আমারে দিবো না ভুলিতে
ভালো একটি কর্মক্ষেত্রের স্বপ্ন থাকে সবারই। স্বপ্নের চাকরি পেতে সবাই বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনাও করে থাকে। স্বপ্নের চাকরিটা পেতেও চেষ্টা চালিয়ে যায় সবাই, তবে ক’জন স্বপ্নকে সত্যি করতে পারে? এই প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। তবু স্বপ্নের চাকরি পেতে মানুষ বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করে ঠিকই। তবে স্বপ্নকে ধরতে পারে না তাদের কিছু ব্যক্তিগত ও ভাবনাগত কিছু অভাবের ফলে।
অভাবগুলো এতোটাই তীব্র হয় যে, পুরোদমে বিকল করে দেয় ২০-২৫ বছর ধরে পুষে রাখা স্বপ্নের চাকরিটা পেতে। অনাকাঙ্ক্ষিত এইসব অভাবগুলোকে জয় করেই আমাদেরকে স্বপ্নের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। ভাল ক্যারিয়ার গড়তে এধরনের অনেক বিষয়ই বিবেচ্য। এগুলো নিয়েই লিখেছেন উম্মে সালমা ১. ইতিবাচক মনোভাব আমরা সবাই জানি নেতিবাচকের চেয়ে ইতিবাচক কর্মকান্ড ও মনোভাব সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য। সফলভাবে ক্যারিয়ার গড়তেও ইতিবাচক মনোভাবের বিকল্প নেই।
সত্যিকার অর্থে প্রত্যেকটি কাজেই ইতিবাচক চিন্তা ও কাজের প্রাধান্য বেশি। আমি অথবা আপনি এটা ভাল করেই জানি ‘উপদেশ দেয়া সহজ তবে পালন করাটাই কঠিন’। সেই সাথে আমরা এটাও জানি ইতিবাচক অবস্থান একজন মানুষকে কোলাহল, উত্তেজনা উগ্রতা, দুশ্চিন্তা থেকে দূরে রাখে। আপনি যখনি মনের দিক থেকে সত্ থাকবেন তখন আপনা আপনি মন প্রফুল্ল থাকবে। নিজের সাথে বোঝাপড়াটাও ভাল হবে।
মনকে প্রফুল্ল রাখতে পারলে শুধু স্বপ্নের চাকরিটাই না, যেকোন কাজেই সফলতা পেতে পারি আমরা। ২. নিজেকে জানুন হরহামেশাই দেখা যায় ভাল বেতনের চাকরিকে সবাই প্রাধান্য দেয়। আবার, বেশি বেতনের চাকরি করলে সমাজেও কদরটা একটু বেশি। তাই সকলেই ঝুঁকে পড়ে বেশি বেতনের চাকরির দিকে। তবে ব্যাপারটা এমন না হয়ে যদি নিজের আকাঙ্ক্ষা ও ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়া হত।
তাহলে ব্যাপারটা ঈর্ষণীয় হত। তাই আগে নিজেকে জানতে হবে কোন পেশার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবো। আসল কথা হচ্ছে অন্যের পেশাকে দেখে আমার লাভ নেই। তাই নিজেকে জিজ্ঞাসার মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে আমি কোন পেশাকে বেছে নেব। মোট কথা হচ্ছে, মনের তৃপ্ততাই সাফল্যের পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আর সে জন্য দরকার নিজেকে জানা। নিজের উপর যতটা নির্ভরশীল হওয়া যাবে, সাফল্যের পথে সে সবচেয়ে এগিয়ে। ৩. চাহিদা ও দক্ষতা নির্ধারণ প্রত্যেকেরই উচিত অবসর সময়টাতে নিজেকে তৈরী করা। আমি এইচএসসি পাস একজন নিশ্চয়ই ব্যাংকের চিফ এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকরি পাবো না। তাই আমার দক্ষতার উপর নির্ভর করেই আমার চাহিদার চাকরিগুলোকে বেছে নিতে হবে।
তারপর সর্বোচ্চ কাঙ্ক্ষিত চাকরিটা পেতে প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে হবে। অন্যদিকে আমরা অবসর সময়গুলোকে চাকরি খোঁজাখুজি ও দক্ষতা পরিমাপের জন্য ব্যয় করতে পারি। আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে কোন বিষয়টি আপনাকে বেশি কাছে টানে। ধরুন, আপনি কম্পিউটারে কাজ করতেই বেশি পছন্দ। আর তা অন্যান্য সকল কাজের চেয়ে বেশি।
মোট কথা, কম্পিউটারের সামনে বসলে আর উঠতেই ইচ্ছে করে না। আর কম্পিউটারও ভাল জানা আপনার। কম্পিউটার দক্ষতা ও আগ্রহ এই দুই মিলালে বলাই যায়। আপনার উচিত তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়া। ৪. ব্যক্তিত্ব নিরূপণ ও নমনীয়তা দক্ষতা ও আগ্রহ উভয়ই আছে।
