"এখানে আলেম দ্বারা চোর ধরা হয়"
এ যুগে,
এসময়,এ ধরণের সাইনবোর্ড চোখে পড়লে একটু অবান্তর ঠেকার কথা। আলেমরা আবার চোর ধরে কিভাবে?
কিন্তু ৭০-৮০ দশকে যাঁদের নিয়মিত চান খাঁর পুল, নাজিমুদ্দিন রোডে আসা যাওয়া ছিলো,নাজিমুদ্দিন রোডের মুখে চায়ের দোকানে এ সাইনবোর্ডে অভ্যস্ত ছিলেন। কারো কিছু হারিয়ে গেলে ঐ চায়ের দোকানে জানাবেন ,দোকানদার আলেমকে খবর দিবে,আলেম জ্বীন মারফাতে,বাটি চালান,চালপড়া তেল পড়া প্রভুত উপায়ে চোর ধরে দিবেন।
আলেম(কৃতবিদ্য) তৈরির কারখানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে এ ধরনের পানি পড়া ,চালপড়া,তেলপড়া বাটি চালানের মারেফতে চোর ধরার প্রতিষ্ঠানের সহঅবস্হান বেশ মজার বটে।
একবার,শহীদুল্লাহ হলের এক ছাত্রের হাতঘড়ি হারিয়ে যাবার পর আলেমের শরণাপণ্ন হন।
ঘড়ি পাওয়া যায়নি কারণ,যে জ্বীন আলেম সাহেব কে সাহায্য করে সে জ্বীন শহীদুল্লাহ হলে যেতে অপারগ-ঐ খানে আরেক দুষ্ট জ্বীন ভালো কাজে বাধা তৈরি করছে। তারপার আর কি, বাধ্য হয়ে ঐ ছাত্রের পৃথিবীর আদি এবং কার্যকর ঔষধ,মাইরের আাশ্রয় নিতে হয়েছিলো। বিজ্ঞানের দৌরাত্বে ,মানুষকে পাশ কাটিয়ে জ্বীনকে কাজে লাগিয়ে চোর ধরার আলেম বিপন্নপ্রায় প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে। যদিও আমাদের নামে অপবাদ,আমরা প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত কিন্তু বিজ্ঞান মনস্ক না(একথাটা পেশাদার বিজ্ঞান বক্তা আসিফ সাহেব থেকে ধার করা)। প্রযুক্তির কথা যখন উঠলোই একটা গল্প বলার লোভ সামলাতে পারছিনা।
বাংলাদেশ প্রযুক্তি তে কতটা আগানো এটা বোঝাতে এক বাংগালি এক সরলমনা বিদেশিকে মওকা পেয়ে শোনাচ্ছে-
"জানো, আমাদের দেশ এমন এক মেশিন বানিয়েছে, এক পাশ দিয়ে আস্ত গরু ভরলে আরেক পাশ দিয়ে আপনা আপনি মাংশ বের হয়, আরেক পাশ দিয়ে বোতলজাত দুধের শারি,আরেক পাশে জুতো। আর্মির সৈনিকরা লাইন দিয়ে বেন্চে বসে থাকে আর পায়ে আপনা আপনি জুতো ফিট হয়ে যায়। "
আমাদের দেশে এ যন্ত্রের অস্তিত্ব নেই এ ধারনা করবেন না যেনো!হুবহু নেই, তবে কাছাকাছি ফরমেটে আছে-আমাদের দেশে বিজ্ঞাপণ সর্বস্ব খরুচে ইস্কুল গুলো। যেসকল ইসকুলে এক সেমিস্টারের খরচ দিয়ে আপনি সরকারি প্রতিষ্ঠানে দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত তাবৎ লেখাপড়া শেষ করে আসতে পারবেন। ওসব স্কুলে
এক পাশ দিয়ে ছাত্র ভরা হয় অন্য পাশ দিয়ে ডাক্টার এন্জিনিয়র উকিল জজ বের হয়।
ছেলে মেয়েরা যেন কারখানার কাঁচামাল।
ধরা যাক, আপনার বাচ্চা লেখা পড়ায় ভালোনা-এবার এস এস সি দিবে। অসুবিধা নাই। ইস্কুল অথরিটি আপনার থেকে সচেতন। লাখ টাকা নিয়েছে টাকাটা হালাল করতে হবেনা?যে ইস্কুলে আপনার বাচ্চার সিট পরেছে ঐ ইসকুলটাতে এ স্কুলের পক্ষ থেকেগোটা ছয়েক এ সি গিফট করলেই হবে।
স্যর দের শার্ট প্যান্ট পিস,ম্যাডামদের শাড়ি এগুলো সামান্য গিফটের কথা না বল্লেই ভালো।
ব্যাস ঐ ক্লাসে গার্ড বসবে না। ছাত্ররা মনের আনন্দে পছন্দের গাইড বই দেখে লেখবে। দেখে লেখার মেধা টুকু না থাকলে ধরে নিতে হবে , আপনার ছেলের পাশ করার সামর্থ নেই। মানুষ অবশ্য ঠকতে ভালবাসে-টাকা দিয়ে যাদু দেখে।
গাঁটের পয়শা খরচ করে ঠকার বিষয়টা মানুষকে আনন্দ দেয়। হিন্দি বাংলা মুভি-যত ছবির নামে চোর শব্দটা আছে সকল ছবি হিট। চোর দের প্রতি মানুষের গোপন এক ভালবাসা কাজ করে-
হয়তো, তাই এসকল খরুচে কলেজের,স্কুলের বিজ্ঞাপনে সারা বাংলাদেশ সয়লাপ।
শিক্ষা এখন চোরের দখলে
এখন তাই "এখানে আলেম দ্বারা চোর ধরা হয়"
এ সাইনবোর্ড অবলুপ্ত।
নতুন সাইনবোর্ড তাই
"এখানে চোর দ্বারা আলেম(বিদ্যার্থী) ধরা হয়"
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।