জাহাঙ্গীর আলম আকাশ ॥ “দেশপ্রেমিকরা কখনও দেশ ছেড়ে পালায়না। দেশে থেকেই তারা অন্যায়-অবিচার আর অনিয়মের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। ” এক গণমাধ্যম সহকর্মী আমাকে উদ্দেশ্য করে এই মন্তব্য করেছিলেন। সেটা বছরখানেক আগেকার কথা। সুবিধাবাদী রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর শক্ত ষড়যন্ত্র।
তাদের বিরামহীন অত্যাচার আর নির্যাতনের যাতাকলে আমি পর্যুদস্ত। গাঢ় অন্ধকারের অতলে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। এমন অবস্থায় আমার জীবন রক্ষায় বিদেশী মিডিয়া ও মানবাধিকার সংস্থা-সংগঠনগুলি সোচ্চার। দু:সময়ের ওই দিনগুলিতে আমার ওই বন্ধুকে কিন্তু কাছে পাইনি কখনও। চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের কাছে শেষ পর্যন্ত আমি টিকতে পারিনি।
আমাকে মাতৃভূমি ছাড়তেই হলো। যা আমি কখনও ভাবিনি, কল্পনাতেও ছিল না। চলে এলাম জার্মানিতে। সুন্দর ইউরোপে পরিবার নিয়ে নিরাপদেই আছি। কেবলমাত্র শারীরীক ও আর্থিক নিরাপত্তা কি মাতৃভূমির সুখ এনে দিতে পারে? যাহোক, আজকের প্রসঙ্গ সেটা নয়।
জীবনের স্বপ্ন এবং লক্ষ্য অনুযায়ী নিরন্ন, নীরিহ, অসহায়, বঞ্চিত, শোষিত-নির্যাতিত মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। ব্যক্তিগতভাবে দাবি করিনা যে, আমি একজন দেশপ্রেমিক। তবে দেশপ্রেমিকরা যে বাংলাদেশে অসহায়। এটা হলফ করেই বলা যায়।
বাংলাদেশের সিংহভাগ সাধারণ মানুষ নিদারুণ কষ্ট, সংগ্রাম চালিয়ে উপরতলার মানুষদের অন্ন-আহার যোগান দেয়।
আর সেই সুবিধাবাদী স্তরের মানুষগুলির ষড়যন্ত্রের জালে জড়িয়ে দেশপ্রেমিকরা ক্রমশ: অসহায় থেকে অসহায়তর অবস্থায় গিয়ে ঠেকছেন। অন্যায়-অবিচার আর অনিয়ম ঠেকানোর উদ্যোগ নিতে গিয়ে সংগ্রামী মানুষ অসহায়ভাবে নিজেকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ন্যায় ও ন্যায্যতার পরাজয় ঘটছে অন্যায়-অবিচারের কাছে। তথাকথিত প্রগতিশীল শ্রেণীও সুযোগসন্ধানী সুবিধাবাদী শ্রেণীর হাতে নিজেদেরকে জিম্মি করে রাখছে। দেশপ্রেমিকদের রক্ষায় রাষ্ট্র-সমাজ, সুশিল সমাজ কেউই এগিয়ে আসছে না।
“বিচার অবিচারের হাতে বন্দি। ন্যায় আর ন্যায্যতা অনিয়ম, দুর্নীতি ও সুবিধাবাদীদের হাতে জিম্মি। ”
বাংলাদেশের সবকিছুই যেন নষ্ট, ভন্ড, প্রতারক, বেঈমান, সুবিধাবাদী, দালালদের হাতে চলে গেছে। প্রিয় লেখক হুমায়ূন আজাদ অনেক আগেই এসব কথা লিখে গেছেন। জঙ্গি, মোল্লা ও ধর্মব্যবসায়ীদের সশস্ত্র হামলায় এই প্রধাবিরোধী লেখককে জীবন দিতে হয়েছে।
কোন বিচার পাননি এই গুণি শিক্ষকের পরিবার। দেশপ্রেমিক সাংবাদিক মানিক সাহা, শামসুর রহমান কেবল, দীপংকর চক্রবর্ত্তী, গৌতম সাহা, হুমায়ূন কবির বালু হত্যার বিচার হয়নি আজও। জাতীয় সংসদে দাড়িয়ে র্যাব-ডিজিএফআইয়ের নির্যাতনের নির্মম কাহিনী তুলে ধরেছেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা আবদুল জলিলসহ অনেকে। সরকার এ বিষয়ে আজ পর্যন্ত একটি তদন্ত কমিটিও গান করেনি।
ধর্ম ব্যবসায়ী আমিনীর দল অবুঝ ছেলেদের হাতে কোরান তুলে দিয়েছেন মানুষ মারার জিহাদে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য।
জঙ্গিগোষ্ঠী আবারও দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বলে গোয়েন্দাসূত্র রিপোর্ট দিয়েছে। বাংলা ভাই, শায়খ রহমান কিংবা জামায়াত-শিবিরের সমর্থকরা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে চাকরি পায়। আর সুবিধাবাদী-ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর অবিচারের শিকার মানুষগুলি বিচার পাবার আশায় দিন গুনে। বাংলা ভাইকে সমর্থনকারী এক সাংবাদিক এখন জার্মানির একটি আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সম্পাদক। যিনি সম্প্রতি তার এক আত্মীয় মুক্তিযোদ্ধার কাহিনীর প্রতিবেদন করে প্রগতিশীলদের বাহবা কড়াতে চাইছে।
