লাল তরঙ্গ, লাল বিপ্লবের বার্তা বয়ে আনে
সুপ্রীম কোর্ট থেকে পদত্যাগ করার বিচার শাহ আবু নইম মমিনুর রহমান সরাসরি চলে গিয়েছিলেন হাইকোর্ট মাজারে। সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে তিনি নিজেকে ধরে রাখলেন। তারপর ফিরে গেলেন বিচার প্রতি হিসেবে বরাদ্দকৃত ঘরে।
তিনি এমন এক জমানায় মাজারে গেলেন যেই জমানা এর আগেও একবার বাংলাদেশে প্রবর্তিত হয়েছিল। তখন মানুষ বিপদ গ্রস্ত হলে চলে যেত হাইকোর্টের মাজারে।
এখন মাজারে কেউ আর আগের জমানার দৃশ্য দেখেন না। আগের জমানায় মাজারে গেলে সবাই দেখতো একজন ন্যাংটা পাগল বসে আছেন। তার গায়ে শেকল প্যাচানো। ন্যাংটা পাগলটাকে সবাই এক নামে চিনত। নুরা পাগলা।
তাকে নিয়ে বেশ প্যাচ লেগে গিয়েছিল ওই সময়। মহাত্মা আহমদ ছফাসহ ওই সময়কার আলোচিত সব ঠ্যাডা বুদ্ধিজীবীই তাকে জমানার সক্রেটিস বলে দাবি করে বসলেন। মুখে মুখেই দাবি করেন নি তারা। সংবাদপত্রে কলাম লিখে এই দাবি করা হলো। নুরা পাগলার উদাম শরীর আর লোহার শেকলের অবস্থান নিল দৈনিক গণকণ্ঠ।
জাসদের মুখপত্র গণকণ্ঠের সম্পাদক ছিলেন জামাতি কবি আল মাহমুদ। প্রকাশক ছিলেন ড. আফতাব আহমেদ।
পত্রিকাটিতে আহমদ ছফারা লেখলেন যে, নুরা পাগলা ন্যাংটা হয়ে ও শরীরে শেকলা প্যাচিয়ে জাতির পিতা শেখ মুজিবের জমানার বাস্তবতাকে জন সমাজে ফুটিয়ে তুলেছেন। নুরা পাগলার ন্যাংটা থাকার অর্থ হলো...মুজিবের জমানা এমনই অশ্লীল, কদর্য ও খোলামেলা যার মধ্যে কোন রাখঢাক নেই। মুজিবের চ্যালারা লুটেপুটে দেশটাকে ন্যাংটো করে ফেলেছে।
আর তার শেকল প্যাচানোর মাধ্যমে মূর্ত হয়েছে শেখ মুজিবের রক্ষী বাহিনী, ছাত্রলীগের গুন্ডা ও যুবলীগের পান্ডাদের বর্বর নির্যাতন ও নিপীড়ন যা সারা দেশকে কারাগারে পরিণত করেছে।
ছফা সাহেবরা দাবি করে বসলেন জমানার সক্রেটিস হিসেবে নুরাপাগলা মুজিবকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, তার ঠাটবাট ফাঁস করে দিয়েছেন।
তো ঘটনা গুরুতর হয়ে ওঠলো নুরা পাগলার কর্মকান্ডে। তার দর্শন প্রার্থীদের দেখা মাত্র তিনি ক্ষ্যাপিয়া যাইতেন। অশ্রাব্য গালি-গালাজ করিতেনে।
ভক্তকূল ভাবিত পাগলা বাবা আসলে দর্শনার্থীদের গালি দিচ্ছেন না। তিনি মুজিবের দুঃশাসনকে গালি দিচ্ছেন।
দুঃসময়ের প্রতীকে পরিণত হওয়া নুরাকে মেনে নেয় নি ওই সময়কার সরকার। তাই গোয়েন্দা সংস্থার শত শত সদস্যদের মোতায়েন করল নুরার অশ্রাব্য গালির মর্ম উদ্ধারের জন্য। আর সরকার দলীয় মাসলম্যানরা নুরাকে হাইকোর্ট মাজার থেকে উচ্ছেদ করার জন্য বিরাট ঘোট পাকাল।
তার মাজারে হামলা হল।
সেই জমানাও নাই, নুরাপাগলাও নাই। তিনি এখন খিলগাওয়ে থাকেন বলিয়া খবরে প্রকাশ।
ন্যাংটা নাইমুল ইসলাম খান!
