বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
সৃষ্টিতত্ত্ব সম্বন্ধে প্রাচীন মিশরীয় পুরাণে রয়েছে ...
আদিতে কেবলই ছিল সমুদ্র।
তারপর কোনও এক সময়ে ডিমের ভিতর থেকে (কোনও কোনও ভাষ্যে
অবশ্য) ফুলের ভিতর থেকে সূর্য, রা, জলের উপরিভাগে বেরিয়ে এলেন।
পরপর চারটি সন্তান হল তার।
দেবতা শু এবং জেব; দেবী টেফনুট এবং নুট।
দেবতা শু এবং দেবী টেফনুট হলেন বায়ূমন্ডল।
জেব হলেন পৃথিবী।
জেব এর ওপর দাঁড়ালেন দেবতা শু এবং দেবী টেফনুট।
নুট উপরে উঠে হলেন আকাশের দেবী।
দেবতা রা হলেন পৃথিবীর শাসক।
জেব এবং নুট এর সেথ এবং অসিরিস নামে দুটি ছেলে হল
এবং
আইসিস এবং নেফথিস নামে দুটি কন্যা হল।
কালক্রমে পৃথিবীর শাসন করবার উত্তারিধকার পেয়েছিলেন অসিরিস ।
আইসিস তাকে সাহায্য করেছিল। আইসিস কেবল অসিরিস-এর বোনই না, স্ত্রীও।
অসিরিস কে ঘৃনা করত সেথ।
যে কারণে সেথ অসিরিসকে হত্য করে।
আনুবিসের সহায়তায় আইসিস স্বামী মরদেহ মমিতে পরিনত করে।
এবং যাদুবলে অসিরিস-এর উত্থান ঘটায়।
এর পর থেকে অসিরিস পাতালের রাজা।
আইসিস এবং অসিরিস- এর পুত্র হোরাস।
হোরাস সেথকে পরাজিত করে এবং পৃথিবীর রাজা হয়।
যা হোক। প্রাচীন মিশরে আরও কিছু দেবতারও বিশেষ সম্মান ছিল। যেমন, আমুন, আনুবিস, থরট, তাহ্, হাথোর মুট সেখমেত।
তবে রাজনৈতিক শক্তির উত্থান পতনের আবর্তে কোনও কোনও দেবতা অন্য সব দেবতাকে ছাপিয়ে সর্বশক্তিমান হয়ে উঠেছিলেন। যেমন মেমফিস নগরের দেবতা তাহ্ (Ptah)।
প্রাচীন মিশরের মানচিত্রে মেমফিস নগরের অবস্থান। মেমফিস মিশরের প্রাচীনতম রাজধানী। কায়রো শহরের ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে
নীল নদের পশ্চিম তীরে এর অবস্থান ।
৪০০০খ্রিস্টপূর্বে লোকবসতি গড়ে উঠেছিল বলে অনুমান করা হয়। প্রাচীন মিশরীয় একটি উপকথা মতে মেমফিস নগরটি নির্মান করেছিলেন রাজা আহা। রাজা আহা নাকি মেমফিস নগর নির্মাণের উদ্দেশ্যে নীল নদটিকে নতুন খাতে প্রবাহিত করেছিলেন।
মেমফিস সভ্যতার ইতিহাসে প্রথম রাজকীয় নগর। প্রথম রাজবংশের সময়কাল ৩০০০ থেকে ২৮০০ খ্রিস্টপূর্ব।
প্রথম রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা মেনেস। তিনিই মিশরের ইতিহাসে প্রথম উল্লেখযোগ্য ফারাও, যিনি আপার এবং লোয়ার মিশরকে সংযুক্ত করেছিলেন। অবিভক্ত মিশরের রাজধানী ছিল মেমফিস। নতুন রাজবংশের আমলে থিবস এর চলে যায়। এর গুরুর্ত্ব কমে নি।
মেমফিস নগর। মিশরীয় ভাষায় মেমফিস কে বলা হত ‘মেন নেফার’। এর অর্থ: ‘প্রতিষ্ঠিত এবং সুন্দর’। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো মিশর ভ্রমন করে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। আজও পর্যটকেরা ঘুরে ঘুরে দেখেন প্রাচী মিশরের অতুলনীয় র্কীতি।
পৃথিবী টিকে থাকলে বিশ্বের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও দেখবে ‘অসাম’ ভাস্কর্যগুলি।
মেমফিস শহরে অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। পিরামিড, উপাসনালয় এবং সমাধিসৌধ। মেমফিস নগরের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থিত সাককারা। এখানেই রয়েছে মিশরের প্রাচীনতম পিরামিডটি।
ওখানেই রয়েছে গিজার পিরামিড এবং স্ফিংস।
অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে নীল নদের ঘন পলি জমা হয়েছে, এবং কিছু কিছু স্থাপত্য পানির নীচে তলিয়ে গেছে। প্রত্নতাত্ত্বিকগন অবশ্য নিরলস পরিশ্রমে দেবতা রা, আইসিস এবং তাহ - এর উপাসনালয় চিহ্নিত করেছেন।
নীল নদের পশ্চিম তীরে মেমফিস এর অবস্থান। অঞ্চলটি ব-দ্বীপের শীর্ষে হওয়ায় প্রাচীন রাজকীয় প্রশাসন নদীর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে সমর্থ হয়েছিল।
পুরনো রাজবংশের আমলে (২৬৪৯ থেকে ২৫৭৫ খ্রিস্টপূর্ব ) মেমফিস আর থিবস ছিল প্রাচীন মিশরের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। প্রাচীন মিশরীয় ফারাওদের দীর্ঘকালীন ইতিহাসের বেশির ভাগ সময় মেমফিসই ছিল প্রাচীন মিশরের প্রশাসনিক কেন্দ্র। কাজেই প্রাচীন রাজবংশগুলি আরাধ্য দেবতার উপাসনালয় সমাধি সৌধ নির্মাণ করেছিল। অবশ্য, আগেই বলেছি যে, বর্তমানে প্রাচীন প্রতœতাত্ত্বি নিদর্শন কমই অবশিষ্ট আছে।
