আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তগদ্যঃ চোখ

যা লিখি, হয়ত কিছুই লিখি না। যা লিখব হয়ত অনেককিছুই লিখব। আসল কথা হলো, গল্প ছাড়া কিছুই লিখতে পারি না

আমাকে একটা চোখ ধার দিবে? আমার চোখ দিয়ে কেবল রক্ত পড়ে। লাল লাল তাজা মানুষের রক্ত। আমার হাত এখন জীর্ণ-শীর্ণ আর বৃদ্ধ।

আমি রক্ত মুছতে পারি না। রক্ত গাল বেয়ে বেয়ে পড়ে আমাকে ভিজিয়ে দেয়, আমার গাল,ঠোঁট,গলা এখন রক্তস্নাত। এমনকি তোমার দেয়া শার্টগুলো ভিজে ভিজে যখন শক্ত হয়ে যায়,আমি কেবল ব্যথিত চোখে দেখি তাদের নীরব মৃত্যু। আসলে দেখি না। যখন দেখতে যাই,শক্ত হয়ে যাওয়া শার্ট আবার ভিজতে শুরু করে।

আমাকে নতুন কিছু শার্ট দিবে? তোমার দেয়া শার্ট ছাড়া আমি কিছু পড়তে পারি না। পুরোনো হয়ে যাওয়া শার্টগুলো কত জায়গায় ছিড়ে গেছে,ধুতে ধুতে হয়ে গেছে ঘর মোছার কাপড়ের মতো। একদিন তো ভুল করে কাজের ছেলেটা একটি শার্ট দিয়ে ঘর মুছতে শুরু করল। আমি নীরবে শুধু চেয়ে দেখি, শার্টগুলোর অপমৃত্যু। আসলে চেয়ে দেখতে পারি না।

আমার চোখ দিয়ে কেবল রক্ত পড়ে। মা এসে বলে,কষ্ট হচ্ছে অনেক? আমি বলি,কষ্ট কী মা? দেখি মা’র চোখে জল। আমি জল দেখে জলস্নাত হতেও পারি না। চোখ দিয়ে কেন শুধু রক্ত পড়ে? আমার মা’র চোখের জল মুছে দিবে? আমি হাত বাড়ানোর শক্তি পাই না। জানো, আমার ছোট ভাইটা কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে দিনদিন।

রাত করে বাড়ি ফেরে,মা’র সাথে বিশ্রী বিশ্রী কথা বলে। রাগ করে,ধমক দিয়ে তাকে কিছু বলতেও পারি না। আমার রক্ত ভেজা গলা,রক্তাক্ত হতে থাকে। দিবে না,আমাকে একটা চোখ? তোমার বাপ্পীর কথা মনে আছে? আমার বন্ধু বাপ্পী। চিনতে পেরছ এখন? বাপ্পী এসে বলল, তোমার নাকি বিয়ে হয়েছে।

তুমি নাকি এখন অনেক ভালো আছো। হতচ্ছাড়া আমি,এখন হাসতেও পারি না। পৃথিবীর শুদ্ধতম মানবীর জন্য হাসতেও পারি না। হাসলে রক্ত ঢুকে যায় মুখের ভেতরে। রক্ত কি খাওয়া যায় বলো? চোখের দাবি নিয়ে এসেছি,ফিরিয়ে দিবে? আমি প্যারালাইসড হবার পর থেকে জানো অপেক্ষায় থেকেছি, একটিবার তুমি আসবে।

এসে আমার হাত ধরবে। ধরে বলবে, ধুর বোকা ভয় পেতে নেই। ভয় পেতে নেই। তুমি আসো নি। ভেবে নিয়েছি এসেছ।

ভয় পাই নি। তোমার কথা না শুনে কই যাব আমি? আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা? শুধু চোখ দিয়ে রক্ত পড়ে। তোমার দেয়া শার্টগুলো নষ্ট হতে থাকে। কেন যে রক্ত পড়ে! যদি তুমি কোনোদিন ভুল করে এসে বলো,এই উদাসীন ছেলে,দেখি আমার দেয়া জিনিষগুলো কিভাবে রেখেছ? জবাব দেয়ার কিছু থাকবে বলো? তোমার চোখের দিকেও তাকাতে পারব না। চোখ দিয়ে যে কেবল রক্ত পড়ে।

একটা চোখ আমার ভীষণ দরকার,ভীষণ। শার্টগুলো বাচাঁতে হবে,হবেই। এককাজ করলে কেমন হয়? আমার চোখ দু’টো তুলে ফেলি। আমার শার্টগুলোতো বাচঁবে। ধ্যাত হাতগুলো হয়ে যাচ্ছে শক্তিহীন।

তুমি আমার চোখ তুলে দিবে? ( প্রিয় গল্পকার আহমাদ মোস্তফা কামাল এর অশ্রু ও রক্তপাতের গল্প পড়ে লেখাটি লেখা। তাই, গল্পটি কিংবা লেখাটি তাকে উৎসর্গ করা)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।