আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জ্বালানী নীতি সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি। খিলাফত শাসন ব্যবস্থার স্বরূপ ও রূপরেখা...

good
২০০৬ সরকারের সাথে এশিয়া এনার্জির সম্পাদিত কালো চুক্তি ব্যাপক ভাবে আলোচিত হচ্ছে। এই কলঙ্কজনক চুক্তিতে সামান্য রয়্যালটি ফি’র বিনিময়ে যে কোন পরিমাণ কয়লা রপ্তানীর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একই সাথে এই চুক্তিতে এলাকাবাসী সাধারণ জনগণের বিষয়ে কোনরূপ তোয়াক্কা না করে ‘উন্মুক্ত পদ্ধতিতে’ কয়লা উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের এই এশিয়া এনার্জি কেলেঙ্কারী জাতির সামনে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে-(১) প্রচলিত শাসন ব্যবস্থা কি আদৌ জনগণের দিকে লক্ষ্য রাখতে পারে? (২) আমাদের কি আদৌ কোন সুনিদির্ষ্ট জ্বালানী নীতি আছে, যা জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে? বাংলাদেশের জ্বালানী খাত অতীতেও একাধিক ঘটনা বা দুর্ঘটনায় জর্জরিত হয়েছে। খুব বেশী দিন আগের কথা নয়, টেংরাটিলার জনগণকে নাইকো নামের আরেক বিদেশী কোম্পানীর ভুল খনন ও সার্বিক অব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত উচ্চমূল্য দিতে হয়েছে।

বিপুল পরিমাণ গ্যাস আগুনে পুড়িয়ে দেয়া ছাড়াও পরিবেশগত যে ক্ষতি হয়েছে, তারই মূল্য কোটি কোটি টাকা। অক্সিডেন্টালও মাগুরছড়া গ্যাস ক্ষেত্রে আগুন লাগিয়ে কোটি কোটি টাকার অমূল্য জাতীয় সম্পদ নষ্ট করেছে, যার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেশবাসী আজও পায়নি। এর সাথে যোগ হয়েছে এই তীব্র গরমে ভয়াবহ লোডশেডিং। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে এখন ঘরে ঘরে চলছে হ্যারিকেন আর মোমবাতি। আর ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, সেচ পাম্প এবং সার উৎপাদন প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে।

বিদ্যুতের দাবীতে আন্দোলনরত সাধারণ মানুষের উপর আজ গুলি চালানা হচ্ছে। সত্যি কথা বলতে কি, বর্তমান জোট সরকারের পুরো জ্বালানী খাত ব্যবস্থাপনা আজ তামাশায় পরিণত হয়েছে। জনগণের চাহিদা, আবেগ অনুভূতি অথবা জাতীয় সার্বভৌমত্বের দিকটির কোন তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। তাই জনগণ প্রশ্ন করতে বাধ্য হচ্ছে এই জাতির জন্য আদৌ কি কোন সরকার আছে? আজকে তাই বাংলাদেশে বর্তমান জ্বালানী খাতের সার্বিক অবস্থা এবং বর্তমান জ্বালানী নীতির গভীর বিশ্লেষণ প্রয়োজন। একই সাথে জ্বালানী খাত ব্যবস্থাপনা ও জ্বালানী নীতি সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি জাতির সামনে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা একান্ত প্রয়োজন।

বাংলাদেশের জ্বালানী খাত বর্তমান জ্বালানী মজুত প্রথমেই জ্বালানী খাতের বর্তমান অবস্থা, চাহিদা, সরবরাহ ও মজুত সম্পর্কিত তথ্যাদি তুলে ধরছি। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে মাথাপিছু বাণিজ্যিক জ্বালানী ব্যবহারের দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের সারিতে। ১. গ্যাস : বাংলাদেশে জ্বালানীর সবচেয়ে বড় উৎস প্রাকৃতিক গ্যাস। বর্তমান দেশে ১৫.৩ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট) প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রমাণিত মজুত রয়েছে এবং ধারণা করা হয় যে, এখনো ৩২.৩ টিসিএফ গ্যাস ’অনাবি®কৃত’ রয়েছে। বাণিজ্যিক জ্বালানী ব্যবহারে দিক থেকে হিসেব করলে দেখা যায় যে ৬৬% ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়।