তথাকথিত এলিটফোর্স র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব দরিদ্র বাবা-মায়ের কলেজপড়–য়া সন্তান লিমনকে পঙ্গু করে দিল। বিনা কারণে তাকে গুলি করার পর র্যাব কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলন করে আনন্দ প্রকাশ করেছে। অমানুষ ওই কর্মকর্তারা বলেছে, 'ছেলেটি মারা যায়নি তাতেই আমরা খুশি। অতবড় একটা বন্দুকযুদ্ধে যে কেউ মারা যেতে পারতো। ' এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত আট হাজারের অধিক মানুষ মারা গেছে (গুপ্ত হত্যা, অপহরণসহ)।
আহত ও পঙ্গু হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। কাপুরুষ বেকুবের দল, গোটা দেশের জন্য এক বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। অথচ সরকার যেন ঠুঁটো জগন্নাথ। তাদের যেন কিছুই করার নেই এই মানবাধিকার লংঘণকারিদের দমন করার বিষয়ে। হায় আমার সোনার বাংলা!
নারী নির্যাতন, যৌন হয়রাণি বা ইভটিজিং এক সামাজিক সংকট তৈরী করেছে সেখানে।
আর্মির মেজর আখতার শিপলু ও তার স্ত্রী নিপার নিষ্ঠুরতার শিকার শিশু হাসিনা এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। ১১ বছরের এই শিশুর পিঠে গরম খন্তির ছ্যাকায় দগদগে ঘার সৃষ্টি করেছে। এই বর্বরতা-নৃশংসতা ক্ষমতাধর ওই স্বামী-স্ত্রীর মনে কি এতটুকুও সহানুভূতি জাগায়নি। একই অবস্থা যদি তাদের শিশুর ওপর কেউ ঘটাতো? কোন পশুর পক্ষেও হয়ত এভাবে কাউকে আক্রমণ করা সম্ভব নয়। যেটা করেছে এই দম্পতি নরপশু।
কে করবে তাদের বিচার? আমাদের অথর্ব এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছে, 'ঘটনাটি অমানবিক। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবো। ' সূত্র-দৈনিক আমার দেশ, ১০ এপ্রিল, ২০১১। এতবড় একটা নিষ্ঠুর ঘটনার পর পুলিশেরই উচিত স্বতপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু সেটাতো আর সম্ভব নয় অবিচারের এই দেশে।
একটা পুরো রাষ্ট্র, সমাজ যখন অবিচারে ভরে যায় তখন সেই রাষ্ট্র বা সমাজে মানুষ কতটুকু নিরাপদ? এই প্রশ্নের কি জবাব দেবেন আমার ওই বিখ্যাত সাংবাদিক বন্ধু, আমি জানি না। একটা হ-য-ব-র-ল সমাজে দেশপ্রেমের তাড়নায় উদ্বুদ্ধ কিছু মানুষ ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করে। এই মানুষগুলি তখন সুবিধাবাদী-নষ্টদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। এমনই একটি ঘটনার কাহিনী তুলে ধরতে চাই। ঘটনাটি সম্প্রতি ঘটে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
প্রিয় মাতৃভূমিতে দেশপ্রেমিক বা সংগ্রামী মানুষেরা দুর্বিষহ অসহায় অবস্থায় আছে। তারই একটি জলন্ত প্রমাণ হতে পারে রাজশাহীর ওই ঘটনা। একটি সংঘবদ্ধ সুবিধাবাদী চক্রের রোষানলে পড়ে কিভাবে একজন দেশপ্রেমিক শিক্ষককে একটি বিভাগীয় সভাপতির পদ থেকে সরে দাড়াতে হলো? আপনাদের সেই গল্প শোনাই এবার।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের সদ্য পদত্যাগী সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক মলয় ভৌমিক। যিনি প্রায় তিন দশক ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত।
দীর্ঘ ২২ বছর দেশের প্রগতিশীল বাংলা জাতীয় দৈনিক 'সংবাদ' এ সাংবাদিকতা করেছেনে। প্রায় চার দশক যাবত যিনি দেশের নাট্যচর্চা তথা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। জীবনভর সংগ্রামী এই মানুষটি রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক বহু নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। কিন্তু কখনও অন্যায়-অবিচারের কাছে মাথানত বা আপোষ করেননি। প্রগতিশীল নামধারী শিক্ষক সমাজ, প্রশাসন ও সরকার যখন ক্ষমতাসীন তখন এই মহান শিক্ষককে নষ্টদের কাছে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে হলো।
