রানিং এন্ড রানিং...
দেখতে দেখতে ৩ দিন কেটে গেল মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটি ডরমেটরি তে। কনফারেন্স শেষ হয়ে গেছে, এখন একদম পুরোপুরি ফ্রি আমরা। হেনডন থেকে আমরা আমাদের সেন্ট্রাল লন্ডনের হোটেলে চলে গেলাম, কোরিয়া থেকেই এইটা অনলাইনে বুক করা ছিল। হোটেলের নামটা এখনো মনে আছে আমার “হোটেল নাইটেংগল”। ১০০ বছরের পুরোনো হবে বিল্ডিংটা, সরু আর ঘুরানো সিড়ি বেয়ে উঠার সময় কেমন যেন প্যাচ প্যাচ শব্দ হয়।
রুমটা আমাদের ভালই ছিল, দুইটা কিং সাইজ বেড, আটাচড টইলেট, টিভি, সোফা, দুইটা বড় জানালা ইত্যাদি। ওইদিন আর অন্য দূরে কোথাও না যেয়ে আসে পাশে ঘুরাফেরা করে সময় কাটালাম আর পিকাডলি পার্কে বসে ব্রিটিশদের শরীর চর্চা দেখলাম, তারপর রাতে এসে লম্বা একটা ঘুম দিলাম।
যাইহোক, পরের দিন সকালে একটু আগে থাকতেই উঠি, কারন হোটেলেই সকালের নাস্তা ইনক্লুডেড ছিল। সকালে ৯ টার মধ্যে তা সারতে হবে, নচেত পাওয়া যাবে না। দুধ, সিদ্ধ ডিম, ফলের জুস, ২/৩ টা টোস্ট ব্রেড (টোস্ট নিজেই করতে হয়) জ্যাম দিয়ে খেয়ে ফেললাম।
ফ্রি পাইলে বাংগালীর একটু বেশি খেতে ইচ্ছা করে মনে হয়, তাই একটার বদলে ২ টা ডিম, আর যা যা ছিল তা প্রায় সবগুলোয় ডাবল ডাবল খেয়ে সাবাড় করে ফেললাম। একেবারে ভরপেট খেয়ে রুমে গেলাম সারাদিনের জন্য রেডি হয়ে বের হতে। আজকে প্লান আমরা প্রথমেই মাদাম তুসোতে যাবো। এর নাম এত শুনেছি, তাই যেতেই হবে এমন একটা প্লান ছিল। তারপর যাবো লন্ডন ব্রিজ, লন্ডন টাওয়ার, আবার টেমস নদী।
লন্ডন শহর এমন যে টেমস নদী ঘিরেই যেন সবকিছু। যেইদিকেই যাই টেমস নদী।
আমাদের লন্ডন ঘোরার রাফ প্লানঃ
মাডাম তুসোর এডমিশন ফি ছিল অনেক বেশি, কিন্তু ভিতরে যেয়ে আমি সত্যি হতাশ হয়। যতটা আশা ছিল, ঠিক ততটাই আশাহত হলাম ভিতরে প্রবেশ করে। বিভিন্ন বিখ্যাত সেলিব্রিটি দের প্রমান সাইজ রেপ্লিকা মুর্তি আছে।
সাবেক বর্তমান মুভি স্টার থেকে শুরু করে খেলোয়াড়, রাজনীতিবিদ, বিখ্যাত সিনেমা পরিচালক কেউ বাদ নাই। আমাদের উপমহাদেশের বলিউড স্টারের কিছু রেপ্লিকা দেখলাম। সেটা ২০০৮ সালের কথা, আমি জানিনা এর মধ্যে আরো কিছু যোগ হয়েছে কিনা। শেষে একটা রাইডে চড়ে লন্ডন শহরের ইতিহাস নিয়ে কিছু রিয়েল টাইম ডেমো দেখলাম, এইটা একটু ভাল লেগেছিল। তারপর, এইদিক ওইদিক একটু ঘুরা ঘুরি করে ঘন্টা ২ পরে বের হয়ে আসলাম।
তবে এইটা ঘুরে আমার কোরিয়ান বন্ধু কিন্তু বেশ ভালই মজা পেয়েছিল। তারপর বের হয়ে ৪ পাউন্ড দিয়ে একটা স্যান্ডউইচ খেয়ে আমরা লন্ডন ব্রিজের দিকে গেলাম। এখানে একটা কথা বলা হয় নি, আমরা আমাদের ট্রান্সপোর্টেশন হিসেবে সাবওয়ে টিউব ট্রেন আর পায়ে হাঁটার উপরেই পুরোটা নির্ভরশীল ছিলাম।
মাদাম তুসো তে তোলা কিছু ছবিঃ
ব্যাপক লজ্জিত আমি মডেলের সাহতে ছবি তুলতে যেয়ে