মেমফিস নগরের প্রধান দেবতা তাহ্ ।
স্ত্রী সেকমেত। সন্তান নেফাত-টম। এরাও পূজিত হতেন।
দেবতা তাহ এর পরিচিত ছবি হল-দাড়িওয়ালা, মমিকৃত এবং মাথায় করোটির টুপি; হাতে রাজদন্ড এবং জীবনের প্রতীকরূপে ‘আনখ’ এবং স্থায়ীত্বে চিহ্নরূপে ডিজেড। দেবতা তাহ দক্ষ কারিগর এবং স্থপতিদের পৃষ্ঠপোষক।
মেফফিসে তার উপাসনালয়ের কাছে চমৎকার চুনাপাথর পাওয়া গেছে। কারুশিল্পী হিসেবে রাজবংশের ব্যাক্তিবর্গের স্বর্গীয় দেহ রূপ দিয়েছিল। ফারাও ২য় রামেসেস (প্রাচীন মিশরের এক বিখ্যাত ফারাও) -এর শরীরও নাকি তিনিই খোদিত করেছিলেন।
মেমফিস নগরে দেবতা তাহ এর উপাসনালয়ের ধ্বসস্তুপ।
মেমফিস এর পুরনো নাম ছিল Hikuptah এর মানে: ‘তাহ -এর আত্মার ভবন’।
শব্দটিকে রোমানরা বলত: Aegyptvs । এই শব্দটি থেকেই আধুনিক ইংরেজিতে Egypt শব্দটি সৃষ্টি হয়েছে। দেবতা তাহ এর উপাসনালয়টিই ছিল প্রাচীন মেমফিস নগরে সবচে উল্লেখযোগ্য কাঠামো । এর নামও ‘Hikuptah’ (তাহ এর আত্মার ভবন) অবশ্য আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত। তবে এককালে এটিই ছিল মিশরের সব বড় স্থাপত্য।
মেমফিস নগরের পুরোহিতরা তাহ কেই মনে করত পৃথিবীর স্রষ্টা, দেবতাদের জনক, পৃথিবীর সকল প্রাণির জীবনীশক্তির উৎস এবং প্রারম্ভের জনক ( মানে যার দ্বারা সব কিছুর সূচনা হয়েছিল)। ’
তা হলে দেবতা রা কিংবা হোরাস?
প্রাচীন মিশরের উপকথা অনুযায়ী এরাই তো পৃথিবী এবং জীবনের উৎস।
তখন বলেছি, ... রাজনৈতিক শক্তির উত্থান পতনে কোনও কোনও দেবতা সর্বশক্তিমান হয়ে ওঠে। যেমন মেমফিস নগরের দেবতা তাহ্ ।
মেমফিস নগরে দেবতা তাহ এর উপাসনালয়ের অভ্যন্তরে
আগেই বলেছি, দেবতা তাহ ছিলেন দক্ষ কারিগর এবং স্থপতিদের পৃষ্ঠপোষক।
মেমফিস নগরের তাহ-এর পুরোহিতকে বলা হত কারিগরদের শ্রেষ্ঠ নিয়ন্ত্রক। মেমফিস নগরে প্রাপ্ত একটি কফিন-পাঠ্যে লেখা রয়েছে, দেবতা তাহ অন্য দেবতাদের স্রষ্টা। যে দেবতা ফলমূল পাকান এবং সূর্যর মাধ্যমে আলো দান করেন। হৃদয় এবং ভাষা দিয়ে দেবতা তাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন। এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ন।
এ প্রসঙ্গে একজন মিশরতাত্ত্বিক লিখেছেন: For the ancient Egyptians the heart was the seat of thought, not the brain. By uttering the name of all things he (দেবতা তাহ ) brought them into being, as according to Egyptian belief, in the name lay inherent the essence of a being or a thing. In this way he (দেবতা তাহ) created the other gods. The theology of Ptah seems to suggest a synthesis of the mind and the material world, as the action of the heart and the tongue dictates the movement of the bodily limbs.
মেমফিস নগরে দেবতা তাহ এর উপাসনালয় (পরবর্তী কালে আঁকা ছবি)
মেমফিসে সংরক্ষিত একটি পান্ডুলিপিতে দেবতা তাহ সম্বন্ধে বলা হয়েছে ...
দেবতা তাহ ... তিনিই দেবগনের জনক, নগরের (মেমফিস?) ¯্রস্টা
প্রদেশের প্রতিষ্ঠাতা
তিনি নির্মান করিয়াছেন দেবগনের উপাসনালয়
ব্যবস্থা করিয়াছেন তাদের উপহারের
প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন দেবতাদের মর্যাদা
দেবতা তাহ অপরাপর দেবগনকে সৃষ্টি করিয়াছেন আপন কল্পনায়
এভাবে দেবগন তাহাদের নিজ নিজ দেহতে প্রবেশ করেছেন।
প্রত্যেক কাষ্টে পাথরে কর্দমে
প্রতিটি বস্তু তাহার নৈকট্য লাভের জন্য উৎপন্ন হইয়াছে
যাহাতে তাহারা প্রকাশিত হয় ...
দেবতা তাহ।
ছবি: ইন্টারনেট।
তথ্যসূত্র:
Click This Link
http://en.wikipedia.org/wiki/Memphis,_Egypt
http://www.egyptianmyths.net/ptah.htm
http://www.egyptartsite.com/ptah.html
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।