আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চালুনি বলে শুইরে তোর গায়ে ফুটা!!ব্লগে আস্তিক-নাস্তিক দ্বন্দ্ব ও ফেরেস্তাদের বিচারে র‍্যাগের দায়ে একজনের পানিশমেন্ট !!!!

ব-দ্বীপ মানে বদ্‌ দের দ্বীপ না কিন্তু। দয়া করে কেউ ভুল বুঝবেন না। যদিও বাংলাদেশের অবস্থা দেখে ভুল বোঝা স্বাভাবিক।

প্রথমে তিনজনের কাহিনী প্রথম জন সকালে ঘুম থেকে উঠেছেন উনি, পেপার পরছেন আর চিন্তা করছেন, ধূর এই দেশ দিয়া কিছু হবে না, সব চোর। পেপার পরতেই ইচ্ছা করে না।

পুলিশ থেকে শুরু করে সরকারী চাকুরে, টিচার থেকে শুরু করে ব্যাংকার সব চোর। ভাল্লাগেনা। এখন আবার যাইতে হবে উপজেলায় ডিউটি দিতে, স্বাস্থ্য মন্ত্রী আসবে। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে ভিসিট, না হলে আজকে মিনিমাম পাচটা আপারেশন করা যেত। এদিকে আবার আরেক চিন্তা, একটা মেডিকেল কলেজ করবো, সব জায়গায় ঘুরাইতেছে।

বলে কলেজ করার সমস্ত শর্ত নাকি পালন হয় নাই। আরে বাবা কিছু টাকা নিয়া যা করার কর ,তা নাহ খালি হয়রানি। ঐ ড্রাইভার গাড়ি বাইর কর। এটারে নিয়াও শান্তি নাই, খালি ফাকি মারে,ওর বেতন এবার কাটবো। দ্বিতীয় জন শালার শালা ডাক্তার, আমার কাছ থেকে একগাদা ফিস রাখল আর হাজারটা টেস্ট করাইয়া রাখল, কইলাম আমি একজন শিক্ষক তাও ফিসটা কমাইল না।

শরীরটা এত খারাপ এই কয়েকদিন আর কলেজে ক্লাস নিব না। দৈনিক ৫ টা প্রাইভেট পড়াইলে কি শরীর ভাল রাখা যায়। এর ওদিকে বক্কর হারামজাদাটা আরেকটা। তিন মাসের কন্টাকে পড়তে আইল, সুযোগ মত পরীক্ষার প্রশ্নটা নিল, ভাল নম্বরটাও নিল আর এখন দুই মাসের টিউশন ফি দিতাছে না, কয় গরীব মানুষ। আরে সব গরীবরে আমি পড়াইলে আমারে খাওয়াইবো কে? এরপর থেইকা ছাত্র দেইখা টিউশনি করামু।

যত্তসব। তৃতীয় জন আরে কোইয়না, টিচারগুলা এমন বদমাইশ, খালি টাকা টাকা করে পড়ানোর নাম নাই। মাস গেলেই খালি টিউশান ফি, অথচ পড়ায় কচু, খালি ফাকি দেয়। আর এদিকে আমার ব্যাবসার অবস্থা ভাল যাইতেছে না। কি যে করি।

ভেজাল বিরোধী অভিযানে কয়েকদিন আগেই হোটেলে বাসী খাবার খাওয়াইছি বইলা জরিমানা করল আর কয়েকদিন পর ধরল মড়া মুরগি। আরে এসব দিয়া যদি না চালাই তাইলে ব্যাবসা চলব কেমনে বুঝলাম না। ফিল্টারের পানির ব্যাবসাটাও মনে হয় চালান যাইব না। অসহ্য। উপরের তিনজনের কথা আসলে আমাদের পুরো সমাজটারই প্রতিনিধিত্ব করছে।