ভু-বাংলায় যত সাংবাদিক আছেন তার মধ্যে নুরা পাগলা টাইপের সাংবাদিক হইলেন নাইমুল ইসলাম খান। তিনি একেকটা সময়ে এমন এমন কীর্তি করেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকতার আসল চরিত্র তিনি ফাঁস করে দেন।
তিনি এক সময় দৈনিক ইনকিলাবে চাকরি করতেন। বাবার সূত্রে তিনি রাজাকার পরিবারের লোক। তিনি এক সময় ইনকিলাব ছাড়লেন। এরশাদের পতনের পর পর হয়ে ওঠলেন বাংলার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপন্থী সাংবাদিকতার সিপাহসালার। তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন কমিউনিস্ট মতিউর রহমান।
পর পর দুই পত্রিকায় মতিউর রহমান তার অধিনস্থ থাকলেন। আজকের কাগজ ও ভোরের কাগজ। কাজী শাহেদেরে সাথে লাগালাগি করে নাইমের নেতৃত্বে মতিরাও আজকের কাগজ ছেড়ে সাবের হোসেন চৌধুরীর ভোরের কাগজে যোগ দিলেন। মতিউর রহমান এক সময় নাইমুলকে ভোরের কাগজ ছাড়া করলেন।
এরপর নাইমুল ম্যাস মিডিয়ার এনজিও করল।
এর ওর কাছ থেকে চেয়ে চিন্তে ফান্ড যোগার করে পত্রিকা করলো। নতুন ধারা। বন্ধ হয়ে গেল। মালিক পক্ষ অনেক প্রতিশ্রুতিশীল সাংবাদিককে পথে বসিয়ে নতুন ধারা বন্ধ ঘোষণা করল। নাইমুল ইসলাম বসে থাকলেন না।
সেন্ট্রাল রোডে একটা কোচিং সেন্টারের উপর আমাদের সময় করলেন। সেই আমাদের সময় আন্ডার গ্রাউন্ড-ওভার গ্রাউন্ড হয়ে হয়ে টিকে আছে।
কথা টিক নাইম মিয়া অনেক ব্যবসায়ীকেই তার আমাদের সময় নামক নৌকায় উঠিয়েছেন। অনেকেই নেমেও গেছেন। কেন নেমে গেছেন তা নিয়ে নাইমুল ইসলামের বিরুদ্ধে কথা ওঠে।
তিনি টাকা মেরে দেন।
কিন্তু যতই অভিযোগ ওঠুক, নাইমুল ইসলাম খান কিন্তু কখনোই থেমে থাকেন নি। তিনি দিন দিন ন্যাংটা হয়ে চলেছেন। তার কাছে দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ধারাবাহিকভাবেই ধরা খেয়েই যাচ্ছে।
কিন্তু কেউ কি ন্যাংটো নাইমকে আহমদ ছফাদের মতো দরদী চোখ দিয়ে দেখবে? কেউ কি তাকে বর্তমান সময়ের মিডিয়া জগতের নুরা পাগলা বিচার করবে?
কেন করা দরকার?
