যে মুখ নিয়ত পালায়......। ।
কয়দিন আগে দেখলাম ব্লগার শূন্য উপত্যকা স্ট্যাটাস দিছেন, যারা মিডিয়ায় কাজ করে তাদের প্রেম, ভালবাসা ,বিয়ে, ইয়ে-টিয়ে সব হয় নিজেদের মধ্যে। যারা আজিজ মার্কেটে কবিতা লেখে তাদের এসবও হয় নিজেদের মধ্যে। তাহলে আমারা যারা ব্লগার আমাদের প্রেম,বিয়ে আর ইয়ে-টিয়ে বাইরে হবে কেন?
এই গুরুগম্ভীর স্ট্যাটাস পড়েই এই লেখার আইডিয়া মাথায় আসল।
আইডিয়া টা হল কোন মেয়ে ব্লগারের বিয়ে ছেলে ব্লগারের সাথে হলে অথবা ছেলে ব্লগারের বিয়ে মেয়ে ব্লগারের সাথে হলে অবস্থাটা কি হবে! একটু চিন্তা করে দেখা যাক,
১। পাত্রী দেখাঃ
ব্লগার পাত্র গেছেন ব্লগার পাত্রী দেখতে। অভিভাবকদের সাথে। কিছুক্ষণ বসার পর পাত্রী কে আনা হল। ব্লগার পাত্র এত সুন্দর হবু বউ দেখে তো অবাক,এতো স্বর্গের অপ্সরী!, তিনি চিৎকার করে বলে উঠলেন ,ঝাঝাকাল্লাহু খায়রান।
উপস্থিত সবাই বিস্মিত হলেও পাত্রী বুঝতে পারেন ঘটনাকি। মর্মার্থ বুঝতে পারেন শব্দের। তিনি ও আগ্রহে রাজি হন। তারপর ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে যায় তাদের।
২।
বিয়ের রাতেঃ
ব্লগার স্বামী স্ত্রী বাসরঘরে। স্বামী বেচারা ভয়ে অস্থির। কি করবেন বুঝতে পারছেন না। । তিনি সাহস করে আল্লা খোদার নাম নিয়ে মনে মনে ঠিক করলেন হাত ধরবেন।
এজন্য হাত দাও বলতে মুখ খুললেন। কিন্তু তার মুখ থেকে উচ্চারিত হল, পোস্ট দাও!!
স্ত্রীও আশ্চর্য হলেন না। শব্দটা তারো পরিচিত। তিনি হাত বাড়িয়ে দিলেন।
এরপর স্বামী আস্তে করে একটা কিস দিয়েছিলেন মনে হয়।
অন্ধকারে দেখা যায় নি। তবে বউকে বলতে শোনা গেল, পুত্তুম প্লাস।
৩। বিয়ের ৬ মাস পরঃ
স্ত্রী ব্যস্ত আছেন কাজে। মাথায় বিভিন্ন চিন্তা।
হিন্দি সিরিয়ালে দেখা নতুন শাড়ির ডিজাইনটা চোখের সামনে খালি ভাসছে। ভাসছে তো ভাসছেই। কিন্তু পুরোপুরি দেখা যাচ্ছে না। দু চোখের পাতা এক হয় না এমন অবস্থা। ঠিক তখন ব্লগার স্বামীর মনে কোত্থেকে দুনিয়ার যাবতীয় প্রেমের উদ্ভব হল।
তিনি প্রেমের প্রকাশ ঘটাতেই একটা ১৮+ চুমু খেয়ে বসলেন। স্ত্রীর চোখে এইমাত্র পুরো ডিজাইনটা চলে এসেছিল। কিস এ দিল সব নষ্ট করে।
ব্লগার স্ত্রী তখন রাগে উত্তেজিত হয়ে বলবেন, তোমারে গদাম সহকারে মাইনাস।
৪।
বিয়ের ৮ মাস পরঃ
