আপনি আমাকে পছন্দ করেন কি করেন না তাতে আমার কিছু যায় আসে না, আপনাকে খুশি করার জন্য আমি এ পৃথিবীতে আসিনি।
আজ অর্পিতার জন্মদিন, আজকের দিনটা সুমনের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন হতে পারত। সবকিছুই অন্যরকম হতে পারত। কিন্তু না, হল না! কত কিছুই তো ঠিকমত হয় না, এর জন্য তো বেশি কষ্ট পায় না সুমন। আজ এত কষ্ট পাচ্ছে কেন সে? অনেক ইচ্ছে করছে অর্পিতাকে ফোন করে, পারছে না সে।
কারণ ফোন নাম্বার ডিলেট করে দিয়েছে। অর্পিতার সাথে দেখা করবে? না থাক, কি দরকার। যেখানে ভালবাসাটাই নেই সেখানে দেখা করেই বা কি হবে!
গল্পের শুরুটা কিন্তু এমন ছিল না। সুমন হাসিখুশি ছিল অনেক। ইন্টারনেটে গুতাগুতি, মুভি দেখা, গান শোনা সব কিছু নিয়ে ভালই দিন যাচ্ছিল তার।
এর মধ্যেই একদিন অর্পিতার সাথে তার পরিচয় হয়। মেয়েটার সাথে তার অনেক কিছুতেই মিল ছিল, কথা বলতে বলতে কখন যে বন্ধু হয়ে যায় বুঝতেই পারেনি। সুমনের ফোন নাম্বার নিল অর্পিতা, হটাত একদিন ফোন করল। এরপরে মাঝে মাঝেই ফোনে কথা হত তাদের। আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব গাঢ় হয় তাদের, অনেক কথা হত।
একদিন সুমন ফোন করল অর্পিতাকে, সে ঠিকভাবে উত্তর দিচ্ছে না। বুঝল কোন সমস্যা হয়েছে। কিন্তু অর্পিতা সুমনকে কিছুই বলছে না। সুমন অস্থির হয়ে পড়ল। বেশি জোরাজুরি করাতে অর্পিতা হঠাত করে বলে উঠল, "আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি সুমন।
" সুমনের মাথায় যেন বাজ পড়ল, সে বুঝতে পারছিল না কি বলবে। অর্পিতাই বলল, "ভয় পেয়ে গেলে? ভয় পেয় না, এমনিতেই বলেছি। " সুমন জিজ্ঞেস করল, "কি হয়েছে তোমার অর্পিতা? খুলে বল। " অর্পিতা যা যা বলল তা মোটামুটি এই রকম। অর্পিতার সাথে ফাহিম নামের এক ছেলের অনেক ভাল বন্ধুত্ব ছিল।
ফাহিম বুয়েটে পড়ে। একদিন ফাহিম প্রপোজ করে অর্পিতাকে। অর্পিতা রাজি হয় না, ও ফাহিমকে শুধু বন্ধু হিসেবেই দেখে। ফাহিম যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় অর্পিতার সাথে। অর্পিতা ফোন করে বলে, "কি ব্যাপার ফোন ধর না কেন?" ফাহিম বলেছে ইচ্ছা করে না।
অর্পিতা বুঝতে পারে ফাহিমের সাথে ওর বন্ধুত্ব শেষ। এই জন্যই তার মন খারাপ। যাইহোক সুমনের সাথে অর্পিতার সম্পর্ক আরো গভীর হতে থাকে। একদিন সুমন অর্পিতাকে জানায় সে তাকে পছন্দ করে। অর্পিতা ঠিকমত রাজি না হলেও সে সুমনকে মানা করে না।
তারা অনেক কিছু নিয়ে কথা বলত। ফ্যামিলি রাজি না হলে কি হবে? অর্পিতা বলে তুমি তোমার ফ্যামিলি নিয়ে চিন্তা কর, আমার ফ্যামিলিতে সমস্যা হবে না। সুমনের মনে নানান ভাবনা আসে, "আচ্ছা তুমি আমার থেকে ভাল কাউকে পেলে কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবা?" "আমি কি বিজনেস করছি নাকি যে তোমার থেকে ভাল কাউকে পেলে তোমাকে ছেড়ে দিব?"- অর্পিতা উত্তর দেয়। একদিন সুমন ফেসবুকে গুতাগুতি করছিল তখন অর্পিতার ফোন আসে। ফোনে কথার মাঝে অর্পিতা হঠাত করে বলে, "আমাদের রিলেশনটা হবে না সুমন।