মলয় ভৌমিকের বিরুদ্ধে কেন এই আন্দোলন তার নেপথ্যের কথাগুলো সচেতন-প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সম্মুখে তুলে ধরা কর্তব্য মনে করি।
মলয় ভৌমিকের বিরুদ্ধে শিক্ষক-ছাত্রদের আন্দোলন চলছে। এ বিষয়ে একটি নোট পড়ি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে। যা লিখেছিলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের একজন তরুণ শিক্ষিকা। এরপর থেকেই অনুসন্ধান করতে থাকি বিষয়টি নিয়ে।
যদিও নোটের লেখিকা নিজেই শিক্ষার্থীদের ক্লাশে ফাঁকি দেন নিয়মিত। না, এটা আমার কথা নয়। ফোকলোর বিভাগের দু'একজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেই জানতে পারলাম ওই শিক্ষকের অনৈতিক এই কাহিনী। এই শিক্ষিকার অভিযোগ মলয় ভৌমিক নাকি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছেন। স্বাধীনতা মানে নীতিহীনতা নয়।
স্বাধীনতা মানে নয় ছাত্র-ছাত্রীদের ফাঁকি দেয়া। এই কথাগুলি বুললে চলবে না ম্যাডাম। যাহোক, মলয় ভৌমিকবিরোধী আন্দোলনের নেপথ্যের কাহিনী তুলে ধরলেই এক বিরাট ষড়যন্ত্র ও সুবিধাবাদী চিত্র ফুটে উঠবে। এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গোটা দেশে জুড়েই এই ষড়যন্ত্র, সুবিধাবাদী, অনৈতিক কর্মকান্ডের জাল।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগ খোলার দাবি দীর্র্ঘদিনের। সাংস্কৃতিক জোট ও প্রগতিমনা শিক্ষকদের আন্দোলনের ফলশ্রুতিতেই এই বিভাগটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভাগের শিক্ষকদের পারস্পরিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরপর দু'টি কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। যে কমিটি বিভাগে নানা অনিয়ম ও বিধিবহির্ভূত কর্মকান্ড শনাক্ত করে। বিভাগের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও অনিয়ম দূর করার লক্ষ্যে কমিটি একটি সুপারিশমালা দেয়।
সেই সুপারিশে বলা হয়, অন্য বিভাগ থেকে একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক এনে এই বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব অর্পণ করা। সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মলয় ভৌমিককে প্রেষণে নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিযোগ দেয় সিন্ডিকেট।
এরই প্রেক্ষিতে মলয় ভৌমিক ২০০৯ সালের ৫ নভেম্বর প্রথমে শিক্ষক হিসেবে এবং ৮ নভেম্বর সবঅপতি হিসেবে যোগ দেন। এই বিভাগে প্রেষণে যোগদানের আগে সরকারের তরফ থেকে তিনি আরও বড় পদ ও পদবীর অফার পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা গস্খহণ করেননি।
তবে সংস্কৃতি ও নাট্যচর্চার প্রতি বিশেষ ভালোবাসা রয়েছে তাঁর। আর সেই কারণেই মলয় ভৌমিক নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের ভেতরকার সমস্যা সমাধানের মানস আকাঙ্খা নিয়েই সেখানে যোগদান করেন।
সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভাগের একাডেমিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম দূর করার ক্ষেত্রে এবং বিভাগের সার্বিক উন্নয়নের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন তিনি। বিভাগে শৃঙ্খলা ফিরে আসছিল এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলছিল। এমনই অবস্থায় আকস্মিকভাবে বিভাগের কতিপয় শিক্ষক তথা দুর্নীতিবাজচক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে।
তারই অংশ হিসেবে গত ৩১ মার্চ ২০১১ তারিখে বিভাগের অফিস থেকে কর্মচারীদের বের করে দিয়ে ঐ বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে শিক্ষকদের দ্বারা আইন হাতে তুলে নেওয়ার এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ছিল নজিরবিহীন। যা সম্পূর্ন বিশ্ববিদ্যালয় বিধির পরিপন্থি। হঠাৎ করে শিক্ষকদের এ ক্ষোভের কারণ কি? আইন হাতে তুলে নেবার পর তাঁরা সভাপতির বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উত্থাপন করলেন। মলয় ভৌমিক এই বিভাগে যোগদানের কয়েকদিন আগে বিভাগের ছাত্ররা নাট্যকলার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিধি বহির্ভূতভাবে পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ এনেছিল।
