বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
প্রাচীন মিশরীয় দেবী হাথোর। প্রেম সৌন্দর্য সংগীত মাতৃত্ব এবং আনন্দের দেবী হাথোর । প্রাচীন মিশরের মানুষ বিশ্বাস করত- জন্ম মুহূর্তে শিশুর ভবিষ্যৎ বলতে হাথোর বিছানার পাশে আসে ।
কেবল তাই না, প্রতিটি মিশরবাসীর মৃত্যুর ক্ষণও জানত হাথোর। এসব কারণে মিশরের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ন এবং জনপ্রিয় দেবী হাথোর । কি রাজপরিবার কি সাধারণ মানুষ -হাথোর সর্বত্রই সমাদৃত। প্রাচীন মিশরে সবচে বেশি ধর্মীয় উৎসব ছিল হাথোর কে ঘিরে ... সবচে বেশি নাম রাখা হয়েছে হাথোর এর নামে। মাতৃত্বের দেবী হাথোর গর্ভবতী নারী এবং ধাইয়ের রক্ষাকর্ত্রী।
উর্বরতা এবং আর্দ্রতার দেবী হওয়ায় হাথোর নীল নদের প্লাবনের দেবী। এমন কী সিনাই উপত্যকার খনি শ্রমিকদেরও রক্ষাকর্ত্রী দেবী। কেবল প্রাচীন মিশর নয়-প্রাচীন মিশরের বাইরেও সেমেটিক পশ্চিম এশিয়া, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, লিবিয়া, এবং প্রাচীন ফিনিশিয় বিবলস নগরে হাথোর উপাসনা প্রচলিত ছিল ...
হাথোর প্রাচীন মিশরের প্রাচীনতম দেবী। প্রাচীন মিশরীয় উপকথায় হাথোর- এর ভূমিকা অত্যন্ত জটিল। যে কারণে বলা হয়েছে ...all the goddesses were forms of Hathor.
গো- দেবী হিসেবে ২৭০০ খ্রিস্টপূর্ব হাথোর উপাসনার কথা জানা যায়।
অবশ্য কারও কারও মতে হাথোর উপাসনা আরও প্রাচীন। সুপ্রাচীন কালের বৃশ্চিক রাজার (হলিউডি মুভির সেই ‘স্করপিয়ন কিং’) শাসনামলে হাথোর আরাধনার উৎপত্তি বলে মিশরতত্ত্ববিদগন অনুমান করেন।
হাথোর।
প্রাচীন মিশরীয় পুরাণে হাথোর ছায়াপথ রূপে প্রকাশিত । স্বর্গীয় গাভীর বাট থেকে দুধ ঝরছে এমন একটি দৃশ্য হাথোরকে নিয়ে কল্পনা করা হয়েছিল।
হাথোর তার নাক্ষত্রিক পরিমন্ডল দ্বারা পরিচিত। যেমন ছায়াপথ, রাত্রির আকাশ কিংবা আকাশ দেবতা হোরাস। যা হোক। ছায়াপথকে প্রাচীন মিশরের মানুষ জলময় ভাবত। যেখানে নিত্য সূর্যদেব তাঁর সূর্যনৌকায় ভেসে বেড়ান।
ছায়াপথ হল: আকাশের নীল নদ। আগেই জেনেছি আমরা হাথোর নীল নদের বাৎসরিক প্লাবনের দেবী।
হাথোর। হাথোর- এর বাবা দেবতা রা; মা আকাশ দেবী নুট। কোনও কোনও ভাষ্যে হাথোর কে দেবতা রা- এর স্ত্রী বলা হয়েছে।
আবার কোনও কোনও সূত্রে হাথোরকে বলা হয়েছে Eye of Ra.. হাথোর এর পুত্রের নাম Ihy ; অন্য এক ভাষ্যমতে অবশ্য হাথোর হোরাস এর মা।
হাথোর সম্পর্কিত একটি প্রথলিত উপকথা হল: ...একদিন। দেবতা রা স্বর্গ থেকে নীচের দিকে তাকালেন। বিতৃষ্ণ হয়ে দেখলেন তাঁর সন্তানেরা
সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে গেছে। মানবজাতিকে শাস্তি দেবার কথা ভাবলেন দেবতা রা ।
