ঢোপকল। নামটি অনেকের কাছেই অচেনা। রাজশাহীর এই ঢোপকল প্রায় ৭৫ বছর ধরে প্রাচীন ঐতিহ্যের স্মারক। অথচ যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে এই ঢোপকল বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
১৯৩৭ সাল।
রাজশাহী শহরে পানীয় জলের অভাব প্রকট হয়ে দাঁড়ালো। পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে আমাশয়-কলেরাসহ পানিবাহিত নানা রোগ। চারদিকে কেবল হাহাকার আর বিষাদের সুর। সেসময় রাজশাহী পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন রায় ডি এন দাশগুপ্ত। তিনি অতি শীঘ্রই এলাকাবাসীর জন্য কিছু একটা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
সিদ্ধান্ত নেয়া হয় রাস্তার মোড়ে মোড়ে পানির কল স্থাপন করা হবে। তারই উদ্যোগে কলকাতার তত্ত্ব্বাবধানে সারা রাজশাহী জুড়ে স্থাপন করা হয় শতাধিক পানির কল। দেখতে অদ্ভুত এ পানির কলগুলোই 'ঢোপকল' নামে পরিচিতি পায়।
ঢোপকল লম্বায় মাটি থেকে সাড়ে ১১ ফুট। গম্বুজ আকৃতির এই কলগুলো তৈরি করতে সাদা সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়।
সেসময় এই সাদা সিমেন্টকে বিলেতি মাটি বলা হতো। ঢোপকলের পুরো নকশাটা তৈরি হয়েছিল টিনের শিট দিয়ে। প্রথমে টিনের শিটের একটা বলয় তৈরি করা হতো, তারপর এর উপর দেওয়া হতো সাদা সিমেন্টের ঢালাই। আর সহজে যেন না ভাঙ্গে সেজন্য এই কল তৈরিতে তিন দফা সিমেন্টের প্রলেপ দেওয়া হতো।
অতি অল্প সময়ের মধ্যে রাজশাহীবাসীর কাছে এ ঢোপকল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
তবে এ ক্ষেত্রে সমস্যা যা ছিল তা হলো কলকাতা যে অনুমোদন ও সহায়তা দেয় তা ছিল অপ্রতুল। কেবল অর্থ সঙ্কটের কারণে ভেস্তে যেতে বসে ঢোপকল প্রকল্প। আর এসময় এগিয়ে আসেন জেলার পুঠিয়া জমিদার বাড়ির রাণী হেমন্তকুমারী। তিনি ৬৫ হাজার টাকা দেন। আর এ প্রকল্পে ব্যয় হয় পৌণে তিন লাখ টাকা।
রাণী হেমন্তকুমারীর সম্মানে প্রকল্পটির নামকরণ করা হয়েছিল, 'হেমন্তকুমারী ওয়াটার ওয়ার্কস'।
পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় রাজশাহীর সোনাদিঘী থেকে পাম্পের সাহায্যে পানি সরবরাহ করা হতো এসব ঢোপকলে। মজার ব্যাপার হলো ঢোপকলের পানি এতোটাই স্বচ্ছ আর বিশুদ্ধ ছিল যে মানুষ এই পানিকে বিভিন্ন রোগের দাওয়াই বলে বিশ্বাস করতে শুরু করে।
অথচ এমনই উপকারী ঢোপকল আজ অবহেলিত। শতাধিক ঢোপকলের মধ্যে সচল আছে মাত্র কয়েকটি।
সিটি কর্পোরেশনের উদাসীনতা আর অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ঢোপকল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। যুগে যুগে বাংলার অনেক ঐতিহ্য ও নিদর্শনই যথাযথ তত্ত্বাবধানের অভাবে হারিয়ে গেছে, আবার কোনোটা হারিয়ে যেতে বসেছে। তেমনি রাজশাহীর ঢোপকলও বিলুপ্ত হতে বসেছে। যতই দিন যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন কোনে অবস্থিত ঢোপকলগুলো ততই বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।