ওই অভিযোগে তারা সভাপতির কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। তখন বিভাগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ও তৎকালীন কলা অনুষদের ডীন প্রফেসর মোঃ শাফী। তিনি একাডেমিক কমিটির সভায় এই ঘটনার প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্যগণ তদন্ত রিপোর্টে ছাত্রদের আইন হাতে তুলে নিয়ে বিভাগে তালা লাগানোর ঘটনাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে উল্লেখ করেন। ওই একই শিক্ষকরা মলয় ভৌমিকের বিরুদ্ধে অভিযোগে স্বাক্ষরকারিও বটে।
৩১ মার্চ তদন্ত কমিটির ওই সদস্যগণই আইন হাতে তুলে নিয়ে বিভাগের কক্ষে তালা ঝুলালেন। তারা অবশ্য ছাত্র নন। তদন্ত কমিটির ওই শিক্ষকগণ এখন নিজেদের বিরুদ্ধে কি শাস্তির সুপারিশ করবেন? আমরা এটা দেখার অপেক্ষায় আছি।
খ্যতিমান কলামিষ্ট, নাট্যকার মলয় ভৌমিকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলির কোনটাই সুনির্দিষ্ট ও তথ্যবহুল নয়। আবার অনেকগুলিই স্ববিরোধী এবং সর্বোপরি এসব অভিযোগের ব্যাপারে শিক্ষকগণ কোন প্রকার তদন্ত দাবি করেন নি।
হয়ত এটা ভেবে যে, তদন্ত হলে তাদেরই সমস্যা হতে পারে? অর্থাৎ অভিযোগগুলি বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রসূত।
এখন বিভাগের অভ্যন্তরীণ কিছু অনিয়ম ও বিধিবহির্ভূত কর্মকান্ডের কেচ্ছা তুলে ধরতে চাই। ২০০৮ সালের এম.এ. (নাট্যকলা) পরীক্ষায় অনিয়মের কথা স্বীকার করে অভিযোগ পত্রে পরীক্ষা কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্যগণ স্বাক্ষর করেছেন। ওই পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন কাজী শুসমিন আফসানা। কমিটির সদস্যগণ হলেন ড. শাহরিয়ার হোসেন, ড. ফারুক হোসাইন ও আবদুল হালিম প্রামানিক।
পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ওই কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষরেই। গোপনীয়তার স্বার্থেই পরীক্ষা কমিটির সাথে বিধি অনুযায়ী একাডেমিক কমিটি বা অন্য কোন শিক্ষকের কোন ধরনের সংশ্রব থাকার কথা নয়। সুতরাং এর দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ পরীক্ষা কমিটির। পরীক্ষা কমিটির সদস্যগণ নিজেরা প্রকাশ্যে তাঁদের অনিয়মের দায় স্বীকার করে নিজেদের প্রতি এখন কি শাস্তির বিধান দেবেন? সেটাও দেখার অপেক্ষা করছি আমরা। উল্লেখ্য যে, মলয় ভৌমিক এই পরীক্ষা কমিটির সদস্য নন।
এমনকি ওই বর্ষের ছাত্রদের কোন কোর্সও তিনি পড়াননি। বিভাগের নথিপত্র দেখলেই যার প্রমাণ পাওয়া যাবে।
২০০৯ সালের এম.এ. পরীক্ষার তারিখ এগিয়ে আনার ক্ষেত্রেও মলয় ভৌমিকের ভূমিকার অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হয়েছে একজন সদস্যকে পরীক্ষা কমিটির সভার কথা অবহিতই করা হয়নি। অথচ উক্ত সদস্য ছুটি নিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে দীর্ঘ সময় পরে বিভাগে ফিরে আসেন।
যা তিনি হর হামেশাই করে থাকেন। শিক্ষার্থদের স্বার্থে ওই একজন শিক্ষকের জন্য বসে থাকার কোন উপায় আছে কি? অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা কমিটির সদস্য চারজন। কোরাম হয় দুই জনে। উক্ত কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন তিনজন সদস্য। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল পরীক্ষা এগিয়ে আনার।
