কোন লক্ষ্য না থাকলে মানুষ উন্নতি করতে পারে না। লক্ষ্যহীন যাত্রার কোন গন্তব্য থাকে না। প্রাইমারী স্কুলে পড়ার সময় আমার এক শিক্ষক একটি মূল্যবান কথা বলেছিলেন যা আটত্রিশ বছর পর আজও ওই কথার মর্ম আমার মনে গেঁথে আছে। আমাদের প্রিয় স্যার বলেছিলেন যদি তোমরা অনেক বড় ডাক্তার হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাও তাহলে অন্তত ছোট ডাক্তার হতে পারবে, আর যদি কোন মত ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখ তাহলে হয়তো নার্স বা হাসপাতালের সেবক হতে পারবে। এ জন্যে তোমাদেরকে জীবণের লক্ষ্য ঠিক করতে হবে অনেক বড়।
তাহলে অন্তত ছোটটা অর্জন করতে পারবে। এ জন্য যে জাতি যত বড় লক্ষ্য স্থির করতে পারে সে জাতির উন্নতি হয় তত বেশি।
বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যকামী শক্তিগুলোও তাদের স্বার্থ রক্ষা এবং বিশ্বে কর্তৃত্ব ও আধিপত্য বজায় রাখার জন্য একটা লক্ষ্য স্থির করে থাকে। তারা বিশ্বকে শাসন ও শোষণ করা অব্যাহত রাখার জন্য একটি টার্গেট নিয়ে এগিয়ে যায়। এ অবস্থায় ওই টার্গেটকে ধরাশায়ী করার লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যকামীরা তাদের সর্বোচ্চ শক্তি খরচ করে।
এক সময় মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তির টার্গেট ছিল কমিউনিষ্ট সোভিয়েত ইউনিয়ন। অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও অব্যবস্থাপনা এবং পশ্চিমা শক্তির লাগাতার ষড়যন্ত্রের মুখে তিন দশকের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ধরাশায়ী হয়ে পড়ে। এরপর পশ্চিমা শক্তির আরেকটি টার্গেট স্থির করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়ে। কি হবে সেই টার্গেট ? পশ্চিমা পণ্ডিতদের জন্য তা বের করা কঠিন কিছু ছিল না। কারণ ক্রসেডের পর থেকে পশ্চিমা পন্ডিতরা কার্যত সেই টার্গেটকে প্রচ্ছন্নভাবে আঘাত করেই আসছিল।
মার্কিন গবেষক এডওয়ার্ড সাঈদ তার ওরিয়েনটালিজমে সে কথা স্পষ্ট করেই বলেছেন। ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মুসলিম বিশ্ব বা ইসলামের উপর পাশ্চাত্য শক্তির আঘাত প্রচ্ছন্ন থেকে প্রত্যক্ষে পরিণত হয়ে গেল। তৈরী করা হলো আল-কায়দা,বিন লাদেন , জঙ্গীবাদ,সন্ত্রাসবাদ আরো কত কিছু।
দশ বছর চললো এ নিয়ে কত তান্ডব। দশ বছরে ইসলামের ভাবমুর্তি অনেকটাই ধরাশায়ী করা হলো বিশ্ব জুড়ে।
পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোতে শক্তিশালি করা হলো সেক্যুলার নামধারী নাপাক বুদ্ধিজীবীর দলকে। যারা পাশ্চাত্যের তালিম নিয়ে তাদের তাবেদারীতে রাজি হয়ে গেল। ফলে এখন আর বিন লাদেনকে দরকার নেই। পাশ্চাত্যের ফর্মুলা মুসলিম সমাজে বাস্তবায়নের জন্য শক্তিশালী সেক্যুলার দল ও বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠি কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। ফলে শুরু হয়ে গেল মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর আঘাত করার পালা।
তুরস্ক, নিউনিশিয়ায় প্রথম মুসলিম ছাত্রীদের মাথায় ওড়না পরা নিষিদ্ধ করা হলো। এরপর তা করলো ইউরোপের কয়েকটি দেশে। বিশ্বনবীকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন ছাপানো, কোরআন শরীফ পুড়ানোসহ নানা কর্মসূচী সামনে নিয়ে আসা হলো। সম্প্রতি আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রে সেক্যুলার সরকার মুসলমানদের ধর্ম পালন বলতে গেলে বন্ধই করে দিয়েছে। দেশটিতে এখন মাথায় ওড়না পরা বা পর্দা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ইসলামী দলগুলোর ত্ৎপরতা বেআইনী। মসজিদগুলো সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার কড়া নজরদারীর মধ্যে। (সূত্র এখানে দেখুন)
আজারবাইনের বর্তমানে যে পরিস্থিতি তা একদিনে হয় নি । গত দশ বছর ধরে ক্রমান্বয়ে সেক্যুলার সরকার দেশকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। আজারবাইজানের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে যদি বাংলাদেশের অবস্থা তুলনা করা হয় তাহলে কারো বুঝতে অসুবিধা হবে না যে, সেক্যুলার আওয়ামী লীগ দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
নারী নীতি,ও সংবিধান সংশোধনের তাৎপর্য কি? বাংলাদেশ যে সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের ইশারায় তাদের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে চলেছে তা হয়ত এখন সচেতন সবাই বুঝতে পারছেন। বাংলাদেশে বর্তমানে যে দিকে যেতে চাচ্ছে তা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয় বরং বাংলাদের চলছে বিশ্বের তালে তালে। যে বিশ্বের চালক হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদ।
তবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তুরস্কে সেক্যুলাররা আস্তাকুড়েঁ নিক্ষিপ্ত হয়েছে, সেক্যুলাম মিশর,তিউনিশিয়ার অবস্থা সবারই জানা।
কাজেই বাংলাদেশের সেক্যুলাররাও যে খুব বেশি এগুতে পারবে তা মনে হয় না। শুধু দরকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের একটু সচেতনতা, ত্যাগ ও বুদ্ধিমত্তা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।