এই লেখাটা লেখার আইডিয়াটা আসে সম্প্রতি নাস্তিক আস্তিকদের মধ্যে তর্ক বিতর্ক দেখে। এছারা ব্লগে চলমান পাকি-ভারতী যুদ্ধ, রাজনৈতিক বিতর্কের কারনেও এই লেখা। উপরের তিনজন মানুষ নাস্তিকও হতে পারে অথবা আস্তিকও হতে পারে। কিন্তু তাদের চরিত্রের কি কোন হেরফের আছে? আমাদের চারপাশে এরকম মানুষের সংখাইতো বেশি। আস্তিকদের তবু অধর্মে হওয়ার ভয় আছে, নাস্তিকদের কি আছে? ব্লগে আস্তিকদের সেই মাপের গালাগাল, ধর্ম নিয়ে নোংরা মন্তব্য যারা করে তাদের ব্যাক্তি জীবন কি খুবই সুন্দর? তারা কি নির্লোভ, পরপোকারি, সহনশীল, ধৈর্যবান, ক্ষমাকারি, হীংসাহিন, প্রতিশোধপরায়নহীন? তারা কি আমানতের খেয়ানত করে না, কথা দিয়ে কথা রাখে, নিজেকে বিপন্ন করে অন্যকে সাহায্য করে, তারা কি এমনভাবে দান করে যে এক হাতে দান করলে অপর হাত তা জানতেও পারেনা? তারা কি পশুদের মত অবাধ যৌন লিলা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে, তাদের ক্ষতির হাত থেকে আর সবার মা-বোনেরা ১০০% মুক্ত? এই সব গুন গুলো কি নাস্তিকদের আছে যা ইসলাম একজন মুসলমানের জন্য ফরয করে দিয়েছে? অপরদিকে নাস্তিক খেদানোর জন্য গালাগাল করা আস্তিকরা উপরের তিনজনের চাইতে কতটুকু ভিন্ন? গালাগাল করে তারা নিজেদের কতটুকু সত্যিকারের মুসলমান হিসেবে দ্বাবি করতে পারে? পাক ভারত নিয়ে এবার বিশ্বকাপে যে যুদ্ধ করলাম, আমরা যারা এসবের সৈনিক, আমরা সবাই বলিতো আমরা আসলে সত্যিকারে কতটুকু দেশপ্রেমিক? আমরা কয়জন রাস্তাঘাট ঠিক করার টেন্ডার নিয়ে সঠিকভাবে রাস্তাটা ঠিক করি,কিংবা হাসপাতাল থেকে ঔষধ চুরি করা থেকে বিরত থাকি? নির্বাচিত প্রতিনীধি হয়ে নিজের স্বার্থে বিদেশীদেশের সার্থ দেখি সবার আগে, ভাল সুযোগ বা পদের নিশ্চয়তা পেলে দূর্নীতিকে সবার আগে হ্যা বলি আর আমরাই ব্লগ গরম করে ফেলি দেশপ্রেম নিয়ে! বাংলাদেশে এখন কাওকে সাইজ মত পাইলেই হল।

আর ছারার নাই। ইউনুসকে নিয়ে ব্লগে পক্ষে বিপক্ষে কত কথা, সে সুদখোর, লোভি। আর নিজে যখন মাস শেষে সঞ্চয়পত্রের সুদ হিসাব করি, ইউনিপে টু ইউ বা এ জাতীয় অল্পদিনে বড়লোক হোওয়ার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে কয়েকদিনে বড়লোক হতে চাই, না হতে পারলে এ নিয়ে হাউকাউ করি তখন আমি কি? আমি একজনকে চিনি, জানি, যে এই দিনে র‍্যাগিং এর দায়ে ভার্সিটি থেকে সাসপেন্ড হয়েছিলো। কি তাকে ঘৃনা করা শুরু করলেন, ধিক্কার জানালেন। আমি কিন্তু ধিক্কার দেইনা।

ও নিশ্চই ভাবছেন এত বড় বড় কথা কয় আবার নিজে র‍্যাগাররে কয় ভাল মানুষ। নাহ ভাই ওকে ধিক। আসলেই ধিক। সত্যিই ধিক। র‍্যাগিং করাটা কখনো সাপোর্ট করার মত না, কোন বিবেচনায়ও না।