গ্রীস্মকালীন ছুটি শুরু হতে দেরী নেই। এ অবস্থায় পরীক্ষার তারিখ এগিয়ে আনাটাই ছিল যুক্তিযুক্ত। পরীক্ষা কমিটির সভায় উপস্থিত তিনজনের মধ্যে দুইজনই পরীক্ষার তারিখ এগিয়ে আনার পক্ষে মত দেন, যা গণতান্ত্রিক রীতি এবং আইনসিদ্ধ। এছাড়া পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয় একাডেমিক কমিটির সভায়। ৩ এপ্রিল, ২০১১ আহুত একাডেমিক কমিটির সভায় বিষয়টি আলোচ্যসূচীভূক্ত করা হয়েছিল।
এখানেও পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনের সুযোগ ছিল। কিন্তু এ সুযোগ গ্রহণ না করে উপস্থিত তিনজনের মধ্যে একজন সদস্য এই অভিযোগ কেন তুললেন? এ ব্যপারে পরিস্কার করে আর কিছু বলার দরকার আছে কি?
নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের পাঁচজন শিক্ষকের “অধিকারভূক্ত” শিক্ষাছুটি মলয় ভৌমিকের দ্বারা বিঘ্নিত হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এটা বলে নেয়া ভালো যে, শিক্ষাছুটি ঢালাওভাবে কোন শিক্ষকের অধিকার নয়। শিক্ষাছুটি কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্তভাবে সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এই ধাপের প্রথম প্রক্রিয়া শুরু হয় বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির মাধ্যমে।
নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির সদস্য সংখ্যা সাতজন। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মোট শিক্ষকের এক তৃতীয়াংশ। শিক্ষাছুটির বিষয়টি পরিকল্পনা কমিটিতে এসেছিল। এই কমিটির সাতজন সদস্যের মধ্যে পাচজন অর্থ্যাৎ ড. অসিত রায়, ড. শাহরিয়ার হোসেন, ড. মাফরুহা হোসেন, শায়লা তাসমীন ও মুহাম্মদ আলমগীর সভায় উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সেখানে তারা শিক্ষাছুটির সুপারিশ করেননি।
এটা সভার সিদ্ধান্ত দেখলেই জানা যাবে। উল্টো হাস্যকর ভাবে তারা সভাপতি বা মলয় ভৌমিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। নিজেদের এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে নিজেদের জন্য তারা কি শাস্তির বিধান করবেন? সেটাও দেখার ইচ্ছে করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিভাগগুলোর সভাপতিগণ অতীতের মত বিভাগের প্রধান নন। কাজেই সভাপতি ইচ্ছে করলেই যা কিছু তাই করতে পারেননা।
একজন সভাপতিকে সব কিছুই করতে হয় বিভিন্ন কমিটির সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। একজন মুর্খও এই বিষয়টি বোঝেন। সুতরাং এখানে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠবার কোনই সুযোগ নেই। এছাড়া মলয় ভৌমিকের ব্যক্তিগত আচরণ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অন্ত: কারও অজানা নয়। তিনি অমায়িক, ভদ্র এবং মার্জিত স্বভাবের।
তবে অন্যায় বা অবিযারের সাথে যিনি কখনও আপোষ করেননা।
মলয় ভৌমিকের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ এসেছে। তিনি নাকি একাডেমিক কার্যক্রমকে স্থবির করে দিয়ে বিভিন্ন আনুষঙ্গিক কার্যক্রমে বিভাগকে ব্যস্ত রাখেন। ইতিপূর্বে তিনি (মলয় ভৌমিক) ব্যবস্থাপনা বিভাগের সভাপতি ছিলেন। একাডেমিক কার্যক্রমে গতিশীলতা এনে সেশনজট দূর করায় তিনি কি ভূমিকা রেখেছেন তা ওই বিভাগের সকলেরই জানা।
নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের অনেক শিক্ষকই নিয়মিত কর্মস্থলে থাকেন না। বিধি সম্মত অথবা বিধিবহির্ভূত নানা ছুটি ভোগ করেন। অনেকের বিরুদ্ধেই ক্লাশ না নেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যেও মলয় ভৌমিক যাওয়ার পর বিভাগে একাডেমিক কার্যক্রমে গতি এসেছিল।
বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির প্রায় প্রতি সভায় পাঠ দানের অগ্রগতি পর্যালোচনার রেওয়াজ তিনিই প্রথম চালু করেন।
