আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বাসীদের অবিশ্বাস

ইদানিং নাস্তিকদের কাজকর্ম ও লেখালেখির দ্বারা আমাদের চারপাশে ঘিরে থাকা ধার্মিক, বক ধার্মিক, কাক ধার্মিক, মোল্লা ধার্মিক, পৈতা ধার্মিক, মডারেট ধার্মিক সকলেই প্রত্যহই ধর্মানুভতি তে আঘাত প্রাপ্ত হচ্ছে। যদিও এ অনুভতিটার সাথে আমার ব্যক্তিগত ভাবে কোন পরিচয় নাই। আমার কাছে ব্যাপারটা একটা মিস্ট্রি। এই মিস্ট্রিসিজম এ মোল্লা ধার্মিক রা প্রথম থেকেই আঘাত প্রাপ্ত হচ্ছেন এবং তার বদলে দা, চা পাতি, ছুরি বটি দিয়ে জবাব ও দিচ্ছেন। তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার ও নাই।

তবে ইদানিং আমি মডারেট ধার্মিক দেরও খুব বেশি বুলি কপচাইতে দেখছি, মনে হয় তারাও ইদানিং তাদের ঈমানের দন্ডে আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছেন। তাদের মন্তব্য শুনে মনে হচ্ছে যে তাদের ঈমানের দন্ড আর কিছু মজবুত হইলে তারাও ছুরি , কাচি, চা পাতি নিয়া মাঠে নাইমা যাইতো। আমার আশেপাশের অনেক মডারেট ধার্মিকরাই উঠে পড়ে লেগেছেন আমাকে বিশ্বাসী তে রুপান্তর করার জন্য, কেউবা নানাবিধ সদুপদেশ দিচ্ছেন, কেউবা গালিগালাজ দিচ্ছেন, অনেক কাছের মানুষ ও আমি নাস্তিক বিধায় আমার থেকে নিরবে দূরে সরে যাচ্ছেন। যেন আমার সর্বাঙ্গে পচন ধরেছে, ধরা যাবে না ছোয়া যাবে না বলা যাবে না কথা। হুমায়ুন আজাদ এধরনের (হুবুহু মনে নেই) একটা কথা বলেছিলেন- ‘আমার যদি নাস্তিকানুভতি থাকতো তবের এই বিশ্বাসীদের ধরমপ্রচারে এবং কুসংস্কারে আমি প্রতিনিয়ত জর্জরিত হতাম, তাদের যদি তা প্রচারের অধিকার থাকে তবে আমার যুক্তি উপস্থাপনের সমান অধিকার রয়েছে’ আজ থেকে বছর সাত আট আগেও আমি নাস্তিক শুনলে তারা তেমন একটা গা করতো না, ভেবে নিত বোধয় জওয়ান বয়সের ভীমরতি, তবে ইদানিং হাসিনা আপার ডিজিটালাইজেশনের কল্যানে পরিস্থিতি পাল্টেছে, তারা এখন বেশ সিরিয়াস্লি ই ন্যায়।

প্রায়স ই কিছু প্রশ্ন , মন্তব্য বা আক্ষেপের সম্মুখীন হই – -‘কেন বাবা তোরা নাস্তিক, তোরা বাল হো আর ছাল হো তোরা তোদের বিশ্বাস নিয়ে থাক, আমরা তো তোদের ঘাটি না , আমাদের আবেগ , অনুভুতি বিশ্বাস ও ধর্মানুভতি তে কেন তোদের আঘাত করতে হবে?’ -‘ হাজার বছরের অন্ধত্বে যে ধান ফলিয়েছি কেন আমাদের সে পাকা ধানে মই দিতে হবে?’ - “এদের যে কুকুরের মত জবাই করছে ঠিক ই করছে, তাই করা উচিৎ” ফেবু তে কোন নাস্তিকের মৃত্যু সংবাদ আসলে – -‘ঠিক ই হইছে ব্যাটা নাস্তিক ছিল’ তারা বলে তাদের ধর্ম শান্তির। তার প্রমান আমরা চাক্ষুস দেখছি। তারা বলে মৌলবাদী খারাপ মৌলবাদী কুৎসিত শ্রেফ এটুকু বলেই তারা খান্ত দ্যায় মৌলবাদের বিরুদ্ধাচারনের সাহস তাদের হয়না। কিন্তু এই ধার্মিকেরা জানে না যে তাদের পূর্বপুরুষেরা হাজার বছর ধরে কেবল চ্যারিটি করে এই ধর্ম সমুহকে প্রতিষ্ঠা করেনি। ইতিহাস সে সাক্ষ্য দ্যায় না, বরং ইতিহাস সাক্ষ্য দ্যায় আরো কুৎসিত ও বীভৎস ধ্বংসযজ্ঞ ও কর্মের।

