আমি বড়ই ভীতু মানুষ ।
আকাশটা আজ সারাদিনই মেঘে ঢাকা। হালকা ঝিরঝিরে বৃষ্টি, আসছে যাচ্ছে। ঘরে দেয়ালের দিকে একনাগাড়ে তাকিয়ে সময় পার করে দেয়ার কৌশলটা এ কয়দিনে বেশ রপ্ত করে ফেলেছি। ব্যাপারটা তেমন কঠিন কিছু নয়, অভ্যাস।
দিনের নির্দিষ্ট সময়ে খাবারের ডাক পড়লে, আমার এই একান্ত আশ্রয় থেকে রাজিবের ঘরে চলে যাই। ব্যবধান মাত্র একটি দরজা। এরপর দুজন মিলে ওর ঘর থেকে কাগুজে বর বউ সেজে বের হয়ে চলে যাই দোতালার ডাইনিং রুমে যৌথভাবে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে আহার সম্পন্ন করতে। রোজদিন এক রুটিন। সকাল দুপুর সন্ধ্যা দিনের এই তিনটি সময় কিছুটা হলেও উনাদের জন্য তুলে রাখতে হয় আর তো আছেই নিজের শরীর নামক জড় পদার্থটাকে বাঁচিয়ে রাখার এক আদিম প্রয়াস।
মাঝে মধ্যে ব্যতিক্রম হয় যখন বাসায় পার্টি থাকে বা পার্টিতে যেতে হয়। আভিজাত্যের মুখোশ পড়া অন্ত:স্বারশুন্য কিছু মানুষের প্রাথমিক কিছু কুশল বিনিময়ের পরই শুরু হয়ে যায় নিজ জশ আর সম্পত্তি জাহিরের হিড়িক। বাতাসে বিলেতি মদের গন্ধটাও অভ্যাসে এসে ঠেকেছে। আবিষ্কার করি এই সমাজের এক নন্দিত পৃথিবী। এ নৈনন্দিনকার ব্যাপার নয় দেখে রক্ষে।
নিশ্বাস নেয়ার সময় পাওয়া যায়। বিয়ের মাস ঘুরতে চলল, হাতে গোনা দিন আষ্টেকের মত এসব আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়েছে আমাকে। আর এতেই মনে হয় নাট্যশিল্পে দক্ষ আভিনয়গুণের পরিচয় পেয়ে শ্বশুরবাড়ীতে আমার গ্রহণযোগ্যতা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। এই নতুন সমাজে আমার মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা নিয়ে যে উনাদের মনে সংশয় ছিল তা সম্ভবত বহুলাংশে কেটে গেছে। কারণ বিয়ের পরবর্তী কিছুটা সময় অনুভব করেছি আমার উপস্থিতি উনাদের মাঝে এক চাপা অস্বস্তির উদ্রেক করত।
কথা বলার সাচ্ছন্দতায় ছন্দপতন ঘটতো। এখন সেরকম আর হয়না, পরিবারের আর আটদশজন সদস্যর মতই আমার প্রতি তাদের নমনীয় দৃষ্টি, সভাবসুলভ স্বাভাবিক কথোপকথন।
রাজিব আর আমার ঘরের মাঝের দরজাটা সব সময় ছিটকিনি লাগিয়ে বন্ধ রাখি। সামান্য এই ধাতব দণ্ডটা আমার নিজস্ব পৃথিবীর অনাধিকার প্রবেশের একমাত্র রক্ষা কবজ। ঘরে ঢুকার সাথে সাথে সেটা লাগিয়ে নিজের সুপ্ত সত্তাকে ফিরে পাওয়ার আকস্মিকতায় দেয়ালে হেলান দিয়ে কিছুক্ষণ বুক ভরে জোরে জোরে শ্বাস নেই।
