আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশে ‘নারী ধর্ষন’একটি মামূলী অপরাধ, যা শুনতেই একটু লজ্জা লজ্জা লাগে- এই আর কি !



ইসলামের বিধান মতে শুধু নারী ধর্ষনই নয় , স্বেচ্ছায় নারী-পুরুষ উভয়ের সম্মতিতে বিবাহ বহির্ভূত ব্যভিচারে লিপ্ত হলেও শাস্তি মৃত্যুদন্ড । একজন নারী যখন ধর্ষিত হতে থাকে, তখন আল্লাহর আরশ নাকি কেপে ওঠে, অথচ আমাদের নব্বই শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত ধর্মনিরপেক্ষ এই বাংলাদেশে নারী ধর্ষন একটি মামূলী অপরাধ হিসাবে বর্তমানে গন্য । সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো বর্তমানে কিন্ত বাংলাদেশে নারী যুগ চলছে, কারন- বাংলাদেশের সরকার প্রধান নারী, বিরোধীদলীয় প্রধান নারী, স্পীকার নারী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী নারী এবং কিছুদিন পূর্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন নারী-যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা । সুতরাং, নির্ভেজাল এই নারী যুগে নারী ধর্ষনের ঘটনা যদি মামূলী অপরাধ হয়ে যায়, তবে কি এটা আশ্চর্যজনক নয় কি ? বর্তমানে নারী ধর্ষনের ঘটনা খুবই আশংকাজনক ভাবে বেড়ে গিয়েছে । আমরা পত্রিকা ও মিডিয়ার বদৌলতে প্রকৃত ঘটনার একটা সামান্য অংশই মাত্র জেনে থাকি কিন্ত ধর্ষনের শতকরা ৯৯ ভাগ ঘটনাই থেকে যায় অপ্রকাশিত ।

কারন, একটি ধর্ষনের ঘটনা আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে মামূলী অপরাধ হলেও ভূক্তভোগীর জন্য ও ভূক্তভোগীর পরিবারের জন্য এটা একটা আজীবন বয়ে বেড়ানোর কলংকের বোঝা, যা একমাত্র ভূক্তভোগীরা ছাড়া অন্য কেউ সামান্যতমও অনুধাবন করার ক্ষমতা রাখে না । ধর্ষনের শিকার অনেক নারীকে আমরা ধর্ষন পরবর্তি অসহনীয় পরিস্থিতি সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে দেখি অহরহ । আমরা যদি নিজেরা নিজেদের পরিবারের একজন নারী সদস্যের ধর্ষনের ঘটনা মিডিয়ায় প্রচারিত হওয়ার পরের পরিস্থিতি কল্পনা করি, তাহলে নারীধর্ষনের শিকার ভিকটিম ও তার পরিবারের বাস্তব অবস্থা কিছুটা হলেও অনুমান করতে পারব বলে আমি মনে করি । ভেবে দেখুন তো, জাহাংগীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি এতো নামী দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি একজন ছাত্রনেতা নামধারী কুলাংগার কর্তৃক ১০০জন ছাত্রী ধর্ষনের শিকার হয়ে থাকার ঘটনাটি সত্যি হয়ে থাকে(আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়), তবে ঐ প্রতিষ্ঠানটিকে কি আসলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলা চলে ? নাকি ছাত্রী ধর্ষন প্রতিষ্ঠান বলা শ্রেয়তর ? একজন নেতাই যদি এতোগুলি ধর্ষনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে, তবে তার যারা সহযোগী আছে, তারা সবাই মিলে এইরুপ কতগুলি ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে, তা কি আমরা অনুমান করতে পারি ? আমার প্রশ্ন, নারী যুগে কি করে এটা সম্ভব ? বিশ্ববিদ্যালয়ে কি কোন নিয়ন্ত্রন নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ? দেশে কি কোন সরকার নেই ? নেই কি কোন বিচার ব্যবস্থা ? কি শাস্তী হয়েছে সেই সব কুলাংগারদের ? আদৌ কি হয়েছিল তাদের কোন শাস্তী ? ধর্ষনকারীদের যদি কোনরুপ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তী হয়ে থাকে, তবে কি করে আবার তার চেয়েও ভয়াবহ ধর্ষনের ঘটনা সংঘঠিত হলো কুষ্টিয়ার পান্না মাষ্টার কর্তৃক ? এবার স্কুল পড়ুয়া দেড় শতাধিক ছাত্রী ধর্ষনের শিকার হলো একজন পান্না মাষ্টার কর্তৃক ! শুধু ধর্ষনে কি ক্ষান্ত থেকেছে পান্না মাষ্টার ? ধর্ষনের দৃশ্য সে ভিডিওতে ধারন করে রেখেছে এবং সেই ধারনকৃত দৃশ্যগুলি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ছাত্রীদের অভিভাবকদের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার দু‌:সাহসও নাকি দেখিয়েছে এই বিশ্ব লম্পট পান্না মাষ্টার । সত্যি ! আমরা কি কোন সভ্য সমাজে বসবাস করছি, নাকি কোন আদিম বর্বর যুগে বসবাস করছি ! নারীরা কি কারনে ইভটিজিংয়ের শিকার হতে পারে বা কি কারনে ধর্ষনের মতো পরিস্থিতির শিকার হতে পারে, তা ভালোভাবে বুঝানোর উদ্দ্যেশ্যে তেতুলকে উদাহরন হিসাবে ব্যবহার করায়, দেশ ব্যাপী আল্লামা শফী সাহেবের বিরুদ্ধে যে সমালোচনার ঝড় বইয়ে যায়, সেই হিসাবে পান্না মাষ্টার কর্তৃক ১৫০জন ছাত্রী ধর্ষনের ঘটনায় তো দেশে সুনামী বয়ে যাওয়ার কথা ।

