আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়(প্রতিষ্ঠার কথা)



রাজশাহী ছিলো প্রাচীন বরেন্দ্রভূমির প্রাণকেন্দ্র৷ ইতিহাসের অনেক রাজশক্তির উত্থান পতনের স্বাক্ষী এই বরেন্দ্র ভূমি৷ এখন থেকে কয়েক হাজার বছর আগে পাল আমলে এই বরেন্দ্র অঞ্চলেরই নওগা জেলার পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷ জ্ঞান বিজ্ঞান ও ধর্মশাস্ত্র চর্চার প্রসিদ্ধ স্থান হিসেবে স্বীকৃত ছিলো এই বৌদ্ধবিহার৷ সে সময়ে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পেয়েছিল৷ বিশ্বের নানা দেশ থেকে জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার জন্য এখানে আসত শিক্ষর্থীরা৷ কালের গহ্বরে আস্তে আস্তে নিজের গৌরব হারাতে থাকে বরেন্দ্রভূমি৷ পিছিয়ে পড়তে থাকে ক্রমশ৷ এক সময়ের সমৃদ্ধশালী বরেন্দ্র ভূমি পরিনত হয় শিক্ষাদীক্ষা অর্থনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হিসেবে৷ ব্রিটিশ যুগে রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষাদীক্ষা উন্নয়নের জন্য ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয রাজশাহী কলেজ৷ রাজশাহী কলেজের অবস্থানও ছিলো বেশ ওপরে৷ কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজের পরই রাজশাহী কলেজের স্থান ধরা হতো৷সে সময়ে রাজশাহী কলেজে আইন বিভাগসহ পোস্ট গ্রাজুয়েট শ্রেনী চালু করা হয়৷ কিন্ত এর কিছুদিন পরেই বন্ধ হয়ে যায় এসব কার্যক্রম৷ সে সময়েই রাজশাহীতে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজন অনুভূত হয়৷ ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান সরকার দেশের সব কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে৷ রাজশাহীতে এ সময় স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মরনে নির্মিত ভাষ্কর্য ’সাবাস বাংলাদেশ’ ভাষা আন্দোলনের কিছুদিন আগ থেকেই রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বেশ জোরে শোরেই শুরু হয়৷ ১৯৫০ সালের নভেম্বর ১৫ রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের নিয়ে ৬৪সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়৷ ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি ১০ রাজশাহী শহরের ভূবন মোহন পার্কে রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য সর্বপ্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়৷ প্রথম দাবি অবশ্য ওঠে রাজশাহী কলেজেই৷ ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শহরের সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজশাহী কলেজ প্রাঙ্গনে সমবেত হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ পাস করার দাবি তোলে৷ এই দাবি পাঠিয়ে দেয়া হয় তত্‍কালীন এমএলএ ও মন্ত্রীদের কাছে৷ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী ভবন পরবর্তীতে ফেব্রুয়ারি ১৩ ভূবন মোহন পার্কেই অনুষ্ঠিত হয় আরও একটি জনসভা৷ ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ এমএলএ৷ সভায় বক্তব্য রাখেন ইদ্রিস আহমেদ এমএলএ, প্রভাষ চন্দ্র লাহিড়ী, খোরশেদ আলম, আনসার আলী, আব্দুল জব্বার প্রমূখ৷ ক্রমেই তীব্র হতে থাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি৷ এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন ১৫ ছাত্রনেতা৷ পরে ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে ঢাকায় একটি ডেলিগেশন পাঠানো হয়৷ ওই ডেলিগেশনের সদস্যদের মধ্যে মরহুম আবুল কালাম চৌধুরী ও আব্দুর রহমানের নাম উল্লেখযোগ্য৷ এভাবে একের পর এক আন্দালনের চাপে স্থানীয় আইন পরিষদ রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়৷ এই আন্দোলনে একাত্ব হন পূর্ববঙ্গীয় আইনসভার সদস্য প্রখ্যাত আইনজীবী মাদার বখশ৷ ১৯৫৩ সালের ফেব্রুয়ারি ৬ ভূবন মোহন পার্কে আরও একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মাদারবখশ সরকারকে হুশিয়ার করে বলেন, যদি রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না হয় তবে উত্তরবঙ্গকে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ দাবি করতে আমরা বাধ্য হব৷ মাদার বখশের এই বক্তব্যে সাড়া পড়ে দেশের সুধী মহলে৷ টনক নড়ে সরকারেরও৷ অবশেষে ১৯৫৩ সালের মার্চ ৩১ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাশ হয়৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন মাদারবখশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য প্রফেসর ইতরাত হোসেন জুবেরীকে সঙ্গে নিয়ে৷ এ দুজনকে যুগ্ম সম্পাদক করে মোট ৬৪ সদস্য বিশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়৷ এর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তত্‍কালীন বিভাগীয় কমিশনার এম এ খুরশীদ৷ আনুষ্ঠানিকভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৫৪ সাল থেকে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজে৷ উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের দফতর প্রতিষ্ঠা করা হয় পদ্মার তীরের বড়কুঠি নামে পরিচিত ঐতিহাসিক রেশম কুঠির ওপর তলায়৷ বড়কুঠির কাছেই তত্‍কালীন ভোলানাথ বিশ্বেশ্বর হিন্দু একাডেমিতে চিকিত্‍সাকেন্দ্র ও পাঠাগার তেরি করা হয়৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীহ্মা নিয়ন্ত্রকের দফতর স্থাপন করা হয় জমিদার কুঞ্জমোহন মৈত্রের বাড়িতে৷ বড়কুঠিপাড়ার মাতৃধাম এ স্থাপন করা হয় কলেজ পরিদর্শক দফতর৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম রেজিস্ট্রার নিযুক্ত হন ওসমান গনি ও প্রথম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিযুক্ত হন অধ্য আব্দুল করিম৷ শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাড়া করা বাড়িতে গড়ে ওঠে ছাত্রাবাস৷ রাজশাহী কলেজ সংলগ্ন ফুলার হোস্টেলকে রুপান্তরিত করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস হিসেবে৷ বড়কুঠি এলাকার লালকুঠি ভবন ও আরেকটি ভাড়া করা ভবনে ছাত্রী নিবাস স্থাপন করা হয়৷ ১৯৬১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয় মতিহারের নিজস্ব ক্যাম্পাসে৷ এই ক্যাম্পাসটি গড়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়ান স্থপতি ড. সোয়ানি টমাসের স্থাপত্য পরিকল্পনায়৷ দক্ষিণ দিক দিয়ে ছুটে চলেছে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক, উত্তরের রেললাইনের মাঝে ছায়া ঢাকা সবুজ শ্যামলে ঘেরা এই ক্যাম্পাস৷ ++উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।