১. নাইমুল ইসলাম খানের মধ্যে সততা আছে।
তিনি বাবার রাজাকারি অস্বীকার করেন নি। বরং নিজের সম্পাদিত পত্রিকায় বাবার বিরুদ্ধে রিপোর্ট ছেপেছেন।
২. তার কাছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা টাকার গরম দেখিয়ে খাতির করেন। তিনি পত্রিক ব্যবসার খাতিরে খাতির রাখেন। কিন্তু কখনোই কোন ব্যবসায়ীকে তিন মাথায় চড়তে দেন না।
মালিক পক্ষ বা পার্টনার হিসেবে যখন ব্যবসায়ীরা তার উপর ছড়ি ঘোরাতে পারে না তখন তারা আর আপসেই সরে যায়। বাংলাদেশের কোন সম্পাদকই এমন দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারেনি।
৩. নাইমুল ইসলাম খান ধান্দাবাজি করে, দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়, এমন অভিযোগ অনেকেই করতে পারে। ঘটনার সত্যতা কোথাও যে নাই তাও না। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, নাইমুল ইসলাম খান সম্পাদক হিসেবে কি খুব বেশি অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছেন।
যত বছর ধরে তিনি সম্পাদক, যত সিনিয়র সম্পাদক, সেই হিসেবে কি তার তেমন সম্পদ আছে?
৪. নাইমুল ইসলাম খান এমন সম্পাদক যার স্ত্রী, ভাই, ভাতিজীদেরও সংবাদ মাধ্যমে কাজ করতে হয়। যারা সম্পাদকের পোষ্য বা স্বজন হিসেবে কোটি কোটি টাকার ব্যবসায়ের ভাগ হাতাচ্ছে না।
৫. কিন্তু দেশ মান্য এমন এমন সম্পাদক আছেন যাদের অর্থবিত্ত সত্যিই শিউরে ওঠার মতো। তাদের কেউ কেউ নাইমুল ইসলাম খানের অধীনস্থ সাংবাদিক ছিলেন। বাংলাদেশে অনেকে সম্পাদক আছে যাদের নিউ ইয়র্কে, মালয়েশিয়ায়, সল্টলেকে, নিউজিল্যান্ডে বাড়ি আছে।
নাইমুল ইসলাম খানের কোথায় বাড়ি আছে?
নাইমুল ইসলাম খানকে সংহতি
আমরা নাইমুল ইসলাম খানের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। তাকে আমরা সত্যি সংহতি জানাই। তার দুর্ভাগ্যের জন্যই আমরা তাকে সংহতি জানাই। জরুরি অবস্থায় রিপোর্টার দিয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবসায়ীদের যারা পাকড়াও করতেন তাদের মধ্যে প্রথম আলোর মতিউর রহমান যেমন থাকতেন, তেমনি তিনিও থাকতেন। আর্মি লেলিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তারা নগদ টাকা নিতেন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।
কিন্তু মুশকিল হলো পিংক সিটির সালাউদ্দিন মিয়ার কাছ থেকে টাকা খসানোর ক্ষেত্রে নাইমুল মিয়ারটাই ফাঁস হয়ে যায়। কিন্তু মতি মিয়ারটা কাকপক্ষীও জানে না। অথচ টাকার বড় ভাগটা মতি মিয়াকেই দিতে হয়েছিল।
বাংলাদেশে সাংবাদিকতা এখন কর্পোরেট দুর্নীতি, লুটপাট আর রাজনৈতিক দৌরাত্মের জানি দোস্ত। তারা একসাথে চলে।
প্রখ্যাত দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীর পকেটে ডজন ডজন প্রখ্যাত সাংবাদিক থাকেন, যার নেতৃত্ব দেন কীর্তিমান কোন না কোন সম্পাদক। এসব সত্ত্বেও সাংবাদিকরা সমাজের বিবেক হিসেবে মূল্য পাচ্ছন। তাদের চৌর্যবৃত্তিকে বিনা প্রশ্নে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