তিন দিন সময় বেধে দিয়ে হাথোর কে শাস্তির ভার দিলেন । মানবজাতি তার স্রস্টা সম্বন্ধে শ্রদ্ধাবান নয়! ক্রোধান্বিতা হাথোর চিতাবাঘের রূপ ধরে পৃথিবীতে নেমে এল। দেবতা রা ঘুমাতে গেলেন। পরের দিন। দেবতা রা নীচের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলেন।
হাথোর পৃথিবীর প্রায় সবাইকে হত্যা করেছে! দেবতা রা উৎকন্ঠিত হয়ে উঠলেন। হায়! আমাকে উপাসনা করার জন্য আর কেউই রইল না! কাল বিলম্ব না-করে দেবতা রা মানবরূপে পৃথিবীতে এলেন। চারিদিকে রক্তে থই থই করছিল। রাস্তায় বুক সমান রক্ত। সেই রক্তে বার্লি এবং খেজুর মিশিয়ে দেবতা রা স্বর্গে ফিরে গেলেন।
আবার হত্যাযজ্ঞ শুরু করার আগে হাথোর গাজানো বিয়ারের (beer) গন্ধ পেল। হাথোর বিয়ার পান করে মাতাল হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। দু’দিন দু-রাত্রি ঘুমালো। জেগে ওঠার পর হত্যার তিন দিনের বেধে দেওয়া সময় শেষ। মানবজাতি বাঁচল।
বিয়ার-এর জন্ম হল।
প্রাচীন মিশরের দেওয়ালের গায়ে গরুর ভাস্কর্য।
হাথোর প্রাচীন মিশরে গাভীরূপে পূজিতা হতেন। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা ছিল কৃষিভিত্তিক। কাজেই গোসম্পদের ভারি সম্মান ছিল প্রাচীন মিশরীয় সমাজে।
যে কারণে একালের একজন লেখক রসিকতা করে বলেছেন: The cow was a status symbol for ancient Egyptians as a Mercedes Benz would be today. যা হোক। কখনও নক্ষত্রসহ গাভীরূপে হাথোরকে উপস্থাপন করা হয়েছে। কারণটা বোধগম্য। পরবর্তীকালে নারীরূপে হাথোরকে দেখা যায়-যার মস্তকটি অবশ্য গাভীর। পরবর্তীকালে কেবল নারীর মস্তক।
কখনও শিং কখনও গরুর কান। হাথোর কে কখনও কখনও জলহস্তি বাজপাখি গোখরা সিংহী রূপেও দেখা গেছে। তবে এসব রূপ বিরল। হাথোর-এর নারী এবং গো রূপই প্রধান।
হাথোর।
যাকে শ্রেণি নির্বিশেষে সমাজের প্রত্যেক নারীর রক্ষাকর্ত্রী বলে মনে করা হত।
হাথোর সমাজের প্রত্যেক নারীর রক্ষাকর্ত্রী বলেই হয়তো হাথোর সৌন্দর্যের দেবী এবং শিল্পকলার পৃষ্টপোষক। দেবীর জন্য ভক্তের উপহার হল দুটি আয়না। আয়নার ওপর হাথোর -এর ছবি আঁকা হত । হাথোরকে মনে করা হত জীবনের হৃদয়েশ্বরী- যিনি মদ সুগন্ধী আনন্দ প্রেম ও রোমাঞ্চের দেবী।
আতরের সুগন্ধীর সঙ্গে হাথোর সংশ্লিস্ট । এ জন্য বলা হয়েছে প্রাচীন মিশরীয় উপকথায় হাথোর- এর ভূমিকা অত্যন্ত জটিল। দেবীর প্রিয় পাথর ফিরোজা পাথর ম্যালাকাইট; প্রিয় ধাতু স্বর্ণ এবং তামা। প্রাচীন মিশরের মানুষ চোখের প্রসাধনীতে ম্যালাকাইট গুঁড়ো ব্যবহার করত। ম্যালাকাইট গুঁড়োর সঙ্গেও হাথোর সংশ্লিস্ট।
অন্যান্য প্রসাধনীর পাত্রের ওপর হাথোর এর ছবি আঁকা থাকত।
প্রাচীন মিশরের মানচিত্রে ডেনডেরার অবস্থান । নগরীটির অবস্থান নীল নদের পশ্চিম পাড়ে।
প্রাচীন মিশরের ডেনডেরায় গড়ে উঠেছিল হাথোর উপাসনা। আজও হাথোর উপাসনালয়ের ধ্বংসাবশেষ চিহ্ন রয়ে গেছে।
পর্যটকের ঘুরে ঘুরে দেখে। সুপ্রাচীন হাথোর উপাসনালয়ের গো-দেবীর ভাস্কর্য দেখে মুগ্ধ হয়।
