সময়টা ২০১১ সালের মে মাসের ২য় সপ্তাহের দিকের ঘটনা। তখন চাকরীর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম। প্রতিদিনই বিডি জবস্ এর মাধ্যমে নিয়মিত কয়েকটি জায়গাতে সিভি পাঠাতে ছিলাম। এর মধ্যে একটি হলো মধুমতি টাইলস্ লিমিটেড। বিডি জবস্ এ দেখলাম সেখানে কিছু সংখ্যক এক্সিকিউটিভ পদে এবং এইচ আর-এডমিন পদে কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
সেখানে চেয়েছিলো একাউন্টিং ব্যাকগ্রাউন্ড অর্থাৎ বিবিএ/এমবিএ অগ্রাধীকার। যদিও আমি এই ব্যাকগ্রাউন্ডে না তবুও কেনো জানি সিভি মেইল করলাম। তখন চাকরীটা অনেক দরকার ছিলো। কয়েকদিন পর ফোন এলো এবং পরীক্ষার জন্য এডমিট কার্ডও পেলাম। প্রায় ৩০ জনের মত নিউ ইস্কাটনের অফিসে লিখিত পরীক্ষা দিলাম।
অল্প নম্বরের ব্যবধানে প্রথম হলাম। যদিও অন্য ব্যাকগ্রাউন্ড ছিলো এই জন্য হয়তো প্রাথমিক সিলেক্টেড হলাম। ঐ দিনই ভাইভা দিলাম। আর পরীক্ষা সহ ভাইভা নিয়েছেন স্যাঁরের দুই মেয়ে যারা ডিরেক্টর আর স্যারের এক মেয়ে জামাই। রেজাল্ট পরে জানাবে বলেছিলো।
কয়েকদিন পর ফোন এলো যে আমি ফাইনালি সিলেক্টেড। এবং কোং এর এমডি (গোলাম সবুর স্যার) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে। একদিন ডেট দিলো দেখলাম ঐ দিন আমাদের চার জনকে ডাকা হয়েছে। তখন ভালই অনুভূতি হলো, চাকরিটা হয়তো কনফার্ম।
আমরা ওয়েটিং রুমে বসে আছি, আমাদের মত আরও কয়েকজন সেখানে ছিলো তারা সবাই স্যারের এলাকা থেকে এসেছে সবাই স্যারের সঙ্গে এলাকার সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য।
সম্ভবত ১.৩০ টার দিকে স্যার এলেন আর ওয়েটিং রম দিয়ে যেতেই আমরা বুঝতে পারলাম এটাই এমডি স্যার আর সবাই উঠে দাড়ালাম। স্যার আমাদের দেখে ইংরেজীতে কথা বলতে শুরু করলেন এবং একটু লাউডলি। আমরা একটু থতমত খেয়ে গেলাম। কারন আমাদের সবারই মনে হলো স্যার অনেক গম্ভীর প্রকৃতির। এরপর স্যারের পিএস আমাদের ব্যাপারে সব কিছু স্যারকে বললো ।
কিছুক্ষন পর আমাদের একজন একজন করে ডাকা শুরু করলো। আমি যখন ভিতরে ঢুকলাম একটু ভয়েই ছিলাম; ঢুকেই দেখি স্যার মাত্র খাওয়া শেষ করলেন। মনে মনে সস্তি পেলাম এখন হয়তো স্যারের মনটা অনেক ঠান্ড থাকবে।
যা ভেবেছি তাই, স্যার অত্যন্ত আন্তরিক হয়ে আমার নাম থেকে শুরু করে সকল কিছু শুনলেন। স্যারের মেয়েরা আমার ব্যাপারে স্যারকে অনেক পজেটিভ বলতে লাগলেন।
যেমন পরীক্ষায় প্রথম হওয়া...। শুনে ভালই লাগলো। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন কোং এর চেয়ারম্যান যিনি স্যারের স্ত্রী আর ছিলেন মেয়ে জামাই।
স্যার বললেন কোং এর বেশিরভাগ কর্মকর্তাই এলাকার এবং আত্মীয় স্বজন, এখন দুই মেয়ের উপর কোং চালানোর দায়িত্ব দিয়েছেন তারা এখন মেধার মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে কোংকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এই জন্যই তোমাদের নিয়োগ দেয়া।