রাজা রানীর সাথে আমি
মাদাম তুসোতে পার্টি
লন্ডন ব্রিজ, লন্ডন টাওয়ার দর্শন শেষে আমরা হোয়াইট চ্যাপেল এলাকায় গেলাম, উদ্দেশ্য আজকে বাঙ্গালী খাবার খাবো বাংলাদেশী কোন রেস্টুরেন্টে। টিউব ট্রেনে করে অনেক স্টেশন চেঞ্জ করে শেষ পর্যন্ত যেতে পারলাম।
এই এলাকা বাংলাদেশী অধ্যুসিত এলাকা। বিভিন্ন দোকানে বাংলায় সাইনবোর্ড লেখা। একটা বাংলা বাংলা ভাব চারিদিকে। একইসাথে লন্ডনের অন্য এলাকার সাথে তুলনা করলে এই এলাকাটা একটূ বেশি নোংড়া মনে হল। আবার এইখানেই লন্ডনের অন্যতম বড় একটা পাবলিক হাসপাতাল আছে।
আমার এক স্কুল বন্ধু তখন লন্ডনে ছিল, এখনো অবশ্য আছে। কোন রেস্টুরেন্ট ভাল, এই জন্য ওকে বেশ কয়কেবার টেলিফোন বুথ থেকে ফোন করলাম লোকেশন টা ভাল ভাবে বুঝার জন্য। এইভাবে খুজে খুজে একটা মোটামুটি মানের রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেলাম। নান রূটি, কাবাব, সবজি, এমনি প্লেন রুটি, সমচা, সিঙ্গাড়া, গরুর মাংশ কোন কিছুই বাদ দিইয় নাই। আমার কোরিয়ান বন্ধু বেশ উপভোফ করলো বাংলাদেশী খাবার।
এতই বেশি উপভোগ করলো যে খাবার এর বিলটা ও একাই দিলো। যাইহোক সেদিনকার মত ঘুরাঘুরি শেষ করে আবার হোটেলে ফিরে আসলাম। পরের দিন আমার সেই স্কুল বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাবো।
আমার কোরিয়ান বন্ধু একা আজ ঘুরবে, আমিও একা... দুজন দু-দিকে। আমি আমার বন্ধু কে ফোন করে কোথাইয় আসবো, জেনে নিলাম।
আমাদের মিটিং পয়েন্ট ছিল লিভারপুল স্টেশন। প্রায় ৩ বছর পরে বন্ধুর সাথে দেখা... অনেক কথা অনেক গল্প হলো ওর সাথে। তারপর লিভারপুল স্টেশন থেকে ওদের বাসায় গেলাম। আরো ৪/৫ জন বাংলাদেশী এক্সাথে থাকে ওর সাথে, সবার সাথে পরিচয় আড্ডা চললো। দুপুরে আমার বন্ধু আমাকে নিইয়ে একটা শপিং মলে গেল, ওর উদ্দেশ্য কি ছিল বুঝি নাই।
পরে বুঝলাম যখন বললো এই জুতা পছন্দ হয়? আমাকে আমার বন্ধু এক জোড়া জুতা আর একটা টিশার্ট গিফট করেছিল। আমি ওর জন্য কোরিয়া থেকে কিছুই নিয়ে যেতে পারি নাই, শুধু এক বড় প্যাকেট জিনসেং টি নিয়ে আসছিলাম। ওহ, একটা কথা বলতেই ভুলে গেছি, সেই সময়টা রোজার মাস ছিল। তাই সন্ধ্যয় ইফাতারীর ব্যাবস্থা হল, ইফাতারী করে আমার বন্ধু আমাকে ট্রেনে উঠিয়ে দিল। আমার বন্ধু আমাদের আগামীকাল নিয়ে টেমস রিভার ক্রুজিংকরবে আর গ্রীনিচ মান মন্দির ঘুরতে নিয়ে যাবে।
এইদিনি রাত ১০ টাই আমাদের কোরিয়ার উদ্দেশ্যে ফ্লাইট, তাই আগামীকাল হবে আমাদের শেষ লন্ডন ঘোরা।
বাকিংহাম প্যালেস, লন্ডন ব্রিজ, টেমস নদীর তীরঃ
পরের দিন আমি আর আমার কোরিয়ান বন্ধু সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সেই একি স্টাইলে হোটেলের ফ্রি নাস্তা খেয়ে, ব্যাগ সব গুছিয়ে লন্ডন টাওয়ারে গেলাম, এখানেই আমার স্কুল বন্ধু আসবে। একসময় বন্ধু আমার চলে আসলো। জন প্রতি ১৫ পাউন্ড করে রিটার্ন টিকেট কেটে নৌ-বিহারের ছোট জাহাজে উঠে ছাদের চেয়ারে বসে পড়লাম। আমাদের এই জাহাজ টেমস নদী ধরে যাবে গ্রীনিচ মান মন্দির, সেখানে থেকে আবার ২ ঘন্টা পরে লন্ডন টাওয়ারে ফিরে আসবে।
