তক
অদ্ভুত একটা ব্যাপারের ওপর সৌরভের আইপিএলে প্রত্যাবর্তনের ক্ষীণতম সম্ভাবনা ঝুলে রয়েছে। তা হল, ভারত ও শ্রীলঙ্কা বোর্ডের মধ্যে আগামী ক’দিনের সম্পর্ক কেমন যায়। সম্পর্ক যদি বিশ্বকাপ ফাইনালোত্তর যেমন তিক্ত যাচ্ছে তেমনই থাকে, সৌরভের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা অনেক বাড়বে। যদি আগামী ক’দিনের মধ্যে দু’তরফের অনুষ্ঠেয় বৈঠকে বিরোধ মিটে যায় তাহলে সম্ভাবনা অনেক বিলীন হয়ে আসবে।
পরিস্থিতি যে পর্যায়ে ছিল তাতে সৌরভের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার কথাই নয়।
হঠাৎই বিশ্বকাপ ফাইনালের রাতে ভারতীয় বোর্ডের কিছু কর্তা অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন মুম্বইয়ে ফাইনাল দেখতে আসা শ্রীলঙ্কার কর্তাদের সঙ্গে। ফাইনাল হেরে এমনিতেই অতিথিদের মেজাজ খারাপ ছিল। তার উপর বিশ্রী ব্যবহারে তাঁদের মেজাজ আরও চড়ে যায়। কথা ছিল, ফাইনালের পর দিন এঁরা দেশে ফেরার বিমান ধরবেন। কিন্তু অপমানিত হয়ে এঁরা শ্রীলঙ্কা সরকারের দ্বারস্থ হন।
মুম্বই থেকে ফিরে যান ফাইনাল শেষ হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। রাত তিনটের বিমান ধরে।
ফিরেই ঠিক করেন ভারতীয় বোর্ডকে টাইট দেবেন। ভারতীয়
মেদ ঝরিয়ে তৈরি থাকছেন।
বোর্ডের সঙ্গে আইপিএল-জনিত চুক্তি ভাঙবেন।
বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা ২২ মে পর্যন্ত আইপিএলে থাকার অনুমতি পাবেন। এর পর টেস্টের জন্য নির্বাচিতদের আইপিএল ছেড়ে যেতে হবে। শ্রীলঙ্কা বোর্ড হঠাৎ জানিয়ে দেয়, ক্রিকেটারদের ৫ মে শিবিরে ফিরতে হবে। এটা তাদের নির্দেশ। ফ্র্যাঞ্চাইজিরা এই সিদ্ধান্তে হতভম্ব হয়ে যায়।
তারা ক্রিকেটারদের বলতে থাকে, বোর্ডের কথা শুনো না। ক্রিকেটাররা পাল্টা জানিয়ে দেন, তাঁদের মন যা-ই চাক, বোর্ডের সিদ্ধান্তের সামনে তাঁরা নিরুপায়।
শনিবার ভারতের কিছু শহরে ফোন করে জানা গেল, রাগে গরগরে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা পাল্টা চাপ দিচ্ছে। বলেছে, চুক্তি ভঙ্গ করলে শ্রীলঙ্কা বোর্ডকে তারা দেখে নেবে। তারাও তখন আর্থিক চুক্তি ভাঙবে।
চুক্তি অনুযায়ী, নিলামে কেনা প্রত্যেক বিদেশি প্লেয়ারের বোর্ডকে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের শতকরা দশ শতাংশ করে অতিরিক্ত দেওয়ার কথা। অর্থাৎ কারও যদি দাম হয় একশো টাকা তাহলে বোর্ড পাবে দশ টাকা। ফ্র্যাঞ্চাইজির মোট খরচা হবে একশো দশ টাকা।
সম্ভাব্য যে সব ফ্র্যাঞ্চাইজি দু’বোর্ডের তরজায় ক্ষতিগ্রস্থ হতে যাচ্ছে, তারা শ্রীলঙ্কা বোর্ডকে হুমকি দিয়ে বলেছে, ৫ মে প্লেয়ার তুলে নিলে তারা প্রতিশ্রুত এক টাকাও দেবে না।
শ্রীলঙ্কা বোর্ডকে অনমনীয় দেখে ভারতীয় বোর্ড কর্তারা এখন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
