আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মদিনার ইতিহাস ও বিশ্বনবী

জাগতিক জগতে আমি কাব্যিক......

একজন মুসলমান হিসেবে আমি নিজেকে অনেক নগন্য ও সেইসাথে ভাগ্যবান মনে করছি কারণ পবিত্র মদিনা নগরী সম্পর্কে কিছু তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারছি বলে। পরমকরুনাময় সহায়। মদিনা নগরী আল মদিনা-আল মুনাওয়ারা নামে পরিচিত যার বাংলা অর্থ আলোকিত নগরী। এই শহর মদিনা - আন - নবী বা নবী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) এর শহর নামে পরিচিত। এর আরও নাম আছে যেমন, তাইবাহ, ইয়াসরিব, নবীর শহর, দার আল হিজরা (হিজরতকারীদের বাসস্থান)।

এইটি ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্র শহর যেখানে মুসলমানদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবর স্থান। এইটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) হিজরতের পরে মদিনায় বসবাস করেছেন। ভৌগলিক অবস্থাণঃ- মদিনা নগরী সৌদি আরবের হিযায নামক অঞ্চলের পূর্বে -দ্রাঘিমাংশ ৩৯। ৩৬। ৬ এবং ২৪।

২৮। ৬ অখ্যাংশে অবস্থিত। সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিমে এবং লোহিত সাগরের পূর্বে এই নগরীর অবস্থাণ। মদিনা অনেকগুলো পর্বত দ্বারা পরিবেষ্টিত। পশ্চিমে আল হুজাজ পর্বত,উত্তর পশ্চিমে সালা,দখ্যিণে আল-ঈর এবং উত্তরে ওহুদ পর্বত অবস্থিত।

সমুদ্রপৃষ্ট থেকে এই শহরের উচ্চতা ৬২০ মিটার(২০৩৪ফিট)। আবহাওয়াঃ- সাধারণতঃ মদিনার আবহাওয়া মহাদেশীয়; গ্রীষ্মে গরম ও শুকনা আর শীতকালে ঠান্ডা থেকে মৃদু তাপমাত্রা বিরাজমান থাকে। গরমে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী থেকে ৪৭ ডিগ্রী সে. আবার শীতের সময় হিমাঙ্কের নীচে নেমে যায়। আদ্রতা সারাবছর তুলনামূলক ৩৫%। বৃষ্টি অপ্রতুল যা নভেম্বর ও মে মাসে হয়।

শীতকালে বাতাস শান্ত থাকে আবার গরমের সময় উত্তরের ধুলিময় ও ঝড়ো হাওয়া বয়। জনসংখ্যা ও জীবনযাত্রাঃ-২০০৬ সালের হিসেব অনুযায়ী মদিনার জনসংখ্যা ১,৩00,000 জন। মদিনায় স্থানীয় সৌদি ছাড়াও পৃথিবী মুসলিম দেশের বহুলোক বসবাস করে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশ,ভারত,পাকিস্তান,ইন্দোনেশিয়া,ফিলিপিন,মিশর,ইয়েমেন ইত্যাদি। ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকুরীর মাধ্যমে তারা জীবিকা নির্বাহ করে।

মদিনায় মহানবীর হিযরতঃ-হিজরত শব্দের সাধারণ অর্থ হচ্ছে পরিত্যাগ কিংবা পরিবর্জন । কিন্তু ইসলামী পরিভাষায় হিজরত বলতে বুঝায় : দ্বীন ইসলামের খাতিরে নিজের দেশ ছেড়ে এমন স্থানে গমন করা যেখানে প্রয়োজন সমূহ পূর্ণ হতে পারে। কারণ ইসলামী জীবন যাপন করার এবং আল্লাহর দ্বীনের দিকে আহ্বান জানানোর আজাদী যে দেশে নেই, সে দেশকে শুধু আয়-উপার্জন ,ঘর-বাড়ি ,ধন-সম্পত্তি কিংবা আত্মীয়-স্বজনের খাতিরে আঁকড়ে থাকা মুসলমানদের পক্ষে আদৌ জায়েয নয়। রাসূল (সা.) আগমনের আগে এক সংকটময় মুহূর্ত অতিক্রম করেছিল আরবসহ সারাবিশ্ব। ইতিহাসে তাকে আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগ বলা হয়।