জাহাজে ছাদে বসে টেমস নদীর দুই তীরের লন্ডন শহরের সৌন্দর্য বেশ ভালই লাগছিল। প্রায় ৩০ মিনিট পরে জাহাজ থামলো। আমরা জাহাজ থেকে নেমে পড়ে গ্রীনউইচ ইউনিভার্সিটির ভিতর দিয়ে পায়ে হেটে ১৫ মিনিটের মধ্যেই গ্রীনিচ মান মন্দিরে চলে আসলাম। যাইগাটা বেশ উচুতে অবস্থিত। তাই উপরে উঠতে বেশ কষ্টই হচ্ছিল।
গ্রীনিচ মান মন্দির মিউজিয়াম ঘুরে সেই কষ্ট অনেকটাই লাঘব হয়ে গেল। ছোটকালে স্কুলে কত পড়ছি ভূগোল বইয়ে এই গ্রীনিচ মান মন্দিরের কথা! যাইহোক সময় কম এখন ফেরার পালা। আজকে রাতেই আমাদের রিটার্ন ফ্লাইট। আমরা আমাদের সব লাগেজ লিভারপুল স্টেশনে লকারে রেখে এসেছিলাম, তাই যখন ফাইনালি এয়ারপোর্টের দিকে যাবো, তখন লিভারপুল স্টেশন থেকে লাগেজ গুলো নিয়ে এয়ারপোর্টে যাবো, এইভাবেই প্লান সব ঠিক করা। এইদিকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো... আমার বন্ধু আমাদের কে সেই হোয়াইট চ্যাপেল এলাকার কোন এক বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টে আপ্যায়ন করবে বলে মনস্থির করলো।
সময় হবে কিনা জিজ্ঞাসা করাতে বলল, কোন ব্যাপার না, হবে।
লন্ডন টাওয়ার থেকে গ্রীনউইচঃ
গ্রীনউইচ পার্কে আমরা ৩ জনঃ
আমার হোটেলের জানালা ভিউ, সাথে সকালের কফিঃ
আমরা আবার টিউব ট্রেনে করে হোয়াট চ্যাপেলের উদ্দেশ্যে যেতে লাগলাম। আগেই বলেছি, সময় টা ছিল রোজার মাস। ইফাতারীর টাইম ছিল সন্ধ্যা ৭.৪০ এর দিকে। আমরা সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে হোয়াইট চ্যাপেলে চলে আসলাম।
এর আগে আমি একা আসছিলাম, তাই ওইখানে যে একটা সুন্দর মসজিদ আছে জানা ছিল না, ওটা দেখলাম, ছবি তুল্লাম। তারপর আমার বন্ধু অবাক করে দিয়ে লন্ডন শহরের শহীদ মিনারে নিয়ে গেল। এইটা যে এখানেই ছিল, আমি জানতাম না। খুব ভাল লাগলো দেখে। একদম হবুহু বাংলাদেশের শহীদ মিনারের রেপ্লিকা।
সাইজে একটু ছোট, কিন্তু সব মিলিয়ে খুব সুন্দর। যে ছোট্ট পার্কে অবস্থিত সেটাও সুন্দর। কোরিয়ান ল্যাবমেট কে বুঝাইলাম এইটা কি, কেন এইসব আরো অনেক কিছু। ছবি তুললাম অনেক। সন্ধ্যা ৭ টা বেজে গেছে, তাই আমরা একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম ইফতার প্লাস রাতের খাবার খাওয়ার জন্য।
এর মাঝে আমাকে একবার আমার কোরিয়ান বন্ধু টাইমের ব্যাপারে সতর্ক করেছে, আমি পাত্তা দিই নাই।
ইস্ট লন্ডন মসজিদ
আমার স্কুল বন্ধু সাথে কোরিয়ান বন্ধু, পিছনে লন্ডন শহীদ মিনার