স্বামী ব্লগার খাবার খুব পছন্দ করেন। তার প্রিয় খাবার কই মাছের শুটকির সাথে কুচি কুচি করে কাটা দেশী মুরগীর মাংস। তিনি বাজারে গিয়ে তিন মাইল হেটে বিস্তর টাকা পয়সা খরচ করে কই মাছের শুটকী কিনলেন, দেশী মুরগী কিনলেন। তারপর অনেক কষ্টে নিয়ে আসলেন বাড়িতে। স্ত্রী ব্লগার সামু তে বসে আলিম আল রাজির পোস্ট পড়ছিলেন।
স্বামী এসে বললেন, আমারে কুইক শুটকী মাংসের ভর্তা বনিয়ে দাও। হাঠতে হাঠতে মনে হচ্ছে পেটে হাতি ঘোড়া দৌড়াচ্ছে।
ব্লগার স্ত্রীর মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। এত সুন্দর পোস্ট ছেড়ে উঠতে হবে। তিনি রান্নাঘরে ল্যাপটপ নিয়ে গেলেন।
কিছু পড়েন আর কিছু রান্নাবান্না করেন। আর রাজিও সেদিন বিশাল এক ফান পোস্ট দিয়ে বসেছিল। অর্ধেক রান্নার পর ব্লগার স্ত্রীর হাসতে হাসতে হেচকি উঠল। তিনি কোনমতে হেচকি থামাতে থামাতে রান্না শেষ করলেন।
খাবার পরিবেশন করা হল।
ব্লগার স্বামী মুখে দিয়ে আৎকে উঠলেন। লবনের বদলে চিনি দেয়া হয়েছে। তার রাগে ব্রম্মতালু গরম হয়ে চুলের গোড়ার পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে লাগল। তখন তিনি কোন কথাই বলতে পারলেন না। শুধু তার মুখ দিয়ে বের হতে লাগল, মাইনাস মাইনাস মাইনাস মাইনাস মাইনাস মাইনাস মাইনাস....................................
স্ত্রী যত জিজ্ঞেস করেন কি হয়েছে।
তার উত্তর আসে মাইনাস মাইনাস। ।
৫। বিয়ের নবম মাসেঃ
ব্লগার স্বামী স্ত্রীর ঝগড়া হচ্ছে। স্বামী ভাল ব্লগার হলেও বাস্তবে বেশী কথা বলতে পারেন না।
তার স্ত্রীর সাথে কথার প্রতিযোগীতায় কয়েকশ মাইলের মধ্যেও দিয়েও তিনি যান না। বউয়ের তর্কে অতিষ্ট হয়ে তিনি বলবেন, ছাগুদের মত এত ত্যানা পেচাঁবে না তো।
স্ত্রীঃ কি! আমারে ছাগু বললা! যাও তালগাছটা তোমার।
স্বামীঃ কি! তালগাছ আমার কেন হবে তালগাছ তোমার।
স্ত্রীঃ না তোমার
স্বামীঃ না তোমার....তালগাছ তোমার, কাঠাল পাতাও তোমার..........।
। ( এভাবে তালগাছ কার এটা নিয়ে ঝগড়া চলতে থাকবে)
স্ত্রীঃ (উত্তেজিত হয়ে) এত বড় কথা! আজকে তোমাকে ব্যান দিব। ব্যান ব্যান ব্যান।
স্বামীঃ আমি তোমারে জেনারেল করব,জেনারেল, জেনারেল...............(চলতেই থাকবে)
৬। বিয়ের দশম মাসঃ
বউয়ের জন্য স্বামী বিশাল সব গিফট নিয়ে এসেছেন।
লাগা চুনারি মে দাগ শাড়ি, দিল্লি কা লাড্ডু ওড়না এই জাতীয় অনেক কিছু। তার হৃদয়ে হঠাৎ প্রেম উতলে উঠছে। কারণ আগের রাতে ঝগড়া হয়েছিল।
