জোছনা ও জননীর গল্প', 'মধ্যাহ্ন', 'মাতাল হাওয়া', 'বাদশাহ নামদার' লিখেননি??
জাতি হিসেবে আমরা খুব উঁচুমানের নই। আমরা যোগ্যলোককে প্রাপ্য সম্মান দিতে পারি না। দিলেও দেই অন্যকে দেখে। রবীন্দ্রনাথ নোবেল প্রাইজ পাবার আগে তাঁর একটা রচনা কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় দিয়ে বলা হয়েছিল- "অশুদ্ধি শুদ্ধ কর"। চিন্তা করা যায়? তারাই ঠাকুরমশাই নোবেল প্রাইজ পাবার পরে তাকে সম্মানিত করেছিল।
কালকে যদি হুমায়ূন আহমেদ নোবেল প্রাইজ পেয়ে যায় দেখবেন ঘরে ঘরে তাকে পূজো দেওয়া হচ্ছে। লাগবেন বাজী??
কথায় কথায় বেলা পড়ে এল। অনেকেই তার সম্পর্কে বলেন- হুমায়ূন আহমেদ হতে পারতেন আমাদের আন্তন চেখভ। ! কেনরে ভাই। সবাই আন্তন চেখভ হলে হুমায়ূন আহমেদ হবে কে??? যাই হোক-নাই হোক- আমার অনেক প্রিয় এই লোকটা ক্যান্সারের সাথে পাশা খেলছেন।
সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন আশা করি। তিনি সুস্থ হলে নিন্দুকরা আবার নিন্দায় মাততে পারবেন। তাই তাকে নিয়ে নিন্দা করার জন্য হলেও দোয়া করবেন। স্যার আপনাকে আপনার ভাষাতেই শুভেচ্ছা জানাচ্ছি- "শুভ জনম তিথি। " ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।