প্রতিদিন বাংলাদেশে আনুমানিক ৯.৩৫ বিসিএফ (বিলিয়ন কিউবিক ফিট) প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন করা হয়। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাস খাত উন্নয়নের জাতীয় সংস্থা পেট্রোবাংলার পাশাপশি পিএসসির (উৎপাদন বন্টন চুক্তি) বদৌলতে অসংখ্য বিদেশী তেল কোম্পানী কাজ করছে। যেমন - ইউনোকল, শেভরণ-টেক্সাকো, অক্সিডেন্টাল, হ্যালিবার্টন, নাইকো, তাল্লু, কেয়ার্ন ইত্যাদি। পেট্রোবাংলার মালিকানাধীন দুটি সংস্থা সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড এবং বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানী লিমিটেড বর্তমানে গ্যাস উত্তোলন করছে। উত্তোলিত গ্যাসের প্রায় ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনে ব্যয় হয়, বাকী ২০ শতাংশ ব্যয় হয় বাড়ী ঘরে গৃহস্থালীর কাজে এবং শিল্প-কারখানায়।

২. তেল : তেল ও কয়লা বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম জ্বালানী সম্পদ। বাংলাদেশে তেলের প্রমাণিত মজুতের পরিমাণ ৫.৬ কোটি ব্যারেল, যার থেকে দৈনিক ৬,৭২৫ ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের স্তরের নীচে বিপুল পরিমাণ তেল সম্পদ মজুত আছে বলে ধারণা করা হয়, যদিও তা এখনো অনাবি®কৃত। ৩. কয়লা: বাংলাদেশে সর্বমোট কয়লা মজুতের পরিমাণ আনুমানিক ১-১.৫ বিলিয়ন টন। কয়লা ক্ষেত্রগুলো মূলত উত্তরাঞ্চল এবং সিলেট এলাকায় অবস্থিত।

বাংলাদেশে বৃহত্তর পরিসরে কয়লা উৎপাদন শুরু হয় দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা ক্ষেত্রে ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে। ২০০৫ সালের জুন মাসে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ব্যবস্থাপনা ও কয়লা উৎপাদনের লক্ষ্যে দু’টি চাইনিজ কোম্পানীর সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই কয়লা খনি থেকে ১০ লক্ষ শর্ট টন কয়লা প্রতি বছর উত্তোলিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ১৯৯৮ সালে (পূর্ববর্তী-১৯৯৪ সালের পর) ব্রিটিশ কোম্পানী এশিয়া এনার্জির সাথে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী কয়লা ক্ষেত্র থেকে কয়লা আহরণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি যে কোন পরিমান কয়লা সামান্য ফি’র বিনিময়ে (মাত্র ৬%) বিদেশে রপ্তানী করার অনুমতি দেয়।

ফুলবাড়ী কয়লা খনি ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ১২ মাইল দূরে অবস্থিত। ৪. বিদ্যুত: দেশের বর্তমান বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ৩.৬ গিগাওয়াট, যার ৯৪% বিদ্যুতই তাপ বিদ্যুতপ্রকল্প। বিদ্যুতখাতে বর্তমানে প্রায় ৪০% সিস্টেম লস চলছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে অনিয়মিত বিদ্যুত সরবরাহের কারণে বাংলাদেশ প্রতিবছর ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জাতীয় উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। দেশে ২০ শতাংশেরও কম জনগণের কাছে বিদ্যুত পৌঁছে।

বাকী ৮০ ভাগ জনগণই লাকড়ি, কাঠ, গোবর, খড়কুটো প্রভৃতি দিয়ে জ্বালানীর চাহিদার মেটায়। জ্বালানী খাতে বিদেশী প্রভাব জ্বালানী ব্যবহার বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, ভারত ও চীনের মতো বৃহৎ ও শক্তিশালী দেশগুলোতে ব্যাপক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঘটেছে এবং ঘটছে। এই দেশগুলোর জ্বালানীর চাহিদাও অত্যন্ত তীব্র। বিগত শতাব্দীর সবার পছন্দের জ্বালানীর উৎস ছিল তেল।

কিন্তু বর্তমানে নতুন নতুন গবেষণা ও আবিষ্কার প্রমাণ করছে যে প্রাকৃতিক গ্যাস বর্তমান শতাব্দীর জন্য সবচেয়ে উপযোগী। বিবিধ ব্যবহার উপযোগিতা, পরিবেশ বান্ধব এবং বিপুল পরিমাণ মজুত এর অন্যতম কারন। এই জাতির সৌভাগ্য অথবা দূর্ভাগ্য বলতে হবে যে, বাংলাদেশে বিপুল পরিমান প্রাকৃতিক গ্যাস বিদ্যমান। যার ফলে বিশ্বের সব পরাশক্তি বাংলাদেশের দিকে নজর দিয়েছে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের এটা ছিল অন্যতম কারণ।