রেস্টুরেন্টেই রাত ৮ টা বেজে গেল। আমার তখনো হুশ হয়নাই, যে আমাদের রাত ১০ টাই কোরিয়াতে যাওয়ার ফ্লাইট। আমার কোরিয়ান ল্যাবমেট আবার সময় মনে করিয়ে দিল, তখন চিন্তা করলাম, আরে তাইতো অনেক দেরী হয়ে গেছে। হাতে আছে আর মাত্র ২ ঘন্টা।
আমার বন্ধু বললো সমস্যা নাই, ফ্লাইট খুব আরামেই পাবি (এখন মনে হয় সে এমনিই বলেছিল), সময় লাগবে ১ ঘন্টা। আমরা দ্রুত আবার টিউব ট্রেনে করে লিভারপুল স্টেশনের দিকে রওনা দিলাম, কারন আমার সব লাগেজে সেখানকার লকারে। রাত ৯ টা বেজে গেল লিভারপুলে যেতে!! উফ, তখন থেকেই টেনশন কাজ করতে শুরু করলো... দ্রুত লাগেজ নিয়ে এয়ারপোর্টের দিকে ট্রেনে চেপে বসলাম। ট্রেন চলছে, পাল্লা দিয়ে সময় এগিয়ে চলছে... আর সাথে আর দিগুন পাল্লা দিয়ে টেনশনে ঘাম ঝরছে!! আমার কোরিয়ান ল্যাবমেট আমার দিকে বার বার তাকাচ্ছে, কিন্তু আমার অবস্থা দেখে আর কিছু বলছে না। ঠিক ৯ টা ৩০ মিনিটে আমরা এয়ারপোর্টে নামলাম... নামা মাত্রই দৌড়, আমার পিছে আমার কোরিয়ান ল্যাবমেট... হিথ্রো তে ৪/৫ টা টার্মিনাল, সব ভাগ করা বিভিন্ন মহাদেশ অনুযায়ী।
আমরা ঠিকটায় নেমেছিলাম, কিন্তু মালেশিয়ান বোর্ডিং ব্রিজ খুজে পেতে আরো ১০ মিনিট চলে গেল... রাত ৯টা ৪০ এ বোর্ডিং ব্রিজের সামনে যেয়ে দেখি লেখা আছে “বোর্ডিং ক্লোজড”। কেউ নাই সেখানে!! মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়লো!! এখন কি করি? আশে পাশের কয়কেজন এয়ারপোর্ট অফিসার কে জিজ্ঞাসা করি, কি করবো এখন? কোন ভাবে মালেশীয় ফ্লাইটের কাউকে খবর দেওয়া যাবে না?
সময় কিন্তু থেমে নেয়, ততক্ষনে ৯ টা বেজে ৫০ মিনিট। এক ব্রিটিশ অফিসার বলল “এখন আর কিছু করার নাই, বোর্ডিং ৯ টা ২০ এ বন্ধ হয়ে গেছে। ৩০ মিনিট আগেই বন্ধ হয়, কিন্তু সিকিউরিটি টাইম বেশি লাগে বিধায় ৪০ মিনিট আগে বোর্ডিং এখানে বন্ধ হয়ে যায়। কিছুই করার নেই, তোমাদের কে অপেক্ষা করতে হবে পরেরদিন সকাল পর্যন্ত, মালেশিয়ান এয়ারলাইন্স অফিস না খোলা পর্যন্ত।
” তখন কি যে মনের অবস্থা ছিল, এখন টাইপ করে লিখে বুঝানো যাবে না। অসহায় এর মত আমরা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম, কিছুক্ষন দাঁডিয়ে থাকলাম, অলৌকিক ভাবে যদি আমাদের কে কেউ ডাকে বিমানে উঠার জন্য। আমার কোরিয়ান ল্যাবমেট আমাকে একটা খোঁচা মারলো, আমি সব সময় তোমাকে ফলো করেছি, এখন কি হইলো বল? যাইহোক, সব মেনে নিলাম, বাস্তব পরিস্থিতিটাও মেনে নিলাম... আমি বললাম তুমি কোরিয়াতে ট্রাভেল এজেন্ট কে ফোন কর, দেখ ওরা এখন কি উপদেশ দেয়। আমার ফোনটায় ওর দিকে বাড়িয়ে দিলাম কল করার জন্য (কারন ওর ফোনে রোমিং ছিল না, আর বুথ থেকে কল অনেক খরচ)। কোরিয়া থেকে ট্রাভেল শুনেই প্রথমেই যেটা বলল, “তোমরা এইটা কি করেছ? এখন তো তোমাদের অতিরিক্ত ফি দিতে হবে জনপ্রতি প্রায় ১০০ পাউন্ড, তাও যদি সিট থাকে।
এখন আর কিছুই করার নাই, সকালে এয়ারলাইন্স অফিস খুললে তখন তোমাদের প্রবেলমটা উনাদের কে বুঝিইয়ে বললে কিছু একটা ব্যাবস্থা করতে পারবে। ”