তাদের বলবো কেবল কাঠমোল্লাদের পুস্তক থেকে ইতিহাস না জেনে সেখান থেকে বের হয়ে স্পস্টভাবে ইতিহাসের দিকে তাকান খোলা চোখে। কাঠমোল্লাদের বাইরেও বই ও জ্ঞানের জগত আছে। যদিও আমি সাধারনত ধর্ম নিয়ে লিখিনা তাদের গুরুত্বপূর্ণ অনুভুতি তে আঘাত হানি না, কদাচিৎ লিখলেও তাদের বিশেষ দন্ড যেন আঘাতপ্রাপ্ত না হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখি। কেন রাখি তার ব্যাখ্যা দেই অল্পে- ‘আমি একটা সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি, কেবল আমি না আমার মত হাজারো লাখো মানুষ দ্যাখেন, মার্ক্স দেখেছেন লেনন দেখেছেন, পিঙ্ক ফ্লয়েড দেখেছে আমার মত লাখো মানুষ, তরুন তরুনী, কিশোর কিশোরী বা সদ্যজাত শিশু অনেকেই দেখছেন। এমন এক পৃথিবী যেখানে ভেদাভেদ থাকবে না, জাতিগত বা ধর্মগত বৈষম্য থাকবে না, ঈশ্বর যে পৃথিবী কে আলাদা করতে পারবে না, যেখানে মানুষের মস্তিস্কের পূর্ণ বিকাশ হবে, বিকাশ হবে শিল্পের, মহান বোধের যেখানে মানুষের পরিচয় হবে কেবল ই মানুষ।

মানুষ তার হাজার বছরের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাবে, ধর্ম, সামাজিক ও আর্থিক দিক থেকে হবে স্বাধীন। যাহোক আরো অনেক কিছু সে স্বপ্ন নিয়ে লিখতে গেলে গোটা কতক বই হয়ে যাবে। ’ এবং এ ধরণের একটা সমাজের জন্য, ও মানুষের মস্তিস্কের পূর্ণ বিকাশের জন্য যে সকল বস্তুকে পৃথিবী থেকে বিলীন হতে হবে তার মাঝে একটি হচ্ছে ধর্ম। এ কারনেই বোধয় অসংখ্য মুক্তমনা প্রতিনিয়ত লিখছেন মানুষের মাঝে বোধ জাগানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমি এ ধরণের সেন্টিমেন্টগ্রস্ত লেখাকে প্রাধান্য দেই না বা সাপোর্ট ও করিনা এর কারন এই নয় যে বিশ্বাসীদের দন্ড আঘাতপ্রাপ্ত হয় বরং এ জন্য যে তাতে বিশ্বাসীদের বোধ জাগানো যাবে না।

সেন্টিমেন্টে যত বেশি আঘাত হানা হবে তারা তত বেশি অন্ধ বিশ্বাসের দিকে ছুটে যাবে। তাদের ভবিষ্যৎ আরো অন্ধকার হবে। হাজার বছর ধরে তারা যে অন্ধ বিশ্বাস পালন করছে তা থেকে তাদের এক দিনে , মাসে , বছরে বা যুগে আলোতে নিয়ে আসা যাবে না। সে জন্য সময় প্রয়োজন শত শত বছর বা হাজার বছর। তাদের এ অন্ধ বিশ্বাসে ধীরে আঘাত হানতে হবে, তাদের সে অন্ধত্বর গোড়ায় আস্তে একটা ধাক্কা দিতে হবে যেন শ্রেফ একটা চিড় ধরে।

