aurnabarc.wordpress.com
মহাস্থানগড়ের প্রত্নসম্পদগুলো প্রভাবশালী মহলের কুকর্মে নির্বিচার ক্ষতি সাধন করার সময় আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ইতিহাস ঐতিহ্যকের যারা বুকে লালন করেন বা করতে চান তাঁদের সাথে দেশের প্রতিটি মানুষের একরকম প্রতিবাদী ভূমিকাতে আবর্তিত হতে দেখে মহাস্থানগড় ধ্বংসকারীরা একটু হলেও থেমে যায়। কিন্তু অনেকটা তার ক্ষত শুকাতে না শুকাতে রাজশাহীর তানোরের প্রত্নসম্পদ গুলো অবহেলায় নষ্ট হচ্চে। যা আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের এর গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
পুকুর খুড়তে গিয়ে উন্মোচিত সেকশনে দৃশ্যমান প্রত্নবস্তু।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার কামারগাঁয়ে পুকুর খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে পড়া প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো পাল আমলের হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে প্রায় এক মাস আগে এই স্থাপনার দেখা মিললেও স্থানীয় প্রশাসন তা এখন পর্যন্ত প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরকে অবহিত করেনি। ফলে অরক্ষিত রয়ে গেছে এ নিদর্শনগুলো। এরই মধ্যে পুকুর খনন করতে গিয়ে দেয়ালের একটি অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। প্রত্নমূল্যসমৃদ্ধ ইটগুলো ফেলে রাখা হয়েছে পাশে।
গতকাল কামারগাঁ গাংঘাটি জিয়োত কুড়ি নামের পুকুরে গিয়ে দেখা যায়, গত সোমবারও ওই দেয়ালটি যতটুকু উঁচু ছিল, গতকাল তা আর নেই। ওপরের বেশ খানিকটা অংশ ভাঙা। ইট ফেলে রাখা হয়েছে পাশে স্তূপ করে। একেকটি ইটের দৈর্ঘ্য ১৪ ইঞ্চি ও প্রস্থ প্রায় ৯ ইঞ্চি এবং পুরু ২ ইঞ্চি। আর ওজন ৬ থেকে ৭ কেজি।
রাজশাহী বরেন্দ্র জাদুঘরের সাবেক পরিচালক ও রাবি ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক সাইফুদ্দিন চৌধুরী জানান, ওই অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস পর্যালোচনা ও ইটের আয়তন বিবেচনা করে প্রাথমিকভাবে ওই স্থাপনাটি পাল আমলের বলেই ধারণা করছেন তিনি। তিনি বলেন, প্রতিটি আমলের নির্মাণশৈলীর কিছু বিশেষত্ব থাকে।
এদিকে স্থানীয়ভাবে পুকুর খনন করতে গিয়ে গত ১০ মার্চ এ প্রাচীন স্থাপনার দেখা মিললেও প্রায় এক মাসেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরকে। এমনকি সেখানে খনন বন্ধ করারও কোনো নির্দেশ দেয়া হয়নি। ফলে স্থানীয় পুকুর খননকারীরা খুঁড়তে গিয়ে ভেঙে ফেলেছে দেয়ালের একটি অংশ।
ইটগুলো ফেলে রাখা হয়েছে নিরাপত্তা ছাড়াই। এছাড়া সেখান থেকে উদ্ধারকৃত মূর্তিটিও কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়নি। গতকাল দৈনিক আমার দেশ-এ এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ছাপা হলে এলাকায় কৌতূহলের সৃষ্টি হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী-উল-সহিদ বলেছেন, আমরা সবেমাত্র বিষয়টি জানতে পেরেছি। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হবে।
অন্যদিকে ওই পুকুর থেকে গত ২৫ মার্চ উদ্ধারকৃত মূর্তিটি থানায় জমা দেয়ার এক সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। অথচ থানা থেকে এখনও সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গতকাল আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে থানায় মূর্তিটির ছবি সংগ্রহ করতে গেলে ছবি তুলতে দেয়া হয়নি। স্থানীয়রা জানান, মূর্তিটির কোনো ছবি কোথাও নেই। সেটি এখনও দেখেনি কেউ।
এমন অবস্থায় ওই মূর্তি বদল হয়ে গেলেও তা ধরা দুষ্কর হয়ে পড়বে বলে জানান স্থানীয়রা।
উল্লেখ্য, উপজেলার কামারগাঁ ইউপির বাজার সেতুর পাশে গাংহাটি জিয়োত কুড়ি পুনঃখননের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতর থেকে ২০১০-১১ অর্থবছরে ১৩ টন গম বরাদ্দ করা হয়। সে মোতাবেক গত ৩ মার্চ থেকে ওই পুকুর এলাকায় খনন শুরু হয়। খননের সময় ২৫ মার্চ একটি পাথরের মূর্তি উদ্ধার করা হয়। এরপর যত খুঁড়তে থাকে, ততই ইটের প্রাচীরের আকৃতি ফুটে উঠতে থাকে।
এ বিষয়ে তানোর থানার ওসির দায়িত্বে থাকা উপ-পরিদর্শক আবদুল হাই জানান, জিয়োত কুড়িতে প্রাচীন সভ্যতার কী পাওয়া যাচ্ছে না যাচ্ছে—ওইসব দেখার আমাদের সময় নেই।
মোঃ আদনান আরিফ সালিম অর্ণব
লেখক ও প্রত্নতাত্ত্বিক
তথ্যসুত্রঃ দৈনিক আমার দেশ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।