-তবে এর আগেও কয়েকজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো , তারা বেটার জব পেয়ে চলে গেছে। আর তাই এখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে মিনিমাম সময় সার্ভিস দেয়া আর এ জন্য একটা আন্ডারটেকিং দেয়া। তবে মূল কাগজপত্র জমা দেয়া লাগবে না।
এই কথা বলে আমাকে ১০ মিনিট ভাবার সময় দিলেন । আমার যেহেতু ঐ মুহূর্তে জবটা অনেক দরকার ছিলো আর তাই বাইরে এসে মোবাইলে আমার ফ্রেন্ডস সার্কেলে কয়েকেজনকে(যারা তখন ব্যাংক জব করছিলেন) ফোন দিয়ে সব জানালে সবাই সাহস দিলো যে এটা কোনো বিষয়ই না।
যতই কিছু বলুক তাঁরাও জানে বেটার জব পেলে কেউ থাকবে না। এটা একাটা শর্ত যা সবাই নিয়ে থাকে। আমিও সাহস পেলাম।
কিছুক্ষন পর স্যার (গোলাম সবুর স্যার) আবার ডাকলেন আর সিদ্ধান্ত জানতে চেয়ে একটু একটু হাসলেন। আমি রাজী আছি শুনে স্যার এইবার অনেক সহজ করে বললেন যে, আমি বিষয়টা নিয়ে ভয় পেয়েছিলাম কি-না।
আমি উত্তর দিতেই স্যার বলতে লাগলো আমি আরও কোথও চাকরীর পরীক্ষাতে অংশগ্রহন করেছি কি-না, ওয়েটিং এ আছি কি-না। যদিও তখন কয়েকটি ব্যাংকে পরীক্ষা দিয়েছি এবং ভাইভাও দিয়ে আছি কিন্তু একটি মিথ্যা বলেছিলাম যে, না কোথাও দেই নি। এটাই প্রথম। এখন এটা অনেক খারাপ লাগছে যে, অত ভালো একজন স্যারের নিকট মিথ্যা কথা বলেছি। আর যিনি এখন নেই!
সবশেষে যে কথাটি স্যারের নিকট থেকে শুনলাম,ভালো লাগলো।
স্যার বললো বেটার জব পেলে যাবে এটা আমরাও জানি আর সমর্থনও করি।
ঠিক আছে কালকে এসে এপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে যেও। আর যেকোনো সমস্যায় আমার ঐ মেয়েকে (একজন মেয়ে যিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে লেখাপড়া করে এসে এখন ডিরেক্টর) ফোন করবে। আর দুপুরে অবশ্যই লান্স করে যাবে।
এরপর কয়েকদিন জব করার সৌভাগ্য হয়েছিলো নিউ ইস্কাটন অফিসে এর পর কয়েকদিন বসেছিলাম সাভার যেতে গেন্ডা এলাকায় স্যারের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান মধুমতি টাইলস্ লিঃ এডমিন অফিসার হিসেবে।
সেখানকার যে বিষয়টি এখনও ভুলতে পারি না, স্যার সহ তাঁর মেয়েদের, তাঁর স্ত্রীর সুন্দর ব্যবহার আর কোং এর নিজস্ব তত্তাবধানে লান্সের ব্যবস্থা যেনো বাড়ীর মত পরিবেশনা।
গতকাল স্যারের এমন খবর শুনে অবাক হয়েছি বিশ্বাস করতে পারছি না যে, স্যাঁর আর নেই ।
স্যারের পরিবারের সকলের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা, স্যারের আত্মার চির শান্তি কামনা করছি আর স্যারের পরিবার যেনো এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।