যে চিড় প্রজন্ম পর বিশাল ভাঙ্গনে রুপ নিবে। আঘাত হানতে হবে যুক্তির মাধম্যে সেন্টিমেন্ট দিয়ে নয়। আমাদের ব্লগীয় জগতে হাতে গোনা এমন কয়েকজন আছেন যারা ধীর আঘাত হানেন এবং তাদের লেখাও আমার বেশ পছন্দ,এখানে কারো নাম নিলাম না। যাহোক, মুক্তমনারা লেখেন কারন তারা চান সুস্থ কুসঙ্গস্কারহীন সামাজিক বিকাশ, মস্তিস্কের বিকাশ, মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতার এবং শিল্পের পূর্ণ বিকাশ যেন ঘটে সে কারনে। এখনকার কালে তাতে মডারেট ধার্মিকদের ও গা জ্বলছে।

এই লেখাটা আমি লিখতে বসেছি একমাত্র কারন এই মডারেট ধার্মিকদের জ্বলুনিরত শরীর। যাহোক যা বলতে চাচ্ছি তা হচ্ছে, নাস্তিক রা যেমন ঈশ্বর ও ধরমান্ধতা বর্জন করেছেন, তেমনি মোডারেটরাও ঈশ্বর ও তাদের বিশ্বাস কে প্রতিনিয়ত বর্জন করছে, পার্থক্য এখানেই যে নাস্তিকরা এক ধাক্কায় করেছে, মডারেট রা ধীরে ধীরে করছেন। তারা করছেন সুচতুর ভাবে নিজেদের কে পর্যন্ত ফাকি দিয়ে। তাদের অবচেতন মনে সকল বর্জন গভীর ভাবে স্থান নিয়েছে আর চেতন মনে স্থান নিয়েছে অন্ধ বিশ্বাস। কিন্তু তাদের কর্মপদ্ধতির দায় নিয়েছে অবচেতন মন।

অবচেতনে তারা তাদের ধর্মকে, ঈশ্বরকে, বিশ্বাস কে নিজেদের পছন্দমত, সময়োপযোগী করে এডিট করে নিয়েছে যেন ফেসবুকে পাব্লিশ করা কোন নোট। তাদের অবচেতন মন স্পষ্টভাবেই জানে ধর্মের অন্ধত্ব মানব সমাজের ও পৃথিবীর উপকার করবে না সুতরাং তারা তা পালটে ফেলেছে কিন্তু স্বীকার করেনি। কিভাবে করছেন তার অসঙ্খ্য উদাহারন আমাদের চোখের সামনে প্রতিয়মান, আমরা সবাই দেখছি তার পরেও দু একটা উদাহারন দেই(এবং যেহেতু আমার আশেপাশের মানুষেরা অধিকাংশই মুলস্লিম সুতরাং তা দিয়েই উদাহারন দেই)- - এ দেশে গত ক বছরে সঙ্গিতের যে বিপ্লব ঘটেছে তা সবাই জানে, শত শত আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড গড়ে উঠেছে প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে, তরুন দের ঘরে ঘরে এখন গিটার, ড্রামস, কি বোর্ড, বিকেলে বন্ধুদের আড্ডায় গীটার না হলে জমেই না তাদের। অথচ তাদের অধিকাংশই মুসলিম। - বাংলাদেশে চারু কলা ও শিল্পকলায় অসংখ মানুষ জড়িত, কেউ ইন্সটিটিউট এ কেউ স্বশিক্ষায়, অসঙ্খ্য মানুষ এখন গ্রাফিক্স ডিজাইনার বা মোশোন গ্রাফিক্স ডিজাইনার।

