কষ্ট পাই , কারন কষ্টকে ভালবাসি
আমরা অনেকেই নিজেদের আস্তিক বলে গর্ব করি । অথচ আমাদের নেই দেশের প্রতি দায় বদ্ধ্যতা । আমরা সবসময় নিজেদের নিয়েই ব্যাস্ত থাকি । হায়রে বাঙ্গালী । কোন দিন যেন পড়লাম জাপানিরা নাস্তিক বলে ওদের উপর এই গজব ।
হায়রে আস্তিক । মনে হয় বাংলাদেশে কখনো সিডর , জলচ্ছাস হয় না । এই সময় এসেও এই ধরনের কথায় সত্যি অবাক লাগে । যখন আমরা শুধু খোজ নেই বাংগালী বেচে আছে কি না । তখন নিজেদের সার্থপরতা দেখলে নিজের কাছে লজা লাগে ।
যদি নাস্তিক হয়ে এত মানবতা দেখানো যায় তাহলে তাই ভাল ।
যারা বিশ্বাস করেন নাস্তিক বলে জাপানের এই পরিনতি । তাদের কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন , " ওই নাস্তিকরা যদি নিজেদের উৎসর্গ না করত তাহলে বাংলাদেশ এ আমরা আস্তিক রা কি বেচে থাকতাম?" । আর ওদের করুনায় আর বিশ্বের প্রতি দায়িত্বশীলতার জন্যে আজো আমরা অক্ষত আছ্তাম? যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করলেন তাদের প্রতি আমার বিনম্র সালাম ।
আজ আবার পুরনো জিনিস নাড়ছি কেন?
আজ প্রথম আলোতে নিচের ছবিটা দেখলাম আর লিখাটা ।
সত্যি ওরা যে আসলেই পূর্ণ মানুষ তা আবার বুঝিয়ে দিল । ওদের নিজদের সভ্য দাবি করার অধিকার তো থাকবেই ।
ছবি
আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়াদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছেন টেপকোর নির্বাহীরা
মূল খবরঃ
টোকিওর সুমিটোমো করপোরেশন অফিস। মন দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন গো ওয়াতানাবে। প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে চারদিকে ধ্বংসের চিহ্ন।
প্রথম দিন অফিস থেকে পিএ সিস্টেমে ঘোষণা করা হয়েছিল, ‘আপনারা চাইলে বাড়ি চলে যেতে পারেন। ’ দ্বিতীয় দিন বলা হয়, ‘আপনারা বরং চলেই যান। ’ তৃতীয় দিন ঘোষণা হয় সরাসরি, ‘বাড়ি যান। ’ অফিস থেকে এহেন তাগাদা সত্ত্বেও আরও কয়েকজনের মতো ওয়াতানাবে কাজ করেই যাচ্ছিলেন। কখনো বা রাত দুইটা পর্যন্ত!
জাপানিদের কর্মসংস্কৃতি ঈর্ষণীয়।
পাশ্চাত্যের মানুষ দুই দিনের সপ্তাহান্ত কাটাতে গিয়ে তিন-চারদিন আয়েশ করে নষ্ট করে বলে জাপানিরা রগড় করে থাকে। শত দুর্যোগের মধ্যেও কর্তব্য পালনে কখনো পিছপা নয় তারা। এবারের নজিরবিহীন ভূমিকম্প ও তা থেকে সৃষ্ট সুনামির পরও আর একবার পাওয়া গেল এর নজির। কেবল কর্তব্যনিষ্ঠাই নয়, ভয়াবহতম বিপর্যয়ের মুখেও জাপানিরা কীভাবে অবিচলিত থাকতে পারে তা-ও দেখল বিশ্ববাসী। বাইরের দুনিয়ার কাছে এও এক বিস্ময়।
দুর্যোগ মোকাবিলায় জাপানিরা কী করছে, এর বিবরণের পাশাপাশি তাদের স্বভাব ও মানসিকতার এই বিশেষ দিকটির কথাও সমান গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে।
ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ মাত্রার তেজস্ক্রিয়তা। ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকা বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে মৃত্যুফাঁদ হয়ে ওঠা ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২০০ জন কর্মী প্রায় নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও সেখানে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। ভয়াবহ তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই ওই ২০০ টেকনিশিয়ান সেখানকার ত্রুটি মেরামতে দিন-রাত কাজ করে যেতে থাকেন।
প্রতি শিফটে কাজ করেন ৫০ জন, যাঁরা এখন পুরো বিশ্বের কাছে ফুকুশিমা ফিফটি নামে পরিচিত। দেশ ও জাতির কথা বিবেচনা করে তাঁরা চালিয়ে যেতে থাকেন কার্যত আত্মঘাতী এই মিশন। ফুকুশিমা ফিফটির একজন বলেছেন, তাঁরা জানেন, মৃত্যু অবধারিত। কিন্তু এর পরও তাঁরা এটা মেনে নিয়েছেন। তাঁরা একে গ্রহণ করেছেন সামাজিকভাবে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড হিসেবে।
বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যুদ্ধবিগ্রহের মতো সময়ে বিশৃঙ্খলা, লুটপাট অস্বাভাবিক কিছু নয়। একটা সাধারণ ঘটনা। হারিকেন ক্যাটরিনার সময় যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে লুটপাট হয়েছে। কিন্তু জাপানের এবারের সুনামির ধ্বংসযজ্ঞ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আদৌ বিদ্যুৎ না থাকা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুপস্থিতি সত্ত্বেও বলতে গেলে তেমন কিছুই হয়নি। অনেক জায়গায় দেখা গেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে জাপানিরা দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনছে।
অথচ দেখা গেছে, পাশেই পণ্যে ঠাসা এমন দোকান আছে যাতে কোনো কর্মী নেই। দরজাও খোলা। চাইলেই জিনিস নিয়ে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু সেদিকে ফিরেও তাকায়নি লাইনে দাঁড়ানো লোকেরা। সুনামির পর পর কিছু চুরির ঘটনা ঘটেছে বটে।
কিন্তু তা পরিস্থিতির ভয়াবহতার তুলনায় নগণ্য বলেই মনে করেন সবাই।
জাপানিদের মধ্যে দুর্যোগ ও বিপদ-আপদে আতঙ্কিত হওয়ার প্রবণতা খুব কম। এর কারণ ব্যাখ্যা করে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সেন্দাই শহরের পৌর কর্মকর্তা মাচিকো কুনো বললেন, তাঁরা ভাবেন, কেউ আতঙ্কিত হলে দেখাদেখি অন্যরাও ভয় পেয়ে যাবে। এতে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। তাই শত বিপদেও তাঁরা স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেন।
মাচিকো কুনো জানালেন, দুর্যোগের পর সেন্দাই এলাকা থেকে অনেকে নিরাপদ জায়গায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আবার অনেকে সেখানে ছুটে যান সাহায্যের জন্য। এ জন্য সেন্দাইয়ে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এর পরও কাউকে তাড়াহুড়ো করতে দেখা যায়নি। এমনকি একটি গাড়ি হর্নও বাজায়নি বা ওভারটেক করার চেষ্টা করেনি।
টোকিওর টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফ কিংসটন বলেন, বড় বিপর্যয়ে জাপানিদের ভেতরটা কান্নায় মোচড়ালেও তারা মুখে হাসি ধরে রাখে। এমনও শোনা গেছে, কোনো স্বজন মারা যাওয়ার পরও অনেকে জোরে কান্নাকাটি করে না—পাশের বাড়ির লোকজনের অসুবিধা হতে পারে ভেবে।
পারস্পরিক সহযোগিতার ধারণাটিও জাপানিদের মধ্যে প্রবল। এ ব্যাপারে বিশ্লেষক আই ওনোর ভাষ্য হচ্ছে, ‘জাপান বেশ ছোট একটা দেশ। তাই লোকে ভাবে প্রতিবেশীর বিপদাপদ নিজের বিপদেরই মতো।
’
জাপানিদের সহনশীলতা ও কষ্টসহিষ্ণুতা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে একজন পর্যবেক্ষক তাঁদের সংস্কৃতির একটি আপাত ছোট কিন্তু কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় তুলে ধরেছেন। সেটি হলো পরস্পরের কাছ থেকে বিদায়ের সময় জাপানিরা বলে থাকে ‘গানবাত্তে কুদাসাই’, যার কাছাকাছি অর্থ ‘হাল ছেড়ো না’।
দুটি বিশ্বযুদ্ধ সামাল দিয়ে দ্বীপের দেশ জাপান অনেক দিন ধরেই বিশ্বের কয়েকটি শীর্ষ ধনী দেশের একটি। ভূখণ্ড বা প্রাকৃতিক সম্পদের সুবিধা না থাকা সত্ত্বেও মূলত পরিশ্রম, মেধা ও কর্মনৈপুণ্যের বলে উন্নতির স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করেছে তারা। এর পেছনে তাদের অন্যতম মন্ত্র নিশ্চয়ই ‘গানবাত্তে কুদাসাই’।
আবারো যারা আমাদের জন্য , নিজেদের জন্য , বিশ্বের জন্য আত্মত্যাগ করেছে তদের প্রতি মাথানত করলাম ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।