কিন্ত প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কোন নারী নেত্রী বা সুশীল সমাজের কোন গুরুত্ব ব্যক্তিবর্গকে, যারা রাতে টেলিভিশন টকশো গুলোতে জাতিকে অনবরত জ্ঞান দান করতে থাকেন, তাদের তো কোনরুপ বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখতে পেলাম না বা পাচ্ছি না । তাহলে কি আমরা ধরে নিব যে, নারী ধর্ষন কোন গুরুতর অপরাধ না ! কিন্ত কেন নারী ধর্ষনের ঘটনা আশংকাজনকভাবে বেড়েই চলেছে ? আছে কি এর কোন সঠিক কারন জানা আমাদের নারীযুগের নারী শাসকগোষ্ঠীর কাছে ? নারী ধর্ষন রোধকল্পে আপনারা কি ব্যবস্থা গ্রহন করছেন বা করেছেন ? নাকি নারীদের ধর্ষিত হওয়া নারী অধিকারের মধ্যে পড়ে, ফলে এই ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন নাই ! তাই আমাদের নারী নেত্রীরা ধর্ষনের ঘটনা শুনে চুপ করে থেকে তা উপভোগের চেষ্টা করে থাকেন, আর ভাবতে থাকেন, আহা ! আমিও যদি মানিক বা পান্না মাষ্টার কর্তৃক ধর্ষিত হতে পারতাম ! প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশে কোন বিচার ব্যবস্থাই কার্যকর নাই । কোন অপরাধেরই এই দেশে সাজা হওয়ার সম্ভাবনা নাই, কিন্ত অপরাধীকে অপরাধী বললে রক্ষা নাই । এইদেশে এখন সবকিছুই পরিচালিত হয় শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় ও খেয়াল-খুশীমত । এখন বলেন, একজন ব্যক্তির পক্ষে কি ১৬কোটি জনগনের দেখভাল করার সুযোগ আছে ? এরচেয়ে ভালো না, সবাই মিলে শুধু ঐ একজন ব্যক্তির দেখভাল করা, উনার ইচ্ছার বাস্তবরুপ দেওয়ার ! যারা নিজ পরিবারের নারী সদস্যদের সম্ভ্রম রক্ষা করে ইজ্জতের সহিত সমাজে বসবাস করতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে আমার কিছু পরামর্শ, যা আমি আমার বাস্তব জীবনে চলার পথ থেকে শিখেছি, তা নিন্মে তুলে ধরছি, যথা: (১)আপনার পরিবারের নারী সদস্যরা কি কারনে ধর্ষন ঝুকিতে পড়তে পারে, তা আপনাকেই খুজে বের করে ঝুকিমুক্ত ভাবে বসবাস করা নিশ্চিত করতে হবে, কারন রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের অতো ছোট বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই ।

(২)কোন বয়সের মেয়েদেরকেই পুরুষ শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়িয়ে মেয়ে শিক্ষকদের নিকট পড়ানোর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে । (৩)প্রাইমারী পার হলেই মেয়েদেরকে মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে । (৪)পরিবারের কোন নারী সদস্য চাকুরী করলে তার কর্মস্থলের পরিবেশ নারীর সম্ভ্রম রক্ষার জন্য উপযোগী কিনা তা দেখে নিশ্চিত হওয়ার পরেই চাকুরী করতে দেওয়া উচিত । (৪) নারীদেরকে অবশ্যই শালীন পোষাক পরিধান করেই বাড়ির বাইরে বের হতে দেওয়া উচিত, যাতে পরপুরুষরা তার প্রতি আকৃষ্ট হতে না পারে । (৫)অষ্টম,নবম,দশম শ্রেনীর ও কলেজ পড়ুয়া মেয়েরা সবচেয়ে বেশী বিপদে পড়ার সম্ভাবনায় থাকে, তাই যতদূর সম্ভব বাসার কাছাকাছি কোন স্কুল বা কলেজে ভর্তি করানো অথবা স্কুল বা কলেজের কাছে বাসা ভাড়া নেওয়ার পরেও সর্বক্ষন নজরদারীর মধ্যে রাখা উচিত ।

তবে,নারীদের সম্ভ্রম রক্ষার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ইসলামী বিধি-বিধান মেনে চলা যা একটি পরিপূর্ন সমাধান । পরিশেষে সরকারের প্রতি আমার বিনীত নিবেদন যে, নারীদের সম্ভ্রম রক্ষায় সরকারের জন্য অবশ্যই করনীয় হলো নারী-পুরুষদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থল গুলি আস্থে আস্থে আলাদা করে নারীদের জন্য একটি নিরাপদ শিক্ষার ও কর্মের জায়গা তৈরী করা যেখানে থাকবে শুধুমাত্র নারীদেরই শিক্ষা নেওয়ার ও দেওয়ার সুযোগ এবং কর্মস্থলের বস ও সহকারীর সবাই হবে শুধুই নারী- কঠিন হলেও কিন্ত অসম্ভব না, শুধু চাই বাস্তবায়নের প্রবল ইচ্ছা আর আন্তরিকতা ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.