ঘরে ফিরে প্রতিবার এই একই ঘটনা। বাইরের বাতাসবিহীন এই বিশাল মেকি জগতের মাঝে এই ঘরটি আমার ছোট্ট এক টুকরো বাতাস ভরা নীড়। তবে কোনো কোনো রাত কাটে অবর্ণনীয় কিছু মিশ্র অনুভুতির মাঝ দিয়ে। যে রাতে হালকা কিছু শব্দ ভেসে আসে রাজিবের ঘর থেকে, বুঝি সুমিন আজ আছে তার সাথে। ছিটকিনির অনুশাসন শব্দের অনুপ্রবেশ বন্ধ রাখতে পারে না।
পৃথিবীর আদিমতম চাহিদার তাগিদে সৃষ্ট অর্থহীন এ শব্দগুলো সৃষ্টির প্রাচীনতম ভাষা, দুটো মানুষের একান্ত গোপনীয়। এখানে আমি তৃতীয় পক্ষ। ঐ রাতগুলো কেন জানি আমার নির্ঘুম কাটে। ঝুম বৃষ্টি নামলে আশীর্বাদ নয়তো রাতভর কানে বালিশ চেপে অপেক্ষার প্রহর গোনা। পরেরদিন রাজিবের চোখের দিকে সরাসরি তাকাতে পারিনা।
অস্বস্তি, বড় রকমের এক অস্বস্তি পেয়ে বসে আমাকে। রাজিবের কোনো ভাবান্তর নেই। মাঝে মাঝে শুধু বলে, “ট্রাই টু অ্যাকসেপ্ট ইট। বি নরমাল” প্রথম কয়েকবার শুনে গেছি কিছু বলিনি। কিন্তু দিনের পর দিন রাজিবের এই কথাটার পুনরাবৃত্তি যখন বড় একঘেয়ে শোনালো তখন না পেরে একদিন বলে বসলাম, “যেখানে স্বাভাবিকতা নেই সেখানে স্বাভাবিক হতে বল না।
প্রতিদিন আমার সাধ্যমত অভিনয় করে চলছি, এরচেয়ে বেশী কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব না”
রাজিবের মুখে বিদ্রুপের হাসি ফুটে উঠলো, “কোথায় স্বাভাবিকতা নেই? তুমি আমার হোমোসেক্সুয়ালিটির কথা বলছো?” বুঝলাম এই বিষয়টা ছাড়াও আমার সার্বিক পরিস্থিতিটাও যে কতটুকু অস্বাভাবিক সেটা নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। বললাম, “আমার পুরো ব্যাপারটার কথা বলছি”
“ নো নো নো, যেদিন সুমিন নাইট স্পেন্ড করে ওনলি সেদিন ইউ সিম স্ট্রেঞ্জ। লেটস কাট দা ক্র্যাপ এন্ড ক্লিয়ার দা এয়ার!”
প্রচন্ড বিরক্ত লাগলো। লোকটা আর কি চায় আমার কাছ থেকে! একটু রেগে বললাম, “রাজিব বিয়ের আগে তোমার দেয়া শর্তের কোনো নড়চড় হয়নি আমার পক্ষ থেকে। হবেও না কোনদিন।
আমার মনের উপর হস্তক্ষেপ কর না। সেটা তোমার এখতিয়ার বহির্ভূত। ওই এক টুকরো কাগজে এক কলমের আচড়ে তোমাদের হাতের পুতুল আমি। কিন্তু মনটা আমার একান্তই নিজের, সেটার উপর তোমার কোনো অধিকার নেই। আমার চিন্তাধারা জোর করে পাল্টানোর চেষ্টা কর না”
“জোশ বলেছ” বলে জোরে জোরে হেসে উঠলো।
“তুমি তাহলে কথা বলতে পারো দেখি!”
আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকলাম। কি বলতে চাচ্ছে লোকটা।
“তোমার ওপিনিয়নটা জাস্ট জানতে চাচ্ছি। অ্যাবাউট হোমোসেক্সুয়ালিটি আই মিন”
সত্যিকথা বলতে এই বিষয়টা নিয়ে কোনদিন চিন্তা করিনি। স্কুলে ক্লাস নাইনে থাকতে মাঝে মাঝেই বেশ কয়জন মিলে সে বয়সের সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় অর্থাৎ নারী পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে বেশ বড় বড় আলোচনার ঝড় বসাতাম।
সমকামিতার বিষয়টা তখন থেকেই জানি তবে বেশি আমল দেইনি ব্যাপারটায়। প্রথমবারের মতো খুব অবাক বিস্ময় নিয়ে শুনেছিলাম শুধু, কিন্তু ঐটুকুই। এত অস্বাভাবিক ঠেকেছিল ব্যাপারটা সে সময় যে ঐ সম্মন্ধে বাড়তি কিছু আর চিন্তা করতে ইচ্ছা হয়নি। সেদিন ঘুনাক্ষরেও ভাবিনি যে একদিন এর মুখোমুখি হতে হবে। রাজিবকে মনে হল একটু অধৈর্য হয়ে উঠলো।
যেন আমার উত্তরটার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আমি কি বলব ভেবে পেলাম না। বিষয়টা নিয়ে একটুও ভাবতে ইচ্ছা করছিল না।
শেষে বললাম, “আমি এ নিয়ে ভাবিনি কখনো”
এধরনের কোনো উত্তর বোধহয় আশা করছিল না ও’। যে উদ্দাম নিয়ে প্রশ্নটা আমাকে করেছিলো মনে হল তাতে কিছুটা ভাটা পড়েছে।
একটু হতাশ কন্ঠেই বলল, “অলরাইট দেন থিঙ্ক অ্যাবাউট ইট অ্যান্ড লেট মি নো”
এ যাত্রায় হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। নিজের ঘরে যেতে যেতে স্বস্তির নিঃশ্বাসটা বোধহয় একটু জোরেই বেরিয়ে পড়েছিল। রাজিব পিছন থেকে আবার ডাকল, “সোহানা”। ঘরে ঢুকতে গিয়েও দরজার চৌকাঠটা ধরে বিরক্তিভরা ক্লান্তি নিয়ে পিছন ফিরে তাকালাম। “জাস্ট রিমেম্বার আমরাও মানুষ” কথাটা বলেই মনে হল কোন এক দূরে ফেলে আসা স্মৃতির ঘোরে হারিয়ে গেল।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম রাজিবের দিকে। করুণা নয়, নতুন এক চৈতন্য আমাকে আছন্ন করল। আশ্চর্য! এক এক জন মানুষ জন্ম অবধি এক এক ইতিহাস সৃষ্টি করে চলেছে। যে ইতিহাসের আগুনে পুরে সে আজকের এই মানুষ। সে ইতিহাসের সহচর না হয়ে কিভাবে আমি একবাক্যে নিমেষের মধ্যে তার মাথার উপর কোনো দন্ডাদেশ আরোপ করতে পারি।
ঘরে ঢুকে ছিটকিনিটা লাগিয়ে দিলাম। অন্যদিনের মতো অত হাপালাম না। হয়তো এতদিন হাঁপ ধরেছিল বোধ বুদ্ধিহীন কলের পুতুলের মত শুধু হাত পা নাড়িয়ে হুকুম তামিল করে, সুস্থ বুদ্ধিতে চিন্তা শক্তিকে কাজে লাগাতে না পেরে। চিন্তার এক অদ্ভুত খোরাক পেলাম আজ। পুরো পৃথিবীর চোখে কিছু ভিন্নধর্মী মানুষ ও তাদের নিষিদ্ধ মানুষিকতার জগতের আঙিনায় বিচরণ করতে লাগলো আমার ভাবনাগুলো।
একদিন খাওয়ার টেবিলে আমার শ্বশুরমশাই জিজ্ঞাসা করলেন, “বউমা, তুমি পড়াশুনা নিয়ে কি ভাবছো?” ততদিনে বেশিরভাগ ভর্তি পরীক্ষাগুলো শেষ। আর পরীক্ষা দিয়েও লাভ হত না, কিছুই তো পড়তে পারিনি। পড়েই বা কি হবে, জীবনের চাকাই যখন অচল তখন তেল দিয়ে আর লাভ কি, চাকা তো আর ঘুরবে না, শুধু না হয় একটু বেশি চকচক করবে।