বলার অপেক্ষা রাখেনা যে চীন, ভারত ও পাকিস্তান এশিয়ার এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। এই অঞ্চলের জ্বালানী চাহিদা পূরণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা যায় যে, বিপুল পরিমাণ গ্যাস, তেল ও কয়লার মজুতের কারণে বাংলাদেশকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। এছাড়াও ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও দেখা যায় যে বিশ্বের দু’টি বৃহত্তম ও অগ্রসরমান অর্থনীতি চীন ও ভারতের মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান। চীন-ভারতের একান্ত প্রয়োজনীয় জ্বালানী সম্পদ বাংলাদেশে রয়েছে। তাই বাংলাদেশকে এ দুই দেশের সেবাদাসে পরিণত করার চক্রান্ত চলছে।

এসব কিছু মিলিয়ে আন্তর্জাতিক তেল ও গ্যস কোম্পানীর চোখে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষনীয়। এই কোম্পানীগুলো এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও উৎপাদন খাতে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করে নিয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থা ও জ্বালানী নীতির বিশ্লেষণ ১. আদর্শিক ভিত্তি: বাংলাদেশে বর্তমান জ্বালানী ব্যবস্থাপনার কৌশল ও নীতির ভিত্তি হচেছ পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক আদর্শ। পুঁজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে সরকার প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় অদক্ষ; তাই দেশী হোক কি বিদেশী হোক এই খাতকে বেসরকারী খাতে ছেড়ে দিতে হবে। এছাড়াও পুজিঁবাদের একটি মূলনীতি হচ্ছে যারই অর্থনৈতিক মূল্য আছে, তা-ই ব্যবসা উপযোগী।

বাংলাদেশের সকল সরকার জ্বালানী সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এই আদর্শ ও মূলনীতিকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে। তারা এই খাতের উন্নয়নের জন্য বেসরকারী খাত বিশেষ করে সাম্রাজ্যবাদী তেল ও গ্যাস কোম্পানীগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ২. বিদেশী কোম্পানীর সাথে পার্টনারশিপ: বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারগুলো একের পর এক বিদেশী তেল-গ্যাস কোম্পানীকে উৎপাদন বন্টন চুক্তি এর মাধ্যমে এদেশে বিনিয়োগে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এই অবস্থাই প্রমাণ করে যে এদেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে দেশের জ্বালানী নিরাপত্তা নিয়ে কোন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং ভিশন নেই। এই চুক্তিগুলো এমন যে, বিদেশী কোম্পানীগুলো থেকে আন্তর্জাতিক মূল্যে এবং ডলারে বাংলাদেশকে নিজের গ্যাস কিনতে হবে।

বিদেশী কোম্পানীগুলোর এই চুক্তিসমূহ সই করার মূল প্রেরণা হচ্ছে লাভ করা। তারা তাদের বিনিয়োগের দ্রুত বিনিময় চায় (জবঃঁৎহ ড়হ রহাবংঃসবহঃ)। আর তারা দেখে যে, রপ্তানীর মাধ্যমেই তা সম্ভব। তাই স্বাভাবিকভাবেই বিদেশী কোম্পানীগুলো দেশের চাহিদা বা উন্নয়নের কোন তোয়াক্কা করেনা। ৩. জ্বালানী রপ্তানী: বিদেশী বিনিয়োগকারীরা গ্যাস ও কয়লা রপ্তানী করতে চায় - এ সংবাদ আমাদের মিডিয়াগুলোতে প্রায়ই প্রচারিত হয়।

আর সরকারও জনগণের দৈনন্দিন বিদ্যুৎ সংকটের তোয়াক্কা না করে বিদেশী কোম্পানীগুলোর চাহিদা পূরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যেখানে সরকার দেশের জ্বালানীর তীব্র চাহিদাই মেটাতে পারছেনা, সেখানে কিভাবে তারা মূল্যবান দেশীয় সম্পদ বিদেশে রপ্তানী করার কথা চিন্তা করে, এটা রীতিমত অবিশ্বাস্য ব্যাপার। কৃষিনির্ভর এই সমাজে কৃষকদের অন্যতম চাহিদা হচ্ছে সার। আর সার উৎপাদনের অন্যতম উপাদান প্রাকৃতিক গ্যাস। একইভাবে শহর ও গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের তীব্র চাহিদা রয়েছে।