এ সময় সর্বত্র বিরাজ করছিল অশান্তির দাবানল। এ ক্রান্তিকালীন কাণ্ডারি হয়ে এসেছিলেন আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। প্রথমদিকে দ্বিধাবিভক্ত ও কলহপ্রিয় জাতিকে একটি আদর্শের ছায়াতলে নিয়ে আসতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। মক্কাবাসী তাকে সাদরে গ্রহণ না করায় তিনি হিজরত করে মদিনা চলে গিয়েছিলেন। মদিনার অধিবাসীদের মধ্যে এক আত্মার বন্ধন সৃষ্টি করেছিলেন।

৬২২ খ্রীস্টাব্দের ২৪শে সেপ্টেম্বর নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনা নগরীতে হিজরতের করেন এবং মদীনা/মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্রের প্রথম রাজধানী স্থাপন করেন। এসময় সেখানে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায় গুলোর মধ্যে ছিল গোষ্ঠীগত হিংসা-বিদ্বেষ। যাঁরা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর রিসালাতকে স্বীকার করে এবং আখেরাতকে বিশ্বাস করে তাদের সমাজে রাসূলের (সাঃ)-এর আদর্শ কালজয়ী হয়ে রইল। সত্যিকারভাবে যারা আল্লাহর একত্ববাদের ওপর অটল বিশ্বাস রাখে এবং তদীয় রাসূল (সাঃ)-এর জীবনাদর্শকে জীবনের একমাত্র অবলম্বন বলে মেনে নিয়েছে তারাই প্রকৃত সফলতার দ্বারপ্রান্তে দণ্ডায়মান। প্রকৃতপক্ষে এই বাইয়াতকে ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তিপ্রস্তর বলা যায়।

এভাবে যখন মদিনায় একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হল তখন রসূল (সাঃ) এর মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগ্রহ ও উৎসাহ বেড়ে গেল। তিনি মদিনায় এসে প্রথম যে কাজটি হাতে নিলেন তা হচ্ছে মসজিদ নির্মাণ। জমি ক্রয় এরপর মসজিদে নববীর ভিত্তি স্থাপিত হল। পরবর্তী কালে এই মসজিদই ইসলামী রাষ্ট্রের সভ্যতার কেন্দ্র ও উৎস হিসেবেই গড়ে তোলা হয়েছিল। মদিনায় রসূলূল্লাহ (সাঃ) এর আগমনের সাথে সাথে আপনা-আপনি দাওয়াত সমপ্রসারিত হতে লাগলো।

কারণ যে সমন্ত মুহাজির মক্কা থেকে হিজরত করে এসেছিলেন তাদেরকে মদিনাবাসীরা যেভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছিলেন ইতিহাসে তার দৃষ্টান্ত বিরল। মোহাজের ভাইদের প্রতি আনসাদের ভালবাসা, সরল-সহজ আন্তরিকতা ও আত্মত্যাগের পরিচয়ও এতে পাওয়া যায়। আবার পক্ষে মুহাজেররাও আনসাদের কাছ থেকে কোনরকম বাড়তি সুবিধা গ্রহণ করেননি। মসজিদে নববীর নির্মাণঃ- মদিনায় আগমনের পর সবচেয়ে প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল একটি মসজিদ নির্মাণ করা। হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) যেখানে অবস্থান করছিলেন, তার নিকটেই দুই ইয়াতিমের কিছু অনাবাদী জমি ছিল।

নগদ মূল্যে তাদের কাছ থেকে এই জমিটি খরিদ করা হলো। তারই ওপর মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হলো। এবারও হযরত(সাঃ) সাধারণ মজুরের ন্যায় সবার সাথে মিলে কাজ করলেন। স্বহস্থে তিনি ইট-পাথর বয়ে আনলেন। মসজিদটি অত্যন্ত সাদাসিদা ভাবে নির্মিত হলো।

কাঁচা ইটের দেয়াল, খেজুর গাছের খুঁটি এবং খেজুর পাতার ছাদ - এই ছিল এর উপকরণ। মসজিদের কিবলা হলো বায়তুল মুকাদ্দিসের দিকে। কেননা, তখন পর্যন্ত মুসলমানদের কিবলা ছিল ‌ঐ দিকে। অতঃপর কিবলা কা’বামুখী হলে তদনুযায়ী মসজিদের সংস্কার করা হলো। মসজিদের একপাশে একটি উঁচু চত্বর নির্মিত হলো।

এর নাম রাখা হলো ‘ সুফফা’। যে সব নও মুসলিমের কোন বাড়ি-ঘর ছিলো না। এটি ছিল তাদের থাকবার জায়গা। মসজিদের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে তার নিকটেই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার স্ত্রীদের জন্যে কয়েকটি কৌঠা তৈরি করে নিলেন। এগুলো কাঁচা ইট এবং খেজুর গাছ দ্বারা নির্মিত হলো।