আমি খেতে খেতে বললাম, “আমি তো কোথাও অ্যাডমিশন টেস্ট দেইনি বাবা, এ বছরের জন্য সময়ও শেষ, পরের বছর আবার চেষ্টা করব” যতগুণ নিরুৎসাহিত হয়ে কথাটা বললাম উনি তারচেয়ে দশগুণ বেশি উৎসাহিত হয়ে বললেন, “কোনো চিন্তা কর না। সেদিন আকবরের সাথে কথা হচ্ছিল।
ওর ছেলেকে প্রাইভেট মেডিকালে ভর্তি করাবে। অন্য কোথাও চান্স পায়নি। তুমিও ভর্তি হও” এই বোমাটা পড়ার আভাসই কয়েকদিন হল পাচ্ছিলাম। তাই ঠিক বিনা মেঘে বজ্রপাত বলা চলে না। এর জন্য বোমা শব্দটাই উপযুক্ত।
বোমা এ কারনে বলছি যে ডাক্তারি লাইনটা আমার একেবারেই অপছন্দ। আপু ঢাকা মেডিকালে ভর্তি হয়েই কথা নেই বার্তা নেই একদিন মরা মানুষের এক গাদা হাড্ডি এনে বাসায় উপস্থিত। হাড্ডিগুলো নিয়ে রাতদিন বিড়বিড় করে পড়তো। মনে হত যেন ডাকিনীবিদ্যা চর্চা করছে। দেখলেই গা’টা কেমন শিউরে উঠতো।
তা ছাড়া মরা মানুষ কাটা, অসম্ভব! এসব আমার দ্বারা হবে না। কিছুতেই মনটাকে মানাতে পারলাম না। অবশ্য কয়দিন থেকে আমার শ্বশুরমশাই কিছু কিছু কথার মাধ্যমে আভাসে ইঙ্গিতে উনার মনের ইচ্ছাটা জানান দিচ্ছিলেন, যেমন “তোমার বোন তো ডাক্তার। বাহ বাহ খুব ভাল প্রফেশন” “আমাদের ফ্যামিলিতে একজন ডাক্তার দরকার” “মেয়েরা ডাক্তারি প্রফেশনে খুব শাইন করে” “শাফিক সাহেবের তিন বউই ডাক্তার” কিন্তু মনটাকে প্রস্তুত করার সময় পেয়েও কোনো লাভ হয়নি। মেডিকাল লাইনটা যে একেবারেই আমার ধাতে সইবে না তা আমি বেশ বুঝতে পেরেছি, শুধু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলাম না।
চুপচাপ খাওয়া শেষ করে উঠার অনুমতি নিয়ে চারতলায় আমার ঘরে চলে এলাম। রাত নয়টা বাজে। রাজিব আসতে আরো দেরী, ইদানিং দু-তিনদিন হল প্রায় রাত একটা বেজে যায়। কদিন হল পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দিয়ে পুরো ব্যবসাটা বাবা ওর হাতে তুলে দিয়েছেন। আমাকে বিয়ে করার নাকি এটা আরেকটা শর্ত ছিল।
সবার জীবন বেশ প্ল্যান মাফিকই এগিয়ে চলেছে, শুধু আমারটা বাদে।
ভাইভা বোর্ডে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, “তোমার ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছা কেন?”
বললাম, “আমার শ্বশুরসাহেবের ইচ্ছা, আমার ইচ্ছা নেই”
সবাই আমার কথাটা শুনে একটু নড়েচড়ে বসলো। একজন হেসে বললেন, “এখন পর্যন্ত সবাই বলে গেল মানুষের সেবা করার জন্য সব পড়তে এসেছে। আর তুমি বললে এই কথা?” একজন ম্যাডামকে দেখে মনে হল বেশ বিরক্ত হয়েছেন। উনি উনার বিরক্তি প্রকাশে কোনো কার্পণ্য না করে বললেন, “তুমি কি ভেবেছ এ কথা বলার পর আমরা আর তোমাকে ভর্তি করাতে পারব?” ভাবলাম এই বুঝি মেঘ কেটে সূর্যের মুখ দেখবো এখনি।
কিন্তু বিধি বাম, যে ভদ্রলোক প্রথমে হেসে হেসে কথা বলছিলেন উনি ম্যাডামের কানের কাছে এসে কি যেন বললেন। ম্যাডাম আমার দিকে তাকিয়ে খুব যেন অনেক দিনের পরিচিত, এমনভাবে বললেন, “আচ্ছা আচ্ছা রাব্বিসাহেব কেমন আছেন? উনাকে আমার সালাম দিও। আর পরশুদিন এসে ভর্তি হয়ে যেও। ঠিক আছে?” বুঝলাম মেঘ যে শুধু কাটেনি তা নয়, বরং এই পাচটা বছর অবিরাম বর্ষণের মাঝেই পার করে দিতে হবে।
ভর্তির কিছুদিনের মধ্যেই ক্লাস শুরু হয়ে গেল।
