আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধাঁধা

বিরোধী দলকে আলোচনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। গণজাগরণ মঞ্চ ঘটিত ঝামেলা (কারো কারো মতে) সম্ভবতঃ সমাধানের দিকে যাচ্ছে। পত্র পত্রিকায় যারা রাজনীতি নিয়েই বেশী লেখেন তাঁদের লেখায় আর কিছুদিনের ভেতর সবচেয়ে বেশী স্থান পেতে যাচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচন কালীন সরকার। থাকবে বেশ কিছু উপদেশ, বেশ কিছু সমাধান। সেমিনার সিম্পজিয়াম ও হবে।

দুই দলের মধ্য কে বেশী গোঁয়ার্তুমি করছে, কোন সমাধান আসলে দুই দলেরই মুখ রক্ষা পায় কিংবা সমাধান না হলে পরিণতি কি হতে পারে এমন সব ধাঁধার আসর দিন দিন জমে উঠবে। যেসব বুদ্ধিজীবীদের গায়ে বিভিন্ন দলের গন্ধ আছে তাঁরা নিজের দলের হয়ে কথা বলছেন। আর বাকীরা মাঝামাঝি একটা অবস্থানে থেকে দুদলকেই নসিহত দিচ্ছেন। তবে দুই দলের কার্যক্রমে একটি ব্যাপার স্পষ্ট মনে হচ্ছে আর তা হচ্ছে, কেউই আরেকটি এক এগারোর আশংকা করছেন না। যদিও ‘এক এগারো’ জাতীয় ঘটনায় সবচেয়ে উপকারি হয় বিরোধী দল, তারপরও বর্তমান বিরোধীদল ও বিশ্বাস করে না এমন কিছু ঘটবে।

সরকারী দল তো সংবিধান সংশোধন করে ভাবছে, কোন ভাবেই আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং এর আড়ালে সেনাবাহিনী আসতে পারছে না। একমাত্র আসবার পথ ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’, সেটিও রুদ্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে জরুরী অবস্থা জারী করে ক্ষমতায় আসা সরকার গুলোকে অসংবিধানিক বলে একটি আদালতের রায় আসায়, এই রাস্তায় ক্ষমতায় আসবার সব পথও বোধহয় রুদ্ধ। অর্থাৎ আইন মেনে ‘অন্য কেউ’ আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আইন না মেনে আসতে পারবে কি না কিংবা আইন অমান্য করে কারো আসবার শখ জাগবে কি না তা এখনও ধাঁধা হয়ে আছে।

সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসবে না বা আসতে চায় না এমন একটা ধারণা বদ্ধমূল হওয়ার পিছনে যুক্তি ছিল, এমন কিছু ঘটলে জাতিসংঘ মিশনে আর সেনাবাহিনীর ডাক পড়বে না। আর তেমনটা সেনাবাহিনী চায় না। তাই ক্ষমতা দখল তাঁরা করবে না। আর আমেরিকা যেহেতু ‘গনতন্ত্র’ বলতে বলতে মুখে ফেনা ওঠায়, তাই এই প্রভুটিও এমন কোন পদক্ষেপে মদদ দিবে না। এরপরও এক এগারো এসেছিল, এবং আইনের ছোট্ট কিছু ফাঁক গলে বছর দুই বহাল তবিয়তে পারও করে দিয়েছিল।

শুধু তাই না, সবচেয়ে আলোচিত দুইজন সসম্মানে দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ ও পেয়েছিল। ফলে ‘এক এগারো’ ঘটাতে আগ্রহী এমন কারো জন্য অবস্থা খুব বেশী নিরাশা ব্যঞ্জক না। সমস্যা হতে পারে, ‘কিং’স পার্টি’ তৈরি নিয়ে। গতবার বিভিন্ন দলের বড় মাপের কিছু নেতার মনে বিবেক জাগানোর একটা প্রচেষ্টা হয়েছিল। হঠাৎ করে তাঁদের মনে পড়েছিল দলে গনতন্ত্র নেই।

দলগুলো সব কিছু পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হয়ে বসে আছে। তাই ‘সংস্কার’ এর দাবী তুলেছিলেন। পরিণতি সবারই জানা আছে, তবে যেটা জানা নেই তা হচ্ছে তাঁদের বিবেক আবার জাগবে কি না? তেমন কোন পরিস্থিতি তৈরি হলে দেশ বাঁচানোর জন্য নতুন কোন দল গড়ায় মন প্রাণ সঁপে দিবেন কি না। ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ অনেক কিছু নতুন করে ভাবতে শেখাবে। রাজনৈতিক দল, সামরিক বাহিনী এবং জনগণ সবাইকেই।

প্রথম যে শিক্ষা দিল তা হচ্ছে আন্দোলন করা আর রাজনৈতিক দলগুলোর মনোপলি না। আন্দোলনের নতুন একটা রাস্তা হতে পারে ব্লগ। এই পদ্ধতিতেই এর পরের আন্দোলন গুলো হবে কি না তা সময়ই বলে দিবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে কিনে ফেললেই অনেক অন্যায় নিয়ে আলোচনা হত না। এখন একটু সাবধান হতে হবে।

এখন ব্লগারদের কিংবা ব্লগের মোডারেটর দের কেও কিনতে হবে। যেন কোন অন্যায় করার পরে ব্লগে সেসব প্রকাশ না পায়। আগে যেমন পত্রিকার মালিকদের কিনতে হত, এখন থেকে হয়তো ব্লগের মালিকদের ও কিনতে হবে। আন্দোলনের ডাক দেয়ার দ্বায়িত্ব এখন থেকে ব্লগ নেবে কি না কে বলতে পারে। একটা নতুন দল গঠন কি হতে যাচ্ছে? কিংবা আওয়ামী ব্লগ আর জাতীয়তাবাদী ব্লগে বিভক্তি? তবে কেন যেন মনে হচ্ছে জরুরী অবস্থা জারীর আগে ব্লগার নিয়ে এক পশলা আলোচনা তাঁরা করবেন।

কিংবা হয়তো ব্লগার দের দিয়েই ‘কিংস পার্টির’ চেষ্টা হতে পারে। যেন ব্লগে এসব নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা না হয়। চারিদিকে প্রচুর ধাঁধা ছড়িয়ে আছে। ইতিহাস নিয়ে দুটি বিখ্যাত উক্তি যদিও সবাই জানেন তাঁর পরও আরও একবার আওড়াচ্ছি। ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না’।

এই শিক্ষা আমাদের নেতারা নিয়েছেন বলেই ধারণা। আর দ্বিতীয় উক্তি হচ্ছে ‘হিস্ট্রি রিপিটস ইটসেলফ’। এই উক্তি থেকে কে শিক্ষা নেবে সেটাই প্রশ্ন। সেনাবাহিনী, সুশীল সমাজ, দেশবাসী, রাজনৈতিক দলের নেতা এবং ছাত্র সংগঠন সবার জন্যই এই উক্তি প্রযোজ্য। দ্বিতীয় উক্তিটি থেকে কে আগে শিক্ষা নিতে উদ্যোগী হবে সেটাই এখন সবচেয়ে বড় ধাঁধা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।