আর বাংলাদেশে বিদ্যুত উৎপাদনের ৯৪ শতাংশই গ্যাসভিত্তিক। এটা সবারই জানা যে, সরকার সার এবং বিদ্যুত - দু'টোর সরবরাহের ক্ষেত্রেই চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। শুধু সার ও বিদ্যুত উৎপাদনেই নয়, গৃহস্থালির কাজকর্ম ও শিল্প-কারখানায় পর্যন্ত সরকার পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। যখন দেশের ভিতরেই গ্যাস ও গ্যাসভিত্তিক শিল্পের এই অবস্থা, তখন কোন যুক্তিতে বিদেশে গ্যাস রপ্তানীর প্রশ্ন তোলা হচ্ছে? ৪. দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা: সরকারের ব্যাপক দুর্নীতি এবং স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতার অভাবের কারণে আজকে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো বাংলাদেশের জ্বালানী খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। বিদেশী বিনিয়োগ আমন্ত্রণের নামে সরকার সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহের শক্তিধর বহুজাতিক কোম্পানীগুলোকে দেশের মৌলিক শিল্প তথা সার, ইস্পাত ও বিদ্যুত খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়েছে।

আর এর ফলে সমগ্র জাতি বিদেশী শক্তির আধিপত্যবাদী মনোভাবের সম্মুখীন হয়েছে। একই সাথে আজকে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও জ্বালানী নিরাপত্তা চরম হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। বিগত সরকারগুলো প্রায়ই এমন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যে গুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী ধারা-উপধারা। সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা এই চুক্তির বিষয়বস্তু বুঝতে চায়না এবং অনেক ক্ষেত্রে বোঝার যোগ্যতাও তাদের নেই। উপরন্তু এই চুক্তিসমূহ জাতির সামনে প্রকাশ করা হয় না।

আমরা দেখেছি যে কিভাবে বুশ প্রশাসন চীনা কোম্পানী সিনুক (ঈঘঙঈ) এর ইউনোকল ক্রয়ে বাধা দেয়। তখন ডোনাল্ড রামস্ফেল্ড বলেছিলেন যে ইউনোকলকে বিদেশী হাতে তুলে দিয়ে আমাদের জ্বালানী নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে পারিনা। শেষ পর্যন্ত শেভরন ইউনোকলকে ২ বিলিয়ন ডলার কম দামে কিনে নেয়। একই ভাবে আমরা লক্ষ্য করেছি যে কিভাবে ভারত ও চীন তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য জ্বালানীর উৎসের ব্যাপক অনুসন্ধান করছে। প্রয়োজনে অন্য দেশের উপর প্রভাব বিস্তার করে হলেও তারা তাদের জ্বালানী চাহিদা মেটানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে।

অথচ বাংলাদেশে আমরা এর বিপরীত চিত্র দেখতে পাই। আমাদের সরকারগুলো বিদেশীদের হাতে কিভাবে দেশের জ্বালানী সম্পদ তুলে দিবে, সে চিন্তায় বিভোর। এই চিত্র জাতির জন্য সত্যিই দূর্ভাগ্যজনক। ৫. ভিশন এবং দূঢ়সংকল্পের অভাব: বিপুল পরিমান জ্বালানী সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে একটি শক্তিশালী আত্মনির্ভরশীল দেশে পরিণত করার কোন ভিশন, পরিকল্পনা বা সংকল্প বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের নেই। একটি শক্তিশালী ও উন্নত দেশে পরিণত হবার সমস্ত উপাদানই বাংলাদেশে বিদ্যমান।