প্রাচীন মিশরের মানচিত্র।
প্রাচীন মিশর লোয়ার (Lower Egypt)এবং আপার ইজিপ্ট (Upper Egypt)-এ বিভক্ত ছিল । আপার ইজিপ্ট-এর ফারাও ২য় মেনটুহোটেপ লোয়ার ইজিপ্ট আক্রমন করে এর নিয়ন্ত্রন নিয়েছিলেন।
তাঁর সময়কাল: ২০৬১ থেকে ২০১০ খ্রিস্টপূর্ব। ২৮ বছর ধরে চলেছিল সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। লোয়ার এবং আপার ইজিপ্ট-এর মধ্যেকার দীর্ঘকালীন যুদ্ধের সময় লোয়ার ইজিপ্টে একটি কাহিনী রচিত হয়েছিল । কাহিনীটি রয়েছে ‘দ্য বুক অভ দ্য হেভেনলি কাউ’ নামে বইয়ে। কাহিনীতে দেবতা রা কে আপার ইজিপ্ট-এর আগ্রাসী ফারাও ২য় মেনটুহোটেপ হিসেবে দেখানো হল ।
তাঁকে আর লোয়ার ইজিপ্টের জনগন আর শ্রদ্ধা করে না। তাঁর কর্তৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকার করে । ক্রোধে উন্মক্ত হয়ে দেবতা রা হাথোর কে বললেন: ‘জনগন আমাকে হত্যা করতে চাইছে। ’ এতে হাথোর ক্রেধান্বিত হয়ে উঠল। আমারই সৃষ্ট জনগন কি না আপনাকে হত্যা করতে চায়! এই ভেবে লোয়ার ইজিপ্টের জনগন ধ্বংস করার জন্য হাথোর সেখমেত -এ পরিনত হয়।
সেখমেত ছিলেন আপার ইজিপ্টের যুদ্ধের দেবী। রক্তলোলুপ সেখমেত রূপী হাথোর লোয়ার ইজিপ্টে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে রক্তপান করতে থাকে। এতে দেবতা রা উদ্বিগ্ন হয়ে রক্তপাত থামাতে চাইলেন। রা প্রচুর রক্তবর্ণ বিয়ার উৎপন্ন করে পৃথিবীতে পাঠালেন। রক্ত মনে করে পান করে মাতাল হয়ে পূর্বেকার শান্ত হাথোর রূপে ফিরে যায় সেখমেত।
প্রাচীন মিশরের ডেনডেরায় হাথোর উপাসনা।
প্রাচীন মিশরে নতুন সাম্রাজ্যের অবসানের পর প্রাচীন মিশরজুড়ে ‘অসিরিস উপাসনা’ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নতুন সাম্রাজ্যের সময়কাল ১৫৫০-১০৬৯ খ্রিস্টপূর্ব। এবং হাথোর-এর ভূমিকা বদলে যেতে দেখা যায়। হাথোর-এর ভূমিকা হয়ে ওঠে পাতালে মৃতদের আত্মাকে চিনার গাছের ডালপালা দিয়ে জল ছিটিয়ে অর্ভথ্যনা করা।
কখনও মৃত আত্মার জন্য বাছুর রূপ ধারণ - এভাবে মমি করার সময় মৃতদেহে পুষ্ঠির যোগান হত। কখনও আত্মার ওজন রূপে কিংবা বিচার সভায় যেতে আত্মার সঙ্গী হিসেবে হাথোর কে দেখা যায় । পরবর্তী কালে মৃত নারীকে হাথোর অভিন্ন মনে করা হত।
প্রাচীন মিশরে প্রচলিত হাথোর কে উৎসর্গ করে একটি কবিতা :
তুমি বিজয়ানন্দের গৃহস্বামিনী
নৃত্যের রাজেশ্বরী
সংগীতের দেবী
বীণা বাদ্যের রানী
কোরাস নৃত্যের মক্ষিরানী
মালা গাথার রমনী
অশেষ আচ্ছনতার হৃদয়েশ্বরী
প্রাচীন মিশরের ডেনডেরায় হাথোর ভাস্কর্য।
মিশরের ডেনডেরায় প্রাপ্ত প্রাচীন গো ভাস্কর্য
ছবি।
ইন্টারনেট।
তথ্যসূত্র:
http://www.crystalinks.com/hathor.html
http://www.egyptianmyths.net/hathor.htm
http://www.egyptartsite.com/hathor.html
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।