" সুমন আকাশ থেকে পড়ে- "কেন? কি হয়েছে?" অর্পিতা সুমনকে বলে, "আমি আসলে ফাহিমকে ভুলতে পারছি না। আমি ওকে ভালবাসি। আমি তোমাকে ভালবাসার অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি!" সুমন মন খারাপ করে বলে, "তুমি না বলেছিলে ফাহিম তোমার বন্ধু? আর ভালবাসলে তুমি তাকে রিজেক্ট করলে কেন?" অর্পিতা বলে, "আসলে আমি বুঝতে পারি নি, আমি আসলে ফাহিমকেই ভালবাসি। " সুমন বলে, "তো ফাহিমের সাথে যোগাযোগ কর। " অর্পিতা বলে, "না আমি খবর নিয়ে দেখেছি ও সবার সাথেই এমন।
কিন্তু ও খারাপ হোক, ওর সাথে আমার মিল হবে না, তবুও আমি ওকেই ভালবাসি। " সুমনের মন খারাপ হয় অনেক। অর্পিতা সুমনকে বলে, "তুমি কি আমার জন্য ওয়েট করবে? আমি যদি কখনো তোমাকে ভালবেসে ফেলি!" সুমনের একটু মেজাজ খারাপ হয়। বলে, "এই কথা আমি দিতে পারব না। কেউ যদি আমাকে তোমার থেকে বেশি ভালবাসে আমি অবশ্যই তাকে দাম দিব।
তুমি তো আমাকে ভালবাস না, তাহলে তোমার জন্য কি ভেবে ওয়েট করব?" অর্পিতা জিজ্ঞেস করে, "তুমিও কি আমার সাথে যোগযোগ রাখবে না?" সুমন বলে, "অবশ্যই রাখব কিন্তু বন্ধু আর বয়ফ্রেন্ড এর মাঝের কোন রিলেশন আমাকে দিয়ে হবে না। তুমি শুধুই আমার বন্ধু হিসেবে থাকবে। "
সুমন আর অর্পিতা বন্ধু হিসেবেই থাকে পরবর্তী দুই বছর। আস্তে আস্তে যোগাযোগ কমে যায় কিন্তু তারা বন্ধু হিসেবেই থাকে। ফাকিবাজ সুমনের পরীক্ষা চলছিল।
পরীক্ষার আগের রাতে অর্পিতার ফোন আসে। কথায় কথায় অর্পিতা সুমনকে বলে, "সুমন আমার আম্মু বিয়ের কথা বলছিল। আমার কোন পছন্দ আছে নাকি জিজ্ঞেস করেছে। আমি কি তোমার কথা বলে দিব?" একে তো সুমন ভালমত পড়ালেখা করে নি, তার উপর এসব শুনে তার প্রচণ্ড রাগ হল। সে রেগে গিয়ে বলল, "তুমি জান না আমার পরীক্ষা? এসব কি বলছ? আমি কি তোমার বয়ফ্রেন্ড নাকি? আমার কথা বলবে কি জন্য?" অনেক রাগারাগি করলেও সুমন অর্পিতার সাথে কথা বলে জানতে পারে তার মন খারাপ এই জন্য ফোন করেছে।
পরবর্তী কয়দিন সুমন অর্পিতার কথা বার্তা হত, সুমন অর্পিতাকে টিজ করত, "এহহ আমাকে তো একবার ঘুরিয়েছ, এখন কি? আমি আর রাজি হচ্ছি না। " অর্পিতা হেসে বলত, "তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছ!" মুখে যাই বলুক সুমন মনে মনে ঠিকই অর্পিতাকে ভালবাসে। সে সিরিয়াসভাবে একদিন জিজ্ঞেস করল, "আমি তোমাকে ভালবাসি অর্পিতা এটা তো তুমি জানই। আমি এতদিন ভান করেছি। তাই সাথে সাথে রাজি হইনি।
তুমি কি সত্যি আমাকে ভালবাস?" অর্পিতা বলল, "সুমন আমি তো দুষ্টুমি করছি!" সুমন একটু রাগ হয়, "দুষ্টুমি মানে? তুমি কি বলতে চাও?" অর্পিতা বলে, "বন্ধু হিসেবে তোমার সাথে একটু দুষ্টুমি করতে পারব না? তুমি না বুঝলে আমার কি করা?" সুমনের কাছে অনেক কিছুই ক্লিয়ার হয়ে যায়। তার বন্ধুরা তাকে বলে, "এই মেয়ে তোকে কি করছে এখনো বুঝতে পারছিস না? তোকে ইমোশনালি ব্লাক মেইল করে সে। " সে আস্তে আস্তে যোগযোগ কমিয়ে দিতে চায়। অর্পিতা সুমনকে বলে, "কি ব্যাপার আমার ভয়ে ফোন বন্ধ?" সুমন বলে, "তোমার ভয়ে হবে কেন? এমনিতে প্রতিদিন ই তো কথা হয় আমাদের। আর আমি তো তোমার বয়ফ্রেন্ড না যে ফোনেও ৪-৫ ঘন্টা করে কথা বলতে হবে আমাদের।