এদেশে আছে অত্যন্ত পরিশ্রমী ও মেধাবী জনগোষ্ঠী, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা-তেল ইউরোনিয়াম, কালো সোনা ইত্যাদি সম্পদ। আমাদের শুধু দরকার প্রজ্ঞাবান, বিচক্ষণ, সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও পরিকল্পনাকারী নেতৃত্ব; যে নেতৃত্বের থাকবে ভবিষ্যতের রূপকল্প এবং দৃঢ়সংকল্প; যে নেতৃত্ব সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সঠিক দিক-নিদের্শনা দিয়ে জাতিকে সামনে এগিয়ে নিবে। ৬. উন্নয়নের জন্য অর্থ: বিদেশী বিনিয়োগ আমন্ত্রণের মাধ্যমে জ্বালানী সম্পদ উন্নয়নের পিছনে যুক্তি হিসেবে সরকার প্রায়ই দেখায় সম্পদের অভাব। অর্থাৎ আমাদের এই খনিসমূহ উন্নয়ন ও সম্পদ উত্তোলনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আমাদের নেই। অথচ যেসব চুক্তির মাধ্যমে বিদেশী কোম্পানীগুলো বাংলাদেশে শিল্প প্রতিষ্ঠা বা জ্বালানী খাতে বিনিয়োগে রাজী হয়েছে, সেগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে বাংলাদেশের নীট ক্ষতি হয়েছে অর্থাৎ বিদেশী বিনিয়োগের মাধ্যমে যে অর্থ এসেছে, তার চেয়ে বেশী অর্থ সরকারের খরচ হয়েছে।

শুধু কাফকোর উদাহরণই এক্ষেত্রে যথেষ্ট। কাফকো এদেশে ৩৩৫.৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে আর অন্যদিকে এক্ষেত্রে সরকারের খরচ হয়েছে ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ সরকারের নীট ক্ষতি ১৪.২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একইভাবে প্রশ্ন করা যায় যে, কিভাবে সরকার সামান্য রয়্যালটির বিনিময়ে সম্পদ রপ্তানী করার অনুমোদন দেয়? এগুলো শুধু কোন বিশেষ সরকারের ব্যর্থতাই নয়, বরং সমগ্র শাসনব্যবস্থা যে জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনায় সম্পূর্ণ অপারগ, তারই প্রমাণ। উপসংহারে এটা পরিষ্কার ভাবে বলা যায় যে, ভুল নীতি ও আদর্শ গ্রহণের কারণে আজকে বিদেশী শক্তিসমূহ বাংলাদেশের জ্বলানী সম্পদ লুটপাট করছে।

একই সময় বিএনপি-আওয়ামী সরকারগুলো নিজ দেশের জনগণকে জ্বালানী ও জ্বালানীভিত্তিক শিল্প, পণ্য ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে এবং সর্বোপরি, দেশের জ্বালানী নিরাপত্তা হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। সুতরাং আজকে সমাজের চিন্তাশীল অংশকে অবশ্যই দেশের জ্বালানী নিরাপত্তা কিরকম বিপদের মুখোমুখি তা একান্তভাবে ভাবতে হবে। কিভাবে এই বিপদ থেকে জাতি মুক্তি পেতে পারে এবং জ্বালানী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সঠিক আদর্শ ও নীতি কি হওয়া উচিত - তা নিয়েও সবাইকে গভীর মনোনিবেশ ও আন্তরিকতা সহকারে ভাবতে হবে। তাহলেই যথাযথ ভাবে জনগণের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে এবং বাংলাদেশ একটি উন্নত ও শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। জ্বালানী নীতি সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি ১. আদর্শিক ভিত্তি: বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ সুবহানাহুওয়াতায়ালা কর্তৃক প্রদত্ত জীবনব্যবস্থা ইসলাম।

আল্লাহ্ সুবহানাহুওয়াতায়ালা নিজ সৃষ্টির প্রকৃতি সম্পর্কে স্বাভাবিক ভাবেই সম্যক অবহিত। সুতরাং ইসলাম সমাজ ও ব্যক্তির জন্য প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সঠিক ভাবে নির্ধারিত করেছে। একইভাবে ইসলাম সঠিকভাবে সম্পদের মালিকানা, সুষ্ঠু ব্যবহার ও বিতরণের নীতিমালা দিয়েছে। ইসলাম কখনোই সম্পদের মালিকানার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে মানুষের চিন্তা ও ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়নি। কারণ প্রকৃতিগতভাবেই মানুষ সুযোগ পেলে বেশী সম্পদের অধিকারী হতে চাইবে।

