.......অতঃপর মৃত্যুর প্রতীক্ষা
নবী হকিং কি এখন গবেষণা করেন? নাকি বসে বসে জ্ঞানসুলভ ভাবনাই তার গবেষণা? প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানীরা গবেষণা ব্যতিরেকেই ভাবনার খোরাক দিতে পারেন, বিশ্ববাসীকে। বিজ্ঞানের যুগ, বিজ্ঞানের মহাপুরুষ। তার মুখ নিসৃত প্রতিটি কথাই বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞান মানেই মহাসত্য। বিজ্ঞান বলে মানেতই হবে, না মানলে মধ্যযুগের অতলগহবরে তলিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।
তাই হকিংর এর কথার প্রভাব সর্বত্র।
বিজ্ঞানের নবী বলেছেন, বলে কথা। একবার বললেন, ঈশ্বর থাকতে পারেন। বিশ্বাসীরা হর্ষধ্বনি দিয়ে উঠলো। বিজ্ঞানের নবী তাদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। বিশ্বাসীদের ইমানও মনে হয় আজ বিজ্ঞানের জোরে পাকাপোক্ত হয়, ধর্ম, নৈতিকতার কোন ভূমিকাই সেখানে নেই।
কিছুকাল পরেই বিজ্ঞানের নবী স্রষ্টাকে অস্বীকার করে বসলেন। বিশ্বাসীরা হতাশ, ক্ষুব্ধ হলেন। ভাব খানা এমন নবী হকিং এর "নেই" বলা মানে বিজ্ঞানের অকাট্ট যুক্তি দিয়ে প্রমাণিত "ঈশ্বর নেই"। বিশ্বাসীরা "শিক্ষিত" হয়েছেন বলে বিজ্ঞানের পাশাপাশি "বিজ্ঞানের নবী"কেও আমল দেন, তার বাণীর উপর অন্ধ বিশ্বাস রাখেন। অবিশ্বাসীরা তাই আনন্দ উল্লাস করে।
তাদের কাছে বিজ্ঞান মানেই অবিশ্বাসীদের ধর্ম। খাপে খাপ মিলে গিয়েছে, বিশ্বাসীদের ইয়ে মেরে দিয়েছেন বিজ্ঞানের নবী হকিং। নবী হকিং এর তরফ থেকে ওহী নাজিলের অপেক্ষায় থাকে শিক্ষিত জনতা, নবী যাতে রায় দেন, সেটিই হক, সত্য আর ন্যায়বিচার।
সর্ব জ্ঞানের আধার, মস্তিষ্ক সর্বস্ব নবী হকিং হুইল চেয়ারে চুপচাপ বসে থাকেন। তাকে ঘিরে থাকে বিজ্ঞানের পূজারি ভক্তকূল।
ল্যারি কিং এর কাছে সাক্ষাৎকারে হকিং সাহেবের কথা ঘুরে গেল।
"ঈশ্বর থাকতে পারেন"
নবী হকিং এর এহেন সংশয় বিভ্রান্তিতে অবিশ্বাসীকূল খানিকটা বিব্রত, বিরক্ত। বিশ্বাসীকূল ঠিক ততটাই আশার আলো দেখতে শুরু করলো। তারপরেই নবী ওহী নাজিল করলেন,
"বিশ্বসৃষ্টি করতে/তার প্রমাণে ঈশ্বরের ভূমিকার প্রয়োজন নেই। "
জনগণ এবার বিভ্রান্ত।
এই কথার দশটা অর্থ দাড়াতে পারে। বিশ্বাসীরা হৈ চৈ শুরু করলো, বিজ্ঞান আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। অবিশ্বাসীরা সে দাবি তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে বলল, বিজ্ঞান বরাবরের মতই ঈশ্বরের বিপক্ষে, তোরা দু'মুখো বিশ্বাসীরা ভন্ডামি নিয়ে দূরে গিয়ে মর।
হকিং কে, কেন, কিভাবে আমার মত মূর্খ লোকের জানার তাগিদ হয়না। কিন্তু বাংলা ভাষা সাহিত্যের ছাত্র, শিক্ষকদের মাঝে দেখি তার প্রতি সুগভীর ভক্তি।
শিল্প-সাহিত্যের লোক হয়ে বিজ্ঞান বিষয়ে নূন্যতম সাক্ষরতা ছাড়াই, বিজ্ঞানে অন্ধ বিশ্বাস আনা যায়। গণিতের ভেলকিটা মজার।