এবার আপনার উচিত নিজেকে কতটা সফল দেখতে চান আপনার কর্মক্ষেত্রে। সেজন্য ব্যাক্তিত্ব নিরূপণ করার দায়িত্বও যে আপনারই। ব্যাক্তিত্ব নিরূপণ করার জন্য আপনি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন তৈরি করে নিতে পারেন। অথবা কারো তৈরি করা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে নিজেকে যাচাই করে নিতে পারেন। মায়ারস ব্রিগস টাইপ ইন্ডিকেটর (এমবিটিআই) নামের পরীক্ষা দিয়ে বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিগত দৃঢ়তা নিরূপণ করে নিতে পারেন।
উগ্রতা সর্বদাই খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। কোন কাজই জোরপূর্বক করে নেয়া যায় না। আর জোরপূর্বক করে নেয়া হলেও পরিবর্তিতে তার কুফল ভোগ করতেই হয়। তাই উগ্রতায় নয় নমনীয়তায় জীবন গড়াটাই বেশি যৌক্তিক। ৫. পরামর্শ গ্রহণ অনেক সময়ই আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগি।
এটা নয়, ওটা ভাল। আসলে যে কোনটা ভাল তাই খুঁজে বের করতে পারি না আমরা। তাই নিজের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় কিংবা কোন বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে সঠিক ও উপযুক্ত চাকরিটা বেছে নিতে পারেন। বিশেষ করে বিশেষজ্ঞরা চাকরির বাজার সম্পর্কে প্রচুর জানেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রতিযোগিতামূলক কর্মক্ষেত্র, ক্রমান্নতি ও বেতন সবদিক সম্পর্কেই একজন বিশেষজ্ঞ আপনাকে সঠিক চাকরিটি বেছে নিতে সহায়তা করতে পারবেন।
৬. সময় সচেতনতা ও নেটওয়ার্ক তৈরি প্রত্যেকটা মানুষেরই উচিত সময়কে সঠিক ব্যবহার করা। সময়ের কাজ সময়ে করতে পারলে যেকোন ব্যক্তিই তার ক্যারিয়ারকে সফল স্থানে নিয়ে যেতে পারবে। অযথা সময় ক্ষেপনকারীর একজন ব্যক্তি প্রয়োজনীয় সময় এসে হাঁপিয়ে উঠে। ফলে সে তার কাজে ভুল করে। পরে করবো বলে ফেলে রাখলে কোন কাজেরই সফল সমাধান দেয়া সম্ভব নয়।
সময়ের প্রতি সচেতনতাই সফল ক্যারিয়ার গড়তে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। ক্যারিয়ারে সফলতা পেতে চাইলে আমাদের উচিত সময়কে সঠিক ব্যবহার করা। প্রবাদ আছে ‘সত্ সঙ্গে স্বর্গ বাস, অসত্ সঙ্গে সর্বনাশ’। সফল ক্যারিয়ার গড়তে আপনাকে অবশ্যই একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। তবে নেটওয়ার্কটি অবশ্যই সত্ ও উদ্দেশ্য বহুল হওয়া চাই।
নানাজনের সাথে কথা বলে ও বন্ধুত্ব করাটাও সফল ক্যারিয়ার গড়তে সহায়তা করতে পারবে। সময় সঠিক পরামর্শের মাধ্যমে সহায়তা করবে। যা ক্যারিয়ারে সফল হতে সহায়ক হবে। ৭. ক্যারিয়ার জিজ্ঞাসা ও সহিষ্ণুতা আপনি যদি কর্মক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করেন তবে কিন্তু মহা সমস্যার সম্মুখীন হবেন। তখন সম্ভব হবে না স্কুলে ফিরে গিয়ে পড়াশোনা করে অন্যক্ষেত্রে সফল হবার।
তাই আপনার উচিত সঠিক কোন ক্যারিয়ার কলেজ বা ট্রেনিং সেন্টার খুঁজে বের করা। কারণ ক্যারিয়ার কলেজ বা ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে আপনি আপনার ক্যারিয়ারের নানা সমস্যার উত্তর খুঁজে পাবেন। আপনি নিজেও ক্যারিয়ার জিজ্ঞাসার মাধ্যমে আপনার নানা সমস্যার সমাধান করে নিতে পারেন। নতুন নতুন সব আইডিয়া তৈরি করে তার উপর পরীক্ষা নীরিক্ষার মাধ্যমেও ক্যারিয়ারে সফলতা পাওয়া সম্ভব। প্রবাদ আছে, ‘ভাল জিনিস একটু দেরিতেই আসে।
কোন কাজেই তাড়াহুড়া করাটা ভাল না। তড়িত্ যেকোন কাজের মধ্যে ভুল হবার সম্ভাবনা বেশি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।