এই ঘরগুলো ছয়-সাত হাত করে চওড়া এবং দশ হাত করে লম্বা ছিল। এর ছাদ এতোটা উঁচু ছিল যে, একজন লোক দাঁড়ালে তা স্পর্শ করতে পারতো। দরজায় ঝুলানো ছিল কম্বলের পর্দা। হযরত(সাঃ) এর গৃহের নিকটে যে সব আনসার বাস করতো, তাদের ভিতরকার স্বচ্ছল লোকেরা তার খেদমতে কখনো তরকারী , কখনো বা অন্য কিছু পাঠাতো। এর দ্বারাই তার দিন গুজরান হতো; অর্থাৎ সংকটের ভেতর দিয়েই তার জীবন-যাত্রা নির্বাহ হতো।

নির্মাণপ্রক্রিয়াঃ-হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) মদিনা মসজিদের নির্মাণের জন্য নাজ্জার গোত্রের সাহল ও সোহাইল নামক দুই জন বালকের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় জমি ক্রয় করেন। এর ক্ষুদ্র একটি অংশে বাসস্থান নির্মাণ করতঃ বাকী অংশে মদিনা মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। প্রতিটি কোণ থেকে তীর নিক্ষেপ করে যে পরিমাণ জায়গা পাওয়া গেল তা হলো একটি ক্ষেত্র। বর্গের প্রতিটি বাহুর পরিমাণ দাৎড়ালো ১০০ হাত বা ৫৬ গজ। অর্থাৎ মদিনা মসজিদের প্রাথমিক আয়তন ছিল ১০০*১০০ হাত বা ৫৬*৫৬ গজ।

মসজিদের ভিত্তি ও দেয়ালের নিম্নভাগ ৩ হাত পর্যন্ত প্রস্তর নির্মিত ছিল। প্রথম পর্যায়ে মদিনা মসজিদ রৌদ্র-শুষ্ক ইট দ্বারা নির্মিত হয়। এই রৌদ্র-শুষ্ক ইট বাকী আল-খাবখাবা উপত্যাকা হতে আনিত কাদা দ্বারা তৈরি হয়েছিল। তখন মদিনা মসজিদের দেয়াল ছিল ৭ হাত উঁচু। ছাদকে শক্তিশালী ও মজবুত রাখার জন্য মদিনা মসজিদের ৩৬টি খেজুর গাছকে স্তম্ভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।

মসজিদের ছাদ নির্মিত হয়েছিল খেজুর পাতা দিয়ে। ছাদকে সুন্দর করার জন্য, রৌদ্র ও বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য খেজুর পাতার উপর কাঁদামাটির আস্তরণ লেপে দেয়া হয়েছিল। সে সময় মদিনা মসজিদে প্রবেশের জন্য ৩টি দরজা ছিল। প্রধান প্রবেশ পথটি ছিল দক্ষিণ দিকে যা দিয়ে মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করতেন ও বাহির হতেন। পশ্চিম দেয়ালে ছিল মসজিদের দ্বিতীয় প্রবেশ পথ যা "বাবে রহমত" নামে পরিচিত।

তৃতীয় প্রবেশ পথটি ছিল পূর্ব দেয়ালে যা দিয়ে মুহাম্মদ (সাঃ) এ মসজিদে প্রবেশ করতেন। এ জন্য এটির নাম হয় "বাব উন নবী"। ঐতিহাসিক উইনসিংকের মতে, মদিনা মসজিদের দরজা প্রস্তর নির্মিত ছিল। মদিনা মসজিদেই সর্ব প্রথম মেহরাব, মিম্বার, আজান দেয়ার স্থান বা মিনার ও ওজুর স্থান সংযোজন করা হয়। বর্তমানে মদিনা মসজিদে আগের চেয়ে অনেক সম্প্রসারিত।

সম্পূর্ণ নতুন নকশার ভিত্তিতে এটিকে সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং একই সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মুসল্লীর নামাযের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। সংস্কার ও সম্প্রসারণঃ-মদিনা মসজিদ বা মসজিদে নববী মুসলমান শাসকদের দ্বারা বহুবার সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। মুহাম্মদ (সাঃ) ওফাতের পর হযরত ওমর (রাঃ) ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদে নববীর সম্প্রসারণ করেন। তিনি মসজিদটি উত্তর দিকে ৩০ হাত, দক্ষিণ দিকে ১০ হাত, পশ্চিম দিকে ২০ হাত সম্প্রসারণ করেন। হযরত ওমর (রাঃ) এর সময় মসজিদের পরিমাণ দাঁড়ায় উত্তর-দক্ষিণে ১৪০ হাত, পূর্ব-পশ্চিমে ১২০ হাত।