যা নথিতে সংরক্ষিত একাডেমিক কমিটির আলোচ্যসূচী দেখলে সহজেই জানা যাবে। অভিযোগের অন্য অংশটি হচ্ছে আনুষঙ্গিক কার্যক্রম। মলয় ভৌমিকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে স্বাক্ষরকারী শিক্ষকগণ জানেন না যে, আইন অনুযায়ী শিক্ষকদের কর্তব্য কি? শিক্ষকদের ছয়টি কর্তব্য ও দায়িত্বের মধ্যে অন্যতম হল শিক্ষা- আনুষঙ্গিক কার্যক্রম। এবারে দেখা যাক, মলয় ভৌমিক কি কি আনুষঙ্গিক কার্যক্রমে বিভাগকে ব্যস্ত রাখতেন। আনুষঙ্গিক কার্যক্রমগুলি হল মহান স্বাধীনতা দিবস, মহান বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, পহেলা বৈশাখ ও বিশ্বনাট্য দিবস উদ্যাপন।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এসব দিবস উদযাপন নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের মত একটি বিভাগের কাছ থেকে সকলেই প্রত্যাশা করে।
নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগে মলয় ভৌমিক যাওয়ার আগে এসব গুরুত্বপূর্ণ দিবস উদযাপনের উদ্দ্যোগ ছিল না। তিনি এই বিভাগে যোগদানের পর একাডেমিক কমিটি ও সংশ্লিষ্ট সাব কমিটির মতামতের প্রেক্ষিতেই এই দিবসগুলি উদযাপনের উদ্দ্যোগ গৃহীত হয়। তবে এটা সত্য যে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে স্বাক্ষরকারীদের অনেকেই এ ধরণের উদ্দোগকে ভালো চোখে দেখেননি। যে কারণে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ইত্যাদি অনুষ্ঠান ও শোভাযাত্রায় কখনোই অংশ নেননি তারা।
এমনকি তাদের কেউ কেউ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিরুর রহমান, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস সম্পর্কে কটুক্তিও করে থাকেন। এককথায় এরা স্বাধীনতাবিরোধী।
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রগতিশীল শিক্ষকদের দল রয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বিভাগের মাত্র দুইজন শিক্ষক ঐ দলের সদস্য ছিলেন। সম্প্রতি আরও কয়েকজন শিক্ষক ভোল পাল্টে এই দলে যোগ দেয়।
যা সুবিধাবাদিতার এক চরম নজির। মলয় ভৌমিকের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ইত্যাদি আনুষঙ্গিক কাজ করার অভিযোগ যারা তোলেন তারা বিভাগের শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আন্দোলনে নামিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ছয়দিন ধরে নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগে কি ধরনের আনুষঙ্গিক কাজে যুক্ত রেখেছিলেন ওই সুবিধাবাদীচক্র? তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
একজন শিক্ষকের প্রথম কাজ হলো শিক্ষাদান করা তিনি সভাপতিই হোন আর উপাচার্যই হোন। প্রশাসনিক কার্যক্রমের বাইরে শিক্ষক হিসেবে মলয় ভৌমিক কেন কোর্স পড়াবেন- মুর্খের ন্যায় এমন প্রশ্নও তারা তুলেছেন।
অথচ তাদের জানা নেই একজন শিক্ষকের কোর্স পড়ানোর চেয়ে প্রশাসনিক কাজ কখনই গুরুত্বপূর্ণ নয়। সব বিভাগের সভাপতি এমনকি উপাচার্য পর্যন্ত বিভাগের ক্লাশ নিয়ে থাকেন। এই জ্ঞানটুকুও যাদের নেই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হন কোন যোগ্যতায়? এছাড়া সিলেবাসে কোর্স রাখা না রাখা বিভাগীয় সভাপতির উপর নির্ভর করেনা। বিভাগের একাডেমিক কমিটি ও কমিটি অব কোর্সেস এন্ড স্টাডিজ-এর সভায় সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়। মলয় ভৌমিকের বিরুদ্ধে স্বাক্ষরকারী সকল শিক্ষকই ঐ দুটি কমিটির সদস্য।
সুতরাং তারা যেভাবে চান বিভাগের সিলেবাস সেভাবেই প্রণীত হয়।
নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের তবলা শিক্ষকের শূণ্যতা বিষয়ে মলয় ভৌমিক উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেননি বলেও অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। উপাচার্য বরাবর প্রদত্ত স্মারকলিপিতে প্রথম স্বাক্ষরকারী ড. অসিত রায়ের নেতত্বে সঙ্গীত শাখার শিক্ষকদের নিয়ে উপাচার্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মলয় ভৌমিকই। প্রধান স্বাক্ষরকারী ড. অসিত রায় একজন শিক্ষক হয়েও এ ধরনের মিথ্যাচার কি করে করেন তা ভাবতে লজ্জা হয় আমাদের। তাছাড়া এ বিষয়ে বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি থেকেও বারবার তাগাদা দিয়ে তবলা শিক্ষকের শূণ্যতা পূরণের সুপারিশ করা হয়েছে এ বিষয়টিও বিভাগের নথি দেখলেই জানা যাবে।