চাইলেই ২=৩ প্রমাণ করে দেয়া যায়। প্রমাণ করে দিলেই সেটি গণিত, গণিত মানে বিজ্ঞানের শাখা। তাই, কীভাবে প্রমাণ হল, না বুঝেই বিশ্বাস স্থাপন করাটা ফরয।
বিজ্ঞানে বকলম লোকের জন্য এ ছাড়া উপায় নেই।
আলোর গতিতে চলে এক মিনিটে সময়কে সঙ্কুচিত করে এক আলোকবর্ষ চলে যাওয়া যায়। আরবের নিরক্ষর নবী মুহাম্মদের এ ধরনের অভিজ্ঞতার কথা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছিল মানুষ এবং সমসাময়িক বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের আরেক মহানবী আইনস্টাইনের জন্মই হয়নি, তখন। কীভাবে বিশ্বাস হবে? আইনস্টাইন গণিত কষে দেখালেন বলেই না বিশ্বাস হল।
পিতা ছাড়া যীশু মানুষের জন্ম হতে পারে, এটা বিশ্বাস করতে মানুষকে ক্লোনিং এর যুগে আসা লেগেছে। হাতে ধরিয়ে না দেখালে কেউ বিশ্বাস করেনা, প্রকৃতি আর গণিতের বাইরে কিছু হওয়া অসম্ভব কিছু না। বিশ্বাসীদেরও এখন বিজ্ঞানের প্রমাণ লাগে, হকিং এর মত নবীকে ভাড়া করা লাগে, প্রার্থনা করা লাগে যেন হকিং তাদের পক্ষে সাফাই গেয়ে অবিশ্বাসী শত্রুদের মানসিকভাবে ভেঙ্গে দিক। বিশ্বাসীরা এখন ধর্মের মধ্যযুগীয় নবী, পুরোহিতের উপর আস্থা রাখতে পারেনা, বিশ্বাসীরা নিজেদের বিশ্বাসের উপরই আস্থা রাখতে পারেনা, বিজ্ঞানের বশে পড়ে আত্ম পরিচয়হীন, অসহায় দিক বিদিকশূণ্য মানুষের আকার নিয়েছে। তাদের পুনর্জীবিত করতে, ধর্ম বিশ্বাসকে চাঙ্গা করতে এ যুগে বিজ্ঞানের বড় সড় জ্বালানির চালান দরকার হয়ে পড়েছে।
মুসলিমদের নবী মুহাম্মদ একটা ভবিষ্যতবাণী করে গিয়েছিলেন, পৃথিবী ধ্বংসের আগ দিয়ে আসা মহাসুর দাজ্জাল বিষয়ে।
দাজ্জালের এতটা ক্ষমতা থাকবে, যে সে মৃত মানুষকে জীবিত করতে পারবে। এটা দেখেই মানুষ দলে দলে ধর্ম ত্যাগ করে সমকালীন অসুরের নবী দজ্জালের ধর্ম, আনুগত্য স্বীকার করবে।
আমি দেখলাম, সেদিন কোন এক গবেষণাগারে কৃত্রিম প্রাণ তৈরি করা দাবি করেছে, সাথে সাথে কিছু বিশ্বাসী বিব্রত হয়ে পায়চারী করছে। অবিশ্বাসীরা হর্ষ ধ্বনি দিচ্ছে।
কিন্তু কৃত্রিম প্রাণ আবিষ্কারের নামে তারা কী তৈরি করেছেন, কীভাবে সেটি কেউ যাচাই, বাছাই করতে যাচ্ছেনা। বিজ্ঞানের ধ্বজ্জাধারীরা কি আর মিথ্যে, জালিয়াতি করতে পারে? কিন্তু "কৃত্রিম প্রাণ" নামের ভারিক্কি শব্দ শুনে এক এক জনের মূচ্র্ছা যাবার যোগাড়। আদতে ওটা তেমন কিছুইনা, ডি এন এর বিভিন্ন অংশ কৃত্রিমভাবে বানিয়ে জোড়া দিয়ে, সেটি সেলাই করে দেয়া হয়েছে জীবিত কোষে এবং দুটো মিলে মিশে ঠিক প্রয়োজন মাফিক কাজ করছে।
বিশ্বাসীরা যদি বিশ্বাস করেন বলেই ধর্ম মানতে চান, তবে বিশ্বাসের খুটিটাকে বিজ্ঞান, বিজ্ঞানের বিবিধ স্ববিরোধী নবীকূলের প্রভাবমুক্ত রাখা দরকার। সত্যি সত্যিই যদি ভবিষ্যতবাণী অনুযায়ী দজ্জালের জন্মভূমি ইজরায়েলের গবেষকরা মৃত কোষকে জীবিত কোষ করার তরিকা বাতলে ফেলেন, বিশ্বাসীদের কাবা মক্কা ঘুরে যেন তেল আবিবে সরে না যায়, সেটাই প্রত্যাশা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।