আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমিনীকে ধন্যবাদ!!

সত্যের কাছে মিথ্যে চিরকালই পরাজিত

শিরোনাম দেখেই হয়তো এতক্ষনে ঘৃণা জন্মেছে অনেকের মনে, আর ক্রোধান্বিত হয়ে ঢুকছেন আমার ব্লগে এবং লেখা পড়ার পরে কি মন্তব্য করবেন তাও অনেকে ঠিক করছেন। কেউ ভয়াবহ রকমের গালি দেয়ার জন্যও তৈরি হচ্ছেন। তাই আর ভণিতা না করে মূল লেখায় আসি……. নারীনীতি নিয়ে তেমন কিছুই আসলে জানিনা। ব্লগ গুলোতে পক্ষে বিপক্ষে এত লেখা পড়েছি যে গুলিয়ে ফেলেছি কোন কথাটা নারীনীতির আর কোনটা মানুষের ব্যক্তিগত মতামত। সারাংশ হিসেবে মনে হয় একটা কথা বলা যায় তা হল প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে তা নারীদের উত্তরাধিকারের ব্যাপারে কোরানের পরিপন্থী! কিন্তু আ্মার লেখার বিষয় আমিনী(!) নারীনীতি নয়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৈন্যতা কাউকে মনে করিয়ে দেয়ার দরকার আছে বলে মনে হয় না। কবে থেকে এই দৈন্যতার শুরু সেই কথা বলতে যাব না কারন সেইটা আমাদের বুদ্ধিজীবিদের জীবিকার হাতিয়ার! তাদের জীবিকা নির্ভর করে এই সব বিষয় চর্বন করে। আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের কথা বলতেই লজ্জা হয়, কারন এমন একজন রাজনৈতিক নেতা কেউ খুঁজে আনতে পারবে না যাকে শ্রদ্ধা করা যায়। এর কারন কি? আসলে দেশ কিভাবে চলবে, মানুষের জন্য কোনটা কষ্টের, কোনটা মানুষের জীবন ধারনের জন্য অপরিহার্য সেই সব কোন কিছুতেই মন নেই এদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর। কিন্তু কেন? কারন আমরা আমাদের নিজেদের গায়ে না লাগা পর্যন্ত প্রতিবাদ করি না! আমাদের স্বার্থহানি হলেই কেবল চেষ্টা করি কিছুটা প্রতিবাদ করার তবে তাও যদি একান্ত ব্যক্তিগত হয়।

যদি সমষ্টিগত হয় তাহলে আমরা উদাসীন ভেবে নেই আমার তাতে কিছু আসবে যাবে না। কেউ হয়তো চায়ের কাপে ঝড় তোলা পর্যন্তই শেষ। আর এখন ব্লগের সুবাধে ঘরের কোনায় বসে ঝগড়ায় লিপ্ত হচ্ছি পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকা মানুষের সাথে। তথাপিও নিজের মতের সাথে না মিললে যত কুৎসিত ভাষা আছে সব প্রয়োগ করে নিজের মনের খেদ মিটাই, তার কারন মানসিক শান্তি আর শারিরিক ভাবে আহত হওয়ার কোন শংকা নেই, তাই নয় কি? নিজের মুখে ঝাল খেতে গিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে “মেহেরজান” দেখে এসে ব্লগে ব্লগে সমালোচনার ঝড় তুলেছে একেকজন। ব্লগ খুললেই শুধু মেহেরজান নিয়ে লেখা।

একটু বিচার করে দেখুন তো “গেরিলা” নিয়ে প্রশংসামূলক যে কয়টা লেখা এসেছে তা কি মেহেরজান কে নিয়ে লেখার ১০০ ভাগের এক ভাগ হবে কিনা? না হবে না। কারন নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের ঝোঁক থাকে। আর এভাবেই কোনরকম শারিরীক আর আর্থিক ক্ষতি ছাড়া প্রতিবাদ চলে ব্লগগুলোতে। আর তাই সরকার গঠন করে সরকার যেমন ভাবতে থাকে ৫ বছর পর্যন্ত তারাই সর্বেসর্বা, জনগনও ভাবতে থাকে ৫ বছরের মধ্যে যতই চিতকার করি কাজ হবে না। তাই সকল অন্যায় নিরবে সহ্য করতে হচ্ছে আমাদের।

চালের দাম বাড়তে বাড়তে আকাশ ছুঁয়ে ফেলছে তবুও কোন প্রতিবাদ নেই! জিনিসপত্রের যে দাম তাতে মানুষের জীবন চালানোই রীতিমত যুদ্ধ। সেখানে বিলাসীতার কোন সুযোগ নেই। তথাপি দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে যখন বলেন মানুষ এখন চারবেলা খায়, তখন মনে হয় আমরা বুঝি শুধু উপহাসের পাত্র! কারো মুখে কোন প্রতিবাদ নেই। আর বিরোধীদল বলে যে দলটা এখন বাংলাদেশে এখন বিরাজমান তারা তো এত খেয়েছে যে এখন নড়ার মত শক্তি খুঁজে পায়না। হ্যাঁ তবে যদি নেত্রীর বাড়ি নিয়ে, নেতার নাম পরিবর্তন নিয়ে কিছু হয় তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও একটু বেরিয়ে আসে।