বিভিন্ন সময়ে এই বিভাগের নানা অনিয়ম নিয়ে অনেক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। সেসব তদন্তে বহু গুরুতর অনিয়ম পাওয়া গেছে। যার মধ্যে অন্যতম একটি হলো- বিধি বহির্ভূতভাবে টাকা নিয়ে পরীক্ষার ফরম পূরণ করা। পরবর্তীতে তদন্তে এ অভিযোগের সত্যতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ড. অসিত রায় বিগত জোট সরকারের আমলে ঐ বিভাগে তার স্ত্রী’র চাকুরীর ব্যাপারে নৈতিক স্খলনজনিত অন্যায়ের সাথে জড়িত ছিলেন।
এ বিষয়টিও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেই স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তিনি তার একাডেমিক ডিগ্রীর ক্ষেত্রে এবং ভারত গমনের ক্ষেত্রে তথ্য গোপন করেছেন। কোন ধরণের ছাড়পত্র বা এনওসি নেননি। বিধি বহির্ভূতভাবে ছাত্রদের নিয়ে উপদল পাকিয়ে তিনি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছেন। বাসায় ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে কিভাবে কাজ করিয়ে নিয়েছেন? এসবেরও বিষদ বর্ণনা আছে তদন্ত রিপোর্টে।
বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ড. মাফরুহা বেগম। ২০০৩ সালে বিভাগের কাজে যোগদান না করে রেজিস্ট্রার দপ্তরে কাজে যোগদান করেছিলেন। এরপর থেকে দেড়মাস বিভাগেই যাননি তিনি। নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের তৎকালীন সভাপতি ড. সফিকুন্নবি সামাদি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার বরাবর যে পত্র দিয়েছিলেন তা থেকে বিষয়টি জানা যাবে। এছাড়া তিনি বিভাগের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ দালিলিক তথ্য সরিয়ে ফেলেছেন।
তাও জানা যাবে রেজিস্ট্রার বরাবর প্রদত্ত বিভাগের সভাপতির ওই চিঠি থেকে। বিভাগীয় আরেক শিক্ষক মীর মেহবুব আলম। তিনি চাকরীতে যোগদানের পরপরই এক বছরের শিক্ষাছুটি নেন। বিভাগের কোন কাজ না করে এবং কোন প্রকার গবেষণা না করেই জনগণের করের অর্থে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা অপচয় করেছেন। সবই জানা যাবে তার নথি খুঁজলে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাংবাদিক (টেলিফোনে) নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহানবিরোধী শিক্ষকদের একটি গ্রুপ (উপাচার্য হতে চান এমন একজন অধ্যাপকের নেতৃত্বে) ও ক্ষমতাসীন দলের রাজশাহীর একজন প্রভাবশালী নেতা মলয় ভৌমিকবিরোধী আন্দোলনে সুবিধাবাদী চক্রটিকে ইন্ধন দিয়েছেন।
নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের যাত্রা শুরু হয়েছিল যে স্বপ্ন নিয়ে তা আজ ভঙ্গ হতে চলেছে। এটা বলা ভালো যে, কেবল সনদপত্র দেওয়ার জন্য এই বিভাগ খোলা হয়নি। এই বিভাগের শিক্ষা দেশ ও সমাজের কাজে লাগবে এমনটাই ছিল প্রত্যাশা। অথচ এই বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষকেরই বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের সাংস্কৃতিক জগতে কোন অবদান নেই।
দুর্নীতি ও সুবিধাবাজ চক্রের ষড়যন্ত্রের মুখে মলয় ভৌমিক শেষ পর্যন্ত ৬ এপ্রিল, ২০১১ সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। বিশবিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর তিনি যে পত্র দিয়েছেন তা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই।
