বালক জানে না তো কতটা পথ গেলে, ফেরার পথ আর থাকে না কোনো কালে...
ফজলু মামা আমার চাইতে তিন বছরের বড় । যদিও তিনি আমার চেয়ে বড় তথাপি আমরা একে অপরের বন্ধুর মত আচরন করতাম। আমার নানাবাড়ি বেশ দূরে ছিল বিধায় বছরে দুই তিন বারের বেশি আমাদের দেখা হতো না । এতে করে আমরা দুজনই বিরহে ভুগতাম । বিরহের প্রথম দিন চলতো মুখ বেজার করে ঘুরাফেরা , দ্বিতীয় দিন দীর্ঘশ্বাস ও তৃতীয় দিন থেকে পরবর্তী সাক্ষাতের দিন খন গননা করা।
কিন্তু সেই গননার দিন গুলিই ছিল বেশি। সহজে ফুরাতে চাইতোনা।
তেমনি এক দীর্ঘ বিরহের পর মামার বাড়িতে গিয়েছি। নানা নানু আমাদের জন্য বিভিন্ন আয়োজনে ব্যস্ত এরি এক ফাকে ফজলু মামা আমার কানে কানে বললেন ভাগিনা গরম খবর আছে। আমার নানু বাড়ি আসার উত্তেজনা মুহুর্তে দ্বিগুন হয়ে গেল ।
সারাদিন বিভিন্ন ফাকফোকরে মামার আসে পাশে ঘুরাফিরা করেও কোন ফল পেলাম না । এদিকে আমার উত্তেজনা ব্যরোমিটারের পারদের মত উঠানামা করছে। রাতের দিকে আর থাকতে না পেরে মামারে চেপে ধরলাম । অবশেষে মামা মুখ খুল্ল, ভাগিনা তোমার মামিরে খুইজা পাইসি। আমার চাপাচাপিতে মামা খুলে বল্লো ঘটনা ।
পাশের গ্রামের এই মাইয়ারে দেইখা মামা ফিদা হইয়া গেছে। মামা আমারে বল্লো তোরে নিয়া যাব কাল এক জায়গায়। আমি অতিশয় আহ্লাদিত হয়ে বললাম ,ওকে মামা । তোমার জন্য করবনা এমন কোন কাজ নাই। তুমি মামিরে পছন্দ করছো তুমার আর কোন কাজ নাই ,বাদ বাকি কাজ আমার ।
তুমি খালি বলবা কি করতে হবে। কথায় আছে, মামা ভাগ্নে যেখানে আপদ নাই সেখানে। ইত্যাদি ইত্যাদি।
পড়দিন সকালে মামা আমাকে বল্লো , চল।
আমি লুংগিটা কেচে বললাম, চল, কিন্তু যাবা কোথায় ।
-পীরের কাছে। এই পীরের মারাত্মক ক্ষমতা। মরা মানুষ জ্যান্ত করা উনার কাছে ডাল ভাল।
পীরদের কে আমি এম্নিতেই ভয় পাই । ছোট সময় এক জটাধারী আমারে দেখে বলেছিল , আমার গায়ে মরা কব্বরের হাওয়া লাগছে।
তারপর থাইকা গাছের পাতা নড়লেও ভয় পাই । পীর ফকিরের কাছ থেকে বারশ হাত দুরে থাকি । কিন্তু মামার সামনে সেই কথা বলার সাহস হল না ।
পীর সাহেব গাজা খাচ্ছিলেন । অত্যন্ত কামেল মানুষতো , অত্যাধিক জ্ঞানি মানুশের আবার নেশা না করলে চলে না ।
দুনিয়ার সব নেশা ত্যাগ করে উনারা গাজার নেশা ধরেছেন । মামা একেবারে উনার পায়ের কাছে গিয়ে পড়লেন। সব শুনে পীর সাহেব বললেন , মাইয়ারাই যত সর্বনাশের মুল। তার পর দীর্ঘ্যশ্বাস ফেলে বললেন , সমাধান আছে।
-কি সমাধান।
আমারা একযোগে জিজ্ঞাসা করলাম।
-মাইয়ার চুল যোগার করতে পারবি?
আমি মামারদিকে তাকালাম ,মামা মাথা নাড়লেন।
-মাইয়ার পরিদেয় কাপড়ের টুকড়া?
মামা মাথা নাড়লেন। আমি হাতাস হয়ে পীরের দিকে তাকিয়ে বললাম আর কোন উপায় কি নেই বাবা?
-আছে, কিন্তু বড় কঠিন । তোরা পারবিনা ।
চোখের সামনে দিয়া সব আশা চলে যাচ্ছে আর আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখব!! তাই আমি বললাম ,পারব ।
পীরবাবা তখন তার ঝোলা থেকে একটা গজাল বের করলেন। কি কি মন্ত্র পড়ে ফুদিয়ে বললেন ধর ,নে। আমি হাত পেতে নিতে গেলাম । পীরবাবা হুংকার দিয়া বললেন ,বিয়া কি তুই করবি?
নাউযুবিল্লা!! আমি লাফ দিয়ে সরে এলাম।
মামা এগিয়ে গজাল হাতে নিলেন। পীরবাবা বললেন, পরশু অমাবস্যায় এই গজাল মেয়ের বাড়ির পাশে তাল গাছে লাগাবি। ঠিক রাত ১২ টায়। দেখবি সাত দিনের মধ্যে তোদের বিজয় নিশান উড়তাছে। আমি আর মামা খুশি হলে চলে এলাম।
রাস্তায় মামা আমাকে বল্লো ,ভাগ্নে আমতো গাছে উঠতে পারিনা ,তুই গজাল টা বসাতে পারবিনা?
আমি বললাম, পারবো মামা । কিন্তু কাজ টা কি ঠিক হবে , যদি মামীর সাথে আমার বিয়ে হয়ে যায়।
মামা গম্ভীর হয়ে বল্লো তোর করতে হবেনা । আমিই পারবো।
অমাবস্যার দিন রাতে আমরা লুকিয়ে বের হলাম।
কালিগুলা অন্ধকারের মধ্যদিয়ে মেয়ের বড়ির পুকুর পারে পৌচ্ছলাম। তালগাছ অগেই ঠিক করাছিল। মামারে বললাম উঠে পড় । ভয় পাইবা না । আমি আছি।
বিসমিল্লা বইলা উঠবা।
মামা উঠে গেল। আমি নিচ থেকে গজালে হাতুড়ি ঠুকার শব্দ শুনতে পেলাম। কাজ প্রায় শেষ এমন সময় টর্চ হাতে বাড়ির ভিতর হতে একজন বেরহয়ে এলো । আমি লাফ দিয়ে একটা ঝোপের আড়ালে গিয়ে লুকালাম।
অবস্থা বেগতিক বুঝে মামাও তাড়াতাড়ি গাছ থেকে নেমে এলো। আমরা ঝোপের ভেতর লুকিয়ে রইলাম। বাড়ির লোকটি কয়েক বার এদিক সেদিক টর্চ মেরে ভেতরে চলে যেতেই মামা দুর্বল গলায় বল্ল ,ভাগিনা সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমার লুংগিতো গজালে আইটকা গাছে রইয়া গেছে।
আমি হাসি চেপে তাল গাছের দিকে তাকালাম ।
সেখানে মামার লুংগি ঝুলে আছে। বাতাস পেয়ে তা নিশানের মত উড়ছে! আমাদের বিজয় নিশান!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।