কিন্তু নাইমুল ইসলাম খান সম্পাদক হিসেবে নিজের সব কথা পাঠককে জানান। তার মধ্যে গোপণীয়তা নাই।
তিনি ইসরাইলী লবির টাকা খান, ভারতীয় লবির টাকা খান। তাদের হয়ে আমাদের সময়ে প্রচারণাও চালান। মাধ্যম ব্যবসায়ী ও প্রফেশনাল সাংবাদিকরা এভাবেই প্রভুভক্ত থাকে। কিন্তু আরো আরো সম্পাদক ও সাংবাদিকরা কারো টাকা খেলে তা আর বাইরে ছড়ায় না। ইউএনডিপি, ইউনিসেফ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের টাকায় বন্ধু সভা করে বেড়ালে তা সমাজের মানুষ জানে না।
নাইমুল ইসলাম খান তার পত্রিকায় শিক্ষা নবিশ সাংবাদিকদের ৪-৬ হাজার টাকা বেতন দিলে এটা খবর হয়। মুখরোচক আলোচনা হয়। কিন্তু এখনও দৈনিক প্রথম আলোতে কমপক্ষে ১৫ জন প্রতিবেদককে ৮-১০ হাজার টাকা বেতন দিলেও তা খবর হয় না। প্রথম আলোতে কি এমন নজির নাই, একজন রিপোর্টারকে তিন মাস কাজ করিয়ে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বের করে দেয়া হয় নি? প্রথম আলোর মতিউর রহমান বলতে পারবেন না তার পত্রিকায় কখনো স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কারো চাকরি হয়েছে। তার পত্রিকায় চাকরি নেয়ার জন্য যে ঘুষ দিতে হয় এমন অভিযোগও সাংবাদিকতার মহলে আলোচিত।
কিন্তু কখনোই এসব বাইরে আসে না। কারণ যারা প্রথম আলোতে কাজ করে তারা ভদ্রলোক। ভদ্রলোকরা ভাড়া খাটতে পছন্দ করেন। কিন্তু সত্য ফাঁস করতে তারা ইতস্ত করেন। তাই ব্রাত্য রাইসু, তরুণ সরকাররা প্রথম আলোর্ ছাড়লেও কখনোই বলেন না কেন ছাড়লেন।
বাংলাদেশের মিডিয়া জগত এখন অনন্য অন্ধকার জগত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সব চিফ রিপোর্টার, নিউজএডিটর, ও বিশেষ প্রতিনিধিদের এখন ঢাকায় ফ্ল্যাট, গাড়ি আছে। ব্যাং ব্ল্যান্স আছে। সম্পাদকদের আস্ত বাড়ি, মস্ত গাড়ি আর বিদেশে অবকাশ যাপন কেন্দ্রও হয়েছে। নামে-বেনামে কত ব্যবসায়-বাণিজ্যের যে পার্টনার হয়েছে।
এ সবই ধামাচাপা থাকলেও সাংবাদিকতার নামে ধান্দাবাজি আড়ালে থাকলেও আমরা দেখছি নাইমুল ইসলাম খান সবাইকে বলে কয়ে করছেন। তিনি কারো মতো সাধুবেশী গোপণ তস্কর না। এই জন্য আমরা তাকে ধন্যবাদ দেই। তার প্রতিসংহতি জানাই। কারণ ডাকাতের দেশে চোর ভালো।
খারাপ জমানায় ন্যাংটা থাকাও ভাল।
ডিসক্লেইমার:
আজকাল পত্রিকার সম্পাদকরা যে জুনিয়র সাংবাদিকদের পায়ুকে অন্য পত্রিকার সম্পাদকদের চোখের সামনে দ্রষ্টব্য করতে পারেন তার নজির আমরা দেখেছিলাম কালেরকণ্ঠ ও বাংলাদেশ প্রতিদিন নামক দুটি পত্রিকার অপসাংবাদিকতার মধ্যে। যার জন্য প্রেসকাউন্সিলের নিন্দাবাদও জুটেছিল পত্রিকার দুটির কপালে। কিন্তু উক্ত পত্রিকা দুটির বিরুদ্ধে যে প্রথম আলো অভিযোগ করেছিল সেই পত্রিকার একজন জুনিয়রকে আমরা পায়ুরাজের ভূমিকায় দেখলাম। জানিতে বড় সাধ হয়, মতিউর রহমান কি ফিউশন ফাইভকে বরাদ্দ করেছেন নাইমুল ইসলাম খানের জন্য? আহা গুরু মারা বিদ্যা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।