তোমাকে না বলেছি শুধু বন্ধু হিসেবে থাকতে। " অর্পিতা বলে, "আসলে ছেলেরা এমনই। " সুমন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে, "তুমি আমার সাথে যা করেছ তার পরেও তোমার সাথে বন্ধু হিসেবে থাকছি এটাই বেশি। তোমার আগের সব কিছু মাফ করলেও পরীক্ষার আগের রাতে ফোন করে যা বললে তা আমি মাফ করতে পারব না। "
আজ অর্পিতা সুমন কে বলে, "সুমন একটা সিরিয়াস কথা আছে।
সুমন বলে দেখ ওই টপিকে সিরিয়াস হোক আর যাই হোক, আমি কিছু শুনব না। " অর্পিতা জোর করলেও সুমন শুনবে না, সে চলে যায়। অর্পিতা পরের দিন আবার বলে, "সুমন আমি কিন্তু সিরিয়াস ছিলাম কিন্তু তুমি শুনলে না। আমার জীবনে কখনো আমি এত সিরিয়াস ছিলাম না। " সুমন বলে, "আচ্ছা বল কি বলবে?" অর্পিতা বলল, "I want to live with you 4ever." সুমন হাসতে হাসতে শেষ, অর্পিতা তুমি পার বটে।
রাখাল আর বাঘের গল্প শুনেছ?" অর্পিতা বলে, "সুমন তুমি যাই বল না কেন এটাই সত্যি। আমি অনেক ভেবে দেখলাম তুমি ছাড়া আর কেউ আমাকে এত ভালবাসবে না। " সুমন চলে আসে। অর্পিতা ফোন করে একটু পরে। ইনিয়ে বিনিয়ে আবার আগের কথা বলে।
"ছেলেরা এমনই হয়, আমি যখন রাজি ছিলাম না তুমি আমাকে পছন্দ করতে, এখন আমি রাজি হয়েছি তোমার আর আমাকে ভাল লাগবে না। " সুমন ভাবে, "আসলেই কি তাই?" এত শত ভেবে কি হবে? সুমন রাজি হয়ে যায়।
কয়েকদিন পরে সুমন আর অর্পিতার একটা ব্যাপার নিয়ে অনেক ঝগড়া হচ্ছে। সুমন বলে, "তার মানে তুমি আমার কথা শুনবে না? তুমি বুঝতে পারছ না কেন, তুমি তো আর সিঙ্গেল নেই, তুমি আগের মত করলে তো হবে না। " অর্পিতা বলে, "আমি এমনই, তুমি তো জানই আমি এমন।
আমি কারো কথা শুনি না। আমার বাবা মা ও আমাকে কথা শুনাতে পারে না। একমাত্র রাব্বিই আমাকে কথা শুনাতে পারে। ওর সেই অ্যাবিলিটি আছে। " সুমন বলে, "তার মানে তুমি বলতে চাও আমার তোমাকে কথা শুনানোর অ্যাবিলিটি নেই?" অর্পিতা বলে, "আমি তো বলছি না তোমার সেই অ্যাবিলিটি নেই।
আমি বলছি আমি রাব্বি ছাড়া আর কারো কথা শুনি না!" সুমনের আর কিছু ভাল লাগে না, "আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড আর তুমি আমার কথা শুনবে না, রাব্বির কথা শুনবে আর এটা আমাকে মেনে নিতে হবে? আমার সাথে রিলেশনে আসলে কেন? আমি তো তোমাকে জোর করিনি। তুমি জান না আমি কেমন?" "আমার মাথা ব্যথা করছে, আমি রাখি" বলে লাইন কেটে দিল অর্পিতা। পরদিন সরি লেখা একটা মেসেজ আসল! সুমন উত্তরে লিখে পাঠাল তার সাথে আর যোগাযোগ না করতে। এরপরে অর্পিতা আর যোগাযোগ করেনি। ফেসবুকে অর্পিতাকে ব্লক দিয়েছিল সুমন।
দুইদিন পরে অন্য একটা আইডি দিয়ে প্রফাইল সার্চ দিয়ে দেখল অর্পিতার ওয়াল অন্য আইডি দিয়েও দেখা যায়। সেখানে একটা স্টাটাস দেয়া, "A new world, a new beginning.... I have been waiting for u....." অনেক কিছু বুঝা হয়ে গেল সুমনের। ভাবছে বন্ধুদের কথা শুনলেই ভাল হত, কেন যে এই মেয়েকে এত বিশ্বাস করত সুমন! কেন করত!
আজকে অর্পিতার জন্মদিন। সুমনের কিছু ভাল লাগছে না, সে গান শুনছে। BONJOVI র গান,
Shot through the heart, and you're to blame
You give love a bad name
I play my part and you play your game
You give love a bad name
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।