ঠিক হয়েছে, সমাধানসূত্র খোঁজার জন্য খুব দ্রুত দু’তরফে বৈঠক বসবে। ভারতীয় বোর্ডকে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা এমন চাপ দিচ্ছে যে, আগেকার চুক্তি অনুযায়ী তারা শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটারদের ২২ মে পর্যন্ত রেখে দিতে চায়।
আইপিএল ফাইনাল ২৮ মে। শুধু ফাইনাল কেন, শ্রীলঙ্কানদের সেমিফাইনাল খেলাও হবে না। কিন্তু সেটা ফ্র্যাঞ্চাইজিদের আগে থেকে জানা।
যেটা তারা জানত না এবং বজ্রপাতের মতো তাদের উপর পড়েছে, তা হল আরও দু’সপ্তাহ আগেই প্লেয়ার তুলে নেওয়া হবে।
ভারতীয় বোর্ডের দৌত্য যদি ভেঙে যায় এই আশঙ্কায় সংশ্লিষ্ট ফ্র্যাঞ্চাইজিরা এখনই পরিবর্ত প্লেয়ারের কথা ভেবে রাখছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ মুম্বই। তাদের মালিঙ্গা চলে যাবেন। মালিঙ্গার পরিবর্ত পাওয়া খুব কঠিন।
ডেকান। তাদের সঙ্গকারা চলে যাবেন। কোচি। তাদের জয়বর্ধনে চলে যাবেন। পুণে ওয়ারিয়র্সে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের জায়গায় পরিবর্ত নেওয়া হবে।
যদিও তিনি টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই আহত।
এদের মধ্যে পুণে অ্যাঞ্জেলোর জায়গায় সৌরভকে ভাবছে না। তারা চায় সাত নম্বরে ব্যাট করতে পারেন এমন কোনও বোলিং-অলরাউণ্ডার। সেই কল্পনায় সৌরভ কী করে আসবেন? ডেকানের সৌরভের ব্যাপারে কোনও অতীত আগ্রহের ইতিহাস নেই। সৌরভ নিয়ে উৎসাহী কোচি।
জয়বর্ধনে চলে গেলে সৌরভকে ম্যাকালামের সঙ্গে ওপেন করানো যাবে এমন স্বপ্ন কোনও কোনও কোচি কর্তা দেখছেন।
কিন্তু অদ্ভুত ভাবে যদি ভাগ্যে শিঁকেও ছেঁড়ে একেবারে ম্যাচ ফিটনেস এবং অনুশীলন-বিহীন সৌরভ কী করে খেলবেন? জানা গেল, সুযোগ আসতে পারে আন্দাজ করে সৌরভ গত ক’দিন প্রচণ্ড হার্ড ট্রেনিং শুরু করেছেন। পুরোটাই মিডিয়ার অন্তরালে। ক্লাবে জিম করছেন নিয়মিত। কেউ কেউ এমনও বলেছেন যে, সল্ট লেকে নিজস্ব অ্যাকাডেমির মাঠে গত সপ্তাহে তাঁর আগমন ঘটেছিল।
অর্থাৎ, ম্যাচ প্র্যাক্টিস-বিহীন থাকলেও শারীরিক ভাবে সৌরভ নিজেকে তৈরি রাখছেন।
এমনিতে মাহেলার বদলে বা সঙ্গকারার পরিবর্ত হতে কোনও সমস্যা নেই। সৌরভের যা বেস-প্রাইস নিলামে ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি দামে এঁরা নিলামে বিক্রি হয়েছেন।
কোচি সৌরভ সম্পর্কে উৎসাহ হারানো দূরে থাক, টিমে একটা দায়িত্বশীল ভূমিকায় রাখা যায় কি না এতটাও ভেবে রেখেছে। তা বলে মাহেলাকে যদি ২২ মে পর্যন্ত পাওয়া যায় তখন স্বাভাবিক নিয়মে সৌরভের আশা কম।
৫ মে মাহেলাকে ছেড়ে দিতে হলে আশা বেশি।
ঘটনাক্রমে ৫ মে কোচির খেলা রয়েছে আইপিএলে। প্রতিপক্ষ? কেকেআর!
গৌতম ভট্টাচার্য • কলকাতা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।