সৃজনশীলতাই মুক্তির অঙ্গীকার
ফ্যাশনের বাইরে বোকা হবার চেয়ে বরং ফ্যাশনের মধ্যে বোকা হওয়া ভালো- ইমানূয়েল কান্ট
পোশাক কেবল বিপরীত অবস্থার দিকেই ইঙ্গিত ছুড়ে দেয়- কার্ল মার্কস
এ লেখাটি ডঃ আজফার হোসেনের ফেসবুকের নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধের ছায়া অবলম্বনে তৈরী। উদ্ধৃতিগুলো যখন অনুবাদ করছি, তখন নব্য-ইউরোপ কেন্দ্রিকতার আশংকা আষ্ঠেপিষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। কিন্তু আমি এও জানি যে, আমরা এমন এক সময়ে বাস করি, যখন পশ্চিমা বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা নিত্যকার ঘটনা, যুগের চাহিদা। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, এ দু’জন দার্শনিক আমাদের চেতনার প্রতিষ্ঠানিক নিষ্পেষণ ও বঞ্চনার কথা ঐতিহাসিকভাবে তুলে ধরেছেন বেশ জোরালোভাবেই।
যদি প্রশ্ন করা হয় ফ্যাশন ও অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক কী ? ফ্যাশন কী রাজনীতি নিরপে কোন বিষয়? সমাজে প্রশ্নহীন কিশে যাপনে আমরা যেভাবে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি তাতে এমন খোঁড়াখুঁড়ি বাস্তবতার ভিন্ন আঙ্গিঁক আমাদের সামনে খুলবে এমন আশা থেকেই কথাগুলো বলা।
আর এদেশে চিন্তু-চর্চা যেভাবে নানা ইজম ও পীর-মুর্শিদে বন্দী হয়ে আছে কেউ সহজে ‘নির্দিষ্ট-রশি’ হাতছাড়া করতে চান না। বিষয়টি রাজনীতি-অর্থনীতির জায়গা থেকে দেখলে কেমন লাগবেÑ এমন অনুভব থেকেই প্রশ্নটি তোলা। ফ্যাশনোলজি নামে অক্সফোর্ড প্রকাশনা থেকে ছাপা হয় এ সংক্রান্ত একটি বই, ২০০৫ সালে। লিখেছেন ইয়ূনিয়া কাওয়ামুরা। বইটিতে ফ্যাশনকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাবস্থা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এটিতে দেখানো হয়েছে ফ্যাশন কিভাবে আইডিয়া বা ধারণা তৈরি থেকে নিত্য ব্যবহার্য সকল বিষয়কে তার অঙ্গঁ-সহযোগী প্রতিষ্ঠান-সমূহের চর্চার মধ্যে দিয়ে হাজির রাখে। এতে আরও বলা হয়, মানুষের আবেগ ও বিশ্বাসকে কিভাবে সামাজিক উৎপাদন প্রক্রিয়ার মধ্যে গেঁথে ফেলা হয়। ফলে যাপন হয়ে ওঠে এ পদ্ধতিরই অংশ। উদাহরণস্বরূপ, মানুষের পরিধেয় সকল পোশাক-আশাকই এক ধরনের রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায়Ñ যেসবের গায়ে ফ্যাশন নামক লেবেল সেঁটে থাকে।
ওহ! দারুন বলেছেন ইয়ূনিয়া।
বেশ কিছুদিন আগে রোঁল্যা বার্থের লেখা দি ফ্যাশন সিষ্টেমের (১৯৬৭) কথা এখানে স্মরণযোগ্য। বইটিতে বার্থ আধুনিক-পুরাণের (গড়ফবৎহ গুঃয) ধারণাটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পোশাক ডিজাইনারকে ‘জিনিয়াস’ হিসাবে তুলে ধরার প্রয়োজনের মূল-কারণ ব্যাখ্যা করেন। এ ধরণের নয়া আধুনিক-পুরানের জন্য ডিজাইনারকে নিয়ে ফাকানো বুলির রহস্য তুলে ধরেন তিনি। বার্থ বলেন, শেষ বিচারে ফ্যাশন কখনই ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার নয় যা প্রায় প্রত্যেকেই ভাবতে অভ্যস্ত। বরং উল্টোটি সঠিক।
ফ্যাশন মানেই সামষ্টিক বিষয় যা এর অন্তর্গত উৎপাদন-সম্পর্কের মতাদর্শকেই নানা ভাবে উৎপাদন ও পুনরুৎপাদন করছে। এেেত্র কেউ বার্থের মিথলজিস বইটির কথাও স্মরণ করতে পারেন। লেখায় কওয়ামুরাকে বার্থের লেখার বেশ ভক্ত মনে হলো। ইতালীয় মার্কসবাদী তাত্ত্বিক এন্থোনিও গ্রামসির কথাও উল্লেখ করা বাদ দেননি তিনি। বিশেষত: ফ্যাশনের মতাদর্শকে আধিপত্যবাদী কাঠামোর মধ্যে জায়গা করে নেয়ার প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করেছেন বেশ জোর দিয়েই।
কিন্তু এতো কিছুর পরও পশ্চিশা ফ্যাশন কারখানা বৈশ্বিক পোশাক, সঙ্গীত ও তত্ত্বের দুনিয়াতে কি করে নিজেকে জারি রেখে পুনঃকেন্দ্রিকতা তৈরি করছেÑ তার কথা তিনি বলেননি। আর এও বলতে ভুলে গেছেন যে, এসবের ফলে মতা-সম্পর্কের পশ্চিমা কর্তাসত্তাই পুনরুৎপাদিত হচ্ছে। সারা দুনিয়ার ‘রুচি’ তৈরিতে পশ্চিমা এ ‘স্বাভাবিক’ আধিপত্যের কথা না-বলে নিরবতায় তা অস্বীকার করেছেন বললে অত্যুক্তি হবে কি?
তারিখ ঃ ১৭/০৩/২০০৯
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।