সর্বত্রই দূর্নীতি এবং মানবিক মুল্যবোধের চুড়ান্ত অবক্ষয় আমাদের ধংশ করে দিচ্ছে......
জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাংকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংক যাদের সঞ্চয় আছে অথচ যারা বিনিয়োগে ঝুঁকি নিতে চায় না এবং যাদের সঞ্চয়ে স্বল্পতা আছে অথচ যারা বিনিয়োগের ঝুঁকি গ্রহণে প্রস্তুত-এই দুই পক্ষের মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরি করে। এক কথায় ব্যাংক সঞ্চয়কারীর অর্থ নিরাপদে রক্ষা করে এবং অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করে।
একটি সুষ্ঠু ও দক্ষ ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আমানতের সুদের হারের সময়ে ঋণের সুদের হারের পার্থক্য যথাসম্ভব কম থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় এই পার্থক্য বেশ বড়।
ঋণের জন্য সুদের হার হ্রাস করা হলে পার্থক্যটি কমে আসবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও বাস্তবতা হলো ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণে জর্জরিত হওয়ায় ঋণ প্রদানে সুদের হার হ্রাস করতে অসুবিধার সম্মুখিন হচ্ছে। খেলাপি ঋণ ঐতিহাসিকভাবে ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর একটি বোঝা স্বরূপ বিরাজ করছে। ঋণগ্রহিতা নির্বাচনে দক্ষতার অভাব, ঋণ গ্রহিতাদের শিল্প ব্যবসার ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞতা এবং ঋণগ্রহিতাদের একাংশের মধ্যে ইচ্ছাপূর্বক খেলাপি হওয়ার প্রবণতা, খেলাপি ঋণের অদক্ষতা সৃষ্টি হওয়ার প্রধান কারণ। এছাড়া খেলাপি ঋণের বোঝার ভারে ন্যুব্জ হয়ে ব্যাংকগুলো যখন ঋণের জন্য বেশি হারে সুদ ধার্য করতে বাধ্য হয় তখন উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে যেসব শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হয় সেগুলো কার্যত এক সময় মুখ থুবড়ে পড়ে।
ফলে খেলাপি ঋণ সমস্যা আরো প্রকট হয়ে উঠে। ঋণ গ্রহণকারীদের জন্য সুদই একমাত্র ব্যয় নয়, ঋণ পাওয়ার জন্য তাদেরকে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ঘুষ নিয়ে সন্তুষ্টি অর্জন করতে হয়। এটি সুদের ওপর বাড়তি ব্যয়। এরকম পরিস্থিতিতে যারা ইচ্ছাপূর্বক খেলাপি হয় তারাই ব্যাংকগুলোর কাছে প্রাধান্য পায়। এই সমস্যাটি বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোতে মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এখন দাতাসংস্থার পরামর্শে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। অনেকে এই সংস্কার সম্পর্কে আশান্বিত হতে পারেননি। কারণ, ব্যাংকের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ পরোক্ষভাবে থেকেই যাচ্ছে। অতীতে খেলাপি ঋণের জন্য সরকারী প্রভাবে ঋণ দেয়াকে দায়ী করা হতো। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে যে সংস্কার আনা হয়েছে তা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে কেবলমাত্র ভবিষ্যতই তা বলতে পারে।
ঋণগ্রহণকারীদের ব্যয়ের আরেকটি বড় কারণ হলো ঋণ প্রক্রিয়াকরণে দীর্ঘসূত্রতা। সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট লোনের ক্ষেত্রে এক থেকে দু’বছর বিলম্বের ঘটনা। একজন বিনিয়োগকারী যে ধরনের বাজার পরিবেশকে সামনে রেখে তার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেন সেটি ঋণ প্রাপ্তিতে বিলম্বের ফলে বড় ধরনের পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়ে পড়ে। ফলে বিলম্বে প্রাপ্ত ঋণ দিয়ে যে শিল্প গড়া হয় তা রুগ্ন হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক।
আমাদের দেশে এখনও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পূর্বাভাস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। উন্নত দেশে এমনকি প্রতিবেশী ভারতেও এই ধরনের বিজনেস প্রোকাস্টিং সংস্থা আছে। এসব সংস্থা থেকে ব্যবসার ভবিষ্যৎ অবস্থা সম্পর্কে যে সব পূর্বাভাস দেয়া হয় তার উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীরা তাদের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর নিজেদেরও এ ধরনের কোন ব্যবস্থা নেই। ব্যাংকগুলো যদি তাদের সমিতি বা সংস্থার মাধ্যমে এরকম সংস্থা গড়ে তোলে তাহলে ব্যাংক এবং কাস্টমার উভয় পক্ষেরই উপকার হবে।
ব্যাংক প্রশাসনের মধ্যে প্রজেক্ট এসেসমেন্টের যে ব্যবস্থা আছে সেটিও অত্যন্ত দুর্বল এবং অপেশাদারী। প্রশিক্ষণ ও তদারকির মাধ্যমে বিদ্যমান ফিনান্সিয়াল এনালিস্টদেরকে আরও দক্ষ করে তোলা সম্ভব।
(আগামী পর্বে শেষ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।