সুতরাং মানুষকে যদি সম্পদের মালিকানা নির্ধারণের আইন প্রণয়ণের সুযোগ দেয়া হয়, তবে সে অবশ্যই নিজের ব্যক্তিস্বার্থ সবার আগে নিশ্চিত করতে চাইবে। সেজন্যই আমাদের দেশে আমরা দেখতে পাই যে আমাদের আইন প্রণেতারা ক্ষুদ্র ব্যক্তি স্বার্থের কারণে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দেয়। তাই ইসলাম সম্পদের মালিকানার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে, যাতে সঠিক ও সুষ্ঠু আর্থ-সামাজিক অবস্থা দেশে বিরাজ করে। ২. জ্বালানী সম্পদের মালিকানা: ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত এক হাদীসে রাসুল (সাঃ) বলেন, “তিন জিনিষের মধ্যে সকল মানুষ শরীক। এগুলো হচ্ছে পানি, ঘাস (চারণ ভূমি) এবং আগুন।

[সুনানে আবু দাউদ] জ্বালানী সম্পদের মালিকানা সংক্রান্ত ইসলামের ধারণা উপরোক্ত হাদীস থেকে উৎসারিত। হাদীসে বর্ণিত আগুন এর অন্যতম অর্থ জ্বালানী। সুতরাং, জ্বালানী সম্পদের উৎস কখনো ব্যক্তি মালিকানাধীন হতে পারে না। সমগ্র দেশবাসীর স্বাভাবিক জ্বালাানী চাহিদা রয়েছে। তাই জ্বালানী গণমালিকানাধীন সম্পদ অর্থাৎ জ্বালানী সম্পদের উপর সমগ্র দেশবাসীর অধিকার রয়েছে।

দেশবাসীর পক্ষ থেকে এই সম্পদের ব্যবস্থাপনার ভার খলিফার উপর ন্যস্ত। সুতরাং প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল, কয়লা ইত্যাদি কখনোই বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া যাবেনা, কোন ব্যক্তি বা দেশী-বিদেশী কোম্পানী এর মালিকানা পাবেনা। আল্লাহ সুবহানা হুওয়াতায়ালা সমগ্র জনগণকে এই সম্পদের মালিকানা দিয়েছেন এবং এই মালিকানা কোন ব্যক্তির কাছে হস্তান্তরের কোন সুযোগ তিনি দেননি। আর এই সম্পদের ব্যবস্থাপনার ভার রাষ্ট্রপ্রধান তথা খলিফার ঘাড়ে বর্তায়। অর্থাৎ জনগনের পক্ষে ইসলামী রাষ্টের খলিফা এই সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবেন।

সম্পদের মালিকানার মতোই এই সম্পদ থেকে আহরিত সকল আয়ের উপর জনগণের অধিকার রয়েছে। মুসলিম অমুসলিম, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সকলেরই আল্লাহ্ প্রদত্ত প্রাকৃতিক সম্পদ ও সম্পদ থেকে অর্জিত আয়ের সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। ইসলামী রাষ্ট্রকে তাই মানুষের দ্বারে দ্বারে জ্বালানী সুবিধা এবং এর থেকে প্রাপ্ত আয়ের সুবিধা পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে। ৩. জ্বালানী সম্পদ বিষয়ে ইসলামী রাষ্ট্রের রূপকল্প : আল্লাহ্ সুবহানাহুওয়াতায়ালার বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের মাধ্যম খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা। এই রাষ্ট্র সমগ্র বিশ্ববাসীকে সঠিক নেতৃত্ব ও সুবিচার প্রদান করবে।

শুধু অন্যান্য দেশের সাথে সহাবস্থান করেই এই রাষ্ট্র বসে থাকবেনা, বরং ইসলামী রাষ্ট্র সমগ্র বিশ্বে ইসলামের পতাকাকে সুউচ্চ করবে। আল্লাহ্ সুবহানাহুওয়াতায়ালা বলেন, “তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রাসুলকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীন (জীবনব্যবস্থা) সহকারে, যেন এই দ্বীন অন্যান্য দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করেন...। ” [সুরা আত্ -তাওবাহ্ - ৩৩] এই বিজয়ের মানসিকতা তখনই বাস্তবরূপ লাভ করবে যখন খিলাফতের ভিশন, কৌশল ও পরিকল্পনা থাকবে ’বিশ্ববাসীর উপর নেতৃত্ব প্রদান করা’। আর তখনই এই ইসলামী রাষ্ট্র জনগণকে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল, উন্নত ও শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। অর্থাৎ খিলাফত রাষ্ট্র শুধু বর্তমান চাহিদা নয়, ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণও নিশ্চিত করবে এবং জ্বালানী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অন্যান্য রাষ্ট্রের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।