আর এদের দুইদলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ নির্বোধ আমরা অপেক্ষা করছি কবে নির্বাচন আসবে কিছু নগদ টাকা পয়সা পাওয়া যাবে আবার ৫ বছরের জন্য আমার সোনার বাংলা কে লীজ দিয়ে দেব। প্রতিবেশি রাষ্ট্রের কাছে বিকিয়ে দেব আমাদের সব। আমাদের কে অনেক রাজা-রানী আর রাজত্বের গল্প শোনাবে , কেউ বিশ্বাস করব কেউ করব না, এই নিয়ে আবারো তর্ক জুড়ে দিব, আর নেত্রীর জন্য একেকজন পারলে জান কোরবান করে দিব। আমরা এমন কি কখনো জানতেও চেষ্টা করি না দেশে কি হচ্ছে? ভারতের সাথে কি চুক্তি হয়েছে কেউ জানে না। একের পর এক সন্ত্রাসী কার্যকলাপে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রক্তাক্ত কোন প্রতিবাদ নেই।

বুয়েটের ছাঁদ থেকে পর্যন্ত ছাত্রদের মেরে মাটিতে ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটছে, কিন্তু তাতে কোন প্রতিবাদ নেই? প্রকাশ্য দিবালোকে ক্রশফায়ারের নামে মানুষ হত্যা আর লিমনের মত তরুনকে পঙ্গু করে দিচ্ছে, মিথ্যে মামলায় তাকেই আবার জেলে পুরে রাখছে। না কোথাও কোন শব্দ নেই। অন্যায় আর অবিচার এখন আমাদের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে গেছে তবুও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই! দেশের শিল্প সংস্কৃতি থেকে শুরু করে এমন কোন ক্ষেত্র নেই যা কলুষিত হয় নি। এখন শুধু ধ্বংস হওয়া দেখার অপেক্ষায় আছে মানুষ। তবুও প্রতিবাদ করবে না? অথচ একটা সড়ক দূর্ঘটনা হলে গাড়ী ভাংচুর, একটাকা ভাড়ার জন্য বাসের হেল্পারের সাথে বাকবিতন্ডা এমনকি গুলি করে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।

এগুলো সব নিজের ব্যক্তি স্বার্থে, যেখানে সাময়িকভাবে ভোগ করা আর ক্ষমতা দেখানোর সুযোগ আছে। আমিনী হরতাল আহবান করলো, পত্রিকার ভাষ্যমতে হরতাল নাকি যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। তা ব্লগগুলো দেখলেই বুঝা যায়। মানুষ এখন প্রায় সবাই আমিনীকে চেনে, আমিনীকে সভ্য সমাজের মানুষেরা অসভ্য সকল বিশেষনে সঙ্গায়িত করেছে। তবে হ্যাঁ আমিনীর কারনেই যে পরিমান ব্লগ লেখা হয়েছে তাতে অনেক মানুষ জানতে চেষ্টা করেছে আসলে কি আছে নারীনীতিতে? কি ভালো আর কি মন্দ? তর্কও হয়েছে অনেক।

আমিনী হরতাল ডেকে মানুষকে জানিয়েছে নারীনীতি নামে কিছু একটা আছে তা না হলে হয়তো নারী নেত্রীরাও কোনদিন খুলেও দেখতো না কি আছে নারীনীতিতে আমাদের কথা তো বলাই বাহুল্য। হোক তারা দাঁড়ি টুপিধারী মানুষ তবুওতো মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে প্রতিবাদ করতে। দেখিয়েছে সরকারের বিরোধিতা করা যায়। আমাদেরকে বাধ্য করেছে নারীনীতিটা খুলে দেখতে। হোক তা ভুল বা শুদ্ধ তবুও তো আমরা জানতে পেরেছি।

আমাদের বাম দলগুলো যেখানে টিপাইমুখ নিয়ে মুখবন্ধ রাখে, ট্রানজিট নিয়ে ভ্রান্ত কথা বলে বেড়ায়, পানির ন্যায্য পাওনা আদায়ে যেন তাদের মুখে কুলুপ এঁটে দেয়া হয়েছে, যুদ্ধপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে সোচ্চার অথচ কোন অগ্রগতি না দেখেও নিশ্চুপ, শাহরুখ-ক্যাটরিনারা এসে কোটি কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে শুধু তাদের দেহখানি প্রদর্শন করে তাতে সংস্কৃতির আগ্রাসন চোখে পরে না তথাকথিত সুশীল সমাজের, মেহেরজান নিয়ে কোন প্রতিবাদ করেনা আমাদের স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি দাবীকারীরা, প্রতিবাদ করে না শর্মিলা বসুদের মিথ্যে তথ্য দিয়ে বিশ্বে বিভ্রান্তি ছড়ানোয়, সেখানে আমিনীর এই হরতাল কে আমি সমর্থন করি অন্তত মানুষ যেন এতটুকু বুঝতে পারে আমাদের সব জানার অধিকার আছে। তাতে আমিনী রাতারাতি বড় নেতা হতে পারেনি বরং অনেকের কাছেই ঘৃণার পাত্রে পরিনত হয়েছে। তার রাজনৈতিক কি ফায়দা হয়েছে আমার জানা নেই, তবে মানুষকে জাগিয়েছে আর সে জন্যই ধন্যবাদ আমিনী কে। আমাদের তথাকথিত সুশীল সমাজ সুশীলতার মুখোশে শুধু কিছু বুলি আউরে যায় তাতে কিছু বাহবা পাওয়া যাবে সে আশায়, কিন্তু তীব্র প্রতিবাদ করার মত মেরুদন্ড তাদের নেই, আর তাই ডঃ ইউনুসের সাথে সরকারের হঠকারী আচরণে দু’কলম লিখেই দায়িত্ব শেষ করেছে, তাতে অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় নি। সবশেষে এতটুকু বলতে পারি, আমিনীরা সত্য বা মিথ্যে যে পথেই থাকুক অন্তত একবারের জন্য হলেও জবাবদিহি করতে পেরেছে সরকারকে, আর তাতে আমিনীদের ধন্যবাদ না দেয়ার কোন যুক্তি থাকতে পারে না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।