প্রথম দিন ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে সবার মধ্যে বেশ টান টান উত্তেজনা। বিরাট হলঘরের সামনের কয়েক সারি বেঞ্চে বসা কিছু ছেলে মেয়ের মধ্যে কেমন যেন একটা দিক বিজয়ী টাইপ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মনোভাব। স্যারদের উৎসাহ দানকারী বক্তৃতাগুলো সঞ্জীবনী সুধার মত গিলছে। কিছু ছেলে আবার তাদের মন পছন্দ মেয়ে খুজতে ব্যস্ত। তাদের ঠিকরে বের হয়ে আসা চোখগুলো শকুনের মত পুরো হলঘর চষে বেরাচ্ছে।
আর সে জিনিস অ্যান্টেনায় ধরা পড়ায় সুন্দরীগুলো এভারেস্টসম উচ্চতায় নাকগুলো খাড়া করে বসে আছে। আমার পাশে বসা, ঠিক বসা বলা যায় না। আধ শোয়া ছেলেটা সেই যে প্রথম থেকে ঘুমাচ্ছে, এখন গভীর নিদ্রায় মগ্ন, হা করা মুখ দিয়ে লালার স্রোতধারায় বেঞ্চের উপর ছোট খাট একটা লালা পুকুর তৈরি হয়ে গেছে। এদের মাঝে কিছু সাধারণ গোছের ছেলে মেয়েও আছে, আমারই মতন। তবুও কোথায় যেন একটা সূক্ষ পার্থক্য।
প্রথম দিনটা পড়াহীন দৈনতায় ভালয় ভালয় কেটে গেল।
পরের দিন থেকে আদা জল খাওয়া পার্টি, টু ডু ওর ডাই মনোভাব নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে ঝাপিয়ে পড়লো। স্যার ম্যাডামদের পড়ানোর আগেই পড়া বলে দেয়ার প্রতিযোগিতায় একজন আরেকজনকে টেক্কা দিতে মশগুল। আমার মত পিছনের সারির মানুষ এদের দৌরাত্ম্য পড়ার কিছু বুঝতেই পারলাম না। তার উপর তো আছে ইংলিশ ভাষায় ভয়ংকর সব নামধাম।
পড়াশোনার এই জগাখিচুড়ী অবস্থায় ডাক্তারির মত শক্ত বিষয় আমার আয়ত্বে আনা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়লো। ভয় আর ঘেন্নাঘাটি তো সব মাথাই উঠেছে, বিষয়টাই বোধগম্য হচ্ছে না। বড় অসহায় হয়ে আপুকে ফোন করে ব্যাপারটা খুলে বললাম। আপু কয়েকদিন পর আমার জন্য একজন টিউটর পাঠালেন।
আমার ঘরের টেবিল চেয়ারে সুবোধ বালিকার মত রাসেল ভাইয়ের কাছে পড়তে শুরু করলাম।
ভাইয়া থার্ড ইয়ারের ছাত্র অথচ অসাধারন বুঝানোর ক্ষমতা। এত জটিল বিষয় পানির মত সহজ করে বুঝিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু মাঝে মাঝে যখন বইয়ের দিকে মনোযোগ সহকারে কিছু বুঝার চেষ্টা করতাম, টের পেতাম উনার চোখদুটো একনাগাড়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনের মধ্যে অস্বস্তিকর সন্দেহটা এই ভেবে ঝেড়ে ফেলতাম যে, একজন বিবাহিত মেয়ের প্রতি উনার নিশ্চয় ঐধরনের কোনো অনুভুতির জন্ম নিবে না। কিন্তু ঈশ্বর প্রদত্ত মেয়েদের এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়টি খুবই প্রখর।
দিন দিন অস্বস্তিটা বেড়েই চলল।
শেষে একদিন বললেন, “জানো সোহানা আমি অন্ধ হলেও তোমার চেহারায় আঙুল বুলিয়ে বলে দিতে পারতাম যে এটা তুমি” কথাটা শুনে নির্ঘাৎ আমার চোখ মুখ শুকিয়ে পাংশু বর্ণ ধারন করেছিল। কারন উনি হেসে বললেন, “ভয় পাওয়ার কোনো কারন নাই। সাগরের কাছে তোমার এত ছবি দেখেছি যে তোমার মুখটা আমার মুখস্থ হয়ে গেছে”
.................চলবে
১ম পর্ব ২য় পর্ব ৩য় পর্ব ৪র্থ পর্ব ৫ম পর্ব ৬ষ্ঠ পর্ব ৭ম পর্ব ৮ম পর্ব ৯ম পর্ব ১০ম পর্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।