দেশবরেণ্য আলেমে দ্বীন, আধ্যাত্মিক প্রাণপুরুষ, একজন খাঁটি রাসূল প্রেমিক, বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের প্রেসিডিয়াম সদস্য, মতলব উত্তরের ফরাজীকান্দি দরবার শরীফের পীর সাহেব ও নেদায়ে ইসলামের চেয়ারম্যান আল্লামা শায়খ ড. মানযূর আল-আহমাদী উয়েসী রিফায়ী আর বেঁচে নেই| তিনি পবিত্র মদিনা শরীফে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিলল্লাহে….রাজেউন)| তিনি পবিত্র হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে মদিনায় অবস্থান করছিলেন| ওফাতকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭১ বছর| তাঁর এই আকস্মিক ইন্তেকালে দেশব্যাপী ভক্তবৃন্দ তথা মতলবের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে| গতকাল বাদ আসর মদিনা শরীফে তাঁর জানাজা নামাজ শেষে জান্নাতুল বাকীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়| বিষয়টি যেনো যাঁর প্রেমিক তাঁর কাছেই শুয়ে গেলেন এই নির্ভেজাল রাসূল প্রেমিক| বিস্ত তাঁর পারিবারিক ও ভক্তদের সূত্রে জানা যায়, তিনি গেলো রমজান মাসে মদিনা শরীফে মসজিদে নববীতে ইতেকাফে ছিলেন| এরপর ১৫/২০ দিন আগে তিনি দেশে এসেছেন| গত ৩/৪ দিন আগে তিনি হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে আবার সৌদি আরব যান| সৌদি আরব গিয়েই তিনি মদিনা শরীফ চলে যান এবং রাসূল পাক (সাঃ)-এর রওজার পাশে অবস্থান করছিলেন| আর এ অবস্থায়ই তিনি ইহজগত ত্যাগ করেন| তাঁর ভক্তরা আরো জানান, হুজুর কেবলা দয়াল নবীজীর শানে অসংখ্য নাতে রাসূল ও কাসীদা লিখেছেন এবং তিনি নিজেই সুর করেছেন| তিনি সব সময় রাসূল (সাঃ)কে উদ্দেশ্য করে এই পংক্তি সুর দিয়ে পাঠ করতেন ’দিওনা রাসূলাল্লাহ দিওনা বিদায়, ভুলনা হাবীবাল্লাহ ভুলনা আমায়|’ আল্লাহ তাঁর মনের এই বাসনাই কবুল করলেন| তিনি এই পংক্তিটি যখন পাঠ করতেন তখন তাঁর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরতো| আল্লামা শায়খ ড. মানযূর আল-আহমাদী উয়েসী রিফায়ী শুধু ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিতই ছিলেন না, আধুনিক সব ধরনের শিক্ষাই তিনি গ্রহণ করেন| তিনি একজন আধ্যাত্মিক সাধকও ছিলেন| বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষা গ্রহণে তিনি ছিলেন বরাবরই প্রথম স্থান অধিকারী| তিনি বিএ (অনার্স), এলএলবি (ফার্স্ট ক্লাস), মমতাজুল মোহাদ্দেসীন, মমতাজুল ফোকাহা (ফার্স্ট ক্লাস), ডিপ্লোমা (ইউএল), এফসিটি (ফার্স্ট ক্লাস), এমএ (ফার্স্ট ক্লাস), পিএইচডি (গবেষক) ডিগ্রি লাভ করেন| শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ফরাজীকান্দি উয়েসীয়া কামিল মাদ্রাসা| ফরাজীকান্দির মতো নিভৃত এক পল্লীতে তিনি গড়ে তোলেন বিশাল কমপ্লেক্স| নারী শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন নেদায়ে ইসলাম মহিলা ফাযিল মাদ্রাসা| তাঁর প্রচেষ্টাতেই প্রক্রিয়াধীন আছে নেদায়ে ইসলাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়| সাড়ে ৩ শতাধিক এতিমদের লালন-পালনের জন্যে নির্মিত হয় আল-আমিন এতিমখানা| চিকিৎসার জন্যে তিনি তৈরি করেন খাজা গরীবে নেওয়াজ হাসপাতাল ও ফ্রি ফ্রাইডে ক্লিনিক| এতিমদের পুঁথিগত বিদ্যা শিক্ষার পাশাপাশি টেকনিক্যাল শিক্ষারও ব্যবস্থা করে দেন তিনি| এ ছাড়াও কৃষি, মৎস্য, পোল্ট্রি, গো পালনসহ বিভিন্ন কাজে হাতে-কলমে পারদর্শী করে গড়ে তুলতেন এই এতিমদের| শিক্ষা বিস্তার ও মানব কল্যাণে এক অনন্য ভূমিকা পালন করার মধ্য দিয়ে তিনি চাঁদপুর জেলাতে এক অনন্য ইতিহাস স্থাপন করেছেন| আজ মঙ্গলবার ঐতিহাসিক ফরাজীকান্দি কমপ্লেক্সে শায়খ মানযূর আহমাদের ইন্তেকালে দিনব্যাপী কোরআনখানি, মিলাদ, ফাতেহা, বিভিন্ন খতম ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে|
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।