যাইহোক, পরিস্থিতিটা মানিয়ে নেওয়ার ট্রাই করলাম। একবার ভাবলাম, আমার বাংলাদেশী বন্ধু কে ফোন করি, পরে আবার চিন্তা করে ভাবলাম না, সারারাত এয়ারপোর্টেই কাটিয়ে দেব। এখানে থেকে নড়বো না। সারারাত ধরে এইদকি ওইদিক পায়চারী করে সময় কাটাতে লাগলাম।
ধুম্রপানের মাত্রাটাও অনেক বেড়ে গেল। নেট ইউজ করবো সেই উপায়ও নেয়। ১০ মিনিট এর জন্য পুরো ১ পাউন্ড। এইভাবেই কি হয়?২ পাউন্ড দিয়ে কিছু ক্ষন করলাম। ইনচিয়ন এয়ারপোর্টের কথা মনে হচ্ছিল তখন।
নেট আনলিমিটেড ফ্রি। খাবার পানি ফ্রি আর বসে সময় কাটানো অনেক সুন্দর ব্যাবস্থা, যেটা হিথ্রো এয়ারপোর্টে কিছুই নেয়। যাইহোক, এই ভবেই একসময় সকাল হয়, ভোর ৫ টা বাজে, আমি বার বার মালেশিয়ান এয়ারের অফিসের দিকে যাচ্ছি, খুলছে কিনা দেখার জন্য। সকাল ৬ টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত মনে হয় ৫০ বার গেছি খুলছে কিনা দেখার জন্য। অবশেষে দেখলাম, একজন মহিল এসে অফিস খুলছে, জানে পানি ফিরে পাইলাম।
অফিস সম্পুর্ন খুললো সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে। উনাদের কে আমাদের ফ্লাইট মিসের কথা বললাম। সব বুঝে বলল, ২০০ পাউন্ড দাও, আজকেই দুপুর ১২ টাই একটা ফ্লাইট আছে, কুয়ালালাম্পুরের। কোন কিছু আর চিন্তা না করেই তাড়াতাড়ি দিয়ে দিলাম (আর হাতে নগদ ৩০/৪০ পাউন্ড ছিল বাকী)। কোরিয়ান বন্ধু তার এই টাকা দেওয়ার সময় আমার দিকে রাগত ভাবে তাকিয়ে ছিল, আমি না দেখার ভান করে অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলাম... যাইহোক, টিকিট টা হাতে পেয়ে আবার শান্তি অনুভব করলাম, এবার একেবারে সকাল ৯ টার সময় বোর্ডিং ব্রিজে গেলাম।
কিন্তু সমস্যা হইলো, এবার আমাদের কে ডাইরেক্ট কোরিয়া পর্যন্ত বোর্ডিং পাশ দিলো না... কুয়ালালাম্পুর পর্যন্ত, তারপর ওইখান থেকে আবার পাশ নিতে হবে ইনচিওয়ন পর্যন্ত। কি আর করা তাই মেনে নিলাম। বোর্ডিং পাশ নিয়ে এখন চিন্তা করলাম, কিছু খাওয়া দরকার, কাল থেকে আর কিছুই খাই নাই। হালকা সকালের নাস্তা প্রচুর দাম দিয়ে কিনে খেলাম।
বিমানের সিটে বসার পরে কি যে শান্তি অনুভব করলাম, বলে বুঝানো যাবে না।
সব টেনশন মাথা থেকে চলে গেলো, হালকা অনুভব করলাম। তারপর থেকে কান ধরছি, এখন থেকে এয়ারপোর্টে কমপক্ষে ৩ ঘন্টা আগে যাবো। ফ্লাইট মিস আর করবো না... এটাই হোক আমার জীবনের প্রথম আর শেষ ফ্লাইট মিস।
লেখাটা অনেক বড় হয়ে গেল। দ্রুত একটানা লিখেছি, কিছু ভূল ভ্রান্তি হতে পারে।
ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি। পরের বার আমেরিকা ভ্রমনের কাহিনী নিয়ে আসব। ভাল থাকবেন, ধন্যবাদ।
আগের দুইটা পর্বঃ
১)
Click This Link
২)
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।