জাতীয় জ্বালানী সম্পদ জনগণের হাতের নাগালে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে খিলাফত রাষ্ট্র সর্বশক্তি নিয়োগ করবে এবং যে কোন ধরনের বিদেশী নির্ভরশীলতা সম্পূর্ণ নির্মূল করবে। উপরন্তু, খিলাফত রাষ্ট্র দেশীয় জ্বালানী সম্পদ-ভিত্তিক শিল্প উৎসাহিত করবে এবং শিল্পায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। যেহেতু খিলাফত রাষ্ট্র আত্মনির্ভরশীল রাষ্ট্র হবে, তাই এই রাষ্ট্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি বা দক্ষ জনশক্তির জন্য বিদেশের উপর নির্ভরশীল হবে না। নিজস্ব প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনশক্তি তৈরীর জন্য খিলাফত রাষ্ট্র সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে। ৪. স্বচ্ছতা ও দৃঢ়সংকল্প: খিলাফত সরকার ব্যবস্থায় খলিফা বা অন্য কোন ব্যক্তির আইন তৈরীর কোন অধিকার নেই।

এছাড়াও মালিকানার অধিকার, সম্পদের ব্যবহার ইত্যাদি আইন বা নিয়ম কানুন সবার জানা থাকবে, কারণ এসবই পবিত্র কুরআন সুন্নাহ্ থেকে উৎসারিত। যেভাবে খলিফা জানেন যে এই জ্বালানী সম্পদ ও এর থেকে অর্জিত আয় জনগণের মাঝে বিতরণ করতে হবে, একইভাবে জনগণ জানে খলিফার কাছ থেকে তাদের প্রাপ্য অধিকার ও তা আদায়ের পদ্ধতি। এভাবেই সর্বতোভাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব। আর অন্যদিকে খিলাফত রাষ্ট্রকে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি বা নেতৃত্ব প্রদানকারী রাষ্ট্রে পরিণত করার সংকল্প খলিফা শতভাগ পূরণের চেষ্টা করবে। এটা আল্লাহ্ সুবহানাহুওয়াতায়ালা কর্তৃক প্রদত্ত পবিত্র দায়িত্ব, যার জন্য খলিফাকে কেয়ামতের দিন জবাবদিহি করতে হবে।

সুতরাং ইসলামী রাষ্ট্রে খলিফা তার দায়িত্ব পালনে সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করবে। সুতরাং, জ্বালানী সম্পদের উপর বিদেশী প্রভাব ও মালিকানা বাতিল করা হবে। জ্বালানী সম্পদ বেসরকারী বা ব্যক্তি মালিকানায় দেয়া সম্পূর্ণ হারাম (নিষেধ)। ইসলামী রাষ্ট্র এই সম্পদের সমস্ত মালিকানা হস্তান্তর ও ব্যবস্থাপনা চুক্তি তাৎক্ষনিকভাবে বাতিল করবে। মনে রাখা প্রয়োজন যে বিদেশী কোম্পানী সমূহ শুধু অর্থ বিনিযোগ করে না বরং তাদের সাম্রাজ্যবাদী এজেন্ডা থাকে।

অর্থাৎ শোষণ ও লুটপাট তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। সুতরাং বিদেশী কোম্পানীসমূহের সাথে যে সমস্ত অযৌক্তিক বা জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে সম্পূর্ণ বাতিল করা হবে। গভীর নিরীক্ষণে দেখা যাবে যে বিদেশী কেম্পানীগুলো যে আর্থিক সাহায্য এদেশে নিয়ে আসে, অ্যাকাউন্টিং-এর মারপ্যাঁচে অথবা সাবসিডি, ট্যাক্স হলিডে, আর ট্রান্সফার প্রাইসিং-এর মাধ্যমে আরো বেশী পরিমান টাকা তারা দেশ থেকে নিয়ে যায়। মোট কথা, বিদেশী কোম্পানীর মাধ্যমে জনগণের কোন উপকার তো হয়ইনা বরং জনগণ লুটপাট আর শোষণের শিকার হয়। প্রচলিত চুক্তিগুলো এমন যে এর মাধ্যমে প্রযুক্তি বা দক্ষতা হস্তান্তর হয়না।

অথচ এই প্রযুক্তি ও দক্ষতা অর্জন আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনেরই পূর্বশর্ত। ৫. অর্থের উৎস এবং অগ্রাধিকার: খিলাফত রাষ্ট্রে অগ্রাধিকার এবং দায়িত্বের বিষয়গুলো সুস্পষ্ট। রাষ্ট্র পরিষ্কারভাবে জানে তার উদ্দেশ্য কি এবং উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ কি। তাই খিলাফত রাষ্ট্র জানে অগ্রাধিকার খাত কোনগুলো; আর নিশ্চিতভাবেই জ্বালানী তার মধ্যে একটি। জ্বালানী সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য অতীব জরুরী।