কিন্তু ভর্তির আগেই ও জানতো ভার্সিটিতে র‍্যাগিং আছে, ভর্তি হয়ে র‍্যাগিং এর শিকার হয়েছে, বড় ভাইদের কাছে শিখেছে এটা ট্রডিশান, ভার্সিটির সাবেক বড় ভাই কাম শিক্ষকদের কাছে বিচার দিতে গেলে শুনেছে “ এ আর এমন কি এটা মেনে নিয়ো, আমরাতো আরো ভয়ংকর র‍্যাগ দিয়েছি”, সদ্য পাশ করে জয়েন করা বড় ভাই যিনি নিজেও তাকে র‍্যাগ দিয়েছে তার কাছ থেকেও যখন প্রশ্রয় পেয়েছে র‍্যাগিং কে তখন আর র‍্যাগিং মনে হয়নি। দ্বিতীয় বর্ষের শুরুতেও বড় ভাইদের কাছ থেকে যখন শুনতে হয়েছি "কি ফার্স্ট ইয়ার কে এখনো ঠিক করতে পারলি না", মাত্র বিশ বছর বয়সি একটা ছেলের কাছে র‍্যাগকে একটি গর্বিত ট্রাডিশানই মনে হয়েছে। কিন্তু মাত্র কয়েকদিন পর সব পরিবর্তন হয়ে গেল। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া ভিসি তার গদি বাচাতে এসেই ঘোষনা দিলেন র‍্যাগিং নির্মুলের, নির্দেশ দিলেন তদন্তের (ভার্সিটির অন্যান্য দুর্নীতির দিকে চোখ গেল না কারন ওইখানে ক্ষমতাসীনেরা বসা)। আর তখন সবাই হয়ে গেল একবারে ধোয়া তুলসি পাতা।

যেন এরকম অন্যায়, অনাচার কোন সভ্য দেশের মানুষ হয়ে তারা চিন্তাই করতে পারে না। সবাই অবাক, এখানে র‍্যাগিং হয়? এত বাজে? যারা সিনিয়র ভাই ছিল পরে শিক্ষক তারা অবাক? আমরাতো এরকম র‍্যাগিং করি নি? ইমেডিয়েট সিনিয়ররা অপারগ “ তোরা যা করছিস আমরা আর কিছু করতে পারবা না” কিন্তু ও কি করেছি, শুধু সিনিয়রদের পদাঙ্ক অনুসরন করেছে। কিন্তু এখন কি হবে? যারা দ্বিতীয় বর্ষে ওঠার আগে শিক্ষক রাজনীতির ঢং ধরতে পেরেছিল,যাদের লবিং ছিল তারা অনেক বড় অপরাধ করেও বেচে গেল। তালিকা নিয়ে শিক্ষকের মধ্যে যুদ্ধ বেধে গেল, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হল, শত মাফ, মুচলেকা, গার্জিয়ান ডাকার পরেও ওর মতো কিছু নলখাগরার জীবন গেল। আজকে এতদিন পরে নিজেকে ও অনেক সুধরেছে, ক্ষমা চেয়েছে জুনিয়রদের কাছে ব্যাক্তিগতভাবে, ক্ষমা চেয়ছে সৃস্টিকর্তার কাছে।

কিন্তু ঐ যে ভিসি তিনি কিন্তু বেপক দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে ভার্সিটি ছেরে গেছেন, যে শিক্ষকেরা নীতি কথার ফ্যাক্টরি তারা এখনও ক্লাশ ফাকি দেন, সর্বদা বিদেশে যাওয়ার ধান্ধা করেন, বিদেশে গিয়ে মাসিক বেতন নিয়মিত নেন, রাজনীতি করেন, অপছন্দের ছাত্রকে ফেল করান, প্রজেক্টের টাকা এদিক সেদিক করেন, নিজদের মধ্যে মারামারি করেন, পছন্দের ছাত্রকে যেকোন বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করেন, তার যেকোন অন্যায় কাজকে ন্যায় হিসেবে স্বীকৃতি দেন। কিন্ত সাথে সাথে আর কি করে জানেন। তারা ব্যাপক নীতি কথা বলেন। নীতি হীনতার জন্য এর তার ব্যাপক সমালোচনা করেন। তখন কিন্তু আর তাদের ফেরেস্তা থেকে আলদা করা যায় না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।