হযরত ওসমান (রাঃ) এর সময় ৬৪৬-৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে খেজুরপাতার পরিবর্তে ছাদে সেগুণ কাঠ ব্যবহার করা হয়। ছাদের আকার দাঁড়ায় ১৬০*১৩০ হাত। এ সময় সম্প্রসারিত হয়ে মসজিদের আকার দাঁড়ায় উত্তর দক্ষিণে ১৬০ হাত এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৫০ হাত। খলিফা আল ওয়ালিদের সময় মদিনা মসজিদটি আধুনিক ইমারতে পরিণত হয়। ওয়ালিদ ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে মসজিদে নববীকে সাজিয়ে তোলেন।

তাঁর সময় মসজিদে নববীর পরিমাপ দাঁড়ায় ২০০*২০০ হাত। ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে সর্ব প্রথম মদিনা মসজিদের চারকোণে ৪টি মিনার নির্মাণ করেন আল ওয়ালিদ। তখন প্রতিটি মিনারের উচ্চতা ছিল ৫০ হাত এবং প্রস্থে ছিল ৮ হাত। খলিফা মাহদী ৭৭৫-৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি সম্প্রসারণ করেন ৩০০*৩০০ হাত। আর মামলুক সুলতান কয়েত-বে মসজিদে নববীতে গম্বুজ প্রতিষ্ঠিত করেন।

এতে গম্বুজ করা হয় ১৪৮১ খ্রিষ্টাব্দে। গম্বুজ সবুজ রং-এর আস্তরণ দিয়েছিলেন ওসমানী সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে। বর্তমান আধুনিকায়নে মসজিদ-এ নববীর রূপদান করেন সৌদি বাদশাহ আব্দুল আজিজ ইবনে সউদ। এর পরিকল্পনা করা হয় ১৯৪৮ খ্রীস্টাব্দে। ১৯৫৩-১৯৫৫ সাল নাগাদ মসজিদ আধুনিকায়ন করা হয়।

বিশালকার মসজিদে নববীর সমস্ত রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব সৌদি রাজ পরিবারের। জিয়ারতঃ-ইসলামের বিধানানুযায়ী লক্ষ লক্ষ মুসলমান জিয়ারত করতে যান মদিনা মসজিদের অভ্যন্তরস্থ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর রওজা শরীফ। মহানবীর রওজার দু’পাশে রয়েছে হযরত আবুবকর (রাঃ) ও হযরত ওসমান (রাঃ)-এর কবর। বিশেষ করে হজ্জ সম্পাদনের আগে বা পরে হাজীরা মসজিদে নববীতে একনাগাড়ে কমপক্ষে ৮ দিন অবস্থান করে এক নাগাড়ে ৪০ রাক্বাত নামায আদায় করেন। কিবলা পরিবর্তনঃ-আমরা জানি যে, নবী (সা.) মক্কায় বাইতুল মুকাদ্দাসের (ইয়াহুদীদের কিবলা) দিকে ফিরে নামায আদায় করতেন৷ তদ্রূপ মদীনাতেও হিজরাতের পরে ষোল মাস ঐ দিকে ফিরেই নামায আদায় করেছিলেন৷ মুসলমানদের শত্রু ইয়াহুদীরা এই বিষয়কে একটি বাহানা হিসেবে ধরে ইসলামকে পরাস্ত করতে চাইলো এবং বলল : "মুহাম্মদ (সা.) দাবী করছে যে, সে আলাদা একটি শরীয়ত ও নিয়ম-কানুন এনেছে কিন্তু এখনো পর্যন্ত তার কিবলা সেই ইয়াহুদীদের কিবলাই রয়েছে৷" এই ধরনের আপত্তিমুলক কথা-বার্তা নবীর (সা.) অন্ত্যরে ব্যাথার উদ্রেক হল৷ তিনি রাতে বাড়ী থেকে বেরিয়ে আসতেন এবং ওহীর অপেক্ষায় আসমানের দিকে তাকিয়ে থাকতেন৷ এমতবস্থায় সূরা বাকারার ১৪৪ নং আয়াত নাজিল হল এবং তাতে বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে কিবলা পরিবর্তন করে কা'বাকে কিবলা হিসেবে নির্দিষ্ট করার নির্দেশ আসলো৷ রজব মাসের মধ্যবর্তী সময়ের দিকে হিজরতের পরে ষোল মাস পূর্ণ হয়েছিল, নবী (সা.)'বনী সালামহ্' (আহ্যাব মসজিদের এক কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত) নামক মসজিদে জামা'তের সাথে যোহরের নামায আদায় করছিলেন৷ এমন সময় দুই রাকা'ত নামায আদায় শেষে জিব্রাঈল (আ.) সূরা বাকারার ১৪৪ নং আয়াতটি নিয়ে নাজিল হলেন ৷ নবী (সা.) ঐ অবস্থাতেই কা'বার দিকে ঘুরে যান যারা তাঁর পিছনে নামায পড়ছিল তারাও ঘুরে গেল৷ আর এভাবেই যোহরের নামাজের পরবর্তী দুই রাকা'তকে কা'বার দিকে ফিরে আদায় করে শেষ করলেন৷ সে জন্যেই এই মসজিদ পরবর্তীতে 'মসজিদে যু-কিবলাতাইন' অর্থাৎ দুই কিবলা বিশিষ্ট মসজিদ নামে বিশেষ পরিচিত পায়৷ এই মসজিদ মদিনায় অবস্থিত।