যেহেতু বিশ্বে নেতৃত্ব দেয়া খিলাফত রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য, তাই জ্বালানী খাত রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার তালিকায় অন্যতম শীর্ষস্থানে অবস্থান করবে। যেহেতু জনগণের প্রয়োজন মিটানো খলিফার দায়িত্ব, জ্বালানী খাতের উন্নয়ন তাই সবদিক থেকেই রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকবে। উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সুষ্ঠু বিতরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের চলমান জ্বালানী সংকট সম্পূর্ণ দূর করা হবে এই খাতে খলিফার প্রথম কাজ। খলিফা জ্বালানী ক্ষেত্রে বিদেশী নির্ভরতা কমানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করবে এবং তার পরিবর্তে দেশীয় জ্বালানীভিত্তিক সকল প্রকার কার্যক্রমের উপর গুরুত্বারোপ করবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে যেখানে সিএনজির ব্যাপক সরবরাহ দেশীয়ভাবে সম্ভব, সেখানে বর্তমান সরকার ব্যবস্থা পেট্রোলভিত্তিক যন্ত্রপাতি বা মেশিন আমদানী অনুমোদন করে।

প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক শিল্প ও যন্ত্রপাতি তৈরীর সুযোগও দেয়া হয়না। অপ্রয়োজনীয় ও অনুৎপাদনশীল খাত যেমন দালান কোঠা বা মিনার তৈরীতে টাকা খরচ না করে প্রাথমিকভাবে জ্বালানী খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে রাষ্ট্র টাকা খরচ করবে। সিষ্টেম লস এবং দুর্নীতি বন্ধ করলে বিপুল পরিমাণ টাকা সাশ্রয় হবে যা এই ধরনের প্রকল্পের জন্য জরুরী। অগ্রিম বিক্রয় এবং আন্তরিক কূটনৈতিক বোঝাপড়ার মাধ্যমেও জ্বালানী খাতে অর্থায়ন সম্ভব। ৬. গবেষণা ও উন্নয়ন: জ্বালানীর দক্ষ ও সাশ্রয়ী ব্যবহার শক্তিশালী ও নেতৃত্ব দানকারী রাষ্ট্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সুতরাং খিলাফত রাষ্ট্র বিকল্প জ্বালানী, সাশ্রয়ী বিতরণ ব্যবস্থা, এবং জ্বালানী ব্যবহারে সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ও পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য ব্যাপক উৎসাহ ও সহায়তা প্রদান করবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কয়লার পরিবর্তে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার উৎসাহিত করতে পারে, কারণ গ্যাস ৩৫% অধিক সাশ্রয়ী এবং অত্যন্ত পরিবেশ বান্ধব। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে রাষ্ট্র সর্বপ্রকার সহায়তা প্রদান করবে এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরী করে দেবে। উপসংহার জ্বালানী এবং খনিজ সম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ এই সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করে দেশের বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং শিল্প কারখানার অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটিয়ে দেশেেক একটি পরাশক্তিতে পরিণত করতে পারে। অথচ প্রচলিত পুঁজিবাদী, দেশের স্বার্থবিরোধী ও বিদেশী শক্তির তাঁবেদার আওয়ামী-বিএনপি শাসনের কারনে এ রকম একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রকে বিদেশী কোম্পানীর হাতে জিম্মি করে এদেশকে পঙ্গু করে রাখা হয়েছে।

অতীতে অক্সিডেন্টাল-নাইকোর মত কোম্পানীর যথেচ্ছা লুটপাটের নজির সত্বেও সা¤প্রতিক সময়ে আবার ফুলবাড়ী কয়লা খনি এশিয়া এনার্জির হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এদেশের জনগণকে এখুনি এ বিষয়ে সচেতন হয়ে এ দেশের জ্বালানী সম্পদ বিদেশীদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত প্রতিহত করতে হবে। আর সম্পদের নিরাপত্তা বিধান করে এসবের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের ও জনগণের স্বার্থ নিশ্চিত করতে পারে খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা। একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রই বর্তমান লুটপাটের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করে বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিনত করতে পারে।
 


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.