হোমো'র হোমে স্বাগত। পা মুইছা ঢুকবেন কইলাম। নইলে কিন্তু ডান্ডা দিয়া গুতা মারুম। ;)
১।
"বাজান, কাইলকা ঈদ।
তুমি না কইছিলা এই ঈদে নতুন জামা কিন্যা দিবা। দিবা না?" মতিনের আকুতি ভরা কন্ঠে জিজ্ঞেসা।
"হ বাজান। কিন্যা দিমু। " ছেলেকে আশ্বস্ত করে বেরিয়ে পড়ল জয়নাল।
রাত ১১টা। সারা দিন কঠোর পরিশ্রম করেও মাত্র শ'দুয়েক টাকা পেল জয়নাল। মালিক বলেছিল আজকে বেশী করে কাজ করলে টাকা বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু কাজ শেষে তাকে খুঁজেই পাওয়া গেল না। বউ বাচ্চাকে নিয়ে নাকি মার্কেটিংয়ে গেছেন।
কি আর করা। ঐ টাকা দিয়ে বাজারে গিয়ে ছেলের জন্য পছন্দ করে লাল রঙের একটা শার্ট কিনল। মতিনের আবার লাল জামার খুব শখ।
"বাজান লও। তোমার জন্যি লাল জামা আনছি।
কাইল গায়ে দিও। " ঘরে ঢুকেই মতিনকে শার্টটা দিল জয়নাল। মতিন এত রাত পর্যন্ত জেগে ছিল বাবার অপেক্ষায়। নতুন শার্ট পেয়ে খুশিতে বাবাকে জড়িয়ে ধরল মতিন। ছেলের খুশি দেখে মতিনের মায়েরও মনটা ভরে গেল।
কিছুক্ষন বাদেই মতিনের মা জয়নালের দিকে তাকিয়ে একটু ইতিস্ততঃ করতে লাগল।
"আতপ চাইল আনো নাই?" শঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞেস করল মতিনের মা। "কাইল খাইবা কি?"
"পোলার লাইগা একটা ঈদে নাহয় ডাইল ভাতই খাইলাম। দেখ পোলাডা কত খুশি হইছে। " স্নেহার্দ্র কন্ঠে বলল জয়নাল।
ছেলের আনন্দ দেখে মতিনের মার মলিন মুখে আবারো হাসি ফুটে উঠল।
২।
ফজল মিয়া আস্তে করে নাজুক দরজাটা খুলে ভিতরে ঢুকল। দূরের এক মসজিদ থেকে ফজরের আযানের সুর শোনা যাচ্ছে। ফজল মিয়া চেয়ে দেখল তার ছেলেটা মাদুর পেতে খালি গায়ে ঘুমিয়ে আছে।
দুগালে শুকিয়ে যাওয়া অশ্রুজলের দাগ। অনেকদিন ধরে একটা নতুন জামার জন্য বায়না করছিল ছেলেটা। বোধহয় ঈদের নতুন জামার জন্য কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। ফজল আস্তে করে নতুন শার্টটা ছেলের মাথার কাছে রেখে আবার বাইরে বেরিয়ে গেল।
৩।
মতিনের সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম ভেঙ্গেই খুশি খুশি লাগছে তার। গত কয়েক ঈদে সে নামাজ পড়তে পারেনি নতুন জামা না থাকায়। সবাই নতুম জামা কাপড় পড়ে আসত কিন্তু সে পড়তে পারত না। খুবি লজ্জা লাগত।
তবে এবারের কথা ভিন্ন। বাবাকে ধাক্কা দিয়ে বলল,"বাজান উঠো। নামাজ পড়বা না? নামাজ শুরু হইয়া যাইব তো। " নতুন জামাটা নেবার জন্য বালিশের পাশে তাকাল মতিন। ঐখানে জামাটা নেই।
মা অন্য কোনখানে রেখেছে ভেবে পুরো ঘর খুঁজল। হঠাৎ বুকটা ধ্বক করে উঠল তার। দেখল বেড়ার দরজাটা একপাশে বড় করে কাটা। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে বলল, "বাজান! চোরে আমার লাল জামা নিয়া গেছে!"
(এটা শুধুমাত্র একটা গল্প হলেও এরকম হাজারো মতিন আছে শহরজুড়ে। কারো কারো ঈদ পার হয়ে আরেক ঈদ চলে আসে তবুও নতুন জামার বায়না পূরন করতে পারে না অসহায় দিনমজুর বাবা-মা।
কেউ কেউ ঈদের আগের রাতটা দু'গালে অশ্রুজলের ছাপ ফেলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নতুন জামার স্বপ্ন দেখে। আপনাদের কি সেই মুন্নী আর মানসুরের কথা মনে আছে? এইতো ২০১২রই তো ঘটনা। ঈদের জামা কিনে দিতে না পেরে ১০ বছরের মেয়ে মুন্নী আর ৫ বছরের ছেলে মানসুরকে নদীতে ফেলে দিয়েছিলেন তাদের হতদরিদ্র বাবা। পরে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করছিলেন।
কত খরচই না আমরা করি নিজেদের জন্য।
আমরা কি পারি না এরকম দু'একটা শিশুর মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে? অনেকজনকে না পারি, সামর্থ্য অনুযায়ী দু'একজন শিশুর ঈদকে আনন্দময় করে তুলতে কি পারি না আমরা প্রত্যেকে? একটা ঈদে একটু বাড়তি খরচ নাহয় নাইবা করলাম। এভাবে আমরা সবাই যদি আমাদের সামর্থ্য অনুসারে চেষ্টা করি তাহলে শহরের অনেক শিশুর নিরানন্দের ঈদটা একেবারেই বদলে যেতে পারে। তখন দেখবেন নিজের জন্য হাজার টাকায় কেনা জামা নয়, ঐ পথশিশুর জন্য শ'টাকায় কেনা ছোট্ট একটা লাল শার্টই আপনাকে দিতে পারে ঈদের আসল খুশি। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।