মসজিদে কুবাঃ-হিজরতের পর মদিনার কেন্দ্রস্থলে পৌঁছার আগে হজরত নবী করিম (সাঃ) প্রথম কোবা নামক পল্লীতে বনি আমর ইবনে আওফের মেহমান হন। এখানে তিনি ১৪ দিন অবস্থান করেন। এখানেই তিনি সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। কোবা পল্লীর এ মসজিদ খানাই ছিল ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মসজিদ। আল্লাহর ঘর মসজিদ নির্মাণের মাধ্যমেই প্রিয় নবীজী (সাঃ) হিজরত-পরবর্তী সোনালি যুগের সূচনা করেন।

হজরত কুলসুম ইবনে হাদাম (রাঃ) নামক জনৈক প্রবীণ সাহাবির এক খণ্ড ভূমির ওপর এ মসজিদ নির্মিত হয়। নির্মাণের প্রতিটি কাজে প্রিয় নবীজী (সাঃ) স্বয়ং অংশগ্রহণ করেছিলেন। এ মসজিদের বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা নির্দেশ করেই সূরা তওবার ১৩ নম্বর আয়াতখানা নাজিল হয়, যাতে বলা হয়েছে— সেই মহিমাময় মসজিদ যার ভিত্তি রাখা হয়েছে তাকওয়ার ওপর প্রথম অবস্থা থেকেই। নামাজের উদ্দেশ্যে এখানে দাঁড়ানোই সর্বাপেক্ষা সমীচীন। এর মধ্যে এমন লোকজন আছেন, যারা অত্যধিক পবিত্রতার প্রতি বিশেষ যত্নবান।

আর আল্লাহতায়ালা পাক-পবিত্র লোকদেরই পছন্দ করেন। এ আয়াত নাজিল হওয়ার পর হজরত নবী করিম (সাঃ) কোবাবাসীদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, পাক-পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে তোমরা এমন কী পন্থা অবলম্বন করে থাক, যার প্রশংসা স্বয়ং আল্লাহপাক করেছেন? তারা জবাব দিয়েছিলেন, মলমূত্র ত্যাগ করার পর প্রথমেই মাটি দ্বারা আমরা অপবিত্রতা দূর করি তারপর পানি ব্যবহার করে পরিচ্ছন্ন হই। হজরত নবী করিম (সাঃ) তাদের এই পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতিটির প্রশংসা করেন (তিরমিযি শরিফ ২য় খণ্ড, রুহুল মা’আনী, ইবনে কাছির)। মসজিদে কোবার বৈশিষ্ট্য : হজরত নবী করিম (সাঃ) নিয়মিত কোবার মসজিদ জিয়ারত করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও এ ব্যাপারে উত্সাহিত করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, হজরত নবী করিম (সাঃ) নিয়মিতভাবে প্রতি শনিবার কোবার মসজিদে জিয়ারত করতেন।

কখনও কোনো সরওয়ারীতে আরোহণ করে আবার কখনও বা হেঁটে যেতেন (বুখারি শরিফ ১ম খণ্ড, মুসলিম শরীফ ১ম খণ্ড)। অন্য এক হাদিসে রয়েছে, কোবার মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করা একটি ওমরাহর সমতুল্য পুণ্যের কাজ (তিরমিযি শরিফ, ইবনে আবিশাইবা ২য় খণ্ড)। মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদের বর্ণনা করেন যে, হজরত নবী করিম (সা.( প্রতি রমজানের ১৭ তারিখ কোবার মসজিদে তশরিফ আনতেন।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।