গিফট দেখে স্ত্রীর মন কিছুটা গলল।
স্বামী মনে মনে হাসির ইমো দিয়ে বললেন, কমেন্টস দাও।
লাজুক হাসি দিয়ে বউ বললেন, উত্তম ঝাঝা।
৭। এগারোতম মাসঃ
ঘটনা ভয়াবহ! স্বামি স্ত্রীর পোস্টে মাল্টি নিকে লুলীয় কমেন্ট দিয়ে পরীক্ষা করতে চাইছিলেন। অবশ্য স্ত্রী আগেই জানতেন এটা তার স্বামীর নিক। কারন শাস্ত্রে আছে, স্ত্রী রা অনেক বুদ্ধিমান হয়।
স্ত্রী স্বামীর নিক জেনে কিছুটা প্রশ্রয় দিয়েছিলেন। এতে স্বামী ভদ্রলোক ব্যাপক রেগে গেলেন। তিনি দুঃখে খাওয়া দাওয়া ছাড়লেন। যাকে এত ভালবাসলেন সে কি না সামুতে একজন অচেনা ব্লগারের কমেন্টের উত্তরে এত আবেগী রিপ্লাই দেয়। বঊয়ের সাথে ঝগড়া করে তিনি ভাবলেন বিষ খেয়ে মরবেন।
ঠিক তখনি বঊ পোস্ট দিলেন , “যে কারণে স্বামীরা বেওকুব”
পোস্ট পুরাই হিট। স্বামী তো আর মুখ দেখাতে পারেন না।
৮। বিয়ের বারতম মাসঃ
স্বামী ব্লগারকে তার স্ত্রী চুপি চুপি বললেন, তুমি বাবা হতে চলেছ।
স্বামী ব্লগার তো আনন্দে আত্নহারা।
তিনি আলমগীর সাহেব যেমন শাবানা নিয়ে কে বাবা হতে চলেছি বাবা হতে চলেছি বলে নাচানাচি করতেন ঠিক তেমন করতে চাইলেন।
কিন্তু মুখ দিয়ে কোন কথা বের হবার আগেই উচ্চারিত হল দুটি শব্দ, পোস্ট প্রিয়তে। প্লাস প্লাস প্লাস।
তারপর রোমান্টিক গান। তোমাকে নিয়েছি প্রিয়তে সখী, বেধেছি সুখের ঘর,তুমি মোর শোকেজের একমাত্র নারী, বাকী সবাই পর..................
ওইদিন তারা ঠিক করেন সন্তান ছেলে হোক মেয়ে হোক নাম রাখবেন মডু।
৯। প্রথম সন্তানের জন্মঃ
সন্তান জন্ম দিতে হাসপাতালে মাকে ভর্তি করা হয়েছে। স্বামী বেচারা অস্থির। হঠাৎ খবর পাওয়া গেল তার পুত্র সন্তান হয়েছে। মা ছেলে দু জনই ভাল আছে।
প্রায় লাফিয়ে ব্লগার স্বামী সন্তানের কাছে গেলেন।
প্রথম সন্তানের মুখ দেখে বললেন, ঝাঝাকাল্লাহু খায়রান। উত্তম ঝাঝা। প্লাস প্লাস প্লাস। আনলিমিটেড প্লাস।
অসংখ্য প্লাস। দুনিয়ার সব প্লাস। প্লাসে প্লাসে প্লাসময়। যে মাইনাস দিব তারে গদাম দিব। ঊড়াই দিব।
সবাই এরকম উদ্ভট কথা শোনে তার দিকে তাকিয়ে রইল। কিন্তু তার এদিকে দৃষ্টি নেই। কিন্তু তিনি বলতেই থাকলেন প্লাস প্লাস......। শুধু স্ত্রী বুঝতে পেরে হাসপাতালের বেডে থেকেই হাসতে লাগলেন। সে হাসিতে অন্যভূবনের সৌন্দর্য ছিল।
আমি দেখেছি.....................।
(কাল্পনিক)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।