আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যোগাযোগে সফলতা

আমারে দিবো না ভুলিতে

প্রতিদিন চারপাশের মানুষের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হয়। যিনি যত ভালোভাবে এটি করতে পারেন, তাঁর কাজ করা তত সহজে হয় এবং এর ওপর নির্ভর করে তিনি সফলতার মুখও দেখতে পারেন। যখন একজন মানুষ কার্যকরভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন, তখন তাঁর সাফল্য ক্রমাগত বাড়তে থাকে। এভাবে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা যখন নিজেদের যোগাযোগ দক্ষতা বাড়িয়ে নেন, তখন সেই প্রতিষ্ঠানটিরও উন্নতি হতে থাকে দ্রুতগতিতে। তাই ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে যোগাযোগের দক্ষতা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

যোগাযোগের মধ্যে রয়েছে কিছু কার্যকর আর কিছু অকার্যকর যোগাযোগ। আমাদের সব সময় কার্যকর যোগাযোগ বাড়াতে হবে। যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য আছেবেশ কিছু কৌশল, যেসবের সঠিক প্রয়োগে সহজে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায় কীভাবে? এর কৌশল কী কী? এ নিয়ে ঢাকায় ২৭ মার্চ ‘কথা ও লেখার মাধ্যমে যোগাযোগ বৃদ্ধির কৌশল’ শীর্ষক একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মশালায়যোগাযোগের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়।

সেই আলোচনার ভিত্তিতেই এ প্রতিবেদন। কর্মশালার আয়োজন করেছিল চাকরির ওয়েব পোর্টাল প্রথম আলো জবস ডট কম। দিনব্যাপী এ কর্মশালাটি পরিচালনা করেন করপোরেট কোচের মুখ্য পরামর্শক যিশু তরফদার। কর্মশালায় তিনি যোগাযোগ বাড়ানোর নানা কৌশলের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, কার্যকরভাবে যোগাযোগ বাড়াতে পারলে ব্যক্তিজীবনে সফল হওয়া যাবে এবং এর পাশাপাশি পেশাজীবনে সফল হতেও সবচেয়ে দরকারি হচ্ছে যোগাযোগ রক্ষা করা।

কার্যকর যোগাযোগ স্থাপনের জন্য প্রথমে যোগাযোগব্যবস্থার ধাপগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। এ ধাপগুলো হলো—  বার্তা প্রেরণকারী।  বার্তা গ্রহণকারী।  বার্তা।  প্রতিষ্ঠান বা নিজের কাজ সম্পর্কেভালোমন্দ মতামত জানা (ফিডব্যাক)।

একজন ব্যক্তি কখনো কখনো বার্তা প্রেরণকারী হিসেবে কাজ করবেন। এ ক্ষেত্রে আরেকজনকে তিনি কী কথা বলবেন; তাঁর কথাটি কোন বার্তা বহন করছে, এ ব্যাপারে একটা ধারণা তৈরি করবে। এর পরের কাজ হলো বার্তা গ্রহণকারী হিসেবে। এখানে একজন ব্যক্তি নিজের ভাষা দিয়ে সেই বার্তাকে নিজের মতো করে গুছিয়ে নেবেন। তৃতীয় ধাপে এসে বার্তা প্রেরণ করবেন, তা হতে পারে কথার মাধ্যমে অথবা লেখার মাধ্যমে।

বার্তা যিনি গ্রহণ করছেন তিনি কী বলছেন, তা নিজের অভিজ্ঞতা ও চেষ্টার মাধ্যমে বুঝতে হবে। বোঝার পর প্রেরককে ধারণা দেবেন যে সে তাঁর বার্তাটি বুঝতে পেরেছে কি না। সবশেষে এর ভালোমন্দ বিচার করবেন। কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করতে চারটি উল্লেখযোগ্য বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। এই চারটি বিষয় হলো—  কথোপকথন।

 লেখা।  শ্রবণ করা।  পাঠ করা। শোনার মাধ্যমে যোগাযোগ কার্যকরভাবে যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে ওপরের চারটি বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে শোনাকে। যখন একজন কোনো বিষয় নিয়ে বলবেন, তখন তা অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।

যোগাযোগ তৈরির ক্ষেত্রে শোনার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। যিনি যত ভালো শ্রোতা তিনি তত ভালোভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হন। মনোযোগ দিয়ে শোনার জন্য প্রথমে অপরপক্ষকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে, তার পর তা নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। বক্তার কথা শুনে সে অনুযায়ী জবাব দিতে হবে। শারীরিক ভাষার মাধ্যমে যোগাযোগ যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে কথা না বলে শুধু শারীরিক ভাষা (বডি ল্যাঙ্গুয়েজ) আদান-প্রদান করার মাধ্যমেও কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করা যায়।

