যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে অবহেলা এবং বাস কোম্পানির চূক্তিশর্ত লঙ্ঘন
পরিবহণ ব্যবস্থায় চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে
ফাইওভার, এলিভেটেড এক্সপেক্সওয়েসহ প্রাইভেটকার বান্ধব বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধিক ব্যস্ততার কারণে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থাগুলো উপেতি হচ্ছে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অবহেলার কারণে গণপরিবহন ব্যবস্থায় নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে এবং পুরো গণপরিবহন ব্যবস্থা একটি চক্রের নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছে। চুক্তি শর্ত ভঙ্গ করে পরিবহন মালিকরা একতরফা ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করছে। পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় রিকশা বন্ধ, পথচারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা মানুষের যাতায়াতকে কঠিন করে তুলছে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ুন্ন হচ্ছে।
গণমানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা হাঁটা, বাস, রিকশা ও সাইকেলের চলাচলের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারের উচিত যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করা। অন্যথায় জনগনের এ দূর্ভোগ সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আজ ১৭ মে ২০১১, মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসকাবের হলরুমে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, তেল গ্যাস বিদ্যুৎ ও বন্দর রা জাতীয় কমিটির আহবায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুলাহ, পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, বুয়েটের সাবেক উপাচার্য ড. এম এম সফিউলাহ, বিশিষ্ঠ কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, বুয়েটের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডীন রুখসানা হাফিজ, সৈয়দ মাহবুবুল আলম প্রমুখ।
বক্তারা জানান, নগরীর অন্যতম প্রধান নিয়ামক সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত গণপরিবহন ব্যবস্থা।
কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ যানজট নিরসনের অজুহাতে বিভিন্ন রাস্তার রিকশা বন্ধ করা হচ্ছে। যানজটের প্রধান কারণ প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণের কোন উদ্যোগ না নিয়ে বরং নানা ভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্য গণপরিবহণ ব্যবস্থার নানান ধরণের প্রতিবন্ধকতা নিরসন না করে বরং জটিলতর করা হচ্ছে। যেমন বাসের একটি রুট একটি মাত্র কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার ফলে বাস মালিকদের সিন্ডিকেট প্রয়োজন অনুসারে বাসের সংখ্যা এবং যাত্রী সেবার মান কমিয়ে ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায় করছে। এছাড়া রিক্সা দিয়ে সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব নয়।
টেক্সি, বেবিটেক্সী বা ছোট ছোট ব্যাটারী চালিতযান ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। এমনকি ভাড়ায় চালিতযান পাওয়া যেন সোনার টুকরা হাতে পাওয়া। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতায় দীর্ঘদিন যাবৎ এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এ নৈরাজ্যের কারণ হিসেবে নিন্মোক্ত কারণসমূহ উলেখ করা হয় -
১. বিভিন্ন রুটে ইজারা প্রাপ্ত কোম্পানিগুলো চুক্তি শর্ত অনুসারে যাত্রী সংখ্যানুযায়ী পর্যাপ্ত বাস রাস্তায় চালু রাখেনি। যাত্রী সেবার মান বজায় রাখেনি।
তদুপরি চুক্তি লঙ্ঘন করে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার পরিবর্তে ইচ্ছে মাফিক অনেক বেশি ভাড়া আদায় করেছে।
২. সাধারণ মানুষের নূন্যতম যাতায়াতের ব্যবস্থা না করেই প্রাইভেটকার কেন্দ্রীক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এমনকি পর্যাপ্ত পরিমাণ ট্যাক্সি, বেবিট্যাক্সি ইত্যাদি চালু না রাখা।
৩. হেটে বা সাইকেলে চলাচলের নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি ও বিভিন্ন রুটে রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা।
৪. সরকার, পরিবহন মালিক, শ্রমিক এবং যাত্রী স্বার্থ সংরণের জন্য গঠিত ভাড়া নির্ধারণ কমিটির সুপারিশকে উপো করে পরিবহন মালিক কেন্দ্রীক শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একতরফা ইচ্ছা মাফিক ভাড়া আদায়।
৫. বিশ্ব ব্যাংক, ওগঋ এর দূরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনা অর্থাৎ অত্যন্ত ব্যয়বহুল অবকাঠামো কেন্দ্রীক যোগাযোগ পরিকল্পনার মাধ্যমে এই খাতের অবকাঠামো নিয়ন্ত্রণ ক্রমান্বয়ে বহজাতিক কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া। এমনকি মোবাইল ফোন কোম্পানির মতো পুরো পরিবহন ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে বহজাতিক কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া।
৬. যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং সংশিষ্ট কর্তৃপরে ব্যর্থতা
৭. সরকারের জ্বালানি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের মধ্যে সমন্বয় না থাকা
পরিবহন ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা এবং করণীয় বিষয়ে নিন্মোক্ত সুপারিশসমূহ করা হয়-
১.গতকাল ১৬ মে ২০১১ তারিখে ঘোষিত নতুন নির্ধারিত ভাড়া বাতিল করা। জনসাধারণের স্বার্থকে সমুন্নত রেখে মালিক শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে নতুন ভাড়া তালিকা প্রণয়ন না করা পর্যন্ত সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পূর্বের ভাড়া পুণ:বহাল রাখা। অবিলম্বে জনস্বার্থ সংরণের জন্য ভাড়া নির্ধারণে একটি কমিটি গঠন করা।
২. সকল রাস্তায় রিকশা ও সাইকেল চলাচলের ব্যবস্থা করা
৩. দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য জনস্বার্থকে উপো করে একতরফা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়কারী সিন্ডিকেটদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।
৪. একটি রুট একটি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার প্রথা বাতিল করা। পূর্বে ইজারা প্রাপ্ত কোন কোম্পানিই চুক্তি অনুযায়ী যাত্রী সংখ্যা অনুসারে পর্যাপ্ত বাস চালু রাখা, যাত্রী সেবার মান বজায় রাখা এবং সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায়ের শর্ত পালন করেনি। অর্থাৎ কোম্পানিগুলোর চুক্তি ভঙ্গের অপরাধে তাদের ইজারা বাতিল করা সহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান।
৪. জনসাধারণের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিদ্যমান প্রাইভেটকার অবকাঠামো কেন্দ্রীক পরিকল্পনা বাদ দিয়ে ট্রেন কেন্দ্রীক বাস ও নৌ চলাচলের সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
৫. পথচারীদের সত্যিকার অগ্রাধিকার ভিত্তিক যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।