সবাইকে শুভেচ্ছা...
বন্ধু মোর্শেদের নাম এর আগেও দু’একটা লেখায় উল্লেখ করেছি। নেংটা কালের দোস্ত। স্কুল, কলেজ সহ বিদেশেও লেখাপড়া করেছি এক সাথে। ইউরোপিয়ান ছাত্রজীবনের পর ভাগ্যের চাকা দুজনকে দু’ দিকে ঠেলে দিলেও ঘুরে ফিরে আবার এক হয়েছি। ২০০০ সালে আমি যখন যুক্তরাষ্ট্রে আসি মোর্শেদ ততদিনে ঠাঁই করে নিয়েছে কর্পোরেট দুনিয়ায়।
প্রতিষ্ঠিত টেলিকম্যুনিকেশন কোম্পানির একসিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সে। পৃথিবী চষে বেড়ানো তার কাজ। এক সপ্তায় আফ্রিকার তাঞ্জানিয়ায় তো পরের সপ্তায় ক্যারিবিয়ান কোন দ্বীপে। এভাবেই ঘুরে বেড়ায় পৃথিবীর দেশে দেশে। সপ্তাহান্ত ফোনে কথা বলা আমাদের পুরানো অভ্যাস।
গতকালও ফোন করল, এ যাত্রায় ভারতের আহমেদাবাদ হতে।
- দোস্ত, শুনছি কনডম আর জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির উপর নতুন একটা রুল জারি করেছে আমাদের উচ্চ আদালত। একটু যাচাই করে দেখবি কি এর সত্যতা?
- বলিস কি! যাচাই বাছাই পরে, আগে বল কি ধরণের আইন নিয়ে কথা বলছি আমরা?
- রাজা কনডম আর মায়া বড়ি। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই দুটি প্রডাক্ট এখন আমাদের জাতীয় প্রডাক্ট এবং বাংলাদেশের প্রতি ঘরে এর ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
- বলিস কি! বাজারে এত প্রডাক্ট থাকতে শুধু এই দুই কোম্পানি কেন?
- তুই শালা দেশপ্রেমিক না, তাই ইন্টারপ্রেট করতে পারবি না আদালতের ম্যাসেজ।
- কেন, আদালত কি তৃতীয় কোন ভাষায় রুলিং জারি করেছে যা আমদের জানা নেই?
- বিস্তারিত ফোনে বলা যাবেনা নিরাপত্তার কারণে। তবে একটা ইংগিত দিতে বাধা নেই, চোখ কান খোলা রেখে ফিরে যা ৭১ হয়ে ৭৫ সালে । ভেবে দেখ কোন ধরণের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করত বিশেষ একটা পরিবার।
এ ধরণের নির্মম জোক কবছর আগে হলে হয়ত হেসে উড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিবাদও করতাম। কিন্তু উচ্চ আদালতের সাম্প্রতিক কার্যক্রম বিবেচনায় আনলে কোন কিছুই এখন অসম্ভব মনে হয়না।
রাজা কনডম ও মায়া বড়িও এর বাইরে নয়। ক্ষমতার রুটি হালুয়া ভাগাভাগির জন্যে একটা দেশের বিচার ব্যবস্থা কতটা ময়লা পানিতে নামতে পারে চাইলে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে এর সূচক হিসাবে ধরা যেতে পারে। সমাজের হেন কোন গলি নেই যেখানে নাক গলায় না হঠাৎ গজিয়ে উঠা এসব নব্য দেশপ্রেমিকের দল। জাতির জন্যে পিতা ঠিক করা দিয়ে শুরু, একে একে ইতিহাস, ভূগোল, পৌরণীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, অফিস, আদালত, ব্যাংক, শিল্প কারখানা সহ সমাজের সর্বস্তরে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিশ্বস্ত ক্যাডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন উনারা। কিন্তু হায়, নিজদের ঘরে বছরের পর বছর ধরে যে অন্যায় আর অবিচার লালিত হচ্ছে সে গলিতে আইন বোধহয় একেবারেই অন্ধ।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগে বার বার জোষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন করা হচ্ছে অথচ এ নিয়ে উনাদের ন্যায় বিচারের খোলা তরবারি কোন এক বিশেষ কারণে একেবারেই ভোতা। বিশ্বস্ত্ব পদ-লেহনকারীকে প্রধান বিচারপতিরে আসনে বসিয়ে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার রোডম্যাপ বাংলাদেশের জন্যে নতুন কিছু নয়। আমাদের চোখে মুখে সামান্য চামড়া থাকলে ভুলে যাওয়ার কথা নয় কোন প্রেক্ষাপটে জন্ম নিয়েছিল ফখরুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে বিচারপতি হাসান ও বিচারপতি আজিজের মনোনয়ন ঠেকাতে মাসের পর মাস দেশকে জিম্মি করে ধ্বংসের তাণ্ডব চালিয়েছিল বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিশ্ব অবাক হয়ে দেখেছিল জাতি হিসাবে আমাদের হিংস্রতা যা রুয়ান্ডার তুতসি-হুতু গণহত্যার সাথেই তুলনা করা চলে।
প্রধান বিচারপতি হিসাবে মোজাম্মেল হকের নিয়োগ কি ২০০৬ সালের সেই ভয়ংকর দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়না? শুধু পছন্দের ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্যে বিচারপতিদের অবসরে যাওয়ার বয়স পর্যন্ত বাড়িয়েছিল ৪ দলীয় জোট। আজকে আওয়ামী লীগ যা করছে তা কি ঐ একই ধান্ধার কার্বন কপি নয়? ক্ষমতার স্বাদ কি এতই মোহনীয় যা ৩ বছরের মাথায় মন্ত্রবলে উলটে দেয় রাজনীতিবিদদের অতীত ইতিহাস? গতকালের একটা দৈনিকে পড়লাম শেখ হাসিনা নিজেকে রাষ্ট্রপতির আসনে দেখতে চাইছেন। পাশাপাশি অনুজ শেখ রেহানাকে খন্ডকালিন প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে প্রশস্ত করতে চাইছেন পুত্র জয় ওয়াজেদের ক্ষমতারোহন। উচ্চ আদালত কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলকে যদি এই নীল নক্সার অংশ ধরা হয় খুব কি অন্যায় কিছু হবে?
এসব নিয়ে অনেক কিছু লেখা যায়। চাইলে ত্যানা পেঁচানো যায় অনন্তকাল ধরে, কিন্তু রাজনীতিবিদ ও তাদের সহযোগী লুটেরাদের আতে আদৌ কিছু আসে যায় বলে মনে হয়না।
দেশটা ময়লা আবর্জনায় সয়লাব হয়ে গেছে। প্লাবন দরকার একটা, ভয়ংকর প্লাবন। মায়া বড়ি আর রাজা কনডম সাধারণ মানুষের জন্যে নয়, বরং আইন করে তা রাজনীতিবিদ ও বিচারকদের জন্যে বাধ্যতামূলক করা উচিৎ যাতে ক্ষমতার জরায়ুতে নতুন কোন তারেক, ককো, জয়, হাসান, আজিজ আর খয়রুল-মোজাম্মেলদের জন্ম না হতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।