এক জরিপে দেখা গেছে, পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে শব্দের গুরুত্ব সাত ভাগ, কণ্ঠ দ্বারা তৈরি শব্দের গুরুত্ব ৩৮ শতাংশ আর দেহভঙ্গির গুরুত্ব ৫৫ শতাংশ। তাই বোঝাই যাচ্ছে যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে শারীরিক ভাষার গুরুত্ব অনেক বেশি। কথা বলার সময় শারীরিক অঙ্গভঙ্গি যাতে ইতিবাচক হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কথার মধ্যে বিরক্তিভাব প্রকাশ করা যাবে না। মাঝেমধ্যে স্মিত হেসে কথার জবাব দিতে হবে।

অন্যমনস্ক হয়ে কথা বলা যাবে না বা মাথা চুলকানো যাবে না। কোন সংস্কৃতিতে কোন অঙ্গভঙ্গি প্রযোজ্য এর একটা ধারণা থাকতে হবে। যেমন, পাশ্চাত্যের দেশে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো ইতিবাচক হলেও অন্য অনেক দেশেই এটি নেতিবাচক আচরণ হিসেবে গণ্য হয়। এ রকম দিকগুলো খেয়াল রাখতে হবে। পারস্পরিক কথোপকথন কার্যকর যোগাযোগ তৈরির জন্য একজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় অবশ্যই আচরণে ভদ্রতা ও আগ্রহ প্রকাশ করতে হবে।

যা বলা হচ্ছে, তা স্পষ্ট হচ্ছে কি না অথবা যুক্তিযুক্ত কি না তা খেয়াল করতে হবে। যার সঙ্গে কথোপকথন হচ্ছে, তাঁকে বোঝাতে হবে কথা বলার উদ্দেশ্য কী। তাঁর কথাকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। এমন আচরণ প্রকাশ করতে হবে যে এ সময় আপনার কাছে তিনিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কথার মাঝে যথাসম্ভব খানিকটা হেসে জবাব দেওয়া যেতে পারে।

একইভাবে টেলিফোনে কথা বলার সময়ও এসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। অনেকেই মনে করেন, টেলিফোনে কথা বলার সময় তো আর শরীর দেখা যায় না! কিন্তু সঠিকভাবে কথা বলতে না পারলে কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন আসতে পারে। তাই টেলিফোনে কথা বলতে হবে সচেতনতার সঙ্গে। লেখালেখিতে যোগাযোগ কথা বলার পাশাপাশি লেখালেখির মাধ্যমেও কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। এর জন্য চারটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়।

 লেখার আগের ধাপ  খসড়া রচনা  পুনরায় রচনা  সম্পাদনা  লেখার পরের ধাপ। লেখার প্রথম ধাপে লেখার বিষয় নির্ধারণ করতে হবে। এর উদ্দেশ্য কী হবে, এরপর কী কী তথ্য সংযোজন করতে হবে তা নির্ধারণ করে নিতে হবে। এভাবে পরের ধাপে যেতে হবে। লেখাটি কোন আঙ্গিকে হবে, কীভাবে লিখতে হবে, কী কী তথ্য থাকতে পারে—তা যাচাই-বাছাই করে একটি খসড়া রচনা তৈরি করতে হবে।

খসড়া তৈরি হলে স্পষ্ট করে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে লেখাটি তৈরি করা যাবে। এখানেই শেষ নয়, এরপর লেখাটি যথাযথ হয়েছে কি না, এর জন্য লেখাটি বারবার পড়তে হবে। এর মাধ্যমে সঠিক যোগাযোগ স্থাপিত হবে কি না, বানান ঠিক আছে কি না, ব্যাকরণ ঠিক হলো কি না, কোনো তথ্য বাদ পড়ল কি না—এসব বিষয় সম্পাদনা করতে হবে। এরপর লেখাটি কোনো স্থানে পাঠানোর আগে তা প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মনঃপূত হয়েছে কি না তা যাচাই করে নিতে হবে। লেখাটি চূড়ান্তভাবে তৈরির পর নির্দিষ্ট স্থানে পাঠাতে হবে।

যোগাযোগ স্থাপনের প্রতিবন্ধকতা সঠিকভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই কিছু বিষয় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। এসব বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হলো—  ভাষাগত জটিলতা বা দুর্বোধ্যতা।  ব্যক্তিত্বের পার্থক্য।  শব্দদূষণ।  দ্বৈত শব্দের ব্যবহার।

 উপযুক্ত পরিবেশের অভাব।  সময়গত জটিলতা।  মন ও মানসিকতা। কার্যকর যোগাযোগ স্থাপনের সময় ওপরের বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে বলেও আলোচনা করা হয় কর্মশালায়। বলা হয়, কার্যকর যোগাযোগ সহজেই সাফল্য আনার অন্যতম মাধ্যম হতে পারে চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.