আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনটা একটু হাল্কা করার আশায়...

অনিশ্চয়তার পথে একাকী হেঁটে চলা

ইন্টার্নশীপ শুরু করেছি তখন সবে দিন পনর হয়েছে। সার্জারীতে placement...বইয়ের পড়া আর বাস্তবের প্রয়োগ মেলাতে হিমশিম খেতে খেতে শিখছিলাম। প্রথম দশ দিন মহিলা ওয়ার্ডের আটটা বেড দেখতাম আমি। রোগীদের সাথে বেশ ভাব জমে গিয়েছিল। এরপর পুরুষ ওয়ার্ডের ডিউটি দিয়ে দেয়া হল।

ডিউটি না থাকলেও শুক্রবার সকালের রাউন্ডে আসতে হত। এক শুক্রবারে রাউন্ড শেষে আর রুমে যাইনি। হাসপাতাল মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়ে ডক্টরস কেন্টিনে ঢুকলাম...মাত্র ভাতে হাত দিলাম,এমনি সময় দরজায় উকি দিল আমাদের মহিলা ওয়ার্ডের এক রোগীর attendant...আমাকে ডাকছিল। উঠে গিয়ে কি ব্যাপার জানতে চাওয়ায় মেয়েটি জানাল,তার মা অপারেশনের পর থেকে ভাল থাকলেও,আজ খুব অস্থির করছে আর প্রস্রাব একেবারে কমে গেছে। বললাম,ওয়ার্ডে ডিউটি ডাক্তারকে বলতে,সে দেখবে।

ও জানাল,উনি এসে দেখে গেছেন এবং একটা injection(lasix) দিয়ে গেছেন। নীচতলা থেকে আমাকে দেখে অনুসরন করে এতদূর এসেছে সে। তার একটাই চাওয়া আমি যদি একবার দেখতাম। কথা দিলাম খাওয়া শেষে দেখে যাব। খাওয়া শেষে অন্যদের সাথে কথা বলতে বলতে কিভাবে যেন ভুলে গেলাম রোগী দেখে যেতে।

রুমেও চলে গেলাম!(এখনও বুঝতে করতে পারিনা,কিভাবে ভুলে গেলাম!) সন্ধায় মনে পড়তেই ডিউটি ডক্টরকে ফোন করে খবর নিলাম। post operative renal failure develop করেছে বলে জানাল সে। অবস্থা ভাল না। রিস্ক বন্ডে অপারেশন করা হয়েছিল। ভাবলাম এখন গিয়ে একবার দেখে আসা যায়।

রেডী হয়ে ওয়ার্ডে গিয়ে দেখি আমার বন্ধুর হাতে death certificate!! আমি দৌড়ে ওয়ার্ডে গেলাম...ততক্ষনে সব শেষ। আমি আমার কথা রাখতে পারিনি। মনটা অসম্ভব খারাপ হয়ে গেল। খুব কান্না পাচ্ছিল। মেয়েটা আমাকে চিৎকার করে বলছিল,"স্যার,আপনে একবার আইলেন না,মায় একবার আপনেরে দেখবার চাইছিল,স্যার।

" যতবার আমি মহিলাকে দেখতে যেতাম,উনি আমাকে বলতেন,''আফনারার লাখান আমার একটা ফুয়া আছিল। অচুকা একদিন ফুয়া আমরার অভাবের ঘর ছাড়ি যে কনে হারি গেল,আর আইলো না। " এরপর অনেকগুলো দিন আমি ভাত খেতে পারতাম না। প্রায়ই সন্তান হারিয়ে ফেলা মায়ের চিকচিকে চোখ আর রোগে যন্ত্রনাক্লিষ্ট বিষন্ন মুখ আমার চোখে ভেসে উঠত। এরপর থেকে যে একবারও তাকে দেখে যেতে বলে,অন্য যেকোন কাজে থাকলেও ১টা মিনিট হলেও তার পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করি,কথাগুলো শুনি...পাপের কিছুটা প্রায়শ্চিত্তের আশায়।

অনেকদিন পর কিছু লিখলাম। আজ হঠাৎ ওনার কথা মনে পড়ায় মনটা খারাপ হয়ে গেল। মন খারাপ থেকেই আমার লেখার শুরু...সে গল্পটাও হয়ত একদিন বলব। আমার মৃত চাচীর জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতবাসী করেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।