কম্পিউটারে কম্পিউটারে ফটোশপ ইলাস্ট্রাটর, থ্রিডি ম্যাক্স এর মত সফটওয়ার। এবং তারা যে কেবল লতা গাছ ফুল ফল আকছেন না এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। - এখন তো মিডিয়া নাটকের যুগ, টেলিভিশন চ্যানেল এর ছড়াছড়ি। কয়টা মুসল্মান ঘর টেলিভিশনহীন? কয়জনের ঘরে গান বাজে না? যে অসংখ্য ডিরেক্টর বস্তাপচা থেকে শুরু করে ভালো মানের নাটক তইরি করছে তাদের ও অধিকাংশই তো মুসলমান। *আর শিল্পের পূর্ণ বিকাশে কোন মুক্তমনা বর্জনের কথা লিখলে তাদের গায়ে লাগে অনুভুতি আঘাতপ্রাপ্ত হয়।

-আমার বোন, বান্ধবী, প্রেমিকা, থেকে শুরু করে অধিকাংশ মুসলিম ঘরনার মেয়েরা বোরকা ছাড়া বিদ্যাপিঠে যায়, চাকরি করতে যায়, ব্যবসা করে। বন্ধুদের সঙ্গে, সহপাঠির, সহকর্মীর সঙ্গে আডডা দ্যায়, ছেলেরা এবং মেয়েরা যথেষ্ট সচ্ছ সম্পর্কের মাঝে বসবাস করছে। বাংলাদেশ যদি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হয় তবে তারাও সংখ্যাগরিষ্ঠের দলেই পড়ার কথা। মিডিয়ায় অসংখ্য নারী মডেল কাজ করছে। র‍্যাম্প থেকে থিয়েটার সবখানে।

তাদের ও তো অধিকাংশ মুসলিম। *আর নারী মুক্তির কথা যদি কোন নাস্তিক লেখেন নারী কে ধর্মীয় গোড়ামী থেকে বের হতে বলেন তাহলে তার পিন্ডি চটকানো হয়। - বহুজাতিক কম্পানির বদৌলতে প্রেম করেনা এমন কজন আমার পরিচিতের লিস্টে আছে? হাতে গোনা কজন কেবল। অধিকাংশই মুঠোফোনের পাঁচ পয়সা পালস এর স্বদব্যাবহার করছেন তাতে সন্দেহ নাই। তারা প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে ভালবাসার মানুষ কে চুমু খাচ্ছে।

তারা কি বোঝে না যে চুমু খাওয়ার সময় তাদের এক হাতের মধ্যাঙ্গুলি উচিয়ে থাকে তারা? অবচেতনে মধ্যাঙ্গুলি উচিয়ে তারা বলে – ‘দ্যাখো তোমাদের কিতাবীয় নিয়ম কে আমরা মধ্যাঙ্গুলি দেখিয়ে বর্জন করলাম, তোমাদের এ সকল পাপ পুন্যের খ্যালা আমরা মানিনা’ এরকম অসংখ্য ক্ষেত্রে তারা প্রত্যহ তাদের ঈশ্বর তাদের ধর্ম তাদের বিশ্বাস কে বর্জন করছে। অথবা এডিট করছে। আর কোন নাস্তিক যদি তার সেন্টিমেন্টে আঘাত হানে তাহলে তার গুস্টি উদ্ধার করা হয়। নাস্তিক জবাই করা কোরবানীর মত জায়েজ। আমার মডারেট ধার্মিক বন্ধুদের বলছি- আগে নিজের মস্তিস্কে পরিভ্রমন করেন, খুজে দ্যাখেন কোন জায়গায় আপনি আপনার ধর্মকে বর্জন করেছেন, কেন করেছেন তারপর খুঁজতে যান কেন একজন নাস্তিক আপনার সেন্টিমেন্টে আঘাত হানছে।

তারপর খুঁজতে যান, যে নাস্তিকদের আপ্নারা একঘরে করে দিচ্ছেন, যাদের মৃত্যু আপনাকে শোকাহত করছে না তারা কেন অবিশ্বাসী হয়েও বার্মার মুসলমান, রামুর বৌদ্ধ, বাংলার শিবিরের হাতে আক্রান্ত হিন্দুর পাশে দাঁড়ায়, কেন তাদের জন্য লেখেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.