বিশিষ্ট নাট্যকার মলয় ভৌমিক একজন পরীক্ষীত দেশপ্রেমিক শিক্ষক যিনি মুক্তি সংগ্রামের সময় অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন শত্রুর বিরুদ্ধে। ফখরুদ্দীন-মঈন উ আহমেদের সেনা শাসনামলে মলয় ভৌমিকের ওপর বর্বর নির্যাতনের কাহিনী নিচের লিকগুলিতে পাবেন।
http://www.youtube.com/watch?v=o2-q-o-OfkU
http://www.youtube.com/watch?v=cfcm9SdUVdc
http://www.youtube.com/watch?v=kz2H3o0_bXw
উপাচার্য বরাবর পদত্যাগপত্রেও মলয় ভৌমিকের দেশপ্রেম ফুটে উঠেছে।
মলয় ভৌমিক লিখেছেন, “উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আপনি প্রগতিধারার কয়েকজন শিক্ষক নেতৃত্বকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা নিরসনের দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। আমি তাঁদের আহবানে সাড়া দিয়ে বলেছি, আলোচনার আগে বিভাগের তালা খুলে দেয়া ও শিক্ষকদের বিধিবর্হিভূত কর্মকান্ড বন্ধ করা জরুরি, না হলে আইনের শাসন ভূলুষ্ঠিত হবে, এই প্রক্রিয়া রেওয়াজে পরিণত হবে এবং সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয় নামক প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি এই বিধিবর্হিভূত কর্মকান্ডের অংশীদার হতে পারিনা। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক গঠিত ‘সুপারিশ প্রদান কমিটি’ -এর সম্মানিত সদস্যবৃন্দকে আমি একই কথা বলেছি। এখন পর্যন্ত নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের তালা খোলার উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি।
বিধি অনুযায়ী এ ব্যাপারে কোনো তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি। আমি আশা করি বিলম্বে হলেও কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করবেন। এ অবস্থায় নানা মহলের উস্কানিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বলে আমি আশংকা করছি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থিতিশীল রাখার বৃহত্তর স্বার্থে নিজের বিবেকের তাড়নায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের বিবেকবান সদস্যদের সাথে নিয়ে নিম্নলিখিত শর্তে আমি নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছি এবং সেই সাথে আমার প্রেষণে নিয়োগ বাতিলের অনুরোধ জানাচ্ছি। শর্তসমূহঃ বিধি বর্হিভূতভাবে যেসব শিক্ষক আইন হাতে তুলে নিয়ে বিভাগে তালা লাগিয়ে অচলাব¯হার সৃষ্টি করেছে তাঁদের বিরুদ্ধে এবং নেপথ্যে কোনো ইন্ধনদাতা থেকে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ইতিপূর্বে সিন্ডিকেট কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি বিভাগের শিক্ষক ড. অসিত রায়সহ যেসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করেছে তা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসহ বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ঐ বিভাগে যেসব অনিয়ম হয়েছে তার তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যব¯হা নিতে হবে। বিভাগের সকল দালিলিক নথিপত্রের সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। ”
কোন সমাজ বা রাষ্ট্রের সবকিছু যখন নষ্টদের-ভন্ডদের কিংবা অন্যায়কারিদের বা সুবিধাবাদিদের দখলে চলে যায়; বিচার যখন অবিচারের হাতে বন্দি হয়ে পড়ে তখন সেই সমাজ বা রাষ্ট্রের পতন অবশ্যম্ভাবী। আশাবাদি হয়েও, প্রিয় মাতৃভূমির চেহারায় মনে কোন আশার আলো জাগেনা।
সৎ, সংগ্রামী ও দেশপ্রেমিকরা কি করে এই দেশে বসবাস করবেন? আমার ওই অগ্রজ সহকর্মী বন্ধুটির কাছে কি এর উত্তর আছে?
http://www.youtube.com/watch?v=o2-q-o-OfkU
http://www.youtube.com/watch?v=cfcm9SdUVdc
http://www.youtube.com/watch?v=kz2H3o0_bXw
লেখক: মানবাধিকারবিষয়ক অনলাইন সংবাদপত্র 'ইউরো বাংলা (http://www